somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক-এগার দ্বিতীয় পর্ব, প্রাণ প্রকৃতি ও ভূখণ্ডের উপর আমাদের নায্য হকের লড়াই এবং একটি পুলিশি রাষ্ট্রের ছায়া

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৫:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক-এগার দ্বিতীয় পর্ব

দুই হাজার নয় সাল; সময়ের এই পর্বে এসে বাংলাদেশে প্রাণ-প্রকৃতি ও ভূখণ্ডের উপর এদেশের মানুষের নায্য হকের লড়াই-ই আমাদের জাতীয় রাজনীতির তাৎপর্যপূর্ণ গতিপথ চিহ্ণিত করছে। এই লড়াইয়ের প্রতিপক্ষ হিশেবে বহুল আলোচিত এক-এগার'র রেজিম এর বিতর্কিত ভূমিকা আর তার ফলোয়ার বর্তমান সরকারের অবস্থান বিচার এই মুহূর্তের অত্যন্ত জরুরী কাজগুলির একটি বলেই আমরা মনে করি। আমরা ইতিপূর্বেই উনত্রিশ তারিখের নির্বাচনের মাধ্যমে একদলীয় সংখ্যাগরিষ্টতার সরকার কায়েমের পরের সময়টাকে এক এগার দ্বিতীয় পর্ব হিশেবে অভিহিত করেছিলাম বিভিন্ন লেখায়। আরো বলেছিলাম, এগার একের প্রথম পর্বের তুলনায় এই দ্বিতীয় পর্বের ডাইনামিকসটা অধিক তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথম পর্বের রেজিমের গণভিত্তি ও সাংবিধানিক বৈধতা ছাড়া অপরাপর সব সম্ভব পরা-ভিত্তিই প্রবলভাবে ছিল। বিপরীতে দ্বিতীয়ার্ধের এই পর্বের কলা কুশলীদের অপরাপর সব পরা-ভিত্তির সাথে সাথে নির্বাচনী গণতন্ত্র অর্থে গণতন্ত্রের লেবাস এবং সেই হিশেবে গণভিত্তির লেবাসও আছে। এতেই বিপদগুলো নতুনতরো মাত্রা এবং পোশাক নিয়ে হাজির হয়। এগার একের রেজিম যেই কাজ অবৈধ উপায়ে পরাশক্তির আশ্রয়ে করতে গিয়েছিল, এই নির্বাচনী গণতন্ত্রের একদলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার জনগণের সম্মতির কথা বলেই, তাদের ভোটের হাতিয়ার দিয়েই, সেই কুকাজ সম্পন্ন করার সামর্থ এমনকি হিম্মত রাখে। সেই মনোভাব এবং হিম্মত ইতিমধ্যেই তারা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ইচ্ছেয় অনিচ্ছেয় প্রকাশ করেছে।

দিনবদলের ডায়েরী

আসুন আমরা বিগত দিনগুলোতে এই সরকারের উল্লেখযোগ্য কাজকর্মগুলোকে একবার পাঠ করি। এক এগার প্রথম পর্বে আমরা দেখতে পেয়েছিলাম, পৃথিবীর তেল গ্যাস এবং খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ ভূখণ্ডগুলোতে সন্ত্রাস এবং লুটপাটকারী "সন্ত্রাস-বিরোধী যুদ্ধে"র সেনাপতি আমেরিকার অনন্ত যুদ্ধের যজ্ঞে কোনরকম দরকষাকষি ছাড়াই মিত্র হিশেবে যোগদান করার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশের তৎকালীন এগার একের রেজিম এবং এর পেছনের মীর জাফররা। এরপর এক এগারর এই দ্বিতীয় পর্বে এসে প্রথম ছাব্বিশ দিনেই নতুন দিনবদলের আওয়ামীলীগ সরকার 'সাউথ এশিয়ান ব্লক' বা 'ইন্দো-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সন্ত্রাসবিরোধী টাস্কফোর্সের' নামে সেই এলাইয়ের স্বার্থ রক্ষার জেহাদে শামিল হয়ে এইসব বিষয়ে পরাশক্তিগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ এবং সহযোগিতা চেয়ে নিয়েছে। তার কিছুদিন পরেই এই একই সরকার বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাকে উপজীব্য করে পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনীকে দিয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের অতন্দ্র প্রহরী বিডিআর ঢেলে সাজানোর মত ওদ্দত্যপূর্ণ এবং অধীনতামূলক মনোবৃত্তির প্রকাশ দেখিয়েছে এবং বিডিআরের বীরত্বমূলক ইতিহাস মুছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সেই ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই টিপাইমুখে বাংলাদেশের জন্য ফারাক্কার মত আরেক মরণফাঁদের নির্মাণকাজে ভারতের সহযোগী এবং বৈধতা দানকারী হিশেবে আবির্ভূত হয়েছে এই সরকার। তারপর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলাকে পঙ্গু বানিয়ে রেখে, বিগত এক এগার রেজিম কর্তৃক বিদেশী বেনিয়াদের কাছে দাসখত দেওয়া তেল গ্যাস ও কয়লা সম্পদ পাচারের অসমাপ্ত ও 'মহিরুহ' কাজ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে এই সরকার। এবং বহু বিতর্কিত ও দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নের সাথে জড়িত ট্রানজিট ইস্যূতে কোন প্রকার জাতীয় সংলাপ ছাড়াই ভারতের কাছে এ ব্যাপারে তাদের ইতিবাচক মনোভাব এবং 'ইচ্ছা'র কথা জানিয়েছে।

প্রাণ-প্রকৃতি ও ভূখণ্ড রক্ষার লড়াই ও পুলিশি রাষ্ট্রের ছায়া

জাতীয় স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে যখন আওয়ামি সংখ্যাগরিষ্টের সরকার বারবার এইরূপ নতজানু এবং গোলামি অবস্থান গ্রহণ করে অগ্রসর হচ্ছে, আমরা কিছুটা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম, বিএনপিসহ প্রধান বিরোধী দলগুলো যাদের এক্ষেত্রে দায় নিয়ে এগিয়ে আসার কর্তব্য পড়ে বলে জনগণ তাদের কাছ থেকে আকাঙ্ক্ষা করে, তারা কার্যকর প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ তৈরী করতে রীতিমত ব্যর্থ এবং কিছু সংবাদ সম্মেলন ও মিডিয়ায় কথা চালাচালি ছাড়া পুরোমাত্রায় উদাসীন থেকেছে। এদিকে সরকারের মন্ত্রীগণের কথায় কথায় "নো টলারেন্স" শব্দটা এমন মারমুখো যে, মানুষের বিভ্রম হওয়া সম্ভব আমরা একটি স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বাস করছি কিনা। তারপরে আছে অতি সাধারণ প্রতিবাদি মিছিল এবং সভায় পেটুয়া পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্ট উপায়ে ভীন্নমতাবলম্বির কণ্ঠরোধের চেষ্টা এবং বিভিন্ন সময়ে মিডিয়ার বেনিয়াদের ছড়ি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মতামতকে শাসন করার চেষ্টা। আমরা দেখতে পাই, সাধারণ পাঠচক্রের ছাত্রদের উপর টিপাইমুখ ইত্যাদি জাতীয় স্বার্থ নিয়ে মিছিল করায় নির্মমভাবে আক্রমণ এবং রক্তাক্ত করেছে এ সরকারের পুলিশ; তার উপর এই ইস্যুটিকে চাপা দেওয়ার জন্য প্রথম আলো নামক তাবেদার পত্রিকাকে দিয়ে প্রতিবাদি ছাত্রদের উপর চরমপন্থি ট্যাগিং দেওয়ার চেষ্টা। সর্বশেষ তেল গ্যাস এবং কয়লা লুটেরাদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদ করার কারণে প্রফেসর আনু মুহাম্মদের মত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে পেটুয়া পুলিশ দিয়ে লাঠিপেটা করেছে এ সরকার।

প্রাণ-প্রকৃতি ও ভূখণ্ড রক্ষার লড়াইয়ে ছাত্রসমাজ, শিক্ষক এবং সাধারণ মানুষের উপর যে হারে লাঠিপেটা করছে সরকার, তাতে একটি পুলিশি রাষ্ট্রের ছায়াই আসে। উপরে আমরা বলেছিলাম, দ্বিতীয়ার্ধের এই পর্বের কলা কুশলীদের অপরাপর সব পরা-ভিত্তির সাথে সাথে নির্বাচনী গণতন্ত্র অর্থে গণতন্ত্রের লেবাস এবং সেই হিশেবে গণভিত্তির লেবাস থাকায়, বিপদগুলো নতুনতরো মাত্রা এবং পোশাক নিয়ে হাজির হয়েছে। গণতন্ত্র নিয়ে, আমাদের ইতিহাসভিজ্ঞতা এই কথাও বলে যে, এই 'গণতন্ত্র' ফ্যাসিবাদকেও নিমন্ত্রণ করে আনে কখনো কখনো। এই নির্বাচনী গণতন্ত্র যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের একনায়কতন্ত্রই জারি থাকে বৈধভাবে, সেটি এমনকি গঠনগত দশাতেই ফ্যাসিবাদের পথ উন্মুক্ত রাখে। জার্মানী, স্পেন এবং ইতালীর ফ্যাসিস্ট পার্টিগুলোর রেজিমের ইতিহাস অধ্যয়ন করলে, এই নির্বাচনী গণতন্ত্র কীভাবে গণভিত্তির দোহাই দিয়েই ফ্যাসিবাদকে অধিষ্ঠিত করে এবং ভীন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করে, তৎপরতাকে নিয়ন্ত্রণ করে, গুপ্তহত্যা করে, তার প্রকৃতি বোঝা যাবে। ফলতঃ গণতন্ত্রের লেবাসের উপর প্রশ্নাতীত ঈমান না রেখে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার কতটা লঙ্ঘিত হচ্ছে-না হচ্ছে, রাষ্ট্রের পরিসর ও চরিত্রের বিবর্তন ইত্যকার বিষয়গুলো, তারও নিরন্তর বিচার জরুরী।

সর্বশেষ

এক্ষেত্রে গণতণ্ত্র, রাস্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে জরুরী তর্ক বিতর্ক এবং কর্মসূচিগত প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সাধারণ ঐকমত্যের জায়গা তৈরী হওয়াটা অবশ্যাম্ভাবি। ফলত, জাতীয় স্বার্থের পক্ষে যে কোন আন্দোলনের পাশে বিএনপি থাকবে; পুলিশের লাঠিচার্জে আহত প্রফেসর আনু মুহাম্মদকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার এই মন্তব্য আগ্রহ নিয়ে পাঠ করি। আগ্রহ এ কারণে যে, খালেদা জিয়া যদি এই মন্তব্যকে তার পূর্ববর্তী ভূমিকাসমূহের একটা রিভিউ হিশেবে নেন, তাহলে তাঁর এই আকাঙ্ক্ষা সাধুবাদযোগ্য। যদিও নিঃসন্দেহ নই, খালেদা জিয়া তার এই অবস্থানে শেষ পর্যন্ত কতটুক অটুট থাকবেন?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৪৭
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×