মায়ের পোষা ব্যাঙের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে গেলাম। রাত দুপুরে বিচিত্র সুরে ডাকাডাকি করে জানিয়ে দিচ্ছে ব্যাঙজীবন তার আর পছন্দ হচ্ছে না। সে বোধহয় এখন কোকিল টোকিল হতে চায়। তার ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ করে ডাকার কথা। কিন্তু তা না করে সে কোয়াক কোয়াক করে ডাকছে। কেমন পাখি পাখি শোনাচ্ছে, তাই কোকিলের কথাটা বললাম। এই ব্যাঙের আমদানি হয়েছে আজ বেশ কিছুদিন হল। এর আমদানিকারক আমার মাতা মহোদয়। মা প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক। সেই সূত্রে ব্যাঙ যে অনেক তেলাপোকা খায়-এই তথ্য তার জানা আছে। শীত চলে গেছে। তেলাপোকারো নড়ে চড়ে আস্তে আস্তে ঘরের চিপাচুপা থেকে বেরোচ্ছে। এই যখন অবস্থা, তখন একদিন মা ঘোষণা দিল যে তার ডিপার্টমেন্টের স্টাফ মিজানকে (যাকে আমি মিজান মামা বলি সে ছোটবেলা থেকে) ব্যাঙ খুঁজতে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আজ কালের ভেতর সে ব্যাঙ নিয়ে উপস্থিত হবে। অ্যারোসল ইত্যাদি দিলে ফুসফুসের ক্ষতি হয়। তাছাড়া অ্যারোসলে ফ্রেয়ন গ্যাস আছে। সেটা গিয়ে ওজন লেয়ার ফুটা করে দিবে। আর দুই দিন বাদে তেলাপোকারাও দিব্যি রেসিস্ট্যান্ট হয়ে ঘাড় ফুলিয়ে সদর্পে ঘুরে বেড়াবে। লাভের লাভ কিছুই হবে না। সেখানে ব্যাঙ একটা সহজ সমাধান হতে পারে। ব্যাঙ বাবাজীর পক্ষে এত সাফাই গাওয়ার উদ্দেশ্য হল নিজেকে প্রবোধ দেয়া, যাতে করে ঘরের ভেতর তার উপস্তিতি আমার কাছে কিছুটা হলেও সহনীয় হয়ে আসে।
ব্যাঙ ট্রিটমেন্ট আমাদের বাসায় নতুন কিছু না। তারপরও আমার এই সরীসৃপটার প্রতি এক ধরনের ভীতি কাজ করে। ক্লাস এইটে থাকতে পড়েছিলাম এদের প্যারোটিড গ্ল্যান্ড আছে। রাতের বেলা অন্ধকারে পায়ের তলে ব্যাঙ মিয়ার হাত-পা পড়লে সে যদি পিচিক করে বিষ ছুড়ে মারে তাহলেই হয়েছে। যদিও এই বিষে নাকি বেশি কিছু হয় না। খালি হা-পা চুলকায়। তবে চোখে গেলে সমস্যা হতে পারে। বিষ বিষয়ক তথ্যগুলো ক্লাস এইটের বায়োলজি বইতে ছিল নাকি আমি গুল এখন মারছি, নিজেই বুঝতে পারছি না।
যাইহোক, মিজান মামা একটা পলিথিনের প্যাকেটে ব্যাঙ নিয়ে উপস্তিত দিন দুয়েকের মধ্যে। সেই ব্যাঙের নামকরণও হল। আমার কাছে নাম চাওয়া হয়েছিল। দিয়েছিলামও। কিন্তু পছন্দ না হওয়ায় নাম নেয়া হয় নি। আগের সব ব্যাঙের নাম ছিল "ব্যাঙ্গা"। সুতরাং এর নামও হল ব্যাঙ্গা। তাহলে খামাখা নাম দিতে বলা হল কেন আমাকে? আমার কি চার ঠ্যাঙ্গের সরীসৃপের নাম দেয়া ছাড়া আর কোন কাজ নেই? আমার মা আমাকে ভাবেটা কি?? ব্যাঙ্গার সাথে মায়ের এখন ব্যাপক খাতির। মা ভাত খেতে বসলে তার পোষা ব্যাঙ বারান্দার টবের ভেতর থেকে মধুর সুরে ডাক দেয়। আর মা সেই ডাক শুনে মুগ্ধ থেকে মুগ্ধতর হতে থাকে। ব্যাঙ পুত্র ও তার পালক মাতার এই স্নেহের অবতারণাটুকু দেখলে রাগে আমার পিত্তি জ্বলে যায়। কিন্তু মুখে বলি, "আল্লাহ, আম্মা দেখো তোমার ব্যাঙ্গা কি সুন্দর ডাকে! ইসস...কি স্যুইট!!" এই ঘরে তো আমাকেও থাকতে হবে, নাকি? সুতরাং গৃহকত্রীর সাথে অনাবশ্যক বিবাদে জড়িয়ে কাজ কি??
আমার ভাইয়ের বাসায় তেলাপোকার উপদ্রব হওয়ায় তাকেও মা একটা ব্যাঙ যোগাড় করে দিয়েছিলো। তাই নিয়ে কত কাহিনী। সেটা আরেক দিনের জন্যে তুলে রাখলাম। আজকে ব্যাঙ কাহিনীর এখানেই আপাতত ইতি।
--রিম; ৮।২।১০