somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিচিত্র উন্মাদ

০৫ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তখন আমি কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। নীলক্ষেত। রিকশায় বসে আছি। আব্বা কী যেন কিনতে গিয়েছেন। চারপাশের মানুষগুলো দেখছি। একটা ‘ইতালিয়ান’ রেস্টুরেন্টের সামনে বেশ বড় করে সাইনবোর্ড টাঙানো—‘সংগ্রাম হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ। দেশীয় যেকোনো খাবার অর্ডার নেওয়া ও সরবরাহ করা হয়ে থাকে।’ লেখাটার দুই পাশে যথারীতি হাস্যময়ী ছাগল আর মোরগের ছবি। মোরগটাকে বিমর্ষ দেখাচ্ছে। মোরগের আর্টিস্ট মনে হয় বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে কাজে এসেছিল। আনমনা থাকায় মোরগ আকারে ছাগলের প্রায় আড়াই গুন হয়ে গেছে। ছাগলটার আবার দাঁড়িও আছে। ইন্টারেস্টিং!

ঢাকায় পাগলের সংখ্যা বাড়ছে এই ব্যাপারটা কি কেউ খেয়াল করেছেন? শেরাটন হোটেলের সামনে এই ধরনের কয়েকজনের দেখা মেলে। আর শাহবাগের চারুকলা তো এদের কাছে মোটামুটি তীর্থস্থান বলা যায়। এখানে আমি একজনকে চোখাচোখা কাঁটাওয়ালা মোটা এক লাঠি হাতে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। উদাস উদাস চেহারা। ভয়ংকর দর্শন লাঠিটা বাদ দিলে তাকে মোটামুটি নিরীহই দেখায়। আবার পান্থপথের রাস্তায় একজনকে বেশ রাশভারী সাজে দেখা যায়। সাদা ধুতি হাঁটু পর্যন্ত। চকচকে পিতলের শিকল তার কাঁধ থেকে নেমে এসেছে। সেখান থেকে ততোধিক চকচকে একটা ঘটি ঝুলছে। দামি মান ইজ্জতওয়ালা ঘটি। বোধ হয় টাকা পয়সা রাখা হয় তার ভেতর। লোকটার বা হাতে লম্বা বেতের লাঠি। সব মিলিয়ে রামকৃষ্ণ রামকৃষ্ণ একটা ভাব আছে। যদিও শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস শেকল দেওয়া ঘটি নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আবার বেড়াতেও পারেন। গান্ধী যদি ছাগল নিয়ে ঘুরতে পারেন তাহলে রামকৃষ্ণের ঘটি থাকলে দোষ কোথায়?

সায়েন্স ল্যাবের মোড়ে একদিন এক আর্কিমিডিসকে দেখলাম নির্বিঘ্ন চিত্তে রাস্তা পার হচ্ছেন। আমি একটু দূরে ছিলাম। তাই ওনার ‘ইউরেকা’ কানে এসে পৌঁছায়নি। তবে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। সবাই বেশ সম্ভ্রমের সঙ্গে তাকে পথ ছেড়ে দিলেন। এর আগেও দেখেছি নাঙ্গা বাবাদের প্রতি জনসাধারণের একধরনের শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে। হাইকোর্টের গেটের সামনে এক ভদ্রলোককে দেখতাম মাঝে মাঝে। বস্ত্রসম্ভারের দিক থেকে তিনি আর্কিমিডিসের থেকে উচ্চপর্যায়ের। কতটা উচ্চপর্যায়ের সেটা প্রমাণ করার জন্য জ্যৈষ্ঠের গরমেও আধময়লা ফুলহাতা শার্টের ওপর কমলা সোয়েটার আর তার ওপর একটা স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে দিয়ে বসে থাকতেন। পুরো ব্যাপারটা আলাদা মাত্রা পায় যেদিন তিনি এর সঙ্গে শিয়াল রঙের চাদর আর গামছাটা যোগ করেন। ভদ্রলোকের বোধ হয় কোনো মাফলার নেই। থাকলে নির্ঘাত গলায় পেঁচিয়ে জ্যৈষ্ঠের কাঠফাটা দুপুরে ঠোঁটের কোণে একটা অপার্থিব শান্তি ফুটিয়ে বসে থাকতেন।

আমার ধারণা ঢাকা শহরে উন্মাদের সংখ্যা বাড়ার পেছনে কয়েকটা গূঢ় কারণ আছে। এক. হতে পারে এরা সাদা পোশাকধারী পুলিশ। আমরা ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়লে শিয়াল চাদর ফেলে দৌড়ে আসবেন সাহায্য করতে। আবার হতে পারে এরা আমাদের দেশের মাননীয় মন্ত্রীরা। মহান শাসক হজরত ওমর ফারুক যেমন প্রজাদের দুঃখ-কষ্টের খোঁজ নিতে ফকির মিসকিনের ছদ্মবেশে মহল্লায় মহল্লায় ঘুরেছেন, তেমনি দেশের মানুষের অবস্থা জানার জন্য মন্ত্রীরাও উন্মাদের ভেক ধরতে পারেন। আবার বাংলা সিনেমার প্রযোজকও এরা হতে পারেন। ‘ফায়ার’ টাইপের দুই নম্বরী ছবি করে ধরা খেয়ে চাট্টিবাটি গোল করে সবশেষে উন্মাদের মহান পেশায় আবির্ভূত হয়েছেন।

যা হোক, বিচিত্র মানুষের প্রতি আমার অপার কৌতূহল। আমি উন্মাদপ্রিয় বটে কিন্তু নিজে উন্মাদ না। তবে হতে কতক্ষণ?
— — —

ড. রিম সাবরিনা জাহান সরকার
মিউনিখ, জার্মানি
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৫৮
১৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×