আমি সিনেমা রিভিউ লিখতে বেশ পছন্দ করি। আমারতো আবার আরেকটা শখ আছে আর সেটা হলো ঘন্টার পর ঘন্টা হাটাহাটি করা। তো বহুদিন ধরে প্ল্যান করেই যাচ্ছিলাম যে মাওয়া ঘাট যাবো। সময় হয়েই উঠছিলনা। অবশেষে গত শুক্রবার, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই চিন্তা করলাম মাওয়া ঘাট যাবো। হুট করে চিন্তা করে কাজ না করলে সম্ভব হবে না আর। ফ্যামিলির সবাই গিয়েছিল বনশ্রীর এক আত্মীয়র বাসায় তাদেরকে নামায় দিয়ে আমি রওনা হলাম। সকালে নাস্তা করি নাই তাই যাবার পথে CP থেকে একটা ললিপপ ও meatball কিনে খেলাম। ললিপপ বলতে বাচ্চারা যেই ললিপপ খায় সেটা নয়। এটি হলো চিকেন সসেজ এর মতো ললিপপ এর সাইজে বানানো মজার একটা খাবার। দাম ৪০ টাকা আর মিটবলের দাম ২৫টাকা। বনশ্রীর রাস্তার যে বেহাল দশা সেটা নিজ চোখে দেখলাম ও দেখার পর প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলাম।
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছিল। আমার বেশ ভালো লাগছিল বৃষ্টির ভেতর হাটাহাটি করতে। পরে একটা বাসে উঠে পড়ে রামপুরা থেকে গুলিস্তান গেলাম। বাসে চড়লে নানা রকমের মানুষের সাথে দেখা হয় তাই হরেক রকমের মানুষ দেখার জন্য বাসে উঠা ভালো। গুলিস্তান নেমে আরাম পরিবহন পেলাম। বাসটার নাম "আরাম"। এই "আরাম" বাসে উঠে আরাম করতে করতে মাওয়া ঘাট গেলাম। ভাড়া নেয় ৭০ টাকা। বাসটি ভালোই লাগলো। এই বাসে এক পরিবারের প্রায় ১০--১২ জন সদস্য উঠলো। তারাও যাচ্ছে মাওয়া ঘাট। যাবার পথে কোন এক স্টপেজ থেকে এক আচারওয়ালা উঠলো। তারা সবাই মিলে আচার খেলো। কুলের আচার। কিছুক্ষণ পর বাসের ফ্লোরে তাকায় দেখি কুলের বিচিতে ভড়ে গিয়েছে। হা হা হা।
অবশেষে বাস যখন মাওয়া ঘাটে আসলো তখন বাজে দুপুর ২টা। মাওয়া ঘাট থেকে তখনও বাস প্রায় ৫--১০ মিনিট দূরে। আমি নেমে পড়লাম। হাটা শুরু করলাম। খুবই ভালো লাগছিল। সেইরকম জোড়ে জোড়ে বাতাস হচ্ছিল। বাতাসে আমার ছাতা উল্টায় গেলো। তা তে কি! আমি হাটতেই থাকলাম। একটা কথা বলে রাখা ভাল, মুন্সিগন্জ্ঞের অনেক বাড়ির নকশা এখই রকম। আমার কাছে খুব ভালো লাগে।
ঘাটে আসলাম, ঘাটে এসে ফেরীতে উঠলাম। স্পীডবোর্ড চলাচল করে ভাবলাম স্পীডবোর্ডে উঠবো কিনা। পদ্মা কিন্তু পুরাই ভাবে ছিল, মানে উত্তাল ছিল। ঝুঁকি আর নিলাম না। ইচ্ছে ছিল ঐপারে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে গিয়ে ঘুরাঘুরি করে আবার এদিকে আসা। ইনশা-আল্লাহ আরেকবার যাবো।
এরপর একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম। এখানে বলে রাখা ভালো আমি প্রায় ৪--৫টা হোটেলে গেলাম কোথাও ইলিশ পেলাম না। আর কি করার! কেচকি মাছ দিয়ে গরম ভাত খেলাম শেষমেষ। আদি কচুয়া বাগেরহাট হোটেল ও রেস্টুরেন্টে খেলাম। সবাই ভাববে এতোদূর গেলাম সেই মাওয়া পর্যন্ত এই কেচকি মাছ খেতে!!! দয়া করে কেউ হাসবেন না!
এরপর আবার বাসে উঠলাম। ভাড়া সেই একই; ৭০ টাকা। গুলিস্তান নেমে পড়লা. একটি টঙের দোকানে চা খেয়ে নিলাম। বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছিল। এরপর উত্তরার উদ্দেশ্য রওয়ানা হওয়া আরেকটা বাসে আসলাম। আমার কাছে বেশ ভালই লাগলো আজকের এই ঝটিকা সফর। আশা করি এরপরের বার স্পীডবোর্ডে চড়ে ঐপারে যাবো কাওরাকান্দি বা কাঠালবাড়ি।
আজকের সফরের হিসাবটা দেই:
১) সকালের নাস্তা: CP থেকে ললিপপ, মিটবল ও পানি: ৮৫টাকা
২) বাসে করে রামপুরা থেকে গুলিস্তান: ২০টাকা
৩) গুলিস্তান থেকে মাওয়া ঘাট: ৭০টাকা
৪) মাওয়া ঘাটে দুপুরের খাবার: কেচকি মাছ: ১ প্লেট: ৯৫টাকা
৫) ভাত: ১৫টাকা
৬) পানি: ২০টাকা
৭) বাসে করে মাওয়া থেকে গুলিস্তান: ৭০টাকা
৮) চা: ৫টাকা
৯) বাসে করে গুলিস্তান থেকে উত্তরা: ৪০টাকা
১০) রিক্সা করে বাসা পর্যন্ত ভাড়া: ২০টাকা
সর্বমোট: ৪২৫টাকা
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০৮