আমাদের হাইস্কুলের বাংলা স্যারের নাম ছিলো শরিফুল স্যার।
তবে স্যার ভিন্ন নামে পরিচিত। তাকে সবাই ডাকতাম "ঠান্ডা স্যার" নামে।
এই নামের কারন হলো তার স্বভাব। স্যার কখোনো কাউকে ধমক দিয়েও কথা বলেননি;
গায়ে হাত তোলা তো অনেক দুরের ব্যাপার। আমাদের কাছে হাই স্কুলের বাংলা ক্লাস মানেই
বোরিং একটা সময় পার করা। আমরা অধিকাংশ সময়ই অমনোযোগী থাকতাম।
তবে মাঝে মাঝে বাংলা ক্লাসটা খুব মজা লাগতো, যখন স্যার তার গল্পের ঝুলি থেকে
কোনো ১টা আজব গল্প বের করতেন। সেই গল্পগুলো হতো মজাদার এবং শিক্ষামুলক।
ঠান্ডা স্যারের একটি গল্প শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছি না..
মোহন কবিরাজ এলাকার নাম করা কবিরাজ। মৃত্যুর পর নিজের কবিরাজী বিদ্যাগুলো
১মাত্র পুত্র নন্দকে দিয়ে যেতে চান। কবিরাজ নন্দকে ডেকে বললেন,
"বাবারে, আমার মরার পর চিতার আগুন নিভে গেলে সবাই যখন চলে যাবে তুই সেখানে
একাই বসে থাকবি। কিছুক্ষন পর যা দেখতে পাবি তাকে সাহস করে জড়িয়ে ধরবি।
ভয় করিস না। দেখবি, আমার সব বিদ্যা তুই পেয়ে যাবি।"
কবিরাজ মশাইয়ের মৃত্যুর পর যথাসময়ে সবাই প্রস্থান করলে,
নন্দ গাছের আড়ালে লুকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষন পর ১টা হাতী বিকট শব্দ করে
এগিয়ে আসে। নন্দ ভয়ে গাছের ওপর উঠে যায়। এভাবে একের পর এক সিংহ, বাঘ, ভাল্লুক,
হায়েনা, সব চলে যেতে থাকে, আর নন্দ গাছের ওপর বসে কাঁপতে থাকে।
শেষে ১টা ভেড়া ম্যাঁ ম্যাঁ করে দুর্বল পায়ে হেটে যেতে থাকে। নন্দ এবার সাহস করে
ভেড়ার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। ভেড়া ১টা দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে বললো,
"হাতী ঘোড়া গেলো তল,
ভেড়া কয় কতো জল !!
হাতী, ঘোড়া, বাঘ যেগুলো দেখেছিস সেগুলো সব এক-একটা বড় বড় রোগ।
ঐগুলো যদি সাহস করে একবার ধরতে পারতি তাহলে সব বড় ঔষধের বিদ্যা পেয়ে যেতি।
তারপরও যখন আমাকে ধরেছিস, আমি তোকে নিরাস করবো নাহ্।"
কিছুদিন পরেই নন্দ কবিরাজ হিসেবে নাম করে ফেলে।
ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিস ছোট-খাটো সব অসুখ নন্দ নিমিসেই সারিয়ে ফেলে।
ভয়টা ছেড়ে একবার তুই বেরিয়ে তো আয়,
দেখ নতুন ভোরের সূর্য হাসে তোরি অপেক্ষায়..!!
Shahedul Hasan