১লা এপ্রিল। ১৪৯২ সালের এই দিনে খ্রিষ্টান
রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও রাণী ইসাবেলা
স্পেনের লাখ লাখ মুসলমানকে বোকা বানিয়ে
আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। সেই থেকে এই
দিনটি এপ্রিল ফুল ডে হিসেবে পরিচিত। যদিও
মুসলমানদের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও
শোকাবহ দিন।
৭১১ খ্রিস্টাব্দ। মুসলিম সেনাপতি তারেক বিন
জিয়াদ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ১২ হাজার
সৈন্য নিয়ে অত্যাচারী রাজা রডরিকের ১ লাখ
২০ হাজার সৈন্যের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা
করে জয়লাভ করে ঐতিহাসিক স্পেন জয় করেন। এই
বিজয়ের মধ্য দিয়ে পরবর্তী ৮শ’ বছর মুসলমানরা
আধিপত্য বিস্তার করে। এই ৮শ’ বছরে স্পেনে
জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সভ্যতার
ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি লাভ করে। তার
সাক্ষী গ্রানাডা, আলহামরা, টলোডো প্রভৃতি।
এই ৮শ’ বছরের শেষের দিকে মুসলমানরা তাদের অতীত
ইতিহাস-ঐতিহ্য ও আদর্শ থেকে সরে গিয়ে
ভোগবিলাসিতা এবং লোভ-লালসায় জড়িয়ে
পড়ে। খ্রিস্টানদের চোখে ধরা পড়ে
মুসলমানদের অনৈক্য ও দুর্বলতা।
১৪৬৯ সালে খ্রীস্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ড
পর্তুগীজ রানী ইসাবেলাকে বিয়ে করে দুই বৃহৎ
খ্রীস্টান শক্তি সম্মিলিত শক্তি রুপে
আত্মপ্রকাশ করে। তারা স্পেনের মুসলিম
সভ্যতার অস্তিত্বকে গুঁড়িয়ে দেয়ার শপথ
নেয়। ১৪৮৩ সালে ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা একটি
শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী পাঠান মালাগা
প্রদেশে। যাদের প্রতি হুকুম ছিল শস্যক্ষেত্র
জ্বালিয়ে দেয়া, জলপাই ও দ্রাক্ষা গাছ
কেটে ফেলা, সমৃদ্ধিশালী গ্রাম ধ্বংস করা,
গবাদিপশু তুলে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। সেই
সময় মৃত্যু ঘটে স্পেনের শাসক আবুল হাসান
আলীর। শাসক হন আজজাগাল। এক পর্যায়ে
প্রাণরক্ষা ও নিরাপত্তার অঙ্গীকারের ওপর
নগরীর লোকেরা আত্মসমর্পণ করলেও নগরী জয় করেই
ফার্ডিনান্ড চালান গণহত্যা। দাস বানানো হয়
জীবিত অধিবাসীদের। ৪ ডিসেম্বর ১৪৮৯। আক্রান্ত
হয় বেজার নগরী। আজজাগাল শত্রুদের সাময়িক
প্রতিহত করলেও একপর্যায়ে আত্মসমর্পণ করেন।
ডিসেম্বর ১৪৯১-এ গ্রানাডার আত্মসমর্পণের শর্ত
নির্ধারিত হলো। বলা হলো : ‘ছোট-বড় সব
মুসলমানের জীবনের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া
হবে। তাদের মুক্তভাবে ধর্ম-কর্ম করতে দেয়া
হবে। তাদের মসজিদ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অক্ষত
থাকবে। তাদের আদবকায়দা, আচার-ব্যবহার,
রাজনীতি, ভাষা ও পোশাক-পরিচ্ছদ অব্যাহত
থাকবে। তাদের নিজেদের আইনকানুন অনুযায়ী
তাদের প্রশাসকরা তাদের শাসন করবেন …।’ ১৪৯২
সালে গ্রানাডাবাসী আত্মসমর্পণ করল।
রানী ইসাবেলা ও ফার্ডিনান্ডের একপর্যায়ে
চুক্তি লঙ্ঘন করতে লাগলো। চারদিকে চলছিল
ভয়াবহ নির্যাতন। পাইকারি হারে হত্যা বর্বরতার
নির্মম শিকার হতে থাকলেন অসংখ্য মুসলমান।
স্পেনের গ্রাম ও উপত্যকাগুলো পরিণত হয়
মানুষের কসাইখানায়। যেসব মানুষ পর্বতগুহায়
আশ্রয় নিয়েছিল, তাদেরও মেরে ফেলা হলো
আগুনের ধোঁয়া দিয়ে।
পহেলা এপ্রিল, ১৪৯২। ফার্ডিনান্ড ঘোষণা করলেন,
যেসব মুসলমান গ্রানাডার মসজিদগুলোতে আশ্রয়
নেবে, তারা নিরাপদ। লাখ লাখ মুসলমান আশ্রয়
নিলেন মসজিদগুলোতে। ফার্ডিনান্ডের
লোকেরা সবগুলো মসজিদে আগুন লাগিয়ে দিল।
তিনদিন পর্যন্ত চললো হত্যার উত্সব।
ফার্ডিনান্ড লাশপোড়া গন্ধে অভিভূত হয়ে
হাসলেন। বললেন, হায় মুসলমান! তোমরা হলে
এপ্রিলের বোকা (এপ্রিল ফুল)।
এই গণহত্যার পরও যেসব মুসলমান আন্দালুসিয়ায়
রয়ে গিয়েছিলেন, তাদের ফার্ডিনান্ডের
ছেলে তৃতীয় ফিলিপ সহায়-সম্বলহীন অবস্থায়
সমুদ্রপথে নির্বাসিত করেন। তাদের সংখ্যা ছিল
পাঁচ লাখেরও বেশি। ইতিহাস বলে, তাদের মধ্যে
খুব অল্পসংখ্যক লোকই জীবিত ছিলেন।
বিপুলসংখ্যক মানুষ সমুদ্রে ডুবে মারা যায়।
তথ্য সংগ্রহ- উইকিপিডিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৩২