৯ ডিসেম্বর ১৯৭১, রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (বর্তমান রুয়েট) ছাত্র হল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র ও শিক্ষক'কে। পরবর্তী দুই দিন তাঁদের ওপর চালানো হয়েছিল অবর্ণনীয় নির্মম অত্যাচার এবং আজ থেকে ৪৬ বছর পূর্বের এদিন অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর প্রত্যুষে হত্যা করা হয় তাঁদের।
এদিনের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র ও শিক্ষকদের মাঝে ছিলেন শহীদ আমিনুর রহমান শমসের। রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমান রুয়েট)'এর ছাত্র শহীদ আমিনুর রহমান ছিলেন বিজি প্রেসের কর্মকর্তা শ্রদ্ধেয় হাবিবুর রহমান ও শ্রদ্ধেয় আশরাফুন্নেসার ৫ পুত্র এবং ৪ কন্যার মাঝে দ্বিতীয়।
অত্যন্ত মেধাবী এ মানুষটি ছিলেন প্রচণ্ডরকম সংস্কৃতিপ্রেমী। ঢাকায় তেজগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন 'কলতান সাংস্কৃতিক সংসদ'। এমনকি এই সংগঠন থেকে প্রকাশ করতেন 'সূর্য ক্ষুব্ধ কারা' নামের একটি প্রকাশনা। নিয়মিত লিখতেন 'দৈনিক পূর্বদেশ', 'দৈনিক আজাদ', 'দৈনিক ইত্তেফাক'সহ বিভিন্ন পত্রিকায়।
শহীদ শমসের, 'ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজ' (বর্তমান বিজ্ঞান কলেজ) থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমান রুয়েট) ভর্তি হন।
ষাট ও সত্তরের দশকের উত্তাল ও আলোকিত দিনগুলো তাঁকেও আলোড়িত করেছিল নিঃসন্দেহে। রাজশাহীতে গিয়েও তিনি 'অগ্নিশপথ' নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন নিয়মিত ভাবে। মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নেই চলে যান স্বদেশকে পাকি হার্মাদ মুক্ত করার প্রতিজ্ঞায়।
অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে স্বাধীনতার মাত্র ৬ দিন পূর্বে গভীর রাতে কোন এক দেশীয় বেইমানের তথ্য পেয়ে ঘিরে ফেলা হয় সেই আবাসিক হল এবং ধরে নিয়ে যাওয়া হয় শহীদ শমসের সহ আনুমানিক ১২ অথবা ১৫ জনকে। নিয়ে যাওয়া হয় বোয়ালিয়া অথবা কাজলা থানায়, সেখানেই চলে নির্মম অত্যাচার। অবশেষে ১২ই ডিসেম্বর ১৯৭১, ভোরে তাঁদের গুলি করে হত্যা করে পাকি হার্মাদ বাহিনী ও আলবদর বাহিনীর অমানুষরা।
মৃত্যুর ৪৫ দিন পর তাঁদের লাশ উদ্ধার হয় রাজশাহী শহরের গণকবর থেকে এবং অবিশ্বাস্যভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আমিনুর রহমান শমসেরের দেহ অনেকটাই অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায় উদ্ধারকৃত অন্য শবদেহের তুলনায়। সেই ছবিটি (যেটি পোস্টের সাথে যুক্ত) দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হবার পর শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন তাঁদের সন্তান,ভাই আর ফিরে আসবেন না।
রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কাছে তিনজন শহীদের সমাধি রয়েছে নামফলক সহ। তাঁদেরই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আমিনুর রহমান শমসের।
'গেরিলা ১৯৭১' পরিবার এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ৪৬ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে হৃদয় নিঙড়ানো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি, একইসাথে,পরম করুনাময়ের কাছে তাঁর আত্মার চিরশান্তি প্রার্থনা করছি।
কৃতজ্ঞতাঃ স্থপতি রেজাউর রহমান (শহীদ আমিনুর রহমানের কনিষ্ঠ ভাই)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৯