somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুড়ানো ( পর্ব - ১৫) ★ " অপারেশান ফ্লাইং ফ্ল্যাগস " ★

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছবির প্রতিটি মানুষ, বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন নিশ্চিতভাবেই।সবার মাঝে আছেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। তাঁকে ঘিরে রয়েছেন বাঁ থেকে শায়মা খান, হাবিবুল আলম বীর প্রতীক, রেশমা আমিন এবং জাহানারা ইমামের পায়ের কাছে উপবিষ্ট ডান দিকে আসমা নিসার এবং বামে নাজমা আকবর।

একাত্তরের যেসব বর্বর ঘাতকদের ফাঁসি হয়েছে অথবা বিচার পর্বে আছে, সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ৭৫ পরবর্তী সময়ে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ছিলেন সবচে উচ্চকিত কণ্ঠস্বর, ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলনের বীজ ছিল তাঁর পবিত্র হাতে রোপিত।

অবরুদ্ধ ঢাকায় প্রবেশকারী প্রথম গেরিলা দলের দুর্ধর্ষ সদস্য হাবিবুল আলম বীর প্রতীকের অপারেশনগুলো কিংবদন্তী আজ। বাকি ৪ জন কি করেছিলেন তবে? সে কথাই বলছি, আগেই জানিয়ে রাখি শ্রদ্ধেয় শায়মা খান, রেশমা আমিন, আসমা নিসার এবং নাজমা আকবর হচ্ছেন হাবিবুল আলম বীর প্রতীকের চার বোন। যাঁদের সহযোগিতায় একাত্তরের আগস্টে পাকি হায়েনার হাতে অবরুদ্ধ ঢাকায় উড়েছিল বাংলাদেশের হাজার খানেক পতাকা। এর বাইরেও অস্ত্র পরিষ্কার, অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, গ্রেনেড বহনের মতো দুঃসাহসী কাজগুলো উল্লেখিত চার বোন মিলে করেছিলেন একাত্তরের ক্রান্তিকালে।

অপারেশান ফ্লাইং ফ্ল্যাগস
★★★★★★★★★★★★★
স্থান: ঢাকা
সময়: সকাল ৯:৩০ মিনিট
তারিখ: ১৪ই আগস্ট ১৯৭১

আগস্ট ১৯৭১। ঢাকার অভ্যন্তরে ক্র্যাক প্লাটুনের অপারেশনে দিশেহারা পাকিস্তানী শকুন বাহিনী। রাত-দিন সর্বত্র ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে গ্রেনেড বা বোমা বিস্ফোরণের শব্দ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে রাতে এই ধরণের বিস্ফোরণের শব্দ না শুনলে ঘুমই আসতো না মুক্তিকামী জনতার। এরই মাঝে এগিয়ে আসতে থাকে ১৪ই আগস্ট ১৯৭১, পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। পাকিস্তানী ও রাজাকাররা এই দিনে গর্বের সাথে ওড়াবে পাকিস্তানী পতাকা, দেখাতে চাইবে বিশ্বকে বাংলাদেশের অবস্থা স্থিতিশীল, কিন্তু ক্র্যাক প্লাটুনের দূর্ধর্ষ যোদ্ধারা তা ভেবেছিলেন একটু অন্যভাবে......

এবার তারা পরিকল্পনা করলেন এক অন্যরকম যুদ্ধের। পাকিস্তানী পতাকাকে ম্লান করে অবরুদ্ধ ঢাকার আকাশে তারা ওড়াবেন বাংলাদেশী পতাকা। কিন্তু কীভাবে করবেন এই দুঃসাধ্য কাজ? প্রতিককূলতা যে প্রচুর। সাথে সাথেই তাদের মাথায় এলো এক জিনিয়াস আইডিয়া। বেলুনে বেঁধেই ঢাকার আকাশে তারা ওড়াবেন বাংলাদেশী পতাকা।

যেই ভাবনা সেই কাজ। একসাথে এত লাল-সবুজ কাপড় কিনলে সন্দেহ হতে পারে পাকিস্তানী বাহিনীর। তাই শাহাদাত চৌধুরী সদরঘাট থেকে কিনে আনেন অনেকগুলো সবুজ লুঙ্গী আর লাল রঙ্গের পুরনো কাপড়। বীর প্রতীক হাবিবুল আলম নিউমার্কেট থেকে কিনে নেন অনেক হলুদ রঙ্গের কাপড়।

কাপড় তো হলো এবার পতাকা বানানো যায় কীভাবে? এগিয়ে এলেন বীর প্রতীক হাবিবুল আলমের পরিবার। তাঁর চার বোন শায়মা, আসমা, রেশমা, শাহনাজ মিলে রাত ভর শুরু করেন বাংলাদেশী পতাকা বানানো। বাদ যাননি চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী ও তার পরিবার। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই নিঃস্বার্থভাবে গেরিলাদের সহায়তা দিয়ে যাওয়া এই চিত্রশিল্পী ও তার পরিবারও বানিয়েছিলেন অনেক পতাকা। দিলু রোডের অনেক মেয়েও অংশ নেন এই পতাকা বানানোর মিশনে। সব মিলিয়ে প্রায় পাওয়া যায় আড়াই শতাধিক পতাকা।

মাসুদ সাদেক চুল্লু, ধোলাইখাল থেকে যোগাড় করেন একটি গ্যাস সিলিন্ডার, সেই সাথে পুরনো ঢাকা থেকে যোগাড় করেন প্রচুর বেলুন। সব যোগাড় করে রাখা হয় ধানমন্ডীতে।

অবশেষে নির্ধারিত দিনে ১৪ই আগস্ট ১৯৭১, পাকিস্তানী ও অন্যান্য পাকীপ্রেমিকরা যখন ব্যস্ত তাদের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে, ঠিক তখনই সকাল সাড়ে ন'টার দিকে ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করে এক অবাককরা ঘটনা। মৃত্যে পাকিস্তানী পতাকা থাকলেও তীব্র বিস্ময়ে তারা তাকিয়ে দেখে আকাশ ভরে যাচ্ছে বাংলাদেশী পতাকায়। প্রতিটি পতাকার সাথে দু'কোনায় বাঁধা দু'টি বেলুন, আর তার উপর ভর করে গর্বের সাথে আয়েশী ভঙ্গীতে উড়ে চলছে বাংলাদেশী পতাকা।

একটি দু'টি নয়, শত শত পতাকা উড়ে বেড়াচ্ছে শরতের আকাশে। গর্বে ফুলে ওঠে বাঙ্গালীদের হৃদয়, মুক্তির সংগ্রামে সহায়তায় আরো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় তারা। এই অপরাশেনার উদ্দেশ্য ছিলো পাকিস্তানী বাহিনী নিধন নয়, অবরুদ্ধ ঢাকার আটকে পড়া বাঙ্গালিদের আশা দেওয়া, মুক্তি আসছে শীঘ্রই।

আর তৃতীয় শ্রেণীর গর্দভ পাকি'রা কিছুক্ষণ পরই আকাশের দিকে গুলি করতে থাকে পতাকা লক্ষ্য করে। কিন্তু অল্প কিছুক্ষণ পরেই তারা বুঝতে পারে, এই দেশের মাটি আর বাতাসের সাথে মিশে আছে এই অগণিত পতাকার অস্তিত্ব, সামান্য গুলিতে তা নিশ্চিহ্ন করা যাবে না কখনোই।
---------

★★ ছবি কৃতজ্ঞতাঃ নাজি পাপা

★★তথ্যসূত্রঃ ব্রেভ অফ হার্ট। (হাবিবুল আলম বীর প্রতীক)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৪৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×