somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তানজীর আহমেদ সিয়াম
সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি কোন ব্লগার নই মন চায় তাই লিখি তথ্য-উপাত্ত সবার সাথে শেয়ার করি ।nজব এর পাশাপাশি এয়ার টিকেট ও ট্রাভেল ভিসার ব্যাবসা করি ।nধন্যবাদn

কুড়ানো ( পর্ব - ১৬) ★ " শেষ রণাঙ্গনের শহীদঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট সেলিম কামরুল হাসান " ★

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের শেষ রণক্ষেত্রের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট সেলিম কামরুল হাসান।

সদ্য স্বাধীন বাঙলা'র রাজধানী ঢাকা'র মিরপুর তখনো পলাতক পাকিস্তানী সেনা ও বিহারী'দের হাতে অবরুদ্ধ। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানের চূড়ান্ত পরাজয়ের পরও এই অঞ্চলে বেশকিছু নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল।
এমন পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় ও চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট'কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল এই অবরোধের অবসান ঘটাতে। ৩০শে জানুয়ারি ১৯৭২ সালে, এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে স্বাধীন দেশে শহীদ হয়েছিলেন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট সেলিম কামরুল হাসান সহ আরও ৪০ জন সহযোদ্ধা। এরই ধারাবাহিকতায় পরদিন ৩১ শে জানুয়ারি ১৯৭২, সকালে সেনাবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমনে মুক্ত হয় মিরপুর এলাকা।
উল্লেখ্য, ৩০ শে জানুয়ারি ১৯৭২- এর এই দিনেই প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান, পুলিশ অফিসার লোদী সহ বেশ কয়েকজন, বিহারী ও পলাতক পাকি সেনাদের হাতে নৃশংস ভাবে নিহত হন।
১৬ ডিসেম্বর, বিজয়ের ৪৬ দিন পর মুক্ত বাংলাদেশের বুকের কোণে অবরুদ্ধ মিরপুরে দলছুট পাকিস্তানি সেনাসহ আলবদর বাহিনী তথা বিহারি মুজাহিদ কর্তৃক নিয়াজী তথা পাকি হায়েনাদের আত্মসমর্পণ চুক্তি ভঙ্গ করে বাঙালি সেনাদের ওপর আক্রমণ করে। পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের মাটিতে পরাভূত হওয়ার পরও এ দেশকে তাদের করায়ত্ত রাখার জন্য যে অশুভ পরিকল্পনা ও অভিলাষ পোষণ করছিল, মিরপুরে সংঘটিত ঘটনা ছিল তারই একটি প্রমাণ।
শহীদ সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট সেলিম ১৯৪৮ সালে যশোরের অভয়নগরের চিকিৎসক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশব থেকেই গণিতে ছিল অসাধারণ মেধা। মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের আগে তিনি রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যয়নরত ছিলেন। সেখানে তিনি কেবল একজন আপোষহীন ছাত্রনেতাই ছিলেন না, একজন অসাধারণ অ্যাথলেট ও কৃতী খেলোয়াড় হিসেবে কলেজ ও বিভাগীয় পর্যায়ের অধিকাংশ ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন।
এই অসাধারণ বীরযোদ্ধা এবং তাঁর ভাই লেফটেন্যান্ট আনিস (ডা. এম,এ, হাসান নামে সুপরিচিত) ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকার তেজগাঁওয়ে ১ প্লাটুন পুলিশ সদস্য নিয়ে যে যুদ্ধ শুরু করেন তা পরিণত সমরের রূপ নেয় ১৯৭১-এর ১৪ এপ্রিল লালপুর আশুগঞ্জে। তেলিয়াপাড়ার প্রতিরোধ যুদ্ধসহ বিভিন্ন যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের বারবার পরাভূত করেছেন তিনি। সিলেটের হরশপুর ও নোয়াখালীর বিলোনিয়া-পরশুরাম মুক্তকরণ অভিযানে তিনি দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডেল্টা কোম্পানির কমান্ডারের সহযোগী হিসেবে যুদ্ধ করেছেন।
১৯৭১-এর জুনের শেষে এবং জুলাইয়ের শুরুতে শহীদ সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট সেলিম মোহাম্মদ কামরুল হাসান প্রথম শর্ট কোর্স গ্রহণ করেন এবং ৯ অক্টোবর ১৯৭১ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। জুলাইয়ের শেষে ভারতে যে ৬১ জন অফিসারকে ট্রেনিং দেওয়া হয় তাদের মধ্যে মেধা তালিকায় শীর্ষদের মধ্যে ছিলেন তিনি। অক্টোবরের ১৮ তারিখে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলে যোগ দেন এবং ক্যাপ্টেন হেলাল মোর্শেদকে নিয়ে বিলোনিয়া যুদ্ধে শরিক হন। ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ আখাউড়া যুদ্ধে লেফটেন্যান্ট বদি শহীদ হলে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলের ব্রাভো কোম্পানির দায়িত্ব নেন সেলিম। সেলিম ও আনিস ভ্রাতৃদ্বয় পাকিস্তানের জন্য ত্রাস সৃষ্টি করে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজর কাড়েন। তাদের নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করেছিল এবিসি টেলিভিশন।
শহীদ সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট সেলিম তখন বঙ্গভবনে থাকতেন। সহযোদ্ধাদের নিয়ে ৩০ জানুয়ারি সকালে মিরপুর ১২ নং সেক্টরের ডি ব্লকে যান। ওই দিন সকাল থেকেই মিরপুর উত্তপ্ত ছিল। প্রতি রাতে সেখান থেকে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যেত। ৯ মাস ধরে মিরপুর ছিল অবাঙালিদের মিনি ক্যান্টনমেন্ট। প্রচুর অস্ত্রের মজুদ ছিল এখানে।
এসব অস্ত্র নিয়েই পাকি হার্মাদ ও বিহারী অমানুষরা অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করে। জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে, সেকেন্ড লে. সেলিমই যুদ্ধ পরিচালনা করেন অবরুদ্ধ মিরপুরে। ৩০ জানুয়ারি ’৭২এর সারাটা দিন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজের শেষ রক্তবিন্দু ঝরিয়ে যুদ্ধ করে বিজয়ের পথ খুলে দেন সেলিম। পরদিন, ৩১ জানুয়ারি ১৯৭২-এর প্রভাতে মুক্ত হয় অবরুদ্ধ মিরপুর।
এই যুদ্ধের এক পর্যায়ে সেলিম গুলিবিদ্ধ হলে নিজের গায়ের শার্ট খুলে ক্ষতস্থান বেঁধে নেন। তার সহযোদ্ধারা বলেছিল, 'স্যার, আপনি আমাদের ফেলে যাবেন না।' শহীদ সেলিম প্রতিজ্ঞা করে বলেছিলেন, 'আমার গায়ে একবিন্দু রক্ত থাকতে তোমাদের ফেলে যাব না।' মুক্ত হলো মিরপুর।
মিরপুর মুক্তিদাতা শহীদ সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট সেলিম মোহাম্মদ কামরুল হাসান এভাবেই দান করলেন নিজ জীবন। বিকেলের দিকে জীবিত সেনাদের নিয়ে কালাপানির ঢালের কাছে তিনি দাঁড়িয়েছেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ফ্যাকাশে ও ক্লান্ত। সবাইকে উৎসাহ জুগিয়েছেন বিল পার হয়ে ক্যান্টনমেন্টের দিকে যেতে। নিজে পানিতে নামেননি। ক্লান্ত শরীরটা একটি গাছের আড়ালে রেখে একটা একটা করে গুলি চালাচ্ছিলেন ঘাতকের দিকে। কভার ফায়ার দিয়ে সহযোদ্ধাদের সরে যেতে সাহায্য করছিলেন।
সেদিন রাতে মেঘে ঢাকা চাঁদ ছিল। ঝিরঝির করে বৃষ্টি ঝরছিল। হয়তো সে সময় তিনি ভাবছিলেন Reinforcement আসবে। না, কেউ তাকে উদ্ধার করতে যায়নি। সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন সেনা কর্মকর্তা মঈন এবং সফিউল্লাহ।
এ অক্ষমতা ঢাকার জন্যই হয়তো তাঁর কমান্ডার মেজর মঈন (পরে জেনারেল) ও জেনারেল সফিউল্লাহ তাদের মিরপুরে মাটির নিচে চাপা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস কথা কয়, তাই ১৯৯৯ সালে তাঁর দেহাবশেষ ভেসে ওঠে। মিরপুর মুক্তিদাতা সেলিমকে কোনোভাবে সম্মানিত করার এতটুকু উদ্যোগ নেওয়া হয়নি সামরিক বাহিনী থেকে। রাষ্ট্রীয় কর্তব্য পালনের জন্য, দেশপ্রেমের জন্য, নতুন দেশ ও সেনাদের সম্মানের জন্য যে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েছে তার এতটুকু মূল্যায়ন হয়নি।
অথচ একজন বীর সেনা এবং মুক্তিযোদ্ধার সম্মান তথা দায়িত্বকে সর্বোচ্চ মূল্য দিতে একজন প্রকৃত বীরের মতো যুদ্ধ করতে করতেই শহীদ হয়েছিলেন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট সেলিম।
শহীদ সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট সেলিমের ৪৭ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর আত্মার চিরশান্তি প্রার্থনা করছি।
কৃতজ্ঞতাঃ শহীদ জননী সালেমা বেগম এবং লেফটেন্যান্ট আনিস (ডাঃ এম,এ,হাসান – প্রতিষ্ঠাতা, ওয়্যার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি, শহীদ সেলিমের অগ্রজ)






একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট সেলিম কামরুল হাসান।





১৯শে ডিসেম্বর ১৯৭১, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অস্থায়ী হেড কোয়ার্টারে সর্ব ডানে দাঁড়িয়ে আছেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের শেষ রণক্ষেত্রের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট সেলিম কামরুল হাসান।





স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের শেষ রণক্ষেত্রের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট সেলিম কামরুল হাসান।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪৪
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×