somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তানজীর আহমেদ সিয়াম
সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি কোন ব্লগার নই মন চায় তাই লিখি তথ্য-উপাত্ত সবার সাথে শেয়ার করি ।nজব এর পাশাপাশি এয়ার টিকেট ও ট্রাভেল ভিসার ব্যাবসা করি ।nধন্যবাদn

কুড়ানো ( পর্ব - ২২) 'রোকেয়া হল গণহত্যাঃ বিস্মৃত নৃশংস অধ্যায়'

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ থেকে ঠিক ৪৬ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল প্রাঙ্গনে উন্মোচিত হয়েছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্মমতার আরও একটি নিদর্শন। সেদিন সোমবার ২৪ এপ্রিল ১৯৭২ সাল। রোকেয়া হলের গণকবর খুঁড়ে ১৫টি মাথার খুলিসহ প্রচুর হাড় উদ্ধার করা হয়েছিল।



পাকিস্তানী নরপশুদের নৃশংস গণহত্যার শিকার শহীদদের দেহাবশেষ পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন প্রাঙ্গনে সমাধি দেয়া হয়। এই গণকবর থেকে সেদিন একটি ঘড়ি ও কয়েকগাছি চুড়ি পাওয়া যায়। ঘড়িটি নাসিরউদ্দিন নামে এক ব্যক্তির বলে জানা যায়, তাঁর ভাই গিয়াসউদ্দিন রোকেয়া হলের কর্মচারী ছিলেন। আরেক কর্মচারী আলী আক্কাসের মেয়ে রাশিদার কিছু চুড়ি পাওয়া যায়। এখানেই নমী রায়ের (কর্মচারী) ভাইয়ের স্ত্রী'র চুড়ি পাওয়া গেছে। নমী রায় এবং তাঁর পরিবারের ৭ জন সদস্য ২৫শে মার্চ একাত্তরের কালরাতে রাতে শহীদ হন। উল্লেখ্য যে,চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের কোয়ার্টারের প্রতিটি বাসায় হানা দিয়েছিল পাকিস্তানী জল্লাদ'রা।

২৫শে মার্চ একাত্তর দিবাগত রাতে, রোকেয়া হলের নিরাপত্তা কর্মী মরহুম মনির উদ্দীন সারা রাত হলের পানির ট্যাংকির নিচে আত্মগোপন করেছিলেন। পরদিন ভোরে স্বজনদের খুঁজতে বেড়িয়ে আবিস্কার করেন একমাত্র মেয়ে সুরাইয়ার কন্যা রক্তের স্রোতে বসে আছে আর আপনমনে কথা বলছে চিৎকার করছে। সে রাতে এই শিশুটি ছাড়া পরিবারের ৫ জনকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানী হার্মাদরা।

২৫ মার্চ রাতে রোকেয়া হলে কী ঘটেছিল এ সম্পর্কে ঢাকার তৎকালীন মার্কিন কনসাল জেনারেল 'আর্চার কে ব্লাড' মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন পরবর্তীতে তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। অবমুক্ত মার্কিন গোপন দলিলে জানা যায়,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে ফ্যানের সিলিংয়ে ৬টি মেয়ের পা বাঁধা মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়। ধারণা করা হয়েছে, তাদের ধর্ষণ করার পর গুলি করে ফ্যানের সঙ্গে পা ঝুলিয়ে দেয়।

রোকেয়া হল গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের তৎকালীন ছাত্রী শ্রদ্ধেয় ফরিদা খানম সাকী। তিনি জানিয়েছেন,

"আমরা রাত ৮টার মধ্যে খাবার খেয়ে নিই। এরপর আমি ও আমার রুমমেট মমতাজ বেগম রুমে গিয়ে শুয়ে শুয়ে গল্প করি। রাত ১১টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়। সাড়ে ১১টার দিকে গুলির শব্দ শুনতে পাই। দূরে কোথাও হচ্ছে ভেবে আমরা আর গা করি না। গুলির আওয়াজ আরো বেড়ে যাওয়ায় আমরা দরজা খুলে বাইরে এসে দেখি পাকি সেনারা হলের মূল ফটক ভেঙে ফেলেছে। এরপর পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে। জগন্নাথ হল, জহুরুল হক হল থেকে গুলির আওয়াজ ভেসে আসছিল। অবিরাম গুলিবর্ষণে মনে হচ্ছিল একরাতেই বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করে দেবে। প্রচণ্ড ভীত হয়ে পেছনের দরজা দিয়ে প্রভোস্ট আখতার ইমামের বাসায় যাই। অনেক অনুনয় বিনয়েও তিনি আশ্রয় দিতে অস্বীকার করলে আবাসিক শিক্ষিকা সাহেরা বেগমের বাসায় আশ্রয় পাই। পরদিন রক্ত নদী পেরিয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় পৌঁছি"।

তৎকালীন হল প্রভোস্ট আখতার ইমাম কি লজ্জিত হয়েছিলেন এমন অমানবিক আচরণের জন্য? আমাদের জানা নেই।

২৫শে মার্চ পরবর্তী সময়ে ১০ নভেম্বর ১৯৭১ সালে কিছু সশস্ত্র দুস্কৃতিকারী রোকেয়া হল আক্রমণ করে এবং ৩০ জনের মতো ছাত্রীকে প্রায় দুই ঘণ্টার মতো অবরুদ্ধ করে রাখে। তারা প্রভোস্টের বাড়িও আক্রমণ করে। সেই সময়ে রোকেয়া হলের কাছেই দু'টি শক্তিশালী সেনা ঘাটি ছিলো, তাদের অজ্ঞাতসারে ছাত্রীনিবাসে দুই ঘণ্টা ধরে এই আক্রমণ চালানো একেবারেই অসম্ভব ছিলো। তাই ধরে নেয়া যায় যে, এটা তাদেরই কারো অথবা তাদের সুবিধাভোগী বিহারীদের কাজ ছিলো। যদিও, ১০ নভেম্বরের ঘটনার বিবরণ ও তথ্য খুবই অপ্রতুল।

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে আমাদের অনেকেরই প্রচণ্ড লজ্জিত হওয়া উচিত।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীরব থাকার জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তিদের কিছুটা বেশী লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া উচিত।

মানব ইতিহাসের অন্যতম বর্বর নৃশংস গণহত্যার বিচার না চেয়ে নির্লিপ্ত থাকার জন্য তাঁদের লজ্জিত হওয়া উচিত।

জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে আমাদের সোচ্চার ও উচ্চকিত দাবী করা উচিত এ গণহত্যার বিচারের।

ঘাতক রাষ্ট্র পাকিস্তান ও তাদের ঘাতক অমানুষ সেনাসদস্যদের বিচার তো আজও হলোনা। আমাদের সে দাবীও অনুপস্থিত। আজ থেকে ৪৬ বছর আগে মাটি খুঁড়ে তুলে আনা ১৫ টি করোটি আর অগণিত হাড় যেন আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে বলছে, 'তোমরা কি বিব্রত হবে?'

★★২৪ এপ্রিল ১৯৭২, রোকেয়া হলের গণকবর খোঁড়ার মুহূর্তে ছবিটি তুলেছেন কিংবদন্তী আলোকচিত্রী শ্রদ্ধেয় জালালুদ্দিন হায়দার।



একাত্তরে রোকেয়া হলের, শহীদ কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নাম তালিকা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:১৫
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×