somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তানজীর আহমেদ সিয়াম
সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি কোন ব্লগার নই মন চায় তাই লিখি তথ্য-উপাত্ত সবার সাথে শেয়ার করি ।nজব এর পাশাপাশি এয়ার টিকেট ও ট্রাভেল ভিসার ব্যাবসা করি ।nধন্যবাদn

কুড়ানো ( পর্ব ২৬ ) শ্রদ্ধেয় রফিকুল হক নান্টু

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



" কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই "

রবীন্দ্রনাথের কালোত্তীর্ণ উক্তিটি আজও আমাদের জন্য বড় বেশী প্রাসঙ্গিক। ছবির মানুষটি শহীদ নাদের ( মালিটোলার নাদের গুন্ডা ) নন। মানুষটির নাম রফিকুল হক নান্টু। শ্রদ্ধেয় এই মানুষটির ছবির মূল পরিচয় এবং একটি ভুলের অবসান টানার প্রয়াসে বেশ কিছু অতি বিচক্ষন বুজুর্গের গাত্রদাহ আমরা লক্ষ্য করেছি। তন্মধ্যে একজন তার ফেসবুক নামের পূর্বে, "বীর মুক্তিযোদ্ধা" বিশেষণ ব্যবহার করেন। তিনি আদাজল খেয়ে লাগলেন শহীদ নাদের মুক্তিযোদ্ধা নন এটা প্রমানের জন্য। শহীদ নাদের মুক্তিযোদ্ধা না হলে আপনিও মুক্তিযোদ্ধা নন জেনে রাখুন।

আরও কয়েকজন চলে আসলেন শ্রদ্ধেয় রফিকুল ইসলাম নান্টু কোন সেক্টরে কার অধীনে কোথায় যুদ্ধ করেছেন, কোন স্কুল, কোন কলেজ, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন সকল ঠিকুজি'র উত্তর চাই তাঁদের। বাহ, বোধকরি এ কারণেই আমাদের জাতীয় খেলার নাম , হা- ডু - ডু।

শ্রদ্ধেয় রফিকুল হক নান্টুর বিষয়ে জেনে নেই আসুন,

১) তিনি ২ নং সেক্ট্রর এর "K Force" এর সদস্য ছিলেন। কমান্ডার ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। সহযোদ্ধা ছিলেন পপ সম্রাট আযম খান।

২) তিনি বি,এ,এফ শাহীন কলেজে (স্কুল পর্যায়) অধ্যয়ন করেছেন, কলেজ ছিল মতিঝিল টি এন্ড টি নাইট কলেজ।

৩) এই ছবিটি আগস্ট/সেপ্টেম্বর এ তোলা হয়েছিল।সঠিক তারিখ খেয়াল নেই, পিলখানার বি ডি আর এমুনিশন কোরের কাছে, সেই জায়গা টি Observation Post (OP) হিসেবে ছিল। ছাদের উপরে পোস্ট টি ছিল।

৪) পিলখানার ভিতরে ছবিটি তোলা হয়নি। আজিমপুর সংলগ্ন পিলখানার বাইরে ছবিটি তোলা হয়েছে।

৫) ছবিটি তুলেছেন তাঁর বন্ধু এবং সহযোদ্ধা ইকবাল আহমেদ। এ ছবির মূল কপি আজও তাঁর সংগ্রহে আছে।

এবার জেনে নেই একাত্তরে ঢাকায় তাঁর অংশগ্রহনে সম্পন্ন একটি বিখ্যাত অপারেশনের ঘটনাঃ

ঢাকায় তাদের গেরিলা অপারেশনে পাঠানো হয়েছিল সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বে। খোকার ওই গেরিলা দলে আগরতলা থেকে ট্র্রেনিং নিয়ে আসা যোদ্ধা ছিলেন ৪০ জন। ঢাকায় এসে আরও ২০-২৫ জনকে রিক্রুট করা হয়েছিল। প্রথমে কমান্ডার খোকা তার নেতৃত্বাধীন ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ২০ জন করে দুটি সাব-কমান্ডে ভাগ করেন। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব বর্তায় নান্টুর বন্ধুস্থানীয় বড় ভাই পরবর্তীকালে জনপ্রিয় পপগায়ক আজম খানের ওপর, অপরটির নেতৃত্বে ছিলেন মোহাম্মদ শামসুল হুদা।রফিকুল হক নান্টু জানান, তারা যখন ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধ করছেন, তখন মুক্তিযোদ্ধারা দেশজুড়ে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তবু পাকিস্তানিরা সিনেমা হলগুলোতে সিনেমা শুরুর আগে 'চিত্রে পাকিস্তানি খবর' শিরোনামে তথ্যচিত্র দেখাত। 'চিত্রে পাকিস্তানি খবর' তথ্যচিত্রগুলোয় দেখানো হতো দেশের অবস্থা খুবই ভালো। দলে দলে নারী-পুরুষ বাজার-সদাই করে বেড়াচ্ছে। মিথ্যা দিয়ে এই সব তথ্যচিত্র নির্মাণের দায়িত্ব ছিল ডিএফপির। তাই গেরিলারা সিদ্ধান্ত নিলেন ডিএফপি উড়িয়ে দেবেন।

ডিএফপির তখনকার চিফ ক্যামেরাম্যান সাইদুল হক বাবু ছিলেন রফিকুল হক নান্টুর বড় ভাই। ভাইয়ের সঙ্গে গিয়ে নান্টু পুরো অফিসের হালহকিকত দেখে আসেন। ভবনটি সম্পর্কে জানাবার পর কী পরিমাণ বিস্টেম্ফারক দিয়ে তা উড়িয়ে দেওয়া যাবে, সে ব্যাপারে পরামর্শ দিলেন তাদের সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল সুফির বাবা প্রকৌশলী এস পি আহম্মেদ। নান্টু বলেন, যখনই প্রয়োজন হয়েছে, এস পি আহম্মেদ তার গাড়ি ও টাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন। তার মালিবাগের বাসা ছিল ঢাকায় যুদ্ধরত গেরিলাদের নিরাপদ আশ্রয়।

ডিএফপির ওই অভিযান পরিচালনার কথা জানাতে গিয়ে রফিকুল হক নান্টু বলেন, 'ডিএফপির অপারেশনটি আমরা চালিয়েছিলাম পবিত্র রমজানের শেষ শুক্রবারে। আমরা চাইনি, আমাদের অপারেশনে নিরীহ কেউ মারা যাক। তাই যে দারোয়ান পরিবার-পরিজন নিয়ে ডিএফপির ওই ভবনেই থাকতেন, তাকে তার স্ত্রী, শিশুসন্তান, এমনকি তাদের ব্যবহার্য হাঁড়ি-পাতিল পর্যন্ত সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিই।রফিকুল হক নান্টু বলেন, প্রশিক্ষণের সময় জেনেছিলাম, বিস্টেম্ফারক যত চাপের মধ্যে থাকবে, তার ধ্বংসক্ষমতা তত বাড়বে। সে জন্য টার্গেট করা জায়গায় ওটা রেখে দুটি স্টিলের আলমারি দিয়ে চাপা দিই আমরা। এতে বিস্টেম্ফারণটি এত ভয়াবহ হয়েছিল যে, ডিএফপি ভবনের উত্তর দিকের অংশটি উড়ে গিয়েছিল।

রফিকুল হক নান্টু বলেন, পরে দারোয়ান তার কাছে থাকা ডিএফপির একটি মাইক্রোবাসের চাবি আমাদের দিয়ে দেন এবং সেটি চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাই আমরা। এই বিস্টেম্ফারণের খবর ছড়িয়ে পড়ে সারা পৃথিবীতে। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র, আকাশবাণী, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকাসহ পৃথিবীর বহু প্রচারমাধ্যম বারবার গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছিল খবরটি। পাকিস্তানিদের মিথ্যা প্রচারণার স্বরূপ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় বিশ্ববাসী।

রফিকুল হক নান্টু একাত্তরের রমজান মাসে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানালেন। যেসব জাতীয় পরিষদ সদস্য ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মুক্তাঞ্চলে চলে গিয়েছিলেন, তাদের আসন শূন্য ঘোষণা করে সেগুলোতে উপনির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল কমিশনে। তখন কমিশনের কার্যালয় ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের উল্টো দিকে মোমেনবাগের দুটি ভাড়াবাড়িতে।রফিকুল হক নান্টু বলেন, আমাদের কমান্ডার খোকা ভাই, সুফি, লস্কর, হেদায়েত, বাশার ও আমি তিনজন করে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে দুই ভবনে বিস্টেম্ফারক স্থাপন করি। বিস্টেম্ফারণে দুটি ভবনের একাংশ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়।এ ছাড়া অবরুদ্ধ ঢাকায় আরও বেশ কয়েকটি অভিযানে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন রফিকুল হক নান্টু।

***********************************************************

পাদটীকাঃ একটি ছবিকে কেন্দ্র করে বিগত দেড় বছর ভুল প্রচারণা চলছিলো। আমরা টীম গেরিলা ১৯৭১- সেই ভুলটিকে ঠিক করে সঠিক তথ্যটি জানাবার প্রয়াস যখন নিলাম তখনই অত্যান্ত দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কিছু 'অতি পণ্ডিত বুজুর্গের' আবির্ভাব দেখলাম। তারা উঠেপড়ে লাগলেন শহীদ নাদের এবং শ্রদ্ধেয় রফিকুল হক নান্টু'র চরিত্রহননে। মুক্তিযুদ্ধের চৌকিদারিত্ব যেন তাঁদের ওপরেই ন্যস্ত। তারা লাঠিয়ালের ভূমিকা পালন করেন। কে মুক্তিযোদ্ধা আর কে নন, সেই সনদ যেন তাদের থেকে নিতে হবে।

আমরা বলি কি, " অনেক তো করলেন, খুবলে খুবলে খেলেন সবকিছুই, গাছের আগারটাও খেলেন গোঁড়ার'টাও কুড়ালেন। আর কত নষ্টামি দেখাবেন। লজ্জা হয়না আপনাদের? এসব ইতরামি ছাড়ুন, আপনাদের সুবিধাবাদী অতীত ও বর্ণচোরা বর্তমানের অনেক কিছুই আমাদের জানা। অন্যের দিকে আঙুল তোলার আগে আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখুন। ভুলে যাবেন না একটি আঙুল অন্যের দিকে তুললে বাকি তিনটি আঙুল নিজের দিকেই থাকে। কাজেই তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ আমি চোর বটে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০৬
১০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×