শাইখ সিরাজ অনেক নামকরা উপস্থাপক। তিনি খ্যাতিমান, এবং দেশের গর্ব। সামান্য মিথ্যা তার না বললেও চলে। তার পরেও তার এই মিথ্যাটিকে প্রতিবাদ করার জন্যই এই লেখা।
সংশোধনী
বিভিন্ন সময় আমরা বলেছি মাটি ও মানুষ নামকরণ হয় ১৯৮৫ সালে। আসলে এটি আমাদের ব্যর্থতা যে আমরা ঠিক সময়টি মনে রাখতে পারিনি। তবে হঠাৎ করেই একটি পুরানো কাগজ হাতে এসেছে- সেখানে ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসেও এই অনুষ্ঠানের নাম ছিল আমার দেশ। একটি পরিকল্পনার খসড়া। এই পরিকল্পনাটি আলিমউজ্জামান, গিয়াসউদ্দিন মিলকী এবং আমি তৈরি করেছিলাম। এই পরিকল্পনাটি টিভি কর্তৃপক্ষের কাছে জুলাই মাসে পেশ করা হয়। তখনো কিন্তু নামটি আমার দেশই ছিল। পরে ১৯৮৬ সালেই এর নাম মাটি ও মানুষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অতএব যারা ১৯৮২ সাল থেকে মাটি ও মানুষ করছেন বলে বলে বেড়াচ্ছেন- তাদের অসত্য ভাষণের আরেকটি প্রমাণ পাওয়া গেল।
চ্যানেল আইয়ের বার্তা বিভাগের পরিচালক শাইখ সিরাজ প্রথম আলোর ৫ আগস্ট ২০১৩-এর বিনোদন পাতায় কথোপকথন পর্বে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে বিটিভিতে কৃষি অনুষ্ঠান বিষয়ে তার মন্তব্য অসত্য ও নিন্দনীয়। উল্লেখ্য, শাইখ সিরাজ ১৯৮৫ সালে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে যুক্ত হলেও তিনি বরাবরই এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাকারী বলে দাবি করে থাকেন। প্রথম আলোতে প্রকাশিত তার বক্তব্যেও এটা তার একক চিন্তা বলে দাবি করেন। প্রকৃত ঘটনা হলো- তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাগাজিন নামে বিনোদনমুখী এক অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন এবং এরশাদের সময় ১৯৮৪ সালে এই অনুষ্ঠান বন্ধ করা হলে সে সময়ের জেনারেল ম্যানেজার মোস্তফা কামাল সৈয়দ ‘মাটি ও মানুষের’ প্রযোজক আলিম উজ্জামান এবং এর উপস্থাপক হিসেবে আমাকে অনুরোধ করেন শাইখ সিরাজকে যুক্ত করতে। তখন আমার সাথে প্রতিবেদক হিসেবে তাকে যুক্ত করা হয়। উল্লেখ্য, মাটি ও মানুষের আদি নাম ছিল ‘আমার দেশ’। ১৯৮৫ সালে এর নতুন নাম হয় ‘মাটি ও মানুষ’। ‘মাটি ও মানুষ’-এর পরিকল্পনার সাথে যুক্ত ছিলেন- মরহুম আলিম উজ্জমান, মরহুম গিয়াসউদ্দিন মিলকী, খালেদা ফাহমী এবং উপস্থাপক হিসেবে আমি। এই অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় শাইখ সিরাজের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। শাইখ সিরাজ একজন ভাল উপস্থাপক, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু মাটি ও মানুষ নিয়ে মিথ্যাচার করতে গিয়ে প্রকৃত পরিকল্পনাকারীদের এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মী, বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণকর্মী, প্রগতিশীল কৃষকদের অপমান করছেন এবং সমাজের সামনে হেয় করছেন। তার মতো ব্যক্তির নিকট থেকে এটা আশা করা যায় না। উপরন্তু বাংলাদেশ টেলিভিশনের কলাকুশলীদের গড়া জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ‘মাটি ও
মানুষ’-এর নাম পরিবর্তনের অপপ্রয়াস চালান কয়েকবার। কিন্তু কলাকুশলীদের বাঁধার মুখে নাম পরিবর্তন সফল না হলে তিনি সেই ব্র্যান্ডের সাথে হৃদয়ে শব্দটি যুক্ত করে ভিন্ন একটি চ্যানেলে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ পরিচালনা করছেন। একটি পরিচিত নামকে উপজীব্য করে টিকে থাকার প্রচেষ্টা মূলত বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গীরই পরিচায়ক, এর সাথে অঙ্গীকারের কেনো সম্পর্ক নেই। মাটি ও মানুষ সরকারের পরিচালনাধীন বিটিভি থেকে প্রচার হওয়ার কারণে এই অনুষ্ঠানটি নিয়ে উচ্চবাচ্য করার প্রয়োজন পড়েনি, কারণ এর অর্থায়ন এবং পরিচালনার কাজটি বংলাদেশ টেলিভিশন নীরবেই করে গেছে। অনুষ্ঠানের কলাকুশলীদের তারকা বানানোর পরিবর্তে এই অনুষ্ঠান কৃষি, কৃষক ও কৃষি প্রযুক্তিকে তারকায় রূপান্তরিত করেছে। মাটি ও মানুষ ১৯৮৩ থেকে আজ পর্যন্ত আমার উপস্থাপনা ও সক্রিয় পরিকল্পনায় প্রচার হচ্ছে। এই ত্রিশ বছরে ‘মাটি ও মানুষ’ জনপ্রিয় করেছে- ভাল বীজের ব্যবহার, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, কৃষি উৎপাদনে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উন্নয়নে বেসরকারি উদ্যোগ ইত্যাদি। এসব কারণে এখনো উন্নয়নমূক অনুষ্ঠানের মধ্যে মাটি ও মানুষের জনপ্রিয়তা শীর্ষে। এই কথাগুলো বিনয়ের সাথে উপস্থাপন করা হলো
এ কারণে যে, সঠিক তথ্যের অনুপস্থিতিতে বিকৃতির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। শাইখ সিরাজ এতদিন ধরে যে অসত্যাচরণ করে গেছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের নীরবতা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্টদের প্রচারবিমুখতার কারণে তার সদুত্তর দেয়া সম্ভব হয়নি। সাংবাদিকরা সবসময় সত্য অনুসন্ধান করেন এবং তথ্য বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করে জাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দেন। আমরা আশা করেছিলাম, শাইখ সিরাজের এই সব কর্মকা- বিষয়ে দেশের
গণমাধ্যম কর্মীরা সঠিক সময় তুলে ধরবেন। আমার বিশ্বাস অধিকাংশ গণমাধ্যমকর্মী এ বিষয়টি জানা সত্ত্বেও এক প্রভাবশালী চ্যানেলের বার্তা পরিচালক হওয়ার কারণে গণমাধ্যম কর্মীরা তার বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। এটি আসলেই আমাদের হতবাক করে। এমনিভাবে চললে- এক্ষেত্রেও ইতিহাস বিকৃত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা আশা করবো, গণমাধ্যম কর্মীরা এক্ষেত্রে সঠিক তথ্যটি খুঁজে বের করবেন। কৃষি অনুষ্ঠানের সুবাদে শাইখ সিরাজ কৃষকদের নিয়ে নানা আয়োজন করেন সেগুলো কতটা কৃষি বা
কৃষকের কাজে আসে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। যে কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না, সেখানে কৃষকের হাসিকে পণ্য বানিয়ে ঈদ বিনোদন করছেন কয়েক বছর থেকেই। তিনি নিজেই বলেছেন- কৃষকের হাসিটাই বিনোদন। যে কৃষকের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সেই কৃষককে বাদর বানিয়ে কলাগাছে ওঠানোর প্রতিযোগিতা পরিচালনা করা কৃষকদের সাথে প্রহসন ছাড়া আর কিছু না।
তিনি অনেক নাম করা উপস্থাপক, যেটুকু মিথ্যা তিনি বলছেন- ওটুকু না বললে তার অবস্থান কমবে না। কিন্তু এ ধরনের আচরণে তিনি বিরত থাকলে তারই যে ভাল হবে এটা তিনি যত দ্রুত বুঝবেন ততই মঙ্গল।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:১৬