সুবোধ দেয়াল অঙ্কন, বুদ্ধিদীপ্ত এবং কৌতূহল উদ্দীপক। এর সাথে “কষ্টে আছি আইজুদ্দিন” কে এক করে দেখার কোন সুযোগ নেই। “সুবোধের” কুহক উপস্থিতি, সময়ের সুরে গাওয়া, মানুষের মনে এক আলোড়ন তৈরি করেছে। কেউ কেউ নিজের কথা, নিজের পাওয়া না পাওয়ার সাথে মিলিয়ে নিচ্ছেন এই খ্যাপাটে যুবকের সাথে। এ শহরের বৈরি বাতাস, বঞ্চনার লু হাওয়ায় অনেকেই ভেসে যেতে চাই, “সব ছেড়ে ছুঁড়ে বহু দূরে, যদি যাই চলে, বল কি হবে”, কার মনে না এই সুর বাজে।পালাতে চায়, যারাই ক্ষমতার বলয়ের বাইরে, দুর্নীতির টাকার ছড়াছড়ির বাইরে, ছুঁড়ে দেয়া উচ্ছিষ্টের বাইরে, তারা সবাই। যাপিত জীবনের বোঝা, নিত্যদিনের রাস্তার ঝামেলা, নিয়মহীনতার নিয়মে দাঁড়িয়ে যাওয়ার রেওয়াজ, মাসেল পাওয়ার, আর সবচেয়ে বড় বিচার হীনতা ক্রমেই প্রতিটি মানুষকে অসহায় করে দিচ্ছে, হতাশ করে দিচ্ছে, তাই এই সুবোধ এই আমাদের সবার প্রতিবিম্ব হয়ে উঠেছে। তার সব হারা চেহারা কিন্তু সূর্যকে পুষে রাখার এই আঁকা ছবি দেখে আমাদের মধ্যবিত্ত মন বলে উঠে “আরে! এই তো আমি”
“এখন সময় পক্ষে নয়” কি সুন্দর শব্দ গুচ্ছ! হাই-কি আঁকা আর এমন শব্দ গুচ্ছ, আর বুকের সূর্য, আর লাল হবেকি, এক সাইক্যাডেলিক লিরিক তৈরি করে। সিড ব্যারেট উঁকি দেন। একজন বলেছেন সুবোধ যেন জিমি হেন্ড্রিক্সের “হেই জো”!ইন্টারপ্রিটেশন যেভাবেই হোক সুবোধ কিন্তু উঁকি দিচ্ছে সবার মনে, কড়া নাড়ছে। আর বিচারপতি সিনহার নির্বাসনের দৃশ্যাবলী, সুবোধ কে দেওয়ালের ওপর থেকে সবার খোলা জানালায় নিয়ে এসেছে। এতেই বড় ভয় আমাদের রাজাদের, এতেই বড় ভয় আমাদের সেপাই-সান্ত্রী আর পেটোয়া বাহিনীদের। খোঁজ! খোঁজ!! কে করিল সৃজন, এহেন ধৃষ্টতা পূর্ণ, অবজ্ঞা পূর্ণ এ খ্যাপাকে? ধর কতল কর, শুলে চড়াও। জেলে ভর! গুম কর! পেট ফাঁসিয়ে শীতলখ্যার জলে ফেলে দাও। এগারটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দাও। জঙ্গি সংযোগ বের কর। মোসাদ খোঁজ! মারো আর মারো!
আবাক হতে হয়, এ তুচ্ছ্য আঁকা নাকি জনমনে ভয় তৈরি করছে। হে মহান! ভয় জনমনে নয় হে। এ আপনার ভীতি, আপনার ক্লেদ, আপনার পাপ, আপনার অবিচার, অন্যায়, ঘৃণা, অবহেলা, আমাকে তুচ্ছ জ্ঞান করার ফলাফল। আজ আঁক কষে কোন ফল পাই না কিন্তু একদিন সব কড়ায় গনডায় বুঝে নেব আমরা, তার ভয়! জনাব, সুবোধ কে ছাড়ুন! নিজের সু-বোধ কে জাগান!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৪৩