somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৯০ দশকের এশিয়ার অর্থনৈতিক সঙ্কট ও বিপর্যয়ের ঘটনা ও কারণ অনুসন্ধান

২৯ শে মে, ২০১২ রাত ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




 অর্থনৈতিক সঙ্কট কী :
অর্থনৈতিক সঙ্কট হলো মূলত এমন এক পরিস্থিতি যেখানে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সম্পদের দ্রুত অবমূল্যায়ন ঘটে। ১৯শতক ও ২০ শতকের শুরুতে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তারল্য সঙ্কট, শেয়ারমার্কেট সঙ্কট, মুদ্রা সঙ্কট ইত্যাদি নানা কারণে সঙ্কটের সূচনা হয়। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে যদিও সম্পদের দ্রুত অবমূল্যায়ন ঘটে থাকে কিন্তু এটি মূলত মন্দা কিংবা মহামন্দা সৃষ্টির পূর্বাভাস। যার কারণে থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক সঙ্কট পুরো দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটিয়েছিল।

 এশিয়ার অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময়কাল : ১৯৯৭-১৯৯৮



 শুরু কথা:

১৯৫০ সালের পূর্ব এশিয়া ছিল যুদ্ধ বিদ্ধস্ত একটি অঞ্চল; যা কখনো উচ্চ প্রবৃদ্ধি সম্পন্ন অঞ্চলে পরিণত হবে এটা কেউই আশা করেনি।। এমনকি ভবিষ্যৎ বানীও করতে পারেনি। কিন্তু এই অকল্পনীয় ঘটনাটির সূচনা হয় ষাটের দশকের শুরুর দিকে। ১৯৬০ সালে পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাফাল্য ছিল নজিরবিহীন। ধীরে ধীরে পূর্ব এশিয়া অর্থনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং পশ্চিমাদের উপর তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ এর দশকে পূর্ব এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.১ শতাংশ। ৭০ এর দশকে তা হতে বেড়ে হয় ৭.৯ শতাংশ। এমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে পূর্ব এশিয়ার মানুষের জীবনযাত্রার মানেরও উন্নয়ন ঘটে। ক্রয় ক্ষমতার মানদণ্ডে পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনীতি ১৯৯২ সালে পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাকে ধরে ফেলে। এ অঞ্চলের এমন আকর্ষণীয় উন্নয়নকে তখন ‘এশিয়ান মিরাকেল’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। আর পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘এশিয়ান টাইগার’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। মজার বিষয় হলো, বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান এশিয়ান মিরাকেল ধারনাটির সমালোচনা করলে তিনিই ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হন। কিন্তু উন্নয়নের সেই চরম মুহূর্তে ১৯৯৭ সালের জুলাইয়ে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনায় এশিয়ার সব অর্জন, রহস্য চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থমকে দাঁড়ালো। একইসাথে গোটা পূর্ব এশিয়া জুড়ে নামলো অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রবল থাবা, যা পরবর্তীতে “পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক সংকট, ১৯৯৭” নামে পরিচিত।
একদল অর্থনীতিবিদ যারা এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ‘মিরাকেল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন তারাই আবার এ অঞ্চলের উন্নয়নকে অবাস্তব, ক্ষতিকর ঋণ, দুর্নীতি দ্বারা ভেসে যাওয়া এবং স্বজনপ্রীতি দ্বারা ফাপানো হিসেবে বলে বেরান। অর্থাৎ এশিয়ানরা কেবন নিঃস্ব হলো না; নিজেদের নিঃস্ব করার দোষেও অভিযুক্ত হলো। তবে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিজ এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কারণ হিসেবে আইএমএফ এর নীতিমালাকেই দায়ী করেছেন ।


কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের আসল কারণ ছিলোঃ

 অর্থনৈতিক সংকটের কারণ...

১. বেসরকারি খাতের দূরদর্শিতার অভাব
২. বৈদেশিক পুজির উপর অতি নির্ভরশীলতা
৩. অন্যান্য খাত বাদ দিয়ে শুধুমাত্র শিল্প খাতে বিনিয়োগ করায়।
৪. বিদেশী বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেবার কারনে।
৫. বৈদেশিক রিজার্ভ কম থাকার কারণে।
৬. আইএমএফের সুপারিশ অনুযায়ি চলার কারণে।
৭. দেশের পন্য বাজারে অধিক হরে মুদ্রস্ফিতি বাড়ার কারণে।
৮. ব্যবসা ক্ষেত্রকে সম্প্রসারনের অভাবে
৯. দেশের মুদ্রার মান কমে যাওয়ার করনে
১০. বৈদেশিক ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে
১১. আর্থিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোর উপর নজরদারির অভাবে।
১২. ব্যংক গুলোর তরাল্য সংকটের কারণে।
১৩. বেসরকারি খাতের দূরদর্শিতার অভাব
১৪. আমদানি নির্ভর অর্থনীতি
১৫. পুঁজি ও মুদ্রাবাজার উদারীকরণ


 ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ার বিস্ময় যে রাতারাতি এশিয়ার অর্থনৈতিক অস্থিরতায় পরিণত হলো তার ইতিহাস প্রতিটি রাষ্ট্রভেদে নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলোঃ
থাইল্যান্ড
 বর্তমানে থাইল্যান্ড :
থাইল্যান্ড বর্তমানে পূর্ব এশিয়ার সর্বাধিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসম্পন্ন দেশ। এদেশের বর্তমান জিডিপি প্রায় ৭.৮ শতাংশ (২০১০)। বর্তমানে থাই অর্থনীতি মূলত রপ্তানি নির্ভর এবং এর বৈদেশিক মুদ্রা লাভের প্রধান মাধ্যম হলো পর্যটন শিল্প। এই দেশে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৯ শতাংশ।
 ইতিহাস :
১৯৯৭ সালের মধ্যভাবে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছিল তার সূত্রপাত ঘটে থাইল্যান্ডে। থাইল্যান্ডের অর্থনীতির কাঠামোগত দূর্বলতার কারণেই মূলত এ সঙ্কটের সূচনা। মূলত ৯৭ এর ২ জুলাই ভয়ঙ্কর এ অর্থনৈতিক সঙ্কট থাইল্যান্ডে আঘাত করে।

 সঙ্কট সূচনার কারণ :
১৯৮৭-১৯৯৩ সালে থাইল্যান্ড এক নতুন অর্থনৈতিক শক্তির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ’৮০ এর দশকে এর রিয়েল জিডিপি ছিল প্রায় ৮ শতাংশ। আর এমন উন্নয়নের পেছনে যে বিষয়গুলো অবদান রেখেছিল তা হলো কেপিটল মার্কেট উদারীকরণ, সরকারি ব্যায় বাড়িয়ে দেওয়া, শেয়ার মার্কেট উদারীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ তরান্বিতকরণ। যেখানে অন্যান্য দেশের উন্নয়ন ঘটেছে মূল শিল্প বাণিজ্যের প্রসারের কারণে। আর থাইল্যান্ডের এমন তড়িৎ উন্নয়নের ভেতরেই অর্থনৈতিক সঙ্কটের বীজ বপন ঘটে। কারণ অর্থনৈতিক উদারীকরণের কারণে থাইল্যান্ডে স্বল্পমেয়াদি পুঁজির পরিমাণ বেড়ে যায়। আর দ্রুত মুনাফা উপার্যনের লক্ষে থাইল্যান্ডে গৃহনির্মাণ শিল্প ফুলে ফেপে ওঠে। এ কারণে ব্যাংকক ও তার আশপাশের শহরগুলোর ভূমির মূল্যও আকস্মিকভাবে বেড়ে যায়। অন্যদিকে পুঁজির সহজলভ্যতার কারণে ঋণগ্রহীতারাও কম সুদের হারে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ নিতে পারতো। আর সহজভাবে অর্জিত ঋণের সহায়তায় দ্রুত লাভ করার আশায় শেয়ারবাজার কিংবা গৃহনির্মাণ শিল্পে তা বিনিয়োগ করতো। এসব কারণে ৯০ এর দশকে থাইল্যান্ড যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বীকৃতি পেল তা সত্যিকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছিল না বরং সুডো অর্থনৈতিক উন্নয়ন। আর এমন উন্নয়নে পুঁজির আগমন যত বেশি দ্রুততার সাথে ঘটে তেমনি আকস্মিকভাবে এর প্রস্থানও ঘটে। এ ধরণের স্বল্পকালীন পুঁজির চলাচল সাংঘাতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। যা ঘটেছিল ১৯৯৭ সালের ২ জুলাই।

 থাই মুদ্রার উপর প্রথম আঘাত :

এশিয়ান অর্থনৈতিক সঙ্কটের শুরুতে প্রথম জর্জরিত হয় থাই বাথ। মুদ্রা ব্যবসায়ীদের চাপে থাই সরকার বাথকে ডলারের বিপরীতে ছেড়ে দিলে মুদ্রার অবমূল্যায়ণ শুরু হয়। ১ ডলারের বিপরীতে যেখানে ১৯৯৬ এর জুলাইয়ে ছিল ২৫ বাথ সেখানে ১৯৯৭ এর জুলাইয়ে তা হয় ৫৪। আর ১৯৯৮ এর জানুয়ারিতে ১ ডলারের বিপরীতে থাই বাথ হয় ৫৮। থাই বাথের এমন অবমূল্যায়ণ ঠেকাতে থাই সরকার উদ্যোগী হয়ে ওঠে। তৎকালীন থাই প্রধানমন্ত্রী চাভালীঠের নির্দেশে সরকার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে থাই বাথ রক্ষার জন্য। আর অন্য দিকে জনগণ ও বিনিয়োগকারীরা থাই বাথের অবমূল্যায়ণ দেখে বাথের বিপরীতে ডলার কিনতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। যে কারণে থাই বাথের অবমূল্যায়ণ হতেই থাকে। সরকারের বিবিধ পরিকল্পনার জন্য যে খরচ হয় তা থাইল্যান্ডের মোট রিজার্ভের পরিমাণ ৩৩.৮ বিলিয়নে নেমে আসে।
 শেয়ার বাজারে আঘাত :


১৯৮৮-১৯৯৯ সালে থাই স্টক মার্কেটের সূচক থাই অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন ঘটায়। ১৯৯০ সালে থাই স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক প্রায় ৪০০ হতে ৬০০ তে গিয়ে পৌছায়। কিন্তু ৯০ পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাজারের উদারীকরণের প্রতিকূল প্রভাব শেয়ার বাজারে পড়ে। ফলে কিছু বিদেশী বিনিয়োগকারীরাই শেয়ার বাজারের বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেশের বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে ১৯৯৩ সালে যেখানে শেয়ার বাজারের সূচক ১৭০০ তে গিয়ে পৌছায় তা ১৯৯৮ সালে কেবল ৩৫০ এ এসে দাড়ায়। শেয়ারবাজারের এমন ধ্বসের পেছনে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যেমন ভূমিকা রেখেছিল তেমনি ফটকা ব্যবসায়ীরাও প্রভাব ফেলে। কারণ তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থাকে সঠিকভাবে তুলে ধরত না। এমনকি শেয়ার বাজারের নীতিমালা অনুসরণ না করে ব্যবসা করতো। এভাবে তারা শেয়ার বাজার হতে বিশাল অঙ্কের অর্থ তুলে নিয়ে যায়।

 অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব :
১৯৯৭ সালের এই অর্থনৈতিক সঙ্কট অন্যান্য দেশের অর্থনীতির উক্ত দুই ক্ষেত্রে প্রভাব ফেললেও থাইল্যান্ডের ক্ষেত্রে আরো কিছু দিকে এর প্রভাব প্রতিফলিত হয়। যেমন : বৈদেশিক মুদ্রার রির্জার্ভ কমে যাওয়ায় থাইল্যান্ডের আমদানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ফলে মূল আঘাতটা পড়ে থাই আমদানি নির্ভর অর্থনীতির উপর। অন্যদিকে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে গৃহ নির্মাণ শিল্পও বাধাগ্রস্থ হয়। ফলে বেকার হয়ে যায় প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক এবং অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে যায়। যার মধ্যে ফিনেন্স ওয়ান নামক বড় থাই আর্থিক প্রতিষ্ঠাও বন্ধ হয়ে যায়।


 আইএমএফ - এর উদ্যোগ :
থাইল্যান্ডকে এমন বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই থাই সরকার আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) এর শরণাপন্ন হয়। আর আইএমএফ ৫ আগস্ট ১৭.২ বিলিয়ন ডলারের ‘উদ্ধার প্যাকেজ’ শর্তসহ ঘোষণা করলো। শর্তগুলো ছিল
 ট্যাক্স বৃদ্ধি
 ব্যাংক হার বৃদ্ধি
 সরকারি ব্যয় হ্রাস
 বেসরকারিকরণ
সরকারের এমন মিতব্যয়িতা নীতি আর উচ্চ সুদের হার অর্থনৈতিক সঙ্কটকে আরও ভয়াবহ করে তুললো। যার ফলশ্র“তিতে নতুন করে ১৬ হাজার মানুষ বেকার হয়ে গেল আর ৫৬ টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেল। পরে ২০০১ সাল নাগাদ থাইল্যান্ড এই চরম সঙ্কট হতে বের হয়ে এলো। আর ২০০৩ সালে আইএমএফ এর সকল ঋণ শোধ করে দিল। ফলে ২০১০ সালে প্রতি ডলারে ২৯ থাই বাথ নির্ধারিত হলো।
 সমাধান :
থাইল্যান্ডে সঙ্কট ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছিল জনগণের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত অবদান। স্বচ্ছল জনগণ প্রতিবেশিদের ঘরে খাবার সরবরাহ ও শিশুদের স্কুলে পাঠানোতে অবদান রাখে। ফলে ভবিষ্যত জনসাধারণ আসন্ন বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। পরে ২০০১ সালের ফেব্র“য়ারিতে থাকসিন সরকার নতুন অর্থনৈতিক পলিসি গ্রহণ করে যা থাই অর্থনীতি বৈদেশিক পুঁজির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করে।



 অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে থাই অর্থনীতির উপর প্রভাব :
অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে থাই অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আট শতাংশের জিডিপি হতে তাদের জিডিপি ৬ শতাংশে নেমে আসে। বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ করতে ভীত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলে নিয়ে যায়। ফলে থাই যে অর্থনীতি এতদিন বিদেশী পুঁজির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেছিল তাতে আঘাত আসে। অর্থনৈতিকভাবে আহত থাইল্যান্ড এমন হতাশা হতে মুক্ত হবার লক্ষ্যে প্রথমেই আইএমএফ এর শরনাপন্ন হয়। তবে তাদের নানা শর্ত বরং অর্থনৈতিক সঙ্কটকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে। কিন্তু ২০০১ সালে থাকসিন সরকার নতুন অর্থনৈতিক পলিসি গ্রহণ করে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ায়, দেশের অভ্যন্তরে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে এ সঙ্কট হতে বের হয়ে আসে। মূলত অর্থনৈতিক সঙ্কটের পর থাই সরকার যে কোনো অর্থনৈতিক পলিসি গ্রহণের পূর্বে অধিক সচেতন ও স্বচ্ছতা অনুসরণ করে। যার ফলশ্র“তিতে বর্তমানে আবার থাইল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

মালয়েশিয়া

 শুরু কথা :
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি মালয়েশিয়া। স্বাধীনতার পর হতে ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দেশটি মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। বর্তমানে মলয়েশিয়া নব্য শিল্পায়িত বাজার অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত। ৪১৪ বিলিয়ন ডলার জিডিপি ও ৭.২% প্রবৃদ্ধি নিয়ে ১৪৮৩ ফুট উচুঁ পেট্রোনাস টাওয়ারের মত সগৌরবে মাথা উচুঁ করে দাড়িয়ে আছে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি। অধিকন্তু বিশ্বের বৃহত্তম ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অনগ্রসর দারিদ্রপিড়ীত মুসলিম বিশ্বের সামনে মালয়েশিয়া রোল মডেলের আসনে সমাসীন । তবে অগ্রগতির এ যাত্রাপথে বড় ধরনের হোচট খেতে হয় মালয় জাতিকে ১৯৯৭ সালে। সে সময়ের প্রলয়ংকারী আর্থিক বিপর্যয় মহা বিপর্যস্ত করে তোলে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি। ভূমিকম্প সৃষ্টি করে তার অর্থনৈতিক বুনিয়াদে। সেই কৃষ্ণ-গহবর থেকে বের হয়ে এলেও তার প্রেতাত্মা তাড়া করে ফিরেছে বহু বছর। এখনও অর্থনীতি সে ক্ষতির কিছুটা রেশ বয়ে যাচ্ছে।

 এসেছে কালবৈশাখী সাদা হাতির পিঠে চড়ে
সময়টা ১৯৯৭ এর গ্রীষ্মকাল। কাল বৈশাখীর সময়। সাদা হাতির দেশ থাইল্যান্ডের সরকার মুদ্রা ব্যবসায়ীদের চাপে মার্কিন ডলারের সাথে পেগ বন্ধ করে দেয়। ফলে ২ জুলাই থাই বাথে ধ্বস নামে। সংক্রামক ব্যাধির মত আক্রান্ত হয় প্রতিবেশীর দেশগুলোর অর্থনীতিও। সীমান্তবর্তী মালয়েশিয়া নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও স্বীকার হয় ভয়াবহ আর্থিক ধ্বসের। অনাকাঙ্খত এ আর্থিক বিপর্যয় কিংকর্তব্যব্মিূঢ় করে দেয় সবাইকে।
 ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
শেয়ার বাজার :

কুয়ালালামপুর শেয়ার বাজার তখন এশিয়ার সর্ববৃহৎ শেয়ার বাজার। মাত্র এক বছরে তা ৬৩% মূল্য হারায়। ১৯৯৭ সালের ৫ জানুয়ারিতে মালয়েশিয়ার স্টক এক্সচেঞ্জর সূচক প্রায় রেকর্ড সংখ্যক ১৯৩২.৪ পয়েন্টে পৌছেছিল। এক বছর পর ১২ জানুয়ারি ১৯৯৮ এ এটি ৪৯১ এ এসে ঠেকে। যা পরবর্তী মাসগুলোতে আরো পরে যায়। স্টক মার্কেট থেকে হাওয়া হয়ে যায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। এমনকি ২৭০ পয়েন্টের নীচে চলে যায় সূচক।

রিংগীতের সংগীন অবস্থা:
থাই বাথ পড়ে যাওয়ায় পর হঠাৎ রিংগীতের মানও পরে যায়। রিংগীতের মান ধ্বংসাত্মক ভাবে ৪০% কমে যায়। ডলারের সাথে যার বিনিময় হার ৪.৫৭ থেকে ২.৫০ এ নেমে আসে মোট জিডিপি থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার হাওয়া হয়ে যায়।

কেউ জানে না কি ঘটছে, ঘটবে :
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো এশিয়ার দিকে যে প্রলয়ংকরী অর্থনৈতিক সুনামি এগিয়ে এসেছে তার পূর্বাভাস দিতে পারেনি বিশ্বের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অর্থনীতিবিদ। এমনকি ১৯৯৭ সালে আইএমএফ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইকেল ক্যামডেসাস মালয়েশিয়ার উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সুস্থ আর্থিক ব্যবস্থাপনার প্রসংশা করেন।

অজ্ঞদের মধ্যে কম অজ্ঞ :
ব্যতিক্রম হিসেবে শুধু এমআইটি এর অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান ভিন্ন মত পোষণ করতেন। তিনি বলেছিলেন, পূর্ব এশিয়ার মিরাকল আদৌ মিরাকল ছিল না এবং তা ইটের দেয়ালে আঘাত করতে বাধ্য।
১৯৯৮ সালে হংকং সম্মেলনে তিনিও স্বীকার করেন এশিয়ার ভবিষ্যত সম্পর্কে তিনি ৯০% ভ্রান্তির মধ্যে ছিলেন, তবে তার শান্তনা ছিল অন্যরা এ ব্যাপারে ১৫০% ভ্রন্তিতে ছিল।
 সমাধান
ধ্বসের বন্যা নিয়ন্ত্রণে মাহাথিরের বাধ :আইএমএফ এর অসৎ পরামর্শ :

মুদ্রা বিপর্যয়ের প্রাথমিক স্তরে আর্থিক মোড়ল আইএমএফ মুদ্রাগুলোকে স্থিতিশীল রাখার কোনো পরামর্শ দেয়নি। বিপর্যয়ের পর তারা পরামর্শ দেয় সরকারি ব্যায় সংকোচন ও উচ্চ সুদের হার প্রবর্তনই এ আর্থিক ব্যধির টোটকা ঔষধ। এ ঔষধ একাধারে তিতা অন্যভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে দেখা দিল। এটা বিপর্যয় কে আরো বাড়িয়ে দিল।
লাগাম শক্ত করল মাহাথির :
বিচক্ষণ নেতা মাহাথির বুঝতে পারল আইএমএফ এর পরামর্শে বিপদ কমবে না বরং আরো বাড়বে। তাই তিনি ত্বড়িত আইএমএফ এর পরামর্শ বাতিল করল। আইএমএফ এর ১৭ বিলিয়ন ডলারের টোপ প্রত্যাখ্যান করে নিজস্ব পলিসি নিল। তার অন্যতম
ক্স সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি ও সুদের হার কমানো
ক্স মার্কিন ডলারের বিপরীতে রিংগিতের মান ৩.৪০ পেজ করা
ক্স কঠোর মুদ্রানীতি প্রবর্তন ও বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ
ক্স বিভিন্ন আর্থিক টাস্কফোর্স গঠন
ক্স মুদ্রা সংকট মোকাবেলায় জাতীয় অর্থনৈতিক একশান কাউন্সিল গঠন


 অর্থনীতি বিপর্যয়ের প্রভাব

রাজনৈতিক প্রভাব :
আর্থিক বিপর্যয় ঘটিয়ে ওঠার পদ্ধতি নিয়ে মাহাথিরের দীর্ঘদিনের সহকর্মী তৎকালিন অর্থমন্ত্রী ও ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমের সাথে তীব্র মত বিরোধের সৃষ্টি হয়। আনোয়ার ইব্রাহীম আইএমএফ এর পরামর্শ মতো সরকারি ব্যয় কর্তন ও উচ্চ সুদের পক্ষে অবস্থান নেয়। ১৯৯৮ সালের ‘নিউজ উইক’ পত্রিকায় আনোয়র ইব্রাহীম ‘ইয়ার অব দ্যা এশিয়ান’ ঘোষণা দেন। আনোয়ারের জনপ্রিয়তা ও ভিন্নমত হুমকি হয়ে দাড়ায় মাহাথিরের জন্য। ফলশ্র“তিতে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই আনোয়ারকে ক্ষমতাচ্যুত ও দেশ হতে বহিষ্কার করা হয়। এমনকি জঘন্য অভিযোগে তাকে ছয় বছরের জন্য কারাবন্দী করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় আনোয়ারের সমর্থনে মালয়েশিয়া জুড়ে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে এমন অস্থিরতা পূর্বে দেখা যায়নি।


অর্থনৈতিক প্রভাব :
রিংগিতের ধ্বসে ভেঙ্গে পড়ে মালয়দের মনোবল। মাহাথির ঘোষিত ভিশন-২০২০ বাধাগ্রস্থ হয়। মানুষের জীবন যাত্রার মান নিচে নেমে যায়। অনেক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভয়ানক রকম কমে যায়। মাথাপিছু আয় ৫ হাজার থেকে ৩ হাজার ডলারে নেমে আসে। সর্বত্র এক অনিশ্চয়তার আতঙ্ক দেখা দেয়।

এশিয়ার অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় মাহাথিরের পদক্ষেপগুলোর অনেক সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে মাহাথির কথা বললেই শেয়ারের দাম কমে। কিন্তু মাহাথিরের বিচক্ষণ ও কঠোর আর্থিক নীতি এবং তার দৃঢ়তা দ্রুত মালয়েশিয়াকে এ সঙ্কট হতে বের করে আনে। অন্য সব প্রতিবেশি দেশের আগেই মালয়েশিয়া বিপদ কাটিয়ে ওঠে। বিশ্লেষকরা অবাক হয়ে যায় মাহাথিরের সাফাল্যে। আজকেরে মালয়েশিয়া আর্থিক বিপর্যয়ের ক্ষতকে ছাড়িয়ে আবার স্বাস্থবান অর্থনীতি উপহার দিয়েছে জাতিকে। মালয়েশিয়া দ্রুতবেগে ধাবিত হচ্ছে তার দীর্ঘ আকাঙ্খিত ভিশন-২০২০ এর দিকে।

ইন্দোনেশিয়া
১৯৯৭ সালে এশিয়ার অর্থনৈতিক সংকট ইন্দোনেশিয়ার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অকল্পনীয় ক্ষতি বয়ে আনে। সংকট পূর্ববর্তী ২৫ বছরে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছিল লক্ষণীয়। কৃষি ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়া স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে এবং ১৯৭০ থেকে ১৯৯৬ মধ্যবর্তী সময়ে গড়ে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭%। আর মুদ্রাস্ফিতি ছিল ১০% এর নিচে। শ্রম নির্ভর রপ্তানি খাতে সত্যিকার অর্থে বিস্ফোরন ঘটে। কিন্তু সবচেয়ে লক্ষণীয় অগ্রগতি ঘটে দারিদ্রতা হ্রাসের ক্ষেত্রে। ১৯৭০ সালে যেখানে ৬০% মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করত সেখানে ১৯৯৬ সালে এই সংখ্যা কমে এসে দাড়ায় ১১% এ।

কিন্তু ১৯৯৭ সালের অর্থনৈতিক সংকটে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। ১৯৯৮ সালে মুদ্রাস্ফিতি অনেক বেড়ে গেলে দ্রব্যমূল্য প্রায় ৮০% বৃদ্ধি পায়। ডলারের বিপরীতে ইন্দোনেশিয়ান মুদ্রা রুপিয়ার মূল্য ১৯৯৭ সালের জুন মাসে হয় ২৪০০। কিন্তু ১৯৯৮ সালের জুন মাসে তা বেড়ে ১৬০০০ এ দাড়ায়। এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয় প্রধানত রপ্তানী কমে যাওয়ার কারণে। ডলারের বিপরীতে থাই মুদ্রা বাথ এর অবমূল্যায়নের প্রভাব ইন্দোনেশিয়াতেও এসে পড়ে। কারণ রুপিয়াও ডলারের সাথে সংযুক্ত ছিল। পাশাপাশি গৃহ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সমূহের অধিক পরিমাণে ঋণ গ্রহণের বিষয়টিও সংকটকে ত্বরান্বিত করেছে।


এমন পরিস্থিতিতে দেশের রিজার্ভ সিস্টেম ঠিক রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করে। রুপিয়ার অবমূল্যায় রোধকল্পে ব্যাংক ইন্দোনেশিয়া (বিআই) ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে ১.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। কিন্তু এই পদক্ষেপ কার্যকর না হওয়ায় সরকার একই বছরেরর ১৪ আগস্ট রুপিয়ার বিনিময় হার অবমুক্ত করে দেয়। সেই সাথে সুদের হার বৃদ্ধি করে। এক সপ্তাহ মেয়াদী সার্টিফিকেটে সুদের হার ১০.৫% থেকে বৃদ্ধি করে ২০% করা হয়। তিন মাস মেয়াদী সার্টিফিকেটে এই হার ১১.৫% থেকে বৃদ্ধি করে ২৮% করা হয়। অর্থ মন্ত্রনালয় তার ব্যয় হ্রাস করে ঝইখ সার্টিফিকেটে ৩.৫ ট্রিলিয়ন রুপিয়া জমা রাখে। আন্ত:ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রে সুদের হার বেড়ে দাড়ায় ২২% থেকে ৮০% পর্যন্ত।

রুপিয়ার দাম যখন ডলার প্রতি ২৪০০ থেকে ৩৬০০ তে নেমে আসে তখন ৮ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়া অন্তর্জাতিক অর্থ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইএমএফ) এর দ্বারস্থ হয়। অক্টোবরের শেষে উভয় পক্ষ একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর ফলে আইএমএফ ও অন্যান্য দাতা গোষ্ঠী ইন্দোনেশিয়াকে ৪০ বিলিয়ন ডলার ঋণ মঞ্জুর করে। এর বিপরীতে শর্ত দেয় যে, ব্যাংকগুলোতে সুদের যে উচ্চ হার রয়েছে তা বজায় রাখতে হবে এবং ১৫টি রুগ্ন ব্যাংক বন্ধ করে দিতে হবে।

এই শর্ত ব্যাংকিং সেক্টরকে অস্থির করে তোলে। চলমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো অধিক পরিমাণে ঋণ প্রদাণ ও উচ্চ সুদের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ ছিল। যখন গ্রাহকরা জানতে পারল যে, কিছু ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া হবে তখন তাদের মাধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ল। ১৯৯৭ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বিপুল সংখ্যক গ্রাহক স্থানীয় ব্যাংকগুলো থেকে তাদের ডিপোজিট তুলে নিল। ব্যাংক ব্যবস্থার অস্বচ্ছতা এই পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। সঠিক তথ্যের অভাবে গ্রাহকরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল প্রতিষ্ঠানের পার্থক্য করতে না পেরে সব ধরণের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল।

ডিপোজিটের হার হ্রাস পাওয়ার ফলে ব্যাংকগুলোকেও গ্রাহকদেরকে ঋণ প্রদাণের পরিমাণ হ্রাস করতে হয়েছে।এর ফলে নভেম্বর, বিশেষ করে ডিসেম্বর মাসে সবরাহের তুলনায় ইন্দোনেশিয়ান ফার্মগুলোর আবেদন করা ঋণের পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। এই সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে ফেলে। গুজব হয়ে পড়ে রুপিয়ার চালিকা শক্তি। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে হঠাৎ করে একদিন রুপিয়ার মূল্য কমে যায় ১১%। ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে রুপিয়ার ২৬% অবমূল্যায়ন হয়। গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, ইন্দোনেশিয়া ঋণ পরিশোধে বিলম্ব করার জন্য আইনী পদক্ষেপ নিচ্ছে। পরবর্তীতে একই বছরের জানুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়া আইএমএফ-এর সাথে আরেকটি চুক্তি করে। এতে ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়ানো এবং মনোপলি ভাঙার কথা বলা হয়। এই চুক্তির অর্থ দিয়ে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ভর্তুকী দেওয়ার ব্যবস্থা করে। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে ১৯৯৮ সালের মে মাসে জ্বালানী , বিদ্যুৎ এবং পাবলিক পরিবহণের ভর্তুকী প্রত্যাহার করা হয়। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যার কারণে চাইনিজরা শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ফলে তারা সহায়-সম্পদ নিয়ে দেশ ত্যাগ করেন। বিদেশী বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। ডলারেরা বিপরীতে রুপিয়ার দাম ১১০০০ এ নেমে আসে। এমন সংকটময় মুহূর্তে ২১ মে প্রেসিডেন্ট সুহার্তো পদত্যাগ করে তাঁরই ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউসুফ হাবিবির নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

 অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সৃষ্ট সামাজিক-রাজনৈতিক সংকট:

অর্থনৈতিক সংকটকালীন মুহূর্তে দেশে রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়। বিরোধী দলীয় নেতা আমিয়েন রেইস প্রেসিডেন্ট সুহার্তু ও তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা শুরু করেন। ‘সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করবে, ফলশ্রুতিতে একটি রক্তপাতপূর্ণ অভ্যুত্থান আসন্ন’ এমন গুজব চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৯৭ এবং ১৯৯৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি রায়ট সংগঠিত হয়েছিল। এগুলোর কোন কোনটি ছিল স্বত:স্ফূর্ত আবার কোন কোনটি ছিল পরিকল্পিত। মাঝে মধ্যে রায়টগুলোর লক্ষ্য ছিল চীনা-ইন্দোনেশিয়ান নাগরিকরা। সুহার্তো-পরবর্তী জেনারেলরা এর (রায়ট) মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি দুর্বল করার পাশাপাশি সুতার্তোকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে চেয়েছিল।

১৯৯৮ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। তাদের মূল দাবি ছিল জ্বালানী তেল ও বিদ্যুতের বর্ধিত দাম প্রত্যাহার করা এবং প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর পদত্যাগ। ১২ মে জাকার্তর ত্রিসাকতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল , যাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত পরিবারের অনেক সন্তান ছিল; সরকারের মধ্যে সংস্কারের দাবিতে পার্লামেন্ট অভিমুখে মার্চ করার সিদ্ধান্ত নিল। ছাত্রদের মার্চে পুলিশ বাঁধা দেয়। বিকেল ৫টার কিছু সময় পর ফ্লাইওভারের উপর থেকে সাদা পোষাকের এক ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে গুলে করলে ৪ শিক্ষার্থী নিহত হয়।

১৩ ও ১৪ মে জাকার্তায় রায়ট ছড়িয়ে পড়লে অনেক কমার্সিয়াল সেন্টার ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ১০০০ নাগরিক মারা যায়। রায়টের বিশেষ টার্গেটে পরিণত হয় চীনা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠির সদস্যরা। অভিযোগ রয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাদা পোষাকে রায়টে অংশ নেয়। ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং অনেক মানবাধিকার গ্রুপ অভিযোগ করে থাকে যে, দেশটির পুলিশ ও সেনা সদস্যরা রায়ট,সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়ার পেছনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

জাকার্তা ও আশেপাশের এলাকায় রায়টের ঘটনায় মোট ৫০০০ লোক মারা যায়। মৃতদের মধ্যে কেউ আগুনে পুড়ে, কেউ গুলি বিদ্ধ এবং কেউ প্রহারের কারণে প্রাণ হারায়। দেশটির এক সরকারি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, রায়টে ১০২৬টি বাড়ি, ১৬০৪ টি দোকান, ৩৮৩ টি ব্যক্তিগত অফিস, ৬৫ টি ব্যাংক অফিস, ৪৬টি ওয়ার্কসপ,৪০টি শপিংমল, ১৩টি মার্কেট এবং ১২ টি হোটেল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফাদার সান্দাওয়ান সুমারদির স্বাধীন তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বিভিন্ন ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।

 সুহার্তো পরবর্তী ইন্দোনেশিয়া:

২০০৫ সালে বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ইন্দোনেশিয়ায় ছোট-খাট অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। ভর্তুকী হিসেবে প্রদত্ত বিপুল অংকের অর্থ কমানোর জন্য সরকার বাধ্য হয়। এর ফলে ২০০৫ সালে মুদ্রাস্ফিতি বেড়ে গিয়ে দাড়ায় ১৭%।

২০০৬ সালে দেশটির অর্থনৈতিক চেহার পূর্বের চেয়ে উজ্জ্বল হতে থাকে। রিয়েল পার কেপিটা ইনকাম ১৯৯৬/১৯৯৭ অর্থ বছরের সমান হয়। তবে দুর্নীতির কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা কিছুটা হলেও বাঁধা প্রাপ্ত হয়।

২০০৭ সালে বেকারত্বের হার ছিল ৯.৭৫% এবং ২০০৮ সালে ৮.৪৬%। ২০০৭ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থবিরতা স্বত্ত্বেও দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিগত ১০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে এবং প্রবৃদ্ধির হার দাড়ায় ৬.৩%। দারিদ্রতার ১৭.৮% থেকে কমে হয় ১৬.৬%। জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ভারত ও চিনের পরই ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান।

 বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা

বাজারের দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার রয়েছে অন্যতম বৃহৎ বাজার। সরকার জ্বালানী, চাল এবং ইলেক্ট্রিক সামগ্রীর সাথে সংশ্লিষ্ট ১৬৪টি প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং এর মাধ্যমে সরকার অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে বেশ ভালভাবেই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ইন্দোনেশিয়া জি-২০ এর একটি সদস্য দেশ।

১৯৯৭ সালের অর্থনৈতিক সংকটের পর ২০০৪ সালে দেশটির অর্থনীতি পুনরায় ঘুরে দাড়ায় এবং প্রবৃদ্ধিও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। বর্তমানে দেশটির পর্যটন শিল্প বিদেশী পর্যটকদের বেশ আকৃষ্ট করছে।

২০১০ সালের হিসাব অনুসারে জিডিপি (পিপিপি অনুযায়ী) অর্জিত হয়েছে ১.০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.১% এবং মুদ্রাস্ফিতি ছিল ৫.১%। মোট জনসাধারণের মধ্যে দারিদ্র্য সীমার নীচে রয়েছে ১৩.৩% এবং বেকার রয়েছে ৭.১%। রপ্তানী করে দেশের জন্য অর্জিত আয় ১৫৮.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোট রপ্তানীর ১৬.৩% জাপান, ৯.৯% চীন, ৯.১% আমেরিকা, ৮.৭% সিঙ্গাপুর, ৮% দক্ষিণ কোরিয়া, ৬.৩% ভারত , ৫.৯% মালয়শিয়ার সাথে সম্পন্ন হয়েছে। আমদানী করার জন্য ব্যয় হয়েছে ১২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোট আমদানীর ১৫.১% চীন, ১৪.৯% সিঙ্গাপুর, ১২.৫% জাপান, ৬.৯% আমেরিকা, ৬.৪% মালয়শিয়া, ৫.৭% দক্ষিণ কোরিয়া এবং ৫.৫% থাইল্যান্ডের সাথে সম্পন্ন হয়েছে। ২০১১ সালের মার্চ পর্যন্ত বৈদেশিক রিজার্ভ রয়েছে ১০৫.৭০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

কোরিয়ার
 কারিয়ার বর্তমান অবস্থা.....
বর্তমানে অর্থনৈতিক পরাশক্তির এই দেশটির অবস্থার অনেক সুসংহত। দেশটি বিশ্বের ১৫তম অর্থনৈতিক ক্ষমতা সম্পন্ন দেশ। ঢ়বৎ পধঢ়রঃধ ঢ়ঁৎপযধংরহম ঢ়ড়বিৎ (ঢ়ঢ়ঢ়) অনুযায়ী বিশ্বের মধ্যে ১২তম। এশিয়ার টাইগার বা বাঘ নামে খেত দেশটি বর্তমানে অচঊঈ, ডঞঙ, ঙঊঈউ ধহফ এ-২০ এর সদস্য। দেশটির ঢ়বৎ পধঢ়রঃধ ঢ়ঁৎপযধংরহম ঢ়ড়বিৎ (ঢ়ঢ়ঢ়) হলো ১.৪২৩ ট্রিলিয়ণ ডলার। ঘড়সরহধষ ১.০০৭ ট্রিলিয়ণ (২০১০ শেষে)। এউচ প্রবৃদ্ধি হলো ৬.১ শতাংশ। এউচ ঢ়বৎ পধঢ়রঃধ ৩০২০০ এবং এউচ ঘড়সরহধষ ২০২৬৫ ডলার। আয়ের ক্ষেত্র গুলো হলো কৃষি থেকে ৩ শতাংশ, শিল্প খাত থেকে ৩৯.৪ শতাংশ এবং সেবা থেকে ৫৭.৬ শতাংশ (২০০৮ অনুযায়ী)।
দেশটির মুদ্রাস্ফিতি হলো ৩ শতাংশ (২০১০ )। দারিদ্র লাইনের নিচে আছে ২ শতাংশ (২০০৪)। সেক্টর অনুযায়ী শ্রমিক কাজ করে ... কৃষিতে ৭.৩ শতাংশ, শিল্পতে আছে ২৪.৩ শতাংশ এবং সেবাতে আছে ৬৮.৪ শতাংশ। দেশটির বেকারত্বের হার হলো ৩.৩ শতাংশ। বিশ্বে বর্তমান ব্যবসার র‌্যাংক হলো অষ্টম।

দেশটির রপ্তানি আয় হলো ৪৬৬.৩ বিলিয়ণ ডলার (বার্ষিক)। বিশ্বে এর অবস্থান হলো ৬ষ্ঠ। ওই দেশের প্রধাণ রপ্তানি দ্রব্য হলো টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি, মোটর গাড়ি, কম্পিউটার, ইস্পাত, জাহাজ এবং তেল জাতীয় পন্য। কোন কোন দেশে রপ্তানি করে.. চীনে (২৩.২%), আমেরিকায় (১০.১%), জাপানে ( ৫.৮%), এবং হংকং এ (৫.৩%)।

দেশটির বর্তমান আমদানী করে ৪১৭ ট্রিলিয়ার ডলার। আমদানী কৃত দ্রব্য হলো মেশিনারী, ইলেকট্রনিক এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, তেল, ইস্পাত, ট্রান্সপোর্ট যন্ত্রপাতি, ক্যামিকেল এবং প্লাস্টিক। কোন কোন দেশ থেকে আমদানী করে.... চীন (১৬.৮%), জাপান থেকে (১৫.৩%), আমেরিকা থেকে (৯%), সৌদি আরব থেকে (৬.১%), এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে (৪.৬%)। এফডিআর শেয়ার হলো বিদেশে ১১৫.৬ বিলিয়ণ ডলার। বহিরাগত ঋণ হলো ৩৮০.৬ বিলিয়ণ ডলার। পাবলিক ঋণ হলো জিডিপির ২৩.৭ শতাংশ। রাজস্ব আয় হলো ২৪৮.৩ বিলিয়ণ ডলার। সরকারী ব্যায় হলো ২৬৭.৩ বিলিয়ণ ডলার। অর্থনৈতিক সাহায্য ওডিএ ৯০০ মিলিয়ণ ডলার।

স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর’স এর রেটিং অনুযায়ী দেশটির স্থানীয় মান হলো এ+। মুডিস এর ঋণ মানে এ ১ । বৈদেশিক রিজার্ভ হলো ২৯৮.৮০৬ বিলিয়ণ ডলার। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হলো ২.৩ শতাংশ। এছাড়া ২০০৮ এবং ২০০৯ সালের মধ্যে দেশটি অন্যান্য দেশকে ১.৭ বিলিয়ণ ডলার সাহায্য করেছে ।

 অর্থনৈতিক মন্দা ও ঘটনা পুঞ্জ

প্রথমে মনে করা হয়েছিল যে, এশিয়া অঞ্চলের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দক্ষিণ কোরিয়ার উপর পড়বেনা। কেননা দেশটি পৃথিবির ১১তম বৃহৎ অর্থনৈতেক দেশ। এবং ড়ৎমধহরুধঃরড়হ ড়ভ বপড়হড়সরপ পড়ড়ঢ়বৎধঃরড়হ অহফ ফবাবষড়ঢ়সবহঃ এর সদস্য। এছাড়া দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থান ও পেক্ষাপট অন্যান্য দেশ তথা থাইল্যান্ড, ইন্দোনিশিয়া এবং মালয়শিয়া থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন ছিল।

৯০ এর দশকে বিদেশী ব্যাংক গুলো কোরিয়া সরকার ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গুলোকে ধার দিতে আগ্রহী ছিল। যা এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করা হয়। ধার কৃত অর্থ কোরিয়ানরা আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী শিলাপখাতে ব্যায় করে। এছাড়া কোরিয় সরকারও এই ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করে। কিন্তু ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে শিল্পখাতে অধিক পরিমান বিনিয়োগের কুপ্রভাব পড়ে অন্যান্য খাতে। অধিক পরিমান শিল্প খাতের উৎপাদিত পন্য নিয়ে বিপদে পড়ে তারা। ক্রমবর্ধ্যমান উৎপদিত শিল্প পন্যের দাম আশংকা জনক ভাবে কমে যায়। যাতে অর্থনৈতিক প্রবিদ্ধির হার কমে যায়। এবং অন্যান্য পণ্যের আমদানী বেড়ে যায়। ( ফলে ৯৬ সালে অর্থনৈতিক ঘাটতি দেখা দেয় ২৩.৭ বিলিয়ন ডলার।)

দক্ষিণ কোরিয়ার সমস্যা আরো বৃদ্ধি পায় ৯৭ সালের জানুয়ারী মাসে। যখন হ্যানবো নামক স্টিল বিক্রয় কারী প্রতিষ্ঠাণ ঋণ সংকটে পড়ে। তার ঋণের পরিমান ছিল ৬ বিলিয়ন ডলার। কেননা তার বার্ষিক ব্যায় ২৭০০ বিলিয়ণ থেকে বেড়ে দাড়ায় ৫৭০০ বিলিয়ণ ডলারে। অন্যদিকে, কোরিয়াতে স্টিল তথা ইস্পাতের চাহিদা লোপ পায়। আবার এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ওই কোম্পানিকে ঋণ প্রদানে ব্যাংক গুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হয়। যদিও এই জন্য সরকারকে ঘুষ দিয়েছিল হ্যানবো কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে, ১৯৯৭ সালের জুলাই এ কোরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা আরো খারাপ রূপ ধারণ করে। যখন দেশটির তৃত্বীয় গাড়ি প্রস্তুত কারক প্রতিষ্ঠান ‘কিয়া’র মূলধণ শেষ হয়ে যায়। এবং দেউলিয়াত্ব থেকে বাঁচার জন্য ব্যাংক গুলোর কাছে জরুরী ভিত্তিতে লোন চাই তারা। প্রায় একই সময়ে কোরিয়ার বৃহত্তম মদ প্রস্তুত কারক প্রতিষ্ঠান ‘জিনারো‘ দেউলিয়া ঘোষিত হয়। এই কঠিন অবস্থায় প্রতিষ্ঠান গুলো ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ নেওয়ায় ব্যাংক গুলো তারল্য সংকটে পড়ে। এবং ব্যাংক গুলোর জন্য ঋণ দেওয়া কাঠিন হয়ে পড়ে। ১৯৯৭ সালের অক্টোবর মাসে ‘কিয়া’কে যখন কোন ব্যাংকই ঋণ দিতে পারেনি। তখন সরকার ওই প্রতিণ্ঠানকে দেউলিয়াত্ব থেকে রক্ষায় প্রতিষ্ঠানকে পাবলিক সেক্টরে ছেড়ে দেয়। এছঅড়া একে উদ্ধারের জন্য দেশটির ফার্স্ট ব্যাংক তার তারল্য থেকে তাকে ঋণ প্রদান করে। ফলে তা প্রাইভেট ঋণ থেকে সরকারী ঋণে পরিনত হয়ে যায়। এই সময় কোরিয়ার শেয়ার বাজারের পতন হয় ৫.৫ শতাংশ। কোরিয়ান মুদ্রা ওনের মাণ ডলার প্রতি ৮৪১ থেকে ৯২৯.৫ এ নেমে যায়। এবং আমেরিকার ক্রেডিট রেটিং এ কোরিয়ার ঋণ মান কমে যায়।

কোরিয়ার মুদ্রাকে রক্ষার জন্য দেশটির কেন্দ্রিয় ব্যাংক তার সুদাহার ১২ শতাংশে বাড়িয়ে দেয়। এই ব্যাকটি মার্কিন ডলার ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে মুদ্রা বিনিময় মার্কেটে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। যার ফলে ডলার প্রতি ওনের মান ১০০০ এ নেমে যায়। এর সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়ে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে। যেখানে ১লা নভেম্বর বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ছিল যেখানে ৩০ বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের ছিল সেখানে দুই সপ্তাহের মধ্যে তা নেমে দাড়ায় ১৫ বিলিয়নে।

এই অবস্থা আরো ভয়াবহ হয় যখন দেশটির শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলো একে একে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। এগুলোর মধ্যে হাইতাই (২৩তম) এবং নিউ কোর অন্যতম। এছাড়া দেশটির শীর্ষ স্থানীয় ৩০ প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের ও বেশী প্রতিণ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার দ্বার প্রান্তে পৌছে যায়। এর ফলে আন্তংজাতিক ঋণ দান কারী প্রতিষ্ঠান গুলো দেশটিকে ঋণ দিতে অস্বীকার করে। এবং দেশটিকে তাদের দেওয়া স্বল্প মেয়াদী ঋণ ১০০ বিলিয়ণ ডলার ফেরত বা পরিশোধ করতে ১২ মাসের সময় বেধে দেয়।

এই সময় আইএমএফ বেইল আউটের মাধ্যমে দেশটির ঋণ সংকট থেকে উদ্ধারের পরামর্শ দিলেও ১৩ নভেম্বর ৯৭ সালে দেশটির সরকার আইএমএফের সাহায্য চাইনা বলে ঘোষণা করে। তাদের আশা ছিল আমেরিকা ও জাপান তাদের ঋণ সংকট থেকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসবে। এবং তারা এই অবস্থা থেকে উদ্ধার পাবে। কিন্তু ১৭ নভেম্বরই তাদের রিজার্ভ শেষ হয়ে যায়। এই সময় কেন্দ্রিয় ব্যাংক তাদের উপর ওনের দায়দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। তখন ওনের মান এক ডলার সমান ১০০০ এর উপরে ওঠে যায়। এবং অবশেষে আইএমএফের দেওয়া শর্ত মেন তাদের জন্য ধার্য কৃত ২০ বিলিয়ণ ডলার ঋণ দিতে আইএমএফকে অনুরোধ করে।

এই সময় আরেকটি কঠিন সময় পার করছিল কোরিয়া। ১৫ ডিসেম্বর ৯৭ সালে জাতীয় নির্বাচন ধার্য করে। এই সুযোগে আলোচনা বৈঠকে আইএমএফ বলে যে, তাদের পছন্দের কিম ইয়ং স্যামকে ( তখনকার প্রেসিডেন্ট। পরে পরাজিত) প্রেসিডেন্ট করতে হবে। যা অন্যান্যরা মেনে নেয়নি। যদিও স্যামকে তাদের ঋণ চুক্তির অনেক অগ্রগতি হয়।

অন্যদিকে দেখা গেল যে, তাদের স্বল্প মেয়াদী বৃণের পরিমাণ আগের ধারণার চেয় দ্বিগুণ ছিল । ( আগে ধারণা করা হয় এর পরিমাণ ছিল ১০০ বিলিয়ণ ডলার।) এবং বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ আরো কমে দাড়ায় মাত্র ৬ বিলিয়ণ ডলারে।

৩ ডিসেম্বর কোরিয়া সরকার ও আইএমএফের মধ্যে ৫৫ বিলিয়ণ ডলার ঋণ প্রদানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যাতে শর্ত ছিল তিন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থি এই চুক্তি মেন নেবেন। এই সময় বাম পন্থি নেতা কিম দে জং এই চুক্তি প্রত্যাখান করেন। কেননা এর দ্বরা জাতীয় গর্বকে খর্ব করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়া আইএমএফের চুক্তিতে বিদেশীদের জন্য দেশটি বাজার খুলে দেওয়া শর্ত ও ছিল। আগে যেখানে ঐদেশে কোন কোম্পানিতে বিদেশী মালিকানা ছিল সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ। সেখঅনে তার পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ শতাংশে করা হয়। তাদের আরো শর্ত দেওয়া হয় যে, তারা বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার সকল প্রকার সহায্য নিতে হবে।

এই চুক্তির দিনেই(৬ই ডিসেম্বর) দেশটির শেয়ার বাজারের সূচক ৭ শতাংশ বেড়ে যায়। এই দিনেই দেশটির সরকার দুটি ঋণ ভারে র্জজরিত প্রাইভেট ব্যাংককে পাবলিক খাতে ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এবং ঐই একই দিনে শিল্প প্রতিষ্ঠান ডাএউই মোটর সাইকেল নির্মান প্রতিষ্ঠান সাংহাই কে কেনা ঘোষণা দেয়।

অন্যদিকে , বিদেশী বিনিয়োগকারীরা দেখলো যে, দেশটি ধীরে ধীরে আইএমএফের ঋণ শর্তে বন্তি হয়ে যাচ্ছে। তখন তারা দেশটিতে তাদের সমস্ত বিনিয়োগ তুলে নিতে থাকে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে স্বল্প মেয়দী ঋণের মাত্র ২০-৩০ শতাংশ তাদের হাতে রাখে এবং বাকি গুলো তারা বিক্রি করে দেয়। ফলে কোরিয়ান মুদ্রা ওনের মান আরো কমে যায়। এক ডলার সমান ২০০০ ওনে গিয়ে পৌছায়। আইএমএফের সাহায্য বা ফান্ডের ফরেও দেশটি প্রতি দিন তার বৈদেশিক রিজার্ভের এক বিলিয়ণ হারাতে থাকে।

এমন সময় প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী কিম দায়ে জং আইএমএফের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ক্যামস্যাসকে চিঠি দিয়ে বলে যে, তিনি নির্বাচিত হলে আইএমএফের সকল শর্ত মেন নিবেন। এর ফলে ১৮ ডিসেম্বর তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি প্রথমে ঋণ খেলাপি থেকে উত্তরণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করেন। পদক্ষেপ অনুযায়ী এই সময় কোরীয় সরকারের সাথে আইএমএফ ও আর্ন্তজাতিক ব্যাংকগুলোর সাথে ক্রিস্টমাসে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী তারা ১০ বিলিয়ণ ডলার সাহায্য পায। এছাড়া তিনি কোরিয়ার বাজারকে বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। এবং বিনিয়োগ কারীদের তার দেশে বিনিয়োগ করতে আহ্বান করেন।

এর পরপরই কোরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ২৮ জানুয়ারী ৯৮ সালে ১৩ টি আর্ন্তজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠাণ একমত হয় যে, তারা কোরিয়াকে স্বল্প মেয়াদী ঋণ সহায়তা দিবে। ৯৮ সালের প্রথম দিকে কোরিয়া ওই সকল প্রতিষ্ঠান থেকে ৭৪ বিলিয়ণ ঋণ গ্রহন করে। এবং ধীরে ধীরে দেশটি অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বেরিযে আসে।


 দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থা ঃ

এই অবস্থার ফলে ওই দেশের অর্থনৈতিক স্থিতি ব্যাপকভাবে হোচট খায়। দেশের সুস্থ ও সবল মানুষজন কাজের আশায় সেজে গুজে তথা ভাল পোশাক পরে পার্কে এসে বসে থাকতো। এবং তাদের পরিবারের সবাই তার কাজের ক্ষেত্র থেকে ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতো। আতœহত্যার হারও আশংকাজনক ভাবে বেড়ে যায়। যেখানে ১৯৯৫ সালে প্রতি ১০০০ জনে মৃত্যুর হার ছিল ১১.৮ শতাংশ। তা ১৯৯৮ সালে বেড়ে দাড়ায় ১৬.১ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে প্রায় ৫ লাখ কোরিয়ান ব্যাক্তিগত ভাবে ঋণ খেলাপি হয়। যা ৯৮ সালে বেড়ে দাড়ায় ১.৩ মিরিয়নে। প্রতিদিন একটি করে কোম্পানি বন্ধ হতে থকে। ১৮ জুন ১৯৯৮ সালে ফিন্যান্স মন্ত্রণালয় ৫৫ টি বড় প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করার জন্য আদেশ প্রদান করে থাকে।

শেয়ারবাজার... শেয়ার বাজরে এর প্রভাব পড়ে। ৭ নভেম্বর ৯৭ সালে এর শেয়ারবাজার সিউল স্টক একচেঞ্জ এর শেয়ার ৪ শতাংশ সূচক কমে যায়। ৮ নভেম্বরে তা আরো ৭ শতাংশ নেমে যায়। আবার ২৪ নভেম্বর আইএমএফের সংস্কার চাওয়ায় এর সূচক ৭.২ শতাংশ নেমে যায়। এবং শেয়ার বাজারে এক সপ্তাহের মধ্যে কোরিয়ার মুদ্রা ওনের মান এক ডলার সমান ৮০০ ওন থেকে ১৭০০ ওনে নেমে যায়।

ঋণমান সংস্থার রেটিংএ.... দেশের আর্থিক সংকট ও বড় বড় প্রতিষ্ঠান গুলোর এই অবস্থার কারণে আর্ন্তজাতিক ঋণ মান সংস্থার কাছে এর ঋণ মান কমে যায়। মার্কিন ঋণমান সংস্থা মুডি’সের ঋণ মানে ২৭ নভেম্বরে এর ঋণ মান এ১ থেকে এ৩ তে নেমে যায়। পরে ডিসেম্বরে এর মান তা বি২ তে নেমে যায়।



 দেশের জিডিপি..
দেশের অর্থনৈতিক এই মন্দা অবস্থা সত্বেও দেশটির জিডিপি পার ক্যাপিটা ছিল ১৩ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়।
দেশের মুদ্রামান... দেশটির মুদ্রামান অনেক নেমে যায়। ডলার হিসেবে বলা যায় যে, জানুয়রি ৩ ১৯৯৭ সালে এক ডলার সমান ছিল ৮৪১ ওন। ২৮ ফেব্রুয়ুিরতে তা নেমে দাড়ায় ৮৬২ ওনে। ২৭জুনে তা আরো কমে যায় ৮৮৫ ওনে। ২৯ অগাস্ট তা দাড়ায় ৮৯৯ ওনে। ৭ নভেম্বরে তা আরো কমে দাড়ায় ৯৭৪.৭ ওনে। ২৪ ডিসেম্বর তা আরো কমে দাড়ায় ১৮২২.৭ ওনে। যা ৯৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা কমে দাড়ায় ১৫৯২ ওনে।

আইএমএফ ও অন্যান্য সাহায্য... দেশটিকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আইএমএফ ও অন্যান্য দেশ গুলো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে আইএমএফের দেওয়া উদ্দপক গুলো হলো..
সর্বমোট অনুদান হলো ৫৭ বিলিয়ণ ডলার। এর মধ্যে আইএমএফ দেয় ২১ বিলিয়ণ। আমেরিকা দেয় ৫ বিলিয়ণ ডলার। বিশ্ব ব্যাংক দেয় ১০ বিলিয়ণ ডলার। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক দেয় ৪ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংক জাপান দেয় ১০ বিলিয়ণ ডলার। অন্যান্য দেয় ৭ বিলিয়ণ ডলার।
আরেকটি হিসেব অনুযায়ী আমেরিকা ৯৩৫৫ মিলিয়ণ ডলার , ইংল্যান্ড দেয় ৫৬৪৩ মিলিয়ণ ডলার, জার্মানি দেয় ৯৯৭৭ ডলার, জাপান দেয় ২৪৩২৪ মিলিয়ণ ডলার এবং বিশ্ব ব্যাংক দেয় ৯৯৩২৪ মিলিয়ণ ডলার।

বৈদেশিক বিনিয়োগ...১৯৯৬ সালের প্রথম দিকে দেশটির মোট উদ্ধৃত্ব ছিল ২৪ বিলিয়ণ ডলার যা তাদের মোট বাজেট ঘাটতির (২৩.১) এর চেয়ে বেশী। তা দিয়ে পুষিয়ে দেওয়া যায়। ১৯৯৬ সালে কোরিয়া বিদেশী তারল্য ও ঋণ সেক্যুরিটিতে বিনিয়োগ করে ২.৪ বিলিয়ণ ডলার। আর অন্যদিকে কোরিয়াতে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ১৬.৮ বিলিয়ণ ডলার। ৯৭ সালের দেশটির এই ভয়াবহ অবস্থার জণ্য বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ বিক্রি করে পালাতে থাকে। ২৫ অক্টেবরে ৯৭ এর আগের সপ্তাহে তারা কোরিয় শেয়ার বাজারের ২২ মিলিয়ন মূলের শেয়ার বেচে দেয়। ফলে সিউল শেয়ারবাজারের অবস্থা দশ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে আসে। ৯৭ থেকে ৯৮ সালের মধ্যে সূচক ৩০ শতাংশ নেমে যায়।

বেকারত্ব...এই সময় দেশটির বেকারত্বের হার আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পায়। অর্থনৈতিক মন্দার আগে দেশটির বেকারত্বের হার যেখানে ছিল মাত্র ২ শতাংশ। তা ৯৮ সালে বেড়ে দাড়ায় ৬.৮ শতাংশে। যার মোট সংখ্যা ছিল ১.৬ মিলিয়নে। এছাড়া ১৯৯৮ সালে দেশটির বাড়ির দাম ১২.৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল।

 কিভাবে মোকাবেলা করে বা সংকট থেকে কিভাবে উত্তরণ করেছে...

১. ঋণ গ্রস্থ প্রতিষ্ঠান গুলোকে পাবলিক কোম্পানিতে পরিনত করায়
২. দেশের বাজার বিদেশীদের জন্য উন্মুক্ত করার জন্য
৩. ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করার জন্য
৪. বিদেশীদের এগিয়ে আসার কারণে
৫. সরকারের ঋণ সংকট থেকে উত্তরণে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া জন্য।

ফিলিপাইন
থাইল্যান্ডে ১৯৯৭ সালের ২ জুলাই এই মন্দার সূত্রপাত হয়ে আসেপাশের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে যা ফিলিপাইনের অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলে। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার ১৯৯৭ সালের মে মাসে ১.৭৫% বাড়িয়ে দেয় এবং ১৯ জুন আরও ২ পয়েন্ট বাড়ায়। ৩ জুলাই ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পেসোর মূল্যমান রক্ষার জন্য মধ্যস্ততা করতে বাধ্য হয়। ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে দক্ষিণ এশিয়ার এ মন্দার শুরুতে রাতারাতি এই হার ১৫% তেকে ৩২% এ উঠে যায়। এই মন্দার সময় পেসোর মূল্য ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। মন্দার শুরুর দিকে ১ ডলারের সাথে পেসোর বিনিময় হার ছিল ২৬ যা ১৯৯৯ সালের মাঝে ৩৮ ও ২০০১ সালে ৫৪ তে পরিণত হয়।
ফিলিপাইনের স্টক এক্সেঞ্জের এর সূচক ১৯৯৯ সালে ৩০০০ পয়েন্ট থেকে ১০০০ পয়েন্ট এ নেমে আসে। পেসোর মূল্য আরও কমে ১ মার্কিন ডলার সমান ৫৫ পেসো হয়। অৎৎড়ুড় এই পৎরংরং হ্রাস করে ফিলিপাইনের পেসোর মান আগের অবস্থায় নিয়ে আসে যখন ১ মার্কিন ডলার সমান ৫০ পেসো এবং ২০০৭ সালে ১ মার্কিন ডলার সমান হয় ৪১ পেসো। স্টক মার্কেট ২০০৭ সালে একটা সর্বে¦াচ্চ পর্যায়ে পৌছায় যখন ফিলিপাইনের অর্থনৈতিক প্রবিদ্ধি ছিল ৭% যা গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

হংকং:


থাইল্যান্ডে সূত্রপাত হওয়া এই মন্দার প্রভাব পাশের দেশ হংকং এ ও ছড়িয়ে পড়ে যা হংকংয়ের অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলে। ১৯৮৩ সালে ১ মার্কিন ডলারের সাথে হংকংয়ের ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৭.৮। মন্দার ফলে হংকংয়ের ডলারের মান কমতে থাকে। ১৯৯৭ সাল থেকে হংকংয়ের এর মুদ্রাস্ফীতি বছরের পর বছর অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অত্যাধিক চাপের মধ্যে পড়ে। আর্থিক কর্তৃপক্ষ দেশীয় মুদ্রাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রনে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যায় করে। তখন হংকংয়ের সরকারের ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক ডলার রিজার্ভ ছিল যা ছিল গ১ আর্থিক সাপ্লায়ের ৭০০% এর সমতুল্য এবং গ৩ আর্থিক সাপ্লায়ের ৪৫% এর সমতুল্য। হংকংয়ের আর্থিক কর্তৃপক্ষ সফলতার সাথে তা নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়।
১৯৯৭ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় হংকংয়ের স্টক মার্কেট হয়ে পড়েছিল নিয়ত পরিবর্তনশীল। ২০-২৩ অক্টোবরের মধ্যে ঐধহম ঝবহম সূচক ২৩% কমে যায়। ১৯৯৮ সালের ১৫ আগস্ট রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে ইহা ৮% থেকে ২৩% হয়। তখনকার অর্থসচিব উড়হধষফ ঞংধহম ফটকাবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সরকার ১২০ বিলিয়ন হংকং ডলারের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে এবং বিভিন্ন কোম্পানির সবচেয়ে বড় ঝযধৎবযড়ষফবৎ ছিল সরকার।

সিঙ্গাপুর:

আর্থিক সংকটকালে সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি কিছুটা মন্দায় নিমজ্জিত হয়। কম স্থায়ী ও অর্থনীতির উপর লঘু পৃভাব বিস্তার করলেও সিঙ্গাপুরের সরকার তা কাযৃকরী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হয়। আর্থিক কর্তৃপক্ষ সিঙ্গাপুরের অর্থের মূল্য ২০% কমিয়ে দেয় যাতে সামান্য ক্ষতিকর পরিবর্তন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আর্থিক কর্তৃপক্ষ অর্থনীতিকে সঠিক অবস্থায় নামিয়ে আনার জন্য অর্থনীতিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করে। এক বছরের মধ্যে সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি পূর্বের অবস্থায ফিরে আসে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন চলতে থাকে।
জাপান:

এশিয়ায় অর্থনৈতিক সংকট বিভিন্ন দেশকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এ অর্থনেতিক সংকটে অন্যান্য দেশের মত জাপানও অর্থনেতিক সংকটে পড়ে। এশিয়া অর্থনৈতিক সংকটের কারনে জাপান কিছুটা সংকটে পড়ার কারন হয়ে দাড়ায়ঁ। এ সংকটে পড়ার কারন হলো-
অর্থনেতিক অংশের বিরাট একটি অংশ এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে আসত যা অর্থনৈতিক সংকটের কারনে বন্ধ হয়ে যায়।
এ অর্থনৈতিক সংকটের কারনে জাপানের ব্যবসায়িক ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে মুদ্রা সংকট কিছুটা হলেও দেখা দেয়।
জাপান তার রফতানি খাতের প্রায় ৪০% এশিয়ার এসব দেশে করত। সংকটের কারনে এ রফতানি বন্ধ হয়ে যায়।
জাপানের মুদ্রার মান কমতে থাকে, কিন্তু জাপান সে সময় একটা বৃহত্তম দেশ যেটি সহজে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল।
জাপানে যে পরিমাণ মুদ্রা রিজার্ভ ছিল, তা সহজে নেমে গেল এবং এর মান পড়ে গেল।
জিডিপি-র বৃদ্ধির হার অবশ্যাম্ভীভাবে কমে ১৯৯৭ সালে তা ৫%-৬% নেমে এসে পৌছে।
সস্তা প্রতিদ্বন্দিতার হতে প্রতিযোগিতায় আরো নেমে যায়।
এর ফল শ্র“তিতে দেখা গেল-
অনেক জাপানী প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হল। আবার অনেক কোম্পানী প্রতিযোগিতার কারনে জাপানে বিনিয়োগ করতে অনাগ্রহ করে।


১৯৯৭ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় যুক্তরাষ্ট্র:

 ইতিহাসের পাতায়
এক সময়ে ছিল যখন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশই ঔপনিবেশিক শাসকদের দ্বারা আক্রান্ত ছিল। সেই শাসনামল ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে এবং বর্তমানে প্রযুক্তির এই বিস্ফোরণের যুগে পশ্চিমা ঔপনিবেশবাদ গোষ্ঠীরা নতুনভাবে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়ার মরণ খেলায় নেমেছে। এ প্রসঙ্গে যে বিষয়টি একেবারে না বললেই নয়, তা হলো একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে আফগানিস্তান যুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধ এবং সম্প্রতি লিবিয়ায় সংঘটিত ঘটনাবলী আমাদেরকে মার্কিন অর্থনীতির এই হি:¯্র নীতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদের মত প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি বরাবরই লোভাতুর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
প্রেসিডেন্ট বুশের আমলে আমেরিকার অর্থনীতি তীব্র মন্দার মুখে পড়েছিল। ১৯৯০ এর দশকে সেই মন্দা কাটিয়ে ওঠে। আমেরিকা সে সময় দ্রুত বিকাশশীল সমৃদ্ধিও পথে প্রবেশ করছে । পূর্বেকার শিল্পের ভিত্তিভূমি ক্ষয়ে যাওয়া সত্ত্বেও বিকাশ রুদ্ধ হয়নি। এই সমৃদ্ধির পিছনে সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল সম্ভবত পার্সোনাল কম্পিউটার (পিসি)। এটি আবিষ্কৃত হওয়ার বছর কুড়ির মধ্যেই কম্পিউটার আমেরিকায় একটি অতি পরিচিত বস্তুতে পরিণত হয়। শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই নয়, দেশে ঘরে ঘরে তখন কম্পিউটারের কদর। এই শিল্পে সবচেয়ে বড় অভিঘাত আসে দুই শতাব্দীর সন্ধিক্ষণে । অধিকাংশ পুরনো কম্পিউটার ২০০০ সালের আগমনকে ধরতে পারবে না, এই আশঙ্কায় সেগুলোর মানোন্নয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফলে তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে যায় বেশ কয়েকগুণ।
ক্লিনটন প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালীনই পরিবর্তনগুলো দেখা দিতে শুরু করে। দ্বিতীয় দফায়, তারঁ মেয়াদ শেষের সময় এসব পরিবর্তন অর্থনীতিকে এক নতুন উচ্চতায় বহন কওে নিয়ে চলছে। ক্লিনটন প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সময় দেশে বেকারের হার ছিল ৭.৪ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে তাঁর পুননির্বাচনের সময় বেকারত্ব কমে দাড়াঁয় ৫.৪ শতাংশ।
১৯৩০-এর বিশ্ব মন্দা, যা ইতিহাসে গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দা বলে অভিহিত করা হয়। সে সময় কোটি কোটি গাড়ি উৎপাদন নষ্ট করতে হয়েছিলো গাড়ি কোম্পানীগুলোকে। আজকের মন্দায় সেই প্রভাব লক্ষনীয়। বাজার দখলকে কেন্দ্র করে তখন অক্ষ শক্তি বনাম মিত্র শক্তির মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় যা পরবর্তীতে বিশ্বযুদ্ধ নামে পরিচিত। কিন্তু ১৯৯৭ সালের অর্থনৈতিক সংকট কেবল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। মার্কিন অর্থনীতিতে এর কোনো প্রভাব পড়েনি, এ কথা যেমন নিশ্চিত করে বলা যায়, তেমনিভাবে বিশ্ব অর্থনীতি অনেকটা আমেরিকাকে কেন্দ্র করে অনেকটা পরিচালিত হয়। সে কারনে এ সংকটের পিছনে আমেরিকার একচ্ছত্র কর্তত্ব ছিল।
১৯৯৭ সালে এশিয়ার অর্থনৈতিক সংকটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারি:
এ অর্থনৈতিক সংকটকালে এশিয়ার কতগুলো দেশ যেমন ভয়ানকভাবে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও মার্কিন অর্থনীতিতে কোনো ধরনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি, তা কিন্তু নয়। দেখা যায়, অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী এ দেশটি তখন অর্থনৈতিক সংকটাপন্ন দেশের বিভিন্ন কোম্পানীর মাধ্যমে তাদের অর্থব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। ব্যাংকগুলোতে সুদের পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু কওে দেয়। ফলে অর্থনৈতিক বিপর্যস্ত এশিয়ার দেশগুলোতে অর্থনীতিতে বিরাট মন্দা বা সংকট সৃষ্টি করে। নি¤েœ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়ার অর্থনৈতিক সংকটের পিছনে কতগুলো কারন আলোকপাত করা হলো-

ক্স বিদেশি কোম্পানীর ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা:
বিদেশি কোম্পানীর কালো থাবা এশিয়ার অন্তর্গত উন্নয়নশীল দেশে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ৯০ এর দশকে তথা ১৯৯৭ সালের অর্থনৈতিক সংকটকে ক্রমেই অধ:পতনে নিয়ে যায়। এমনকি এ হিং¯্র থাবা ও জাতীয়তাবাদ থেকে এখন পর্যন্ত রেহাই পাননি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। এরই ফলশ্রুতিতে এশিয়ার লোকজন বিদেশি ও বিনিয়োগকারীদের আশীর্বাদের চেয়ে হুমকি হিসবে মনে করছে। ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকগণ জাতীয়তাবাদের জোরালো উচ্চস্বর তুলে প্রতিবাদ করছে। তারা এটি ভালোভাবেই বুঝে নিয়েছে যে, আইএমএফ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দ্বারা এটাই তাদের দেশের পুন:ঔপনিবেশকরণ।

ক্স মুদ্রা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও দমনমূলক আর্থিক নীতি:
আগেই বলা হয়েছে যে, সামরিক শক্তির মাধ্যমে কোন স্থানে ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ এখন বিশ্ব সমাজে সম্পূর্ণ ঘৃণিত। অন্যদিকে, উপনিবেশিক রূপে এখন আর একমাত্র শারীরিক দখলদারিত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, মুদ্রা ব্যবসার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ এবং দমনমূলক আর্থিক নীতি একই ধরনের প্রভাব ফেলে। নব্য উন্নত দেশগুলো তাদের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার মাধ্যমে ভিক্ষুক বানিয়ে উপনিবেশ করতে পারে। কোনো গোলযোগ বা রক্তপাত না ঘটিয়ে এ ধরনের উপনিবেশ অর্জন করা যায়। যখন একটি দেশ দরিদ্র হয়ে যায়, তখন তারা রাজনৈতিকভাবে অস্থির এবং অত্যাসন্ন ক্ষমতার দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়। ফলে নেতৃত্ব যতক্ষণ না বিশ্বের একক আধিপত্যদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছে ততক্ষণ পরিবর্তন আসতে থাকবে। এটি ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়, আমরা যখন উপনিবেশোত্তর মালয়েশিয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করি। যদিও দেখা যায়, অর্থনৈতিক উপনিবেশরূপী মালয়েশিয়া কখনোও বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তথাপি আর্থিক সংকটের ঠিক পরে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি বিদেশিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।


মুদ্রা ও শেয়ার অবমূল্যায়ন:
যেকোন দেশেই মুদ্রা ও শেয়ার বাজার অর্থনৈতিকে গতিশীল ও চাঙ্গা রাখার একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু ১৯৯৭ সালে এ দু’টির মাধ্যমে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, যেমন-ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশেই এ দু’টি গুরুত্বপূর্ণ খাতকে কৌশলে পশ্চিমা তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থনীতিকে একটা সংকটময় স্তরে রেখেছে। অন্যদিকে উৎপাদনের অন্যতম মাধ্যম বড় বড় কোম্পানীগুলোকেও অর্থনৈতিকভাবে চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় তারা উৎকৃষ্ট মুনাফা অর্জনে তাদেরকে পুরোপুরি অক্ষম করে।
এশিয়ার অনিশ্চয়তাপূর্ণ ভবিষ্যত:
এশিয়ায় অর্থণৈতিক সংকটে বড় একটি ক্ষতি হলো মনো-বৈজ্ঞানিক ধরনের। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজনের জন্য যা বাস্তব, কিন্তু তা বহিরাগতদের কাছে বোধগম্য বা মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশজুড়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য মানসম্পন্ন জীবন যাপনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। এটা ছিল বসবাস এবং কাজ করার জন্য, উচ্চতর শিক্ষা, উন্নত চিকিৎসা সেবা এবং দীর্ঘতম জীবনেও অধিকতর পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ স্থান। দারিদ্রে নিপীড়িত এশিয়ার অনেক দেশ নিজের প্রচেষ্টায় অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হচ্ছে, কিন্তু তা হলো অবধারিত দারিদ্রতার বাইরে নতুন ও উন্নত জীবনের দিকে কম্পমান পদক্ষেপ। এখন তারা দ্রুত অর্থনৈতিক কষাঘাত থেকে নিজেদেরকে ধাবিত হতে দেখছে এমন অবস্থার মধ্যে যা তাদের ধারণাই ছিল না। তথাপি তাদের কাছ থেকে পশ্চিমা দাতাগোষ্ঠী কিংবা বড় কোম্পানীগুলো কেবল অর্থ ও বস্তুগত সম্পদই কেড়ে নেয়নি; তাদেও ভবিষ্যতও চুরি করা হয়েছে। আজকের বড় চ্যালেঞ্জ হলো তাদেও সেই ভবিষ্যৎ ফিরিয়ে আনার উপায় উদ্ভাবনের কৌশলকে উন্নত করা।

৯০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক হালচাল:
১৯৯৭ সালের ২৭ অক্টোবর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উড়ি ঔড়হবং রহফঁংঃৎরধষ কোম্পানী পয়েন্ট তালিকায় ৫৫৪ বা শতকরা ৭.২ ভাগ ঋণগ্রস্ত করে তোলে, যেটি সত্যিই এশিয়ার অর্থনীতিতে ভীষণ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এরই ফলশ্রুতিতে ‘নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ’ এর মত বড় প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে ব্যবসা স্থগিত করে। এই অর্থণৈতিক সংকট কেবল ভোক্তাদেরকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং একই সঙ্গে তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়। পরোক্ষভাবে বলতে গেলে একই বছর ‘ডট-কম বাবল’ এবং পরবর্তী বছর অর্থ্যাৎ ১৯৯৮ সালে ‘হাউজিং বাবল’ এবং সর্বশেষ ‘সাবপ্রাইম মর্টগেজ বাবল ক্রাইসিস’ এর মতো বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট দেখা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন বাজারের সংশোধনী (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবাসনের বুদবুদ -এর একটা সম্ভাব্য ফলাফল) এবং উপমুখ্য বন্ধকী সংকট মন্দা পরিস্থিতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। এছাড়া ২০০৮-২০০৯ সালের মন্দার সময় বিগত ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবার ব্যক্তিগত ব্যয়ের পরিমাণে হ্রাস ঘটে। এর থেকেই সাম্প্রতিক মন্দার তীব্রতা এবং গভীরতার আন্দাজ পাওয়া যায়।

 ঈড়সঢ়ড়হবহঃং ড়ভ ঃড়ঃধষ টঝ ফবনঃ ধং ধ ভৎধপঃরড়হ ড়ভ এউচ ১৯৪৫–২০০৯
চলমান এই বিশ্ব মন্দা এই পর্যায় পৌছেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার গৃহনির্মাণ খাতে ঋণদানকারী সর্ববৃহৎ দুই কোম্পানী ঋৎবফফরব গধপ, ঋধহহরব গধব-কে ২০ হাজার কোটি ডলারের বিনিময়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আর্থিক বিনিয়োগ ব্যাংক ‘লেহম্যান ব্রাদার্স’ নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। মাকির্ন সরকার এই ধ্বস থামানোর জন্য মার্কিন কংগ্রেসে বেইল আউট কর্মসূচির জন্য ৭০০ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন দিয়েছে। এই মন্দার পরিসর আরও গভীরতর হয়ে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু মার্কিন অর্থনীতি নয় ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশেও মন্দা চলছে। অস্থিতিশীল বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ইউরো অঞ্চল নামে পরিচিত ইউরোপের ১৫টি দেশ প্যারিসে বৈঠক করেছে। ইইউ-এর প্রেসিডেন্সি ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী নিকোলাই সারকোজি ওই বৈঠকে বলেছেন, আর কোনো ব্যাংকের পতন তাঁরা চান না এবং এ জন্য ২০০৯ সাল পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে অর্থ ঢালা হবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপকেরা দায়ী, তাঁদের অবশ্যই চলে যেতে হবে।



 আইএমএফ/ট্রেজারির নীতি

এ সময় মূলত পূর্বএশিয়া থেকে লাটিন আমেরিকা এবং রাশিয়া থেকে ভারতের মতো দেশের আবির্ভূত বাজারের প্রতি আন্তর্জাতিক নজর ছিল নিবদ্ধ। বিনিয়োগকারীরা দেখলেন যে, এ সমস্ত দেশ উচ্চমাত্রিক লাভের যেন স্বর্গভূমি, অথচ কম ঝুঁকিবহুল। ৭ বৎসরের সংক্ষিপ্ত সময়ে বেসরকারি পুঁিজপ্রবাহ উন্নত দেশ থেকে স্বল্পউন্নত দেশের দিকে ধাবিত হয় এবং তা ৭ গুণ বেড়ে যায়, অন্যদিকে সরকারি পুঁিজর প্রবাহ (বৈদেশিক ঋণ) থাকে অনড়।
আইএমএফ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারির বিশ্বাস ছিল এবং তারা যুক্তি দেখান যে, পরিপূর্ণভাবে পুঁিজর উদারীকরণ আঞ্চলিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সক্ষম। পূর্বএশিয়ার দেশগুরোর কিন্তু অতিরিক্ত পুঁিজর প্রয়োজন ছিল না। কেননা তাদের সঞ্চয়ের মাত্রা ছিল অতিউচ্চ, কিন্তু তারপরও সেখানে পুঁিজর উদারীকরণ কার্যক্রম চালান দেয়া হয়। আর এটি করা হয় ৮০এর দশকের শেষ নাগাদ এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। আমরা বিশ্বাস করি মূলধনী হিসাবের (ঈধঢ়রঃধষ সধৎশবঃ) উদারীকরণ নীতিটি ছিল সংকটের একমাত্র কারণ যা সংকটের নেতৃত্ব দিয়েছে।
সম্ভবত কোনদেশই বিনিয়োগকারীদের সহসা মনোভাবেব পরিবর্তন প্রবণতা প্রতিরোধ করতে সক্ষম ছিল না, যে মনোভাবের দ্বারা চালিত হয়ে দেশীবিদেশী বিনিয়োগকারীরা ফান্ড বাইরে নিয়ে গিয়েছে এবং ফান্ড অন্যত্র কাজে লাগিয়েছে। অপরিহার্যভাবে এই ওলটপালটজনিত পরিস্থিতি সংকটের অংশ হিসেবে কাজ করেছে, যার পরিণতি ছিল মন্দা বা তারচেয়েও খারাপ কিছু। এই ওলটপালটের পরিমাণ থাইল্যান্ডের বেলায় ছিল ১৯৯৭ সালে জিডিপি’র শতকরা ৭.৯ ভাগ, ১৯৯৮ সালে তা দাঁড়ায় শতকরা ১২.৩ ভাগ এবং ১৯৯৯ সালের শুরুর দিকে শতকরা ৭ ভাগ। পুঁজিপ্রবাহের এই বিপর্যয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ, সেখানে ১৯৯৭ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল গড়ে বৎসরে ৭৬৫ বিলিয়ন ডলার। উন্নয়নশীল দেশে এই বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বলয় সৃষ্টির ক্ষমতা খুবই দুর্বল, এ কারণেই প্রধান প্রধান নিম্নগামিতার সঙ্গে সঙ্গতি বিধান করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।
আইএমএফ এর বিরুদ্ধে অভিযোগের মাত্রা আরও গভীরে চলে যায় : এটি শুধু এমন নয় যে, উদারীকরণ নীতি এগিয়ে নেয়ার জন্য ফান্ডের প্রবেশ ঘটানো হয়েছিল যা ছিল সংকটের মূল কারণ, তারা এমন কিছু নীতির দিকে ঠেলে দিয়েছিল যার মাধ্যমে খুবই কম প্রবৃদ্ধি অর্জনের নজির সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে সৃষ্টি হয়েছে, ভূরি ভূরি নজির যার দ্বারা বলা যায়, আইএমএফ উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনেক ঝুঁিকর বহর চাপিয়ে দিয়েছিল।
১৯৯৭ সালের অক্টোবর মাসে যখন সংকটের শুরু হয়েছিল , তখন ফান্ড এমনসব স্থানে সম্প্রসারিত করা হচ্ছিল যেখানে ফান্ড পৌছে সংকটের মাত্রাকেই বৃদ্ধি করে দিয়েছিল।
এটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, বাজার উদারীকরণ এর যুক্তিদানকারীরা এমন বাস্তবতা বুঝতে চাননি যে, পুঁিজপ্রবাহ ছিল আবর্তনপ্রবণ। এর অর্থ হল এই যে, মন্দার সময় পুঁজি দেশ থেকে পাচার হয়ে যায়, অথচ বাস্তাবকভাবে তখনই পুঁজির বেশী প্রয়োজন পড়ে; অন্যদিকে পুঁজিপ্রবাহ তখনই দেশের দিকে ধাবিত হয় যখন অর্থণীতি ও প্রবৃদ্ধির জোয়ার সৃষ্টি হয় এবং মুদ্রাস্ফীতির খারাপ চাপ থাকে। যেমন নিশ্চিত ভাবে বলা চলে, যখন কোনো দেশ বাইরের পুঁজির প্রয়োজনবোধ করে থাকে, তখনই ব্যাংকাররা তাদের টাকা ফেরত চেয়ে বসে।
কেইনস্ এ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন যে, তারা প্রায়শই তাদের মনোভাব ও আচরণ বদলায়। ‘দি জেনারেল থিওরি অব ইপ্লয়মেন্ট, ইন্টারেস্ট অ্যান্ড মানি’ (১৯৩৫) পুস্তকে তিনি বিনিয়োগকারীদের ওঠানামাকে ‘অ্যানিমেল স্পিরিট’ (পশুসুলভ আত্মিক চেতনা) হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আর এহেন ‘ পশুসুলভ আত্মিক চেতনা’ অন্য এলাকার চেয়ে পূর্বএশিয়ায় ছিল কার্যকর ও স্পষ্ট।
অবশ্য একথা সত্য : আইএমএফ একাই উদারীকরণের জন্য ধাক্কাধাক্কি করেনি। এক্ষেত্রে একমাত্র ভেটো ক্ষমতা সম্পন্ন আইএমএফ এর সবচেয়ে বড় অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি (আইএমএফ এর নীতি নির্ধারণের ওপর প্রভাববিস্তারকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে) বিভাগও উদারীকরণের জন্য মদদ দেয়।

 প্রথম রাউন্ডের ভুলত্র“টি
এ বিষয়ে খুব কমই সন্দেহ রয়েছে যে, আইএমএফ এবং ট্রেজারি বিভাগ এর নীতি এমন একটি পরিবেশের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল যার ভেতর দিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থা প্রাণ পেয়েছিল, উৎসাহিত হয়েছিল, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা সংকটের সৃষ্টিতে চাপও প্রয়োগ করেছিল, দায়িত্ব ও কান্ডজ্ঞানহীন অতি দ্রুত আর্থিক বাজারউদারীকরণ নীতিই এর প্রমান হিসেবে উদ্ধৃত হতে পারে। যাহোক, আইএমএফ ও ট্রেজারি বিভাগ সংকটের প্রথম পর্যায়ে বড় রকমের ভুল করে বসে। তারা ল্যাটিন আমেরিকা থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা পূর্বএশিয়ায় প্রয়োগ করে।
কিন্তু পূর্বএশিয়া ছিল সর্ববিচারে লাটিন আমেরিকা থেকে ভিন্নতর; সরকারের হাতে অতিরিক্ত টাকা ছিল এবং মুদ্রাস্ফীতিও ছিল নিচে, কিন্তু কর্পোরেশন গুলো ছিল ঋণে জর্জরিত। দুটি কারণে বলা চলে রোগনির্ণয় কার্যক্রম যর্থাথ ছিল না। প্রথমত, লাটিন আমেরিকার চরমমাত্রিক মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে যা প্রয়োজন ছিল তা হল অতিরিক্ত চাহিদা হ্রানকরণ। পূর্বএশিয়ার সমাগত মন্দার ক্ষেত্রে যা ছিল, তা হলো অতিরিক্ত চাহিদা নয় বরং তার ঠিক উল্টো, অর্থাৎ চাহিদার অপর্যাপ্ততা। চাহিদার হত্যোদ্যমতা পরিস্থিতিকে শোচনীয় করে দেয়।
দ্বিতীয়ত, যদি ফার্মগুলোর নিম্নমাত্রিক ঋণগ্রস্ততা থাকত, থাকত উচ্চমাত্রিক সুদের হার; যদিও তা বেদনাদায়ক হত; তবুও সংকট হজম করা যেত। উচ্চমাত্রিক ঋণগ্রস্ততা, উচ্চমাত্রিক (চাপিয়ে দেয়া) সুদের হার, খুব কম সময়ের জন্য হলেও , তার ফলে অনেক ফার্মের মৃত্যু ঘন্টা বেজে ওঠে- অর্থনীতির বেলাতেও তেমনটি ঘটতে থাকল। প্রকৃতপক্ষে এশিয়ার নজর দেয়ার মত অর্থনীতির কিছু দুর্বলতা ছিল, তবে সে দূর্বলতা বিশ্বের অনেক অর্থনীতির মতো তত খারাপ অবস্থায় ছিল না। নিশ্চিতভাবে বলা চলে আইএমএফ এর বিচারে তা যত খারাপ ভাবা হত তা তত খারাপও ছিল না।

 হোবারাইট সংকোচনমূলক নীতিমালা :
বর্তমান বিশ্বে নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রম
সংকট শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে, পূর্বএশিয়াতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে ছিল কমবেশি ভারসাম্য, ছিল মুদ্রাস্ফীতির স্বল্পমাত্রিক চাপ এবং সরকারি বাজেটে ছিল ভারসাম্য কিংবা উদ্ধৃত্ত, ছিল সুস্পষ্ট ব্যঞ্জনা। প্রথমত, বিনিময় হার ও শেয়ারবাজারের ভেঙ্গে পড়া এবং স্থাবর সম্পত্তির ব্যবসার বুদ্ধুদ ফুটে যাওয়ার সঙ্গে বিনিয়োগ ও ভোগের দ্রুত হ্রাস মূলত মন্দার দিকে অর্থনীতিকে ঠেলে নামায়। দ্বিতীয়ত, অর্থনীতির বিধ্বংস অবস্থা প্রকারান্তে কর আয়কেও ধ্বংস করে দেয়। আর সৃষ্টি হয় বাজেটের মধ্যে আয় ব্যয়ের ফাঁক। হার্ভার্ড হোবারের মতো দায়িত্বশীল অর্থনীতিবিদ যুক্তি দেখান যে, এসব কারণে নজর দিতে হয় সত্যিকার ঘাটতির প্রতি, কাঠামোগত ঘাটতির প্রতি দৃষ্টি ক্ষেপন কোন ফল বয়ে আনে না। কেননা এ অবস্থায় তারা মনে করে ঘাটতি প্রকান্তরে পূর্ণকর্মসংস্থান বাড়ায় আর আইএমএফ এর যুক্তিও ছিল অনুরূপ। আজকাল আইএমএফ এ কথা স্বীকার করে নেয় যে, তার দ্বারা অনুপ্রাণিত ও নির্দেশিত আর্থিক নীতি ছিল অত্যন্ত কঠোর।
সংকটকালীন ফিইন্যনসিয়াল টাইমস্ এ আইএমএফ এর প্রথম ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর স্টেনলি কিসকার আইএমএফ এর নীতিকে সমর্থন করে লেখেন, যাতে উল্লেখ্য করা হয় আইএ্মএফ দেশগুলোকে ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট প্রণয়নের কথা বলেছিল।
সম্প্রসারণবাদী আর্থিক নীতি যদিও মন্দা থেকে উত্তরণেন অন্যতম রাস্তা এবং যদিও প্রশাসনিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট ব্যবস্থা বিরোধিতা প্রাপ্ত হয়, তবুও যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেজারি বিভাগ ও আইএমএফ থাইল্যান্ড, কোরিয়া এবং পূর্বএশিয়ার অন্যান্য দেশের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ বাজেটের সমপরিমাণ নীতি গ্রহণের পক্ষে ওকালতি করেছিল।

 স্বয়ং নিজের ভিক্ষাবৃত্তির জন্য নীতিমালা
১৯৯৭-১৯৯৮ সাল অবধি ছড়িয়ে পড়া পূর্বএশিয়ার সংকটে আইএমএফ এর সকল ভুলভ্রান্তির মধ্যে অন্যতম ছিল ফান্ডের স্বল্পতার গভীরতা উপলব্ধির ব্যর্থতা, যা পরস্পর ক্রিয়ার নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রয়োগের জন্য অনেক দেশে মদদ দেয়া হত। সংকোচনমূলক নীতির ফলে একটি দেশের অর্থনীতিই যে শুধু বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে তাই নয়, সেসঙ্গে তার প্রতিবেশী দেশসমূহের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
দেশগুলো এভাবে যখন দুর্বল হচ্ছিল, তখন প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে তাদের আমদানির ক্ষমতাও কমে যাচ্ছিল, আর এভাবে তারা প্রতিবেশী দেশগুলোকেও নিম্নগামিতার দিকে টেনে নামাচ্ছিল। ১৯৩০ এর দশকের মহামন্দা ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ছিল ‘প্রতিবেশীকে ভিক্ষুক বানাও’ নীতির প্রভাব । নিম্নগামিতার দ্বারা আক্রান্ত প্রতিটি দেশ তার রপ্তানির নীতি থেকে সরে এসে নিজের দেশে নিজ নিজ পণ্যের বাজার ভোক্তাদের নিকট খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
১৯৩০ এর দশকের মহামন্দার সময়ে প্রতিবেশীকে ভিক্ষুকে পরিণত করার নীতির খারাপ প্রভাবের চেয়েও আইএমএফ এর নীতি ছিল আরও বিধ্বংসী। দেশগুলোকে বলা হয়েছিল যে, যখন অর্থনীতি নিম্নগামী হয়, তখন তাদের বাণিজ্যঘাটতি কমাতে হবে এবং এমনকি বাণিজ্য উদ্ধৃত্ত অর্জন করতে হবে। আর এ ধরনের সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমেই দেশটি তার বিদেশী ঋণদাতাদের পয়সা শোধ করতে পারবে। তাই এটিই তাদের সামষ্টিক অর্থনীতির কেন্দ্রীয় এজেন্ডা হওয়া প্রয়োজন। একটি আপদকালীন বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল গঠন করে একটি দেশ দেশী বিদেশী পাওনাদারদের দেনা পরিশোধ করতে পারে।
বাস্তবিকপক্ষে বেইলআউট সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রমই বিনিময় মূল্যের আরও পতন রোধকল্পে পরিচালিত হয়ে থাকে।
১৯৯০ এর দশকে পূর্বএশিয়ায় সংকোচনমূলক আর্থিক এবং মুদ্রানীতি, বিপথগামী আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও পন্থা সেখানে বড় ধরনের নিম্নগামিতা ডেকে আনে, এভাবে আয় কর্তিত হয়ে পড়ে, ফলে আমদানি হ্রাস পেয়ে প্রচুর পরিমাণে বাণিজ্যিক উদ্ধৃতি দেখা দেয়, দেশগুলোর হাতে সম্পদ থাকল যা দিয়ে বিদেশী ঋণ পরিশোধন করার সুযোগ এল। যদি কারও লক্ষ্য থাকে সঞ্চয়ের মাত্রা বৃদ্ধি করার, তাহলে এ নীতিটি ছিল যথার্থভাবে সফল। কিন্তু তার মূল্য ছিল দেশবাসীর ও প্রতিবেশীদের চরম ভোগান্তি! ‘স্বয়ং ভিক্ষুকত্ব বরণ করা (ইবমমবৎ ঃযুংবষভ)।
আইএমএফ এর সকল ব্যর্থতার মধ্যে এটিই সবচেয়ে মারাত্মক ও দুঃখজনক যে, তার ভুলের কারণেই প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ (বিশ্বাসঘাতকের) (ৎধরংড়হ ফ’বঃৎব অস্তিত্বের কারণ হিসেবে) মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়।




 উচ্চমাত্রিক সুদের হার দ্বারা একটি অর্থনীতির শ্বাসনরুদ্ধকরণ
যখন পূর্বএশিয়ার ফান্ড প্রবেশ করছিল, তখন জোরপূর্বকভাবে সেখানকার সুদের হার বৃদ্ধি করা হয়েছিল। যে হারকে প্রচলিত অর্থে বিবেচনা করলে বলতে হয় তা ছিল অতিবৃহৎ মাত্রিক।
পূর্বএশিয়ার সমস্যা ছিল তথাকার দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অতি উচ্চমাত্রিক উত্তোলনজনিত, তারপরও আইএমএফ সেখানে সুদের হার বৃদ্ধির ভেতর দিয়ে প্রকারান্তরে খারাপ প্রবণতাগুলোকে উৎসাহিত করে দেয়। যা সমস্যা কে আরো গভীর করে তুলে। এর ক্ষতিকর প্রভাব পূর্বেই ছিল অনুমেয়, উচ্চমাত্রার সুদের হার অনেক ফার্মকে দুঃসহ অবস্থানে ফেলে দেয়, যার ফলে ব্যাংকের নিকট ঋণ ফেরত না দেয়ার তালিকা বাড়তে থাকে।
আইএমএফ একটি আত্মরক্ষামূলক যুক্তি হাজির করে, যার কোনপ্রকার সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তারা যুক্তি দেখান যে যদি সুদের হার অতিমাত্রায় বৃদ্ধি করা না হয় তাহলে বিনিময় হারে ধ্বস নামবে। কেননা সে অবস্থায় যারা ডলার ‘ডিনমিনেটেড ঋণের’ মধ্যে আছেন তারা তা পরিশোধে হবেন ব্যর্থ। কিন্তু বাস্তবতা বলে যে, সুদের হার বাড়িয়েও টাকাকে সুস্থির করা যায়নি। এমতাবস্থায় দেশ উভয় হিসাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য হয়েছিল। অধিকিন্তু আইএমএফ কখনও দেশের অভ্যন্তরে কী ঘটছে তা দেখতে আগ্রহী ছিল না, বা তার প্রয়োজনবোধ করেনি। আইএমএফ এর নীতির কারণে ক্ষুদ্র ফার্মগুলি এবং অন্যান্য নিস্পাপ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। একটি হিসাবে দেখা যায় ইন্দেনেশিয়ার শতকরা ৭৫ ভাগ ব্যবসা বাণিজ্য দুর্গতির মধ্যে পড়ে যায়। থাইল্যান্ডে প্রায় ৫০% ব্যাংকঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে একটি ফার্ম ধ্বংস করা যত সহজ, একটি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করা তত সহজ নয়।
 দ্বিতীয় রাউন্ড ভুলভ্রান্তি :
বাজে ধরনের নতুন কাঠামোকরণ (পুনর্বিন্যাস)
সংকট আরও খারাপ রূপ পরিগ্রহ করার কারণে নতুন কাঠামোকরণের দরকার অনুভূত হয়। যেসব ব্যাংক খারাপ ঋণ প্রদান করেছিল সেগুলো বন্ধ করার দরকার দেখা দেয়, যেসব কোম্পানি ঋণগ্রস্থ ছিল সেগুলো বন্ধ করে দেয়া বা তাদের ঋণপ্রদানকারীদের দ্বারা দখল করে নেয়া হতে থাকে। আইএমএফ চাহিদা মোতাবেক তারল্য সরবরাহের কাজ না করে বরং তার পরিবর্তে উল্লিখিত কাজে বেশি মনোনিবেশ করে। কিন্তু যখন নতুন কাঠামোকরণে প্রকল্প ব্যর্থ হয়, তখন আইএমএফ এর কার্যক্রমের ফলে ডুবন্ত অর্থনীতির সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়ার বিষয়ে উৎসাহ জোগায়।

 আর্থিক ব্যবস্থাসমূহ
পূর্বএশিয়ার সংকট ছিল আদ্যাপান্ত একটি আর্থিক ব্যবস্থাপনার সংকট, আর সে জন্য এ বিষয়টি নিয়েই নড়াচড়া করার দরকার ছিল। আর্থিক ব্যবস্থাকে অর্থনীতির মস্তক বলে বিবেচনা করা যায়।
এই সংকট একটি দুষ্টচক্রের ভেতর আটকা পড়ে, ব্যাংকগুলো ঋণ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, প্রধান প্রধান ফার্ম গুলো তাদের উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়, যার দরুন কম উৎপাদন হয় এবং অর্থনীতি নিম্নগামী হয়ে পড়ে। যখন উৎপাদন এবং আয় হ্রাস পায় তখন লাভের পরিমাণও কমে যায় এবং সে অবস্থায় কিছু ফার্মকে জোরপূর্বক ভাবে দেউলিয়া করা হয়। যখন ব্যাংককে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয় তখন ব্যাংকের আয়ব্যয় হিসাব নথি খারাপ পর্যায়ে চলে যায়, ব্যাংকের পক্ষে ঋণ দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না, অর্থনীতি নিম্নগামী হয়ে পড়ে।
নতুনভাবে পুণর্গঠন করতে গিয়ে আইএমএফ টিম পূর্বএশিয়ায় দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বন্ধ করার বিষয়কে তাদের কেন্দ্রীয় কাজ হিসেবে গ্রহণ করে। যেন তাদের মনের অভ্যন্তরে ‘ডারউইনের মডেলের’ অনুরূপ প্রতিযোগিতার বিষয়টি কার্যকর ছিল। সুতরাং এমন আবহ সৃষ্টি হল, যাতে মনে হল দুর্বল ব্যাংক কোনোভাবেই আর জীবিত থাকবে না। তাদের এ কার্যকলাপের কিছু ভিত্তি অবশ্য ছিল । কিন্তু বিপরীতে দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়া আইএমএফ এর মতো বাহ্যিক উপদেশ অবজ্ঞা করে দুটি বড় ব্যাংককে বন্ধ না করে পুঁিজ দিয়ে দাড়ঁ করিয়ে রাখে। এটি অংশত কোরিয়াকে দ্রুত মন্দা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল

 কর্পোরেট পুনর্বিন্যাস
যখন আর্থিক পুনর্বিন্যাসের ইস্যুটি কেন্দ্রীয় ইস্যুতে পরিণত হয়, এটি পরিস্কার ছিল যে, কর্পোরেট সেক্টরের সমস্যার সমাধান না করে আর্থিক সেক্টরের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব ছিল না।
আইএমএফ এর কর্পোরেট পুনর্বিন্যাসের কারণে যেসব ফার্ম দেউলিয়া হয়েছিল ত্র পুনর্বিন্যাস কার্যক্রম ব্যাংক পুনর্বিন্যাসের মতো সাফল্যশূন্য ছিল। বরং আইএমএফ এর কার্যক্রমে আর্থিক পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে একধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছিল। কে র্ফামের মালিক এটি ছিল অজ্ঞাত। তাছাড়া ঋণ পরিশোধ ও ইকুয়িটি কার্যক্রম কীভাবে হবে তাও স্পষ্ট ছিল না। কী উৎপাদন হবে, কীভাবে উৎপাদন হবে, কীভাবেই তা সংগঠিত করা হবে, ইত্যাদি বিষয় ছিল না সুস্পষ্ট। পুনর্বিন্যাস যেখানে সাধারণত খুব ধীর গতিসম্পন্ন হয়ে থাকে সেখানে কোরিয়া ও মালয়েশিয়া খুবই সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে এবং পুনর্বিন্যাসের কাজটি উল্ল্যেখযোগ্য স্বল্পসময়ের ভেতর সম্পন্ন করে। বিপরীতভাবে আইএমএফ এর কৌশলে নির্দেশিত ও তা অনুসৃত হয়ে থাইল্যান্ডের পুনর্বিন্যাস কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে।


 সবচেয়ে দু:খজনক ভুলভ্রান্তি : সামাজিক ও রাজনৈতিক হাঙ্গামা সৃষ্টি


এশিয়া সংকটের সময়ের ভুল পদক্ষেপ ও এর সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব কখনও পরিপূর্ণভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়নি। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে যখন আইএমএফ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইকেল কমডেস্যুস , অগ্রসর শিল্পায়িত দেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংকের গভর্নরসহ অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদগণ মালেশিয়ার কুয়ালালামপুরে মিলিত হন। তখন অনেকেই ইন্দোনেশিয়ায় একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক দ্বন্ধ-সংঘাতের আশঙ্খা করেছিলেন (বিশেষত জাতিগত নৃ-গোষ্টিক দ্বন্ধ)। ইন্দোনেশিয়ার আর্থিক ও রাজস্ব বিষয়ক কঠোর বিধান চালু রাখার কারণে এমনটি আশঙ্খা করা হয়েছিল। দুর্ভগ্যজনকভাবে সেই আশঙ্কা সত্যি হয়েছিল।
ইন্দোনেশিয়ায় খাদ্য ও জ্বালানী খাতে ভর্তুকি চরমভাবে হ্রাস করা হয়, ফলে ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হয়েছিল।
আইএমএফ খাদ্যে ভর্তুকি কর্তন কওে কার্যত বিশ্বব্যাপি দাঙ্গাকে উসকে দিয়েছিল।
আইএমএফ কর্তৃক প্রণীত নীতির ভুলত্রুটিগুলোর মূল সমস্যা ছিল এই যে, এগুলো ছিল দীর্ঘমেয়াদি। আইএমএফ এর তত্ত্ব অনুযায়ী একটি দেশকে উন্নত হতে হলে দীর্ঘমেয়াদি তথা কমপক্ষে ২০ বছরের পরিকল্পনা নিতে হবে। এ অবস্থায় কঠিন পথ পরিক্রমার প্রয়োজন হতে পাওে, প্রয়োজনে বৃহত্তর স্বার্থে নিম্নগামিতা ও মেনে নিতে হবে।

 ভবিষ্যতের উপর প্রভাব
কষ্টকর পরিস্থিতি সত্ত্বেও এশিয়া সংকটের কিছু হিতকর প্রভাব রয়েছে। পূর্ব এশীয় দেশগুলো এ থেকে শিক্ষা নিয়ে উত্তম কিছু আর্থিক নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট বিধিপ্রণয়ণ করেছে, ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগের চেয়ে ভালো হয়েছে।
যেহেতু পূর্ব এশীয় ব্যাংকগুলো আদর্শিক অবস্থা থেকে বহুদূওে ছিল, সেহেতু পরবর্তী তিনদশক ব্যাপী তাদেও দ্বারা পুজিঁর সরবরাহ ছিল খুবই মুগ্ধকর। এর ফলে তারা টেকসই হয়ে উঠতে পেরেছিল এবং প্রবৃদ্ধিকেও টেকসই করতে সক্ষম হয়ে উঠেছিল।

 ভুলসমূহের ব্যাখ্যা
এই অর্থনৈতিক সংকটের ভ’ল বা ব্যার্থতার কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন অনেকে। তবে, আইএমএফ বা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি কেউই চিন্তা করতে চাইনি যে, তাদেও গৃহীত নীতিসমূহ ছিল ভুলপথে পরিচালিত।
এছাড়া পূর্বএশিয়া সর্ম্পকে একটি তত্ত্বই আছে যা ‘ষড়যন্ত্র’ তত্ত্ব নামে পরিচিত। এ তত্ত্বে বলা হয়, পূর্বএশিয়ার দ্রুত বিকাশকে, বিগত ৪০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে উন্নয়ন যাত্রাকে অনেক মহলএমনে নিতে পারেন নি।

 বিকল্প কৌশল

আইএমএফ যে আর্থিক পুনবিন্যাসের নীতি নিয়েছিল, আমরা মনে করি তা অনেকাংশে যথাযথ সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু, দুর্বল ব্যাংকব্যবস্থার সমস্যার ক্ষেত্রে আইএমএফ ভুমিকাকে আমরা সমর্থন করি না। পুনবিন্যাসের প্রশ্নে তাদেও আরও সতর্কতা প্রয়োজন ছিল।
পূর্বএশিয়ায় আইএমএফ এর অনুসৃত নীতির ফলাফল বিশ্বায়নকে আক্রান্ত কওে তুলেছিল। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যার্থতা ছিল দীর্ঘমেয়াদি। তবে এ সংকট উন্নত বিশ্বেও অনেককেই সর্তক ও সাবধানী করে তোলে।


 দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আর্থনৈতিক মন্দা-১৯৯৭: বাংলাদেশের আর্থনীতিতে এর প্রভাব

এশিয়ায় আর্থনৈতিক উন্নয়নে ‘ব্যাঘ্রশক্তি’ হিসেবে পরিচিত থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ১৯৯৭ সালে যে আর্থনৈতিক মন্দা বা বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল তার কিছু প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষ প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশের আর্থনীতিতেও। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আর্থনৈতিক মন্দা বা বিপর্যয়ের ফলে বাংলাদেশের আর্থনীতিতে যেসব প্রতক্ষ্য প্রভাব পড়েছিল তা হলো-
অর্থনৈতিক মন্দা চলাকালে বাংলাদেশের সাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওইসব দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক কিছুটা স্থবির থাকলেও পরবর্তীতে দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুরে শ্রমিক নিয়গ বন্ধ ও শ্রমিক ছাটাই : ১৯৯৭ সালের জুন-জুলাই মাসে অন্তত ৩০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর হতে ছাটাই করা হয়। এছাড়া নতুন করে শ্রমিক নিয়োগও বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশে রেমিটেন্সের পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে যায়। তখনকার মলয়েশিয়া ফেরত এক শ্রমিকের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয় দৈনিক ইনকিলাবে। ওই সাক্ষাৎকারে শ্রমিক মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “আমরা মালয়েশিয়ার কোম্পানীকে বলি দেশে যতদিন অর্থিক সঙ্কট চলবে ততদিন আমাদের বেতন দরকার নেই, শুধু খেয়ে পড়ে থাকতে চাই আমরা। কিন্তু তারপরেও আমাদেরকে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে”।
এছাড়া পরোক্ষ প্রভাবের মধ্যে ছিল
শেয়ার বাজারে ধ্বস : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে অর্থনৈতিক মন্দাকালে শেয়ারবাজারে যে ধ্বস নামে তার ফলশ্র“তিতে বাংলাদেশের পুজিবাজারের গেমলাররা কৃত্রিমভাবে শেয়ারবাজারে ধ্বস নামাতে ভূমিকা রাখে। যা দেশের জন্য পরবর্তীতে বড় ধরণের পুঁজির সঙ্কট দেখা দেয়। অনেক মানুষ এর ফলে তাদের সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে।
তারল্য সঙ্কট ও ঋণদান পরিস্থিতি : ১৯৯৭ সালের ৩১ জুলাই দেশের বাণিজ্যিক বেসরকারি ও বৈদেশিক ব্যাংকসমূহের সর্বমোট উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল ২২৭৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। পরবর্তী সপ্তাহে (৭ আগস্ট) তারল্য হ্রাস পেয়ে দাড়ায় ২০২৫ কোটি ২৬ লাখ টাকায়। তারল্য সঙ্কটের জের ধরে ব্যাংকের ঋণদান পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে চলতি মূলধন ঋণ হিসেবে ৬ হাজার ৮০৭ কোটি ৩৭ লাখ এবং মেয়াদী ঋণ হিসেবে ১ হাজার ১২৪ কোটি ৮৮ লাখ, সবমিলিয়ে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি ২৫ লাখ টাকার শিল্পঋণ মঞ্জুর হয়েছে দেশেল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে। যা বিগত ৯৫-৯৬ অর্থবছরের প্রায় দ্বিগুণ।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস : এ সময়ে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেকখানি কমে যায়, তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল।
মুদ্রার মূল্যামান হ্রাস : ওই সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের স্থানীয় মুদ্রার মূল্যমাণ হ্রাস পায়। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের মুদ্রার মূল্যমাণও অনেকটা হ্রাস পায়।
ইতিবাচক প্রভাব
বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলার জন্য তূলনামূলকভাবে তাদের থেকে কম উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী হয়। ফলে বাংলাদেশের সাথে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিার দেশগুলোর বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। তৎকালিন প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে এসব দেশের সাথে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার প্রধানরা বণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করেন।

 তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

১৯৯৭ সালের এশিয়ান অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছিল। ওই সঙ্কটে মূলত আটটি দেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যারমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া। আর বাংলাদেশ সঙ্কার মধ্যে ছিল যে হুবহু সঙ্কট হয়তো এই দেশেও হতে পারে। তাই ওই সময় সরকার ঋণ কার্যক্রম ও বিনিয়োগ ব্যবস্থার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। বিরোধী দলের নানা কথোপকথনও থেমে ছিল না। ওই বছর জুন-জুলাইয়ে শুরু হওয়া দেশের তারল্য সঙ্কটের জন্য বিরোধী দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে এক তরফা দায়ী করছিল। ওই সময়ের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে পাওয়া তথ্য মতে বিরোধী দল চাচ্ছিল এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অর্থনৈতিক সঙ্কট আসুক, যাতে সরকারের পতন হয়। কিন্তু তখনকার আওয়ামী সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদন করে সঙ্কট সম্পূর্ণরূপে নিরসন করতে না পারলেও দেশের অর্থনীতিকে মন্দার হাত হতে বাচিয়েছেন। আর এতে তৎকালীন সরকার প্রধান হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করেছেন দীর্ঘ মেয়াদী বিদেশী ঋণ।
১৯৯৭ সালের আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় ‘বিদেশী ব্যাংকঋণের সম্ভাবনা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি সংক্ষিপ্ত সম্পাদকীয় ছাপা হয়। যাতে বলা হয়, দেশের চলমান তারল্য সঙ্কট নিরসন এবং শিল্পখাতে অর্থায়ন সমাধান হওয়ার একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি এখনো অনুকুলে আসেনি তবে অনুকূল হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। প্রতিবেদনে এর কারণ হিসেবে বলা হয় - বাংলাদেশে যে বিদেশী ব্যাংগুলো ব্যবসা পরিচালনা করছে সেগুলোকে সরকার সম্প্রতি প্রস্তাব দিয়েছে শিল্পখাতে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেওয়ার জন্য। আর এ প্রস্তাবে ব্যাংকগুলো ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। ওই সময়ে সার্বিক পরিস্থিতি যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যকে ঋণ গ্রহণ ও পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য চারটি বিদেশী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সমন্বয়ে একটি ওয়াকির্ং গ্র“পও গঠন করা হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, এশিয়ার অর্থনৈতিক সঙ্কট শুরুর সময় বাংলাদেশেও তারল্য সঙ্কট চলছিল। তাই এই দেশেরও মন্দার সম্ভাবনা কম ছিল না। ৯৭ এর মাঝামাঝি কয়েক মাস ধরে তারল্য সঙ্কট চলায় তখন অনেক রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংক শিল্পখাতে দীর্ঘমেয়াদী ঋণদানের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। পাশাপাশি চলতি মূলধন যোগাতেও হিমশিম খাচ্ছিল। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকে সরকারি বেসরকারি ২২ টি ব্যাংকের মধ্যে ঋণদানের সামর্থ্য ছিল মাত্র তিনটি ব্যাংকের। উপরন্তু তারল্য সঙ্কটের কারণে নিয়মানুযায়ী মোট আয়ের ১৫ শতাংশ দিয়ে সরকার অনুমোদিত বন্ড কেনার এবং নগদ ৫ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখার সামর্থ্যও হারিয়েছিল। জুলাই মাসের শেষে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হলেও স্বাচ্ছন্দ ফিরে আসেনি। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এশিয়ার অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব বিস্তারের কারণে কতটা চড়াই উৎড়াই পার করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
৯৭ এর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে মুদ্রা বাজারে সুদের হার চার শতাংশ হতে পাঁচ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে, অথচ যেখানে নির্ধারিত হার সাড়ে সাত শতাংশ। ফলে তারল্য জমে থাকলে তা ব্যবহার ও বিনিময় যোগ্যতা হারায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ রাখতে ব্যর্থ হয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কারণ মূল দিয়ে কেনা অর্থ বিনিয়োগ অর্থাৎ মেয়াদী বা প্রকল্প ঋণ দিতে পারেনি তারা। কল মানি মার্কেটেও টাকার চাহিদা কমে গিয়েছিল এবং খেলাপী ঋণও সদস্যার সৃষ্টি করেছিল। সুতরাং সার্বিক দিক বিবেচনায় সরকার বিদেশী দীর্ঘ মেয়াদী ঋণের দারস্থ হয়।

 এশিয়ার বাকি অংশে এ সংকটের প্রভাব:
১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মুদ্রার বিনিময় হার এর যুক্ত অনুপাত ছিল ৮.৩। ১৯৯৭-৯৮ সালে এশিয়ার অন্যান্য দেশে মুদ্রা সংকটের কারনে চীনে মুদ্রার মানও অবমূল্যায়ন করা হয়। এশিয়ান মুদ্রার মানের প্রতিযোগিতার ফরে চীনের রফতানি সস্তায় পড়ে যায়। অর্থ্যাৎ যেসব পণ্য রফতানি করা হত, তা কম মূল্যে রফতানি করতে বাধ্য হয়। এ ক্ষেত্রে চীন- যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একত্রিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এ যদিও এশিয়ার অন্যাণ্য দেশের সাথে চীনের মুদ্রার সংকট দেখা দেয়। মুদ্রার সংকটের সময় চীনে যেসব বিনিয়োগকারী সংস্থা ও দেশ বিনিয়োগ করত, তারা তাদের বিনিয়োগ কমিয়ে দেয়। ফলশ্র“তিতে চীনে মুদ্রা সংকট দেখা দেয়। তবে চীন দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মুদ্রা ব্যবস্থাপকগণ কিছু গঠনমূলক পদক্ষেপ অবলম্বণ করে। যা নিচে আলোচিত হল-
প্রথমত: ব্যাংক রিজার্ভ হ্রাস করে।
দ্বিতীয়: যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যের উপর বেশি নির্ভর করে।

 বৈশ্বিক আর্থনীতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আর্থনৈতিক মন্দা-১৯৯৭

যদিও অর্থনৈতিক সংকটের সূত্রপাত এবং ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় ২৩ টি দেশ কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির উপরও এই সংকটের প্রভাব ততকালীন সময়ে দেখা যায়।
১৯৯৭ এর অর্থনৈতিক সংকটের কারনে তেলের দাম কমে যায়। ১৯৯৮ সালে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম হয়ে দাড়াল মাত্র ১১ মার্কিন ডলার। আর এ ঘটনা এপেকভুক্ত দেশসহ সকল তেল রফতানিকারক দেশগুলোর অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
তেলের এ অবমূল্যায়নের কারন ১৯৯৮ সালে রাশিয়ার নতুন করে একটি অর্থনৈতিক সংকটের জন্ম দেয়। এছাড়াও এ সংকটের ধারাবাহিকতায় ব্রাজিল ও আর্জেন্টেনার মতো উঠতি অর্থনৈতিক শক্তিগুলোও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
পাশাপাশি ১৯৯৭ সালে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোতে আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের নেতিবাচক ভূমিকার জন্য উন্নয়নশীল দেশে এসব সংস্থার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। পাশাপাশি বিশ্বায়ন বিরূপ মানসিকতার জন্ম হয়।

 উপসংহার

যদিও ১৯৯৭ সালের অর্থনৈতিক সংকটের উৎপত্তিস্থল ছিল পূর্ব এশিয়ার ২৩ টি সমৃদ্ধশালী দেশ , যাদের উন্নয়নের ধারাবাহকতা তাদের এশিয়ান টাইগারের খেতাব এনে দিয়েছিল ; তবে এই সংকটের প্রভাব ছিল ব্যাপক ও বিস্তৃত । কারণ এর ধারাবাহিকতায় রাশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতেও পরে সংকট তৈরি হয় । আর এই সংকট এশিয়ার সরকার সহ জনহনকে আরও বেশি সচেতন কওে তোলে । এশিয়ার আজকের প্রবৃদ্ধির রহস্যই লুকিয়ে আছে ১৯৯৭ -১৯৯৮ সালে সংগঠিত সেই আর্থিক সংকটের মধ্যে । নিষ্ঠা- একাগ্রতা -পরিশ্রম এর মাধ্যমে ধ্বংসযজ্ঞ থেকেও উঠে দাড়িয়ে পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেয়া যায় , প্রযুক্তিগত - শিল্পগত- অর্থনেতিক উন্নয়নের মাধ্যমে অভিজাত হওয়া যায় এর এক প্রত্যক্ষ উদাহরণ হলো এই পূর্ব এশিয়া তথাপি আমাদেও এশিয়া ।









সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১২ রাত ২:৩২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×