somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তছমি আরাঃ বঙ্গীয় নারীর প্রোজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি

২৪ শে মে, ২০১৫ সকাল ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্বৃদ্ধি ও সুশাসন শব্দ দুটি পরস্পরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ক্ষুধাতুর ও নিত্য অভাবগ্রস্থ জনগণের কাছে সুশাসনের বাণী অর্থহীন। রাহাজানি, ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, খুন, গুমের প্রতিকারহীন সামাজিক পরিবেশ এবং তহবিল-তছরুপকারী, লুটেরা, প্রতারক, ঠগীদের আধিপত্যময় দেশের নাগরিকেরা সম্বৃদ্ধি অর্জন করলেও শান্তিময় জীবন-যাপন করতে পারে না। নাগরিকদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাকে সুশাসনের চাদর দিয়ে আবৃত করে দিতে পারলেই তারা শান্তিময় নির্ঝঞ্ঝাট জীবন-যাপন করতে পারে। কেবলমাত্র এরূপ ক্ষেত্রেই একটি দেশ উন্নতির পথে অগ্রসরমান বলে বিবেচনা করা যায়। জিডিপি বেড়েছে, রেমিটেন্স বেড়েছে, বহির্বিশ্বের লোকেরা আমাদের প্রশংসা করছে এসব দেখে কোন দেশের উন্নয়নের গতি নিরূপন করার পন্থা কখনো সঠিক ফল দেয় না। শাসকেরা এসব দেখে শুনে আত্মপ্রসাদবোধ করতে পারেন কিন্তু নিত্য অভাবগ্রস্থ জনগণ তাতে আশ্বস্থ হতে পারে না। বিদেশীদের বাহবা পেয়ে শাসক মহল আহ্লাদিত হলেও ক্ষুধাতুর জনগণের মাঝে তা কখনো স্বস্তির উন্মেষ ঘটায় না। উন্নয়নের মাত্রা নিরূপন করতে হলে আগে দেখতে হবে জনগণ কেমনভাবে জীবন-যাপন করছে। তা নির্নয় করতে গেলে দেখতে হবে শ্রমজীবী পেশাজীবী কর্মজীবী জনগণ কিভাবে দিনগুজরান করছে। আমাদের দেশে সাধারণত পুরুষেরাই আয় রোজগার করে, নারীরা সাংসারিক অন্যান্য বিষয় দেখাশুনা করে। নারীরাও কর্মজীবনে আসে, তাদের সংখ্যা অনেক কম। তাদের আয় সংসারের বাড়তি প্রয়োজন মেটায়, অভাব লাঘব করে, সংসারের স্বাচ্ছন্দের মাত্রা বৃদ্ধি করে। নারীদের আয় কদাচিৎ সংসারের মুখ্য আয় হিসেবে গণ্য হয়। সংসারে পুরুষের অনুপস্থিতি বা অক্ষতাজনিত কারণে নারীকে যোগ দিতে হয় কর্মস্থলে, সেক্ষেত্রে তার আয়টাই সংসারের মুখ্য আয় হিসেবে গণ্য হয়। শিক্ষিত ও উচ্চ শিক্ষিত নারীগণ কর্মস্থলে যোগ দেন কখনো দেশ ও সমাজের প্রতি সেবা প্রদানের মানসিকতা নিয়ে, এ ক্ষেত্রে তাদের আয় মুখ্য নয়, গৌণ। তারা আবার কখনো বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে নিজের বা সংসারের প্রয়োজনে কমস্থলে যোগ দেন। রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে স্বল্প-শিক্ষিত, অশিক্ষিত, কর্মে দক্ষ বা অদক্ষ নারীদের এক বিরাট অংশ আসে কর্মস্থলে। এদের উদ্দেশ্য নিজের ও সন্তানের ক্ষুধা নিবারণ করা। এরূপ নারীদের রূপক প্রতিচ্ছবির নাম তছমি আরা।

পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া পঁচিশ বিঘা জমি আর নিজের আয়ে করা মুদির দোকানের আয় দিয়ে আতাউল্লাহর সংসার মোটামুটি ভালোই চলছিল। স্ত্রী তসমি আরা মুরগী ও ছাগল পালনের মাধ্যমে অভাবের সংসারে যোগ করতো বাড়তি আয়। সন্তানদের গ্রামের পাঠশালায় পড়ার খরচটা এভাবেই মেটানো হতো। ইচ্ছা থাকলেও গরু পালন সম্ভব হতো না, কারণ ইরি ধানের খর গরু খায় না। গরু পালতে হলে তার খাবার প্রতিদিন কেনার দরকার হয়। এতে পোষায় না। তাই গ্রামের কেউই আর গরু পালন করে না। সন্তানদের বড় হবার সাথে সাথে বাড়তে থাকে সংসারের চাহিদা। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম দিন দিন বাড়ছে হু হু করে। এসব মিলিয়ে কৃষিজীবী আতাউল্লাহর অভাব বাড়তেই থাকে। মেজবাহ মাস্টারকে গ্রামের সবাই জ্ঞানী ব্যক্তি বলেই জানে। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সমস্যার নিরসনে তার পরামর্শ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। গ্রামে সরকারের কৃষি বিভাগের একজন লোক আছে। তার জন্য সরকারীভাবে আবাসনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে কিন্ত তিনি সেই বাসায় থাকেন না। কালেভদ্রে আসেন। তাই তার কাছ থেকে কৃষি ব্যবস্থার সমস্যা নিরসনে উপযুক্ত দিক-নির্দেশনা পাবার সুযোগ আতাউল্লাহর নাই। অতএব মেসবাহ মাস্টারই ভরসা। তার পরামর্শ মোতাবেক আতাউল্লাহ গঞ্জে গিয়ে বিদেশ থেকে আমদানী করা বীজ নিয়ে এলো। এই বীজে ধান হবে অনেক বেশী। রোপন করলো। কিন্তু চারা গজালো না। নিজের বীজ ধান এর মধ্যেই আতাউল্লাহ খেয়ে ফেলেছে। এখন সে পড়ে গেলো অন্তহীন সমস্যায়। ধান রোপনের মৌসুম শেষ। অজন্মার কারণে আতাউল্লাহর অভাব আরো প্রকট হয়ে গেলো। সে অন্যের জমিতে কামলা খাটা শুরু করলো। কিন্তু অন্য ধনী কৃষকদের অবস্থা একই। তাই কাঙ্খিত মজুরী সে পায়না। তসমি মুরগী আর ছাগল থেকে আয় করতে গিয়েও হোঁচট খেলো। এগুলি প্রতিপালন করতে হলে নিয়মিত ঔষধপত্র দিতে হয়, এর জন্য সরকারী অফিস আছে। তসমি সেখানে গিয়ে কোন পাত্তা পায় না। যখনই যায় কর্মকর্তা বলে এখন ঔষধ নাই, সদর দফতর থেকে ঔষধ আসলে দেওয়া হবে। বে-সরকারী দোকান আছে, সেগুলো এই কর্মকর্তারাই চালায়। সেখানে সবই সব-সময়ই পাওয়া যায়, কিন্তু টাকা লাগে। এভাবে খরচ করে ঔষধ কিনতে গেলে মুরগী ছাগল এগুলো পালন করে বাহ্যত কোন লাভ হয় না। একবার সদর দফতর থেকে বড় সাহেব এসেছিলেন সুন্দর গাড়িতে চড়ে, তাকে নিজেদের সমস্যার কথা তসমি জানায়, গ্রামের অন্য মহিলারাও এসে কন্ঠ মিলায়। কর্মকর্তার সাথে ক্যামেরা নিয়ে সাংবােিকরাও এসেছিল। মহিলাদের কারো হাতে মুরগী, কারো হাতে ছাগল ধরিয়ে দিয়ে ছবি তোলে। তারা বলে এবার অনেক ঔষধ পাবে হাঁস মুরগী ও গবাদি পশু পালনকারীরা। কর্মকর্তা চলে যায়। কিন্তু ঔষধ আসে নাই, আর সমস্যার কথা বলার কারণে হাঁস-মুরগী ও পশু পালন দফতরে তসমিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে একটি খাসী মরে গেলো, আরেকটি খাসী অসুস্থ হয়ে পড়লে সেটা তড়িঘড়ি করে জবাই করে গ্রামবাসীর মাঝে ভাগে গোশত বিক্রি করলো। এভাবে চলতে থাকলে আর্থিক সংকট বাড়বে বৈ কমবে না। তাই কসাইয়ের সাথে আলাপ করে ছাগলগুলো বিক্রয় করে দিল। থাকলো মুরগীগুলো। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। পাশের গ্রামের জুয়েল প্রফেসর মুরগীর খামার করেিেছলেন। ডিম ও মুরগী বিক্রয় করে তাঁর অনেক লাভ হচ্ছিল। তার কর্মচারী রোমান চৌকিদার একদিন পর পর গাড়িতে করে ডিম ও মুরগী শহরে নিয়ে বিক্রয় করে আসতো। মালিক কর্মচারী সবাই বেশ স্বাচ্ছন্দেই দিন গুজরান করছিল। একদিন খুব ভোরে উপজেলা সদর থেকে কর্মকর্তা এলেন। সাথে বিশেষ ধরনের পোষাক পরা লোকজন এবং ক্যামেরা নিয়ে সাংবাদিক। কর্মকর্তার নির্দেশে বিশেষ পোষাক পরা তার সঙ্গীরা খামারের সব মোরগ-মুরগী বের করে আনলো, কর্মকর্তা বললেন এসব মোরগ-মুরগী ‘বার্ডস-ফ্লু’ রোগে আক্রান্ত হতে পারে তাই এগুলো মেরে পুঁতে ফেলতে হবে। রোগাক্রান্ত হয়ে গেলে মানুষ মারা যাবে। জুয়েল প্রফেসর পরিচয় দিয়ে সময় চাইলেন, নিবেদন করলেন পরীক্ষা করার কিন্তু কর্মকর্তা তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। মোরগ-মুরগীগুলো মেরে তা গভীর গর্তে পুঁতে ফেলা হলো। আতংক ছড়িয়ে পড়লো সারা গাঁয়ে। প্রফেসর সাহেবের মুরগীগুলো যখন মেরে ফেলা হয়েছে তাহলে তসমি আরা তো কোন ছার। সে আগে ভাগেই তার মুরগীগুলো বিক্রয় করে দিলো হোটেলওয়ালার কাছে। আতাউল্লাহ এভাবে পড়ে গেলো কঠিন আর্থিক সংকটে। আয়ের পথ নাই। কি করবে এখন সে। জুয়েল প্রফেসর তাকে পরামর্শ দিলে শহরে গিয়ে রিকশা চালাবার। আতাউল্লাহ রাজি হলো। তার রিকশার ব্যবস্থাও প্রফেসর সাহেব করে দিলেন। খুব ভোরে আতাউল্লাহ রিকশা নিয়ে বেরিয়ে যায়, ফিরে আসে সন্ধ্যায় বা রাতে। আয় ভালো। তসমি আরাও একটি কোম্পানীতে চাকুরী পেলো। ফলের রস আর মশলা তৈরীর কারখানা। দু’জনের আয়ে সংসার কষ্টে সৃষ্টে চলতে লাগলো। ছেলেদেরকেও শহরে নিয়ে গিয়ে কাজে লাগিয়ে দিলো। এক ছেলে হোটেলে ‘বয়’ এর কাজ, আরেক জন ওয়েলডিং দোকানে যোগালদারের কাজ। মজুরিতে তাদের দিনের খাবারটা জুটে। পড়াশুনা তাদের কারেই হলো না। হঠাৎ করেই আতাউল্লাহর আয় বেড়ে গেলো। মাঝে মাঝে সে ডাক্তার সাহেবের ব্যাগ নিয়ে আসে। ভোরে আবার সেটা নিয়ে যায়। রিকশা চালাতে গিয়ে আতাউল্লাহর সাথে পরিচয় হয় ডাঃ পঙ্কজ কুমারের। ডাক্তার সাহেব গল্পচ্ছলে আতাউল্লাহর সব দুঃখকষ্টের কথা জেনে নেন। প্রস্তাব করেন প্রতিদিন তার ব্যাগটি খয়েরসূতির সাজ্জাদের কাছ থেকে নিয়ে তার কাছে পৌছে দিতে হবে। রাজি হয় আতাউল্লাহ। কাজ শুরু করে। ভাড়া পায় সাধারণ ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশী। এভাবেই বাড়তি আয়ের পথ পায় আতাউললাহ। একদিন ব্যাগ নিয়ে এসে দেখে ডাক্তার বাবু নাই। চেম্বার বন্ধ। লোকে বললো পুলিশ এসে ডাক্তার বাবুকে ধরে নিয়ে গেছে। চেম্বারও বন্ধ করে দিয়েছে। সন্ধ্যা হয়ে যায়। আতাউল্লাহ ব্যাগটি নিয়ে বাড়িতে আসে। তখনও সে জানে না কি বিপদ তার জন্য অপেক্ষা করছে। রাত্রি ভোর হয় হয় , তার বাড়ি ঘিরে ফেলে কিছু লোক। পুলিশের মতো পোষাক তাদের। অদূরে গাড়ি দাঁড়ানো। তারা খোজ করছে আতাউল্লাহকে। আতাউলালাহ বের হয় , সাথে তছমি আরা। আগন্তুকেরা আতাউল্লাহর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তার ঘর তল্লাশী করতে চাইলো। অনুমতির পাবার আগেই দু’জন ঢুকে পড়লো ঘরে। ব্যাগটা নিয়ে একজন চিৎকার করে বললো ‘স্যার পেয়েছি’। ব্যাগটা খোলা হলে দেখা গেলো ‘ফেনসিডিল’ ভর্তি বোতল। হাত কড়া পরিয়ে আতাউল্লাহ ও তছমি কে নিয়ে যায় শহরে। প্রথমে থানা, তারপর ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে। আতাউল্লাহ ও তছমি দুজনেই বললো এ বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। তারা হাতে নাতে বমাল ধৃত হয়েছে। তাদের কৈফিয়ত শোনার সুযোগ কোথায়। বিজ্ঞ বৈচারিক ম্যাজিষ্ট্রেট (Judicial Magistrate) কল্পনা রানী মালাকার দয়াপরবশ হয়ে তছমি আরাকে জামিন দিলেন মহিলা বিবেচনায়। আতাউল্লাহকে পাঠানো হলো হাজতে। জামিননামা দাখিলের টাকা তো নাই। মহুরীকে বলা হলো জামিন পেয়ে বাড়ি গিয়ে টাকা দেবে। তাই সই। এলাহী বক্স মহুরী সব ব্যবস্থা করে ফেললো। জামিনে বেরিয়ে এলো তছমি আরা। বাড়ি ফিরে টাকা পরিশোধ করে দিলো। ঘরে যে টাকা ছিল তার সাথে ধার করে আরও টাকা যোগ করার পর জামিনের জন্য ব্যয়িত সকল টাকা পরিশোধ করতে হলো। নতুন দেনা এবার শোধ করার পালা। মুদী দোকানটি ভাড়া দেওয়া ছিল। এবার সেটা বেচতে হলো। মাদকের ব্যবসায়ী এই অজুহাতে তছমিকে কোম্পানী আর কাজে নিল না। স্বামীর মামলা চালানোর জন্য টাকা লাগবে। জমি ‘কড’ রেখে টাকা নিল তছমি আরা। তারিখে তারিখে আদালতে যায় আর আসে, টাকা খরচ হয় আতাউল্লাহর জামিন হয় না। এভাবে অভাবের পর অভাবে পড়ে তছমি আরা কাজের খোজে বেরিয়ে পড়ে। একটি ‘বিউটি পার্লারে’ আয়ার কাজ পেলো সে। অচিরেই সে অনুভব করলো সে একজন যুবতী এবং এখানে তার সম্মান নিরাপদ নয়। মজুরী প্রায়ই বাঁকী থাকে। এই টাকা চাইতে গিয়ে তাকে করুণার পাত্রী হতে হয়। তার অসহায়ত্ব ও মালিকের করুণা তার নারীত্বের প্রতি অবমাননাকর।এখান থেকে সে বিদায় নিলো। কাজ তো করতে হবে। তার জ্ঞাতী বোন তৌহিদা শহরে বাসা বাড়িতে ঝি-এর কাজ করে। সে এক বাড়িতে তছমিকে কাজে লাগিয়ে দিল। ঘর ঝাড়– দেওয়া, কাপড় ধোয়া, এঁটো বাসনপত্র পরিষ্কার করা, বেসিন-কমোড-বাথরুম পরিষ্কার করা সহ ঘরের সব কিছুই করতে হয়। কখনো ঘৃণা লাগে, কখনো মর্যাদাবোধে বাধে; তবুও সব সহ্য করে কাজ করে যায় তছমি আরা। এখানে সুখের জীবন সবার। পোষাক-আষাক, খাবার, বিনোদন সবই উন্নত মানের, যা তছমি আরা তার জীবনে দেখেনি। খাবার শেষে যা বাঁচে তা থেকেই কিছু তাকে খেতে দেওয়া হয়। গৃহকত্রীর শাসন এখানে কড়া, চাকর-বাকরের প্রতি কথা খুবই ঝাঁঝাঁলো। পান থেকে চ’ন খসবার উপায় নাই। একদিন তৌহিদা আকস্মিকভাবেই অসুস্থ হয়ে পড়লো, মরণাপন্ন অবস্থা। যে তছমিকে কাজ পাইয়ে দিয়েছে, বিপদে সাহায্যের হাত বাড়াতে এতটুকু দ্বিধা করে না, তাকে এখন সেবা-শুশ্রƒষা করাই তছবি বেশী জরুরী বলে বিবেচনা করে। এ কারণে দু’দিন কামাই দেয় বাসা-বাড়ির কাছে। তৃতীয় দিন গিয়ে সে গৃহকত্রীর রুদ্র মূর্তি দেখতে পায়। তছমির কোন কৈফিয়তই গৃহকত্রী মানতে রাজি নন। ভাষাটা বড় অশ্লীল । বিস্মিত হয় তছমি, ভদ্র ঘরের মহিলার ভাষা এরূপ হয়! সে আরো ভাবে এভাবে উঠতে বসতে গাল-মন্দ শুনে কাজ করা সম্ভব নয়। কিন্তু কাজ না থাকলে চলবে কি করে। মনে মনে সে বিকল্প কাজ খুঁজতে থাকে। একদিন মিলেও যায়। চলতি পথে সে দেখে এক ভদ্রমহিলা রিকশা থেকে নামছে, তার কাছে বেশ কয়েকটি ব্যাগ। তিনি ব্যাগগুলো নিয়ে একটু সমস্যায় পড়েছেন বলেই মনে হলো। তছমি তার কাছে এগিয়ে গেলো এবং ভদ্র মহিলাকে সহায়তা করতে চাইলো। ভদ্রমহিলা মনে হয় সন্দেহ করলো তছমিকে। পরক্ষণেই তছমির হাতে দুটো ব্যাগ দিয়ে বললো চারতালায় পৌছে দিতে। তছমি তা পৌছে দিয়ে ফিরে আসবে এসময় ভদ্রমহিলা তাকে কিছু বখশিশ দিতে উদ্যত হলেন। তা গ্রহণ করতে সবিনয়ে আপত্তি করলেও তাকে তা নিতে হলো নিরুপায় হয়ে। কারণ তা দিতে ভদ্র মহিলা ছিলেন নাছোড়বান্দা। এ সময় তাদের মধ্যে কিছু কুশল বিনিময় হলো। ভদ্রমহিলা তার বাসায় কাজ করার জন্য একজন মানুষ খুজছেন। তছমি নিজেই রাজি হয়ে গেলো এবং পরের মাস থেকে এই বাসাতেই কাজে যোগ দিল। আগের বাসার কাজ ছেড়ে দিল। এখানে এসে দেখলো পার্থক্য। চাল-চলন-বলন, আচার-অনুষ্ঠান সবক্ষেত্রেই। সকালে সে দেখলো তাকেও নাশতা দেওয়া হয়েছে, বাড়ির অন্যরা যা খাবে তাকেও তাই দেওয়া হয়েছে। কাজের মানুষ বলে কোন পদের খাবার কম দেওয়া হয় নাই। নাশতার থালা হতে নিয়ে তছবি আরার সামনে ভেসে উঠে তার কারারুদ্ধ স্বামী আতাউল্লাহ মুখ। দুই পুত্রের মুখ। এদের ভাগ্যে কি জুটেছে সকালের নাশতা !

তছমি আরার মতো গ্রামাঞ্চলের মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে ছুটে আসছে শহরে। পল্লী-বধূর বেশ ছেড়ে ঝি-চাকরানীর কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। স্বামী সন্তানদের নিয়ে অন্তহীন দুঃশ্চিন্তা আর অশান্তিতে কাটছে তাদের জীবন। কাজের বিনিময়ে মান-সম্মত খাবার পেলেও সে তো হারিয়েছে সব কিছু। মনিবের বিরাগভাজন হলে নেই কোন ঠাঁই। পথই তখন তার একমাত্র আশ্রয়স্থল।

এরূপ পরিবেশকে তো সুশাসন বলে না। এই পরিবেশে উন্নয়নের সূচক ইতিবাচক মাত্রায় উঠে না। কর্মজীবী-শ্রমজীবী-পেশাজীবী জনগণ যখন নিজের সম্বলটুকুও হারিয়ে ফেলে, তাদের জীবন যাত্রার মান যখন নি¤œস্তরে নেমে যায় তখন দেশ সম্বৃদ্বির পথে এগিয়ে চলেছে তা কোন মতেই বলা যায় না। আমাদের উন্নয়ন, সুশাসন আর সম্বৃদ্ধির কথামালাকে অন্তসারশূণ্য বলে ব্যঙ্গ করছে তছমি আরা এবং তার সহমর্মী ও সমব্যথীরা।

লেখকঃ সাবেক জেলা ও দায়রা জজ। বর্তমানে অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট , হাইকোর্ট বিভাগ, ঢাকা এবং বে-সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের অধ্যাপক।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×