somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: ফাঁদ!!!

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


.
পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে নিশি! নিশি এক ঘন্টা অপেক্ষা করছে পলকের জন্যে। পলক ওর সবচেয়ে কাছের এবং সবচেয়ে ভাল বন্ধু। নিজের সবকথা পলকের সাথে শেয়ার করে সে। অথচ পলক নিশিকে তেমন আপন ভাবে না! নিশিকে সে তেমন পাত্তা দেয় না। এতে নিশির দুঃখের শেষ নেই! তবুও সে চুপ করে থাকে, কিছুই বলে না! ওর সব অবহেলাকে খুশি মনে নিজের মনে করে রেখে দেয়।
.
পলক তাড়াহুড়ো করে এসে নিশির পাশে বসে পরলো
.
নিশি বললো, "কি রে? এত দেরি করলি যে?" এদিকে পলকের মুখে কোন উত্তর নেই! নিশি আবারও বললো, "কিরে কিছু তো বল!" পলক রেগে গিয়ে বললো, "কিছুক্ষণ চুপ থাকতে পারিস না?"
.
(পলকের এমন কথায় নিশি চুপ হয়ে গেল)
.
পলক পকেট থেকে মোবাইল বের করে হাতে নিয়ে ঘুরাচ্ছে! তারপর নিশিকে বললো, "আমি প্রেমে পরছি রে...!"
.
নিশি ওর কথা শুনে অবাক হয় নি! কারণ পলক প্রতি দশদিন পরপর নতুন নতুন মেয়ের প্রেমে পরে! এটা ওর উনিশতম প্রেম। তিন আগে শেষ গার্লফ্রেণ্ডকে বিদায় দিয়েছে! আর পলক নতুন মেয়ে দেখলেই প্রেমে পরে আর সাবেক প্রেমিকাদের সাথে একেরপর এক ব্রেক-আপ ঘটায়....!
.
তাই নিশি সাধারণ ভাবেই বলে, "এতে আর নতুন কি?"
.
"আমি সিরিয়াসলি বলছি...!"
.
"আচ্ছা, গত নয়টা প্রেমের আগ মুহূর্তের লেকচার গুলো মনে করিয়ে দেই, কেমন?
.
১. "এটা আমার ফার্স্ট প্রেম, প্রথম ভালবাসা! আমি একে টিকিয়ে রাখবই!" ফলাফল? ওই প্রেমের মেয়াদ ছিল ২০দিন! তারপর,
.
২. "আমি মনে হয় তিন্নিকে ভালবেসে ফেলেছি! ওর দিকে তাকালেই আমার প্রথম প্রেমিকার কথা মনে পরে!" তারপর কি হল? ১৫দিন পর ব্রেক-আপ বলে উত্তর দক্ষিণ হয়ে গেলি!
.
৩. "আমার মনে হয় আমি আমার রিয়েল লাভ খুজে পাইছি! ওই জুনিয়ার ক্লাসের রিতু বারবার আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে!" এরপর প্রপোজ, তারপর রেস্টুরেন্টে বিল দেয়া আর এরপর দুইদিন পর ব্রেক-আপ!
.
৪. "আমি নিধিকে ছাড়া বাঁচবো না!" এখন কেন জীবিত আছিস?
.
৫. "দোস্ত, আ'ম ইন লাভ দোস্ত! মাইয়্যা আমাকে আগে প্রপোজ করছে, তাই আমি পরে রাজি হইছি!" এর দশদিনপর মেয়েই আগে ব্রেক-আপ করলো!
.
৬. "ঐশী আমাকে ভালবাসে আর আমিও! আর কাউকে ঐশীর ভালবাসার স্থানে বসাবো না!" এরপর কি হল? ভ্যালেন্টাইনসে সবার সামনে অপমান করে দিল তোকে!
.
৭. "আমি তিশার পরে আর কাউকে ভালবাসতে পারবো না.....! তিশা জানু, মনু ল্যাব্যুউ!" আর এর ৮দিনপর ব্রেক-আপ!
.
৮. "আমি ওর সাথে কথা না....." নিশিকে থামিয়ে দিয়ে পলক বললো, "দেখ, আমি আমার ইতিহাস তোর কাছ থেকে শুনতে চাই নি। তুই আমাকে হেল্প করবি কিনা বল?" নিশি সোজাসুজি মানা করে দিয়ে বললো, "আমি একটা মেয়ে হয়ে অন্য আরেকটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পারবো না। তোর যা ইচ্ছা তাই কর তবে যদি কাউকে ভালবাসতেই হয় তবে ভালবাসার মত ভালবাসবি, কাপড় বদলানোর মত নয়!" এই বলে নিশি সেখান থেকে উঠে হাঁটা দেয়!
.
নিশি পলককে বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ভাবে এবং মনে মনে পলককে অনেক ভালবাসে সে! কিন্তু সে। আজও কিছুই বলে নি পলককে! এতদিনের বন্ধুত্বে ওর বুঝে নেয়া উচিৎ ছিল নিশি ছাড়া ওকে কেউ ভালবাসতে পারে না।
.
.
.
পরেরদিন সকালে, ভার্সিটি বন্ধ থাকায় সকালে তাজমির সাথে দেখা করা সম্ভব হয় নি। তাই আগে আগে তাজমিকে ফোন করে পলক....

পলক: হ্যালো, তাজমি!
.
তাজমি: হাই, পলক!
.
পলক: আজ বিকালে ফ্রি আছো?
.
তাজমি: হুম আছি, কেন?
.
পলক: অনেক কথা আছে তোমার সাথে! ফোনে বলে শেষ করা যাবে না....।
.
তাজমি: আচ্ছা কোথায় আসতে হবে?
.
পলক: তুমি বাসায় থেকো, আমি তোমাকে নিতে আসবো।
.
তাজমি: ওকে বাই...
.
পলক কল রেখে দিল। অবশেষে আবারও গার্লফ্রেণ্ডের অভাব পুরণ হতে যাচ্ছে। খাওয়া দাওয়া সেরে ফেসওয়াশ, ক্রিম, চুলে জেল আর গায়ে ও কাপড়ে দুই দফা বডি স্প্রে করে নিল! সাথে সানগ্লাসটা নিতে ভুল করলো না। বাসা থেকে বাইক নিয়ে বের হল। বেশ ভাল মুডেই আছে সে। বারবার লুকিং গ্লাসে নিজের চেহারা, চুল আর সানগ্লাসে কেমন লাগছে সেটা দেখছে! দেখতে দেখতে তাজমির বাসার সামনে এসে গেল। সানগ্লাসটা খুলে টি-শার্টে ঝুলিয়ে রাখলো তারপর দুই একবার হর্ণ বাজিয়ে তাজমিকে নিচে নামার সংকেত দিল! এরপর আবারও লুকিং গ্লাসে চুল, চেহারা দেখে নিল..!
.
.

.
একইদিন দুপুরে, তাজমি তুলিকে কল দেয়...
.
" হ্যয় জানু...!"
.
" পাখি আজ তোর বিকালে সময় হবে?"
.
" না রে জান্টুস... বিকালে আম্মুর সাথে সপিংয়ে যাবো। ইজ এভরিথিং ওকে?"
.
" না মানে, পলকের কথা তোকে বলছিলাম আমি?"
.
" হুম.... কি করেছে ও?"
.
" কিছু করে নি। বিকালে আমাকে নিয়ে হয়তো ঘুরতে যাবে!"
.
" বেশ তো! যাবি!"
.
" আরে যাবো তো বাট ও আমাকে প্রপোজ করবে!"
.
"তুই বুঝলি কিভাবে?"
.
"আরে ওর মত বাচ্চা ছেলেদের কথা কে না বুঝতে পারে! আচ্ছা বাদ দে। ভাল থাকিস জান্টুস.... বাই।"
.
"বাই....."
.
তুলি যাচ্ছে না, তাই সিদ্ধান্ত নিল সে একাই যাবে! বিকালে সাজগোজ করে রেডি হয়ে বসে আছে তাজমি! শুধু একটা ফোন কলের অপেক্ষা। তারপর হঠাৎ বাইকের আওয়াজ শুনতে পেল! বারান্দায় গিয়ে দেখে পলক বাইক নিয়ে দারিয়ে আছে! এরপর চোখের কাজল আরেকটু গাঢ় করে এঁকে নিল আর পার্স নিয়ে বাসা থেকে বের হল। গেটের বাইরে গিয়ে দেখে পলককে আজ ভালই স্মার্ট লাগছে! পলকও তাজমিকে দেখে অবাক হয়ে যায়! তারপর বাইক নিয়ে পার্কের উদ্দেশ্যে রওনা হল।
.
বাইকটা একপাশে রেখে পলক আর তাজমি পাশাপাশি বসেছে। তাজমি তো সেই প্রথম থেকেই চুপ করে আছে! আর পলকের সকল রোমান্টিকতা তাজমির পাশে বসেই ফুড়িয়ে গেছে! অনেকক্ষণ হল চুপ করে আছে পলক যা তাজমিকে রাগিয়ে তুলছে! এবার সে বিরক্তের সুরে পলককে বললো...
.
তাজমি: কি হয়েছে? কি এমন কথা বলার জন্য আমাকে এখানে আনলে?
.
পলক: আজকের আকাশটা কত্ত সুন্দর তাই না?
.
তাজমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে বিমান উড়ে যাচ্ছে!!
.
তাজমি: তুমি বলবে না আমি চলে যাবো???
.
পলক: না আসলে, আজ তোমাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে!
.
তাজমি: পলক....................... (রেগে গিয়ে) থাকো তুমি!
.
পলক: না মানে, তোমাকে দেখলে আমার মনের মাঝে কেমন যেন করে! হঠাৎ হার্টবিট বেড়ে যায়!
.
তাজমি: এমন আগে কখনও হয়েছে?
.
পলক: না...... (পলক এই মামলায় খুব চালাক। এরকম যেঁ কতবার হয়েছে তার কোন হিসাব ওর নিজের কাছেও নেই....!)
.
তাজমি: কান সহজভাবে ধরলেই পারো, এত কষ্ট করে ঘাড়ের পিছনে হাত দিয়ে কান ধরার কি আছে????
.
পলক: মানে?
.
তাজমি: তুমি যে আমাকে পছন্দ কর সেটা আমি জানি। আর এই কথাটা সোজা বললেই পারতে। এত তিলকে তাল করার কোন মানে হয়?
.
পলক: না মানে....., আসলে আমি....., মানে....., ইয়ে.... (অতিরিক্ত ন্যাকামো করে ফেলছে সে, কারণ এমন ন্যাকামি ক্লাস টু তে পড়া মেয়েও বুঝে ফেলে আর তাজমি তো অনার্স ২য় বর্ষের!!!)
.
তাজমি: বলবা না যাবো???
.
পলক: আই লাভ ইউ তাজ.....!
.
(তাজমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো, পলকের অতিরিক্ত লুতুপুতুতে তাজমির ভিত নড়ে গিয়েছে! এখন পলক তাকে শতভাগ বাগে(পটিয়ে) নিয়েছে!)
.
তাজমি: আমার উত্তর কবে দেব?
.
পলক: তোমার যখন ইচ্ছা। (কারণ পলক জানে তাজমি এখনই ওরক উত্তর দেবে)
.
তাজমি: লাভ ইউ ঠু....
.
.

.
টানা এক ঘন্টা ধরে পলকের ফোনে কল করছে কিন্তু পলকের ফোন সেই এক ঘন্টা হল ব্যস্ত বলছে! নিশির মনে সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে! ভাবছে পলক কি আবারও প্রেম করছে কারও সাথে! এই ঘন্টায় নিশি অন্যকোন দিকে মন দিতে পারে নি। পলকের জন্য টেনশন করতে করতে মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে নিশির! তারপর ঘুমিয়ে পরে। সেই রাতে পলকের ফোন ব্যস্ত ছিল! নিশি ভেবে পায় না দুইদিনের পরিচয়ে এত কি কথা থাকতে পারে দুজনের মাঝে!
অপরদিকে তুলিও তাজমিকে কল দিচ্ছে কিন্তু বারবার ব্যস্ত দেখাচ্ছে! তুলি বুঝে নিয়েছে তাজ কি করছে! তারপর সেও ঘুমিয়ে পরে....
.
.
পরেরদিন সকালে, ক্যাম্পাসে,
.
নিশি অনেকক্ষণ ধরে দেখছে পলক আর তাজমিকে! হাসি ঠাট্টার মেতে আছে ওরা। দেখে মনে হচ্ছে অনেক বছরের চেনাজানা! কত আপন, কত কাছের! অজানা সময়ের পরিবর্তনে নিশির মনটাও ধীরে ধীরে পাথর হয়ে যাচ্ছে! যে পলককে নিয়ে এত স্বপ্ন এত অনুভূতি সে বার বার ভুল করে বারবার ভুল সঙ্গী বেছে নিচ্ছে! ওদের সস্তা খুনসুটি নিশির একদম পছন্দ না। তাই সে আর সেখানে থাকলো না! উঠে গেল সেখান থেকে!
.
.
তুলি নোট ফটোকপি করার জন্য দারিয়ে আছে। অনেক ভিড় দোকানে। ভীড়ের মাঝে একসময় তুলির সুযোগ হল নোট ফটোকপি করার। কপি করে জলদি পিছনে ঘুরে দাঁড়ালো আর অমনি একটা ম্যাসিভ ধাক্কা লাগলো এক ছেলের সাথে! ধাক্কায় ছেলেটা ছিটকে গিয়ে পাশের কাদায় পরে যায় আর হাতের কাগজগুলো ড্রেনে পানিতে ভেসে যায়! ছেলেটাকে কিভাবে উঠাবে তুলি ভেবে পাচ্ছে না! যেখানেই ধরতে যাবে সেখানেই কাদার মাখামাখি! যাইহোক ছেলেটা উঠে দাঁড়ালো! তুলি ছেলেটাকে সরি বললো আর ক্ষতিপূরণ হিসাবে নোট কপি করে দেয়! এদিকে কখন থেকে তুলির ফোন বাজছে সে জানেই না! ফোনের কম্পনে টের পেল কল বাজছে! ফোন বের করে দেখে ১১টা মিসড কল! আর সবই তাজমির! নাম দেখেই তাড়াতাড়ি কল করল তাজমিকে!
.
"কিরে কোথায় ছিলি এতক্ষণ?"
.
"সরি রে, আসলে অন্যমনস্ক ছিলাম!"
.
"কোথায় তুই?"
.
"রিক্সায় বাসায় যাচ্ছি।"
.
"বাসায় পরে যাস, আগে একটু ক্যাম্পাসে আয়। বোরিং লাগছে! তুই আয়, গল্প করি।"
.
"কিন্তু এখন কিভাবে আসবো?"
.
"আয় না প্লিজ!"
.
"আচ্ছা দেখছি....."
.
.
তুলি গন্তব্য পরিবর্তিন করে ক্যাম্পাসের দিকে চলা শুরু করল! ক্যাম্পাসে পৌঁছে তাজমিকে খুজতে লাগলো। তাজমি পিছন থেকে এসে তুলির চোখ হাত দিল।
.
"তুই এখন ক্যাম্পাসে কি করিস?"
.
"পলককে আসতে বলেছিলাম কিন্তু ও আসতে পারবে না বললো আর ভাল লাগছিল না তাই তোকে ডাকলাম।"
.
"ও আচ্ছা! তা পলককে তো আজ পর্যন্ত দেখলাম না! কবে সাক্ষাত করাবি?"
.
"দেখি কবে সাক্ষাৎ করানো যায়..."
.
.
পলক বাসায় গিয়ে পোষাক পরিবর্তন করে তাজমিকে কল করল কিন্তু কল যাচ্ছে না। ব্যালাঞ্চ চেক করে দেখে এক পয়সাও নেই! তাই আর আরামপ্রিয় শরীরটাকে ছয়তলা থেকে উঠা নামার কষ্ট করালো না! পলকের মনে একটা কুবুদ্ধি চেপে বসে! তাজমির অনেক ছবি রয়েছে পলেকের ফোনে। যদি ব্ল্যাকমেইল করে ফিজিক্যাল রিলেশন আর কিছু টাকা পয়সা হাতানো যায় তাতে ক্ষতি কি? যেই ভাবা সেই কাজ! ওমনি দরজা বন্ধ করে পিসি চালু করে ফটোসপে আকাম শুরু করে দিল! পলকের ফোন বাজছে! কিন্তু ফোনের দিকে তাকানোর সময় তার নেই! তৃতীয় বারের কলে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে নিশির ফোন! এতে পলকের মেজাজ বিরক্তের ঊর্ধ্বসীমায় পৌঁছে গেল! সপ্তমবারে কল রিসিভ করলো,
.
"হ্যালো..."
.
"কেমন আছিস?"
.
"ভালই ছিলাম কিন্তু এখন খারাপ আছি...."
.
"এভাবে বলছিস কেন? কি হয়েছে?"
.
"কিছু না। এত ফোন দিস কেন?"
.
"অনেকদিন দিন হল তোর সাথে কথা হয় না। খুব মনে পরছিল তাই ফোন দিলাম!"
.
"এবার তো কথা হয়েছে? নে এবার ফোনটা রাখ......"
.
.
এই বলে ফোন কেটে দিল পলক! এখন সে কাজে ব্যস্ত। অনেক বড় কাজ তার! যেভাবেই হোক সফল তাকে হতেই হবে!
.

.
পলক নিশিকে খুব অবহেলা করে এটা নিশি ভাল করেই জানে। কিন্তু পলকের আজকের ব্যবহার আর তাচ্ছিল্যটা নিশিকে ভেঙে দিয়েছে! টেবিল থেকে একটা বই নিয়ে দৌড়ে ছাদে চলে যায় নিশি। আশেপাশের দিকে তাকিয়ে ছাদের এক কোণায় দারিয়ে বাঁধভাঙা অশ্রু ঝড়াতে লাগলো! এত ভালবাসে অথচ কতটা অবহেলা করে সে! আজকের কান্না কেউ দেখবে না! কারণ নিশি ওর মুখ বইটা ধরে আছে! ধরে থাকলে কি হবে অশ্রু যে তার শরীরটাকে থরথর করে কাঁপিয়ে তুলছে! সেকথা আবেগের পাগলীটা খেয়াল করে নি! কাঁদতে কাঁদতে চোখজোড়া ফুলে উঠেছে! বাসায় গেলে সবাই বুঝে ফেলবে! ট্যাঙ্কির ট্যাপ ছেড়ে মুখ ধুয়ে কিছুক্ষণ ছাদে থেকে বাসায় চলে গেল! সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল আর পলকের সাথে যোগাযোগ রাখবে না!
.
.
পলকের কাজ আজকের মত শেষ! যা করা হয়েছে এটাই যথেষ্ট হবে বলে আশা করা যায়!
.
কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে বিকালে হাটতে বের হল পলক। কাছের একটা পার্কে বসলো পলক। ফোনটা বের করে দেসবুকিং করছে এমন সময় একটা মেয়ে কণ্ঠ কানে আসলো,
.
"এক্সকিউজ মি!!!"
.
"ইয়েস..."
.
"চিনতে পেরেছেন?"
.
"হুম এখন চিনলাম! আপনার সাথেই তো সেদিন ধাক্কা লেগেছিল আমার!"
.
"আ'ম এক্সট্রেমলি সরি ফর দ্যা ইন্সিডেন্ট.... সেদিন একটু বেশি ব্যস্ত ছিলাম..."
.
"থাক, বাদ দিন সেসব কথা। আমি ভুলে গিয়েছি আর আপনিও ভুলে যান।"
.
"হুম, আচ্ছা আপনার নামটা জানতে পারি?"
.
"আমি আরিয়ান। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি, আপনি?"
.
"আমি তুলি, সেম ইয়ার!"
.
"ওয়াও তাই নাকি!"
.
"যেহেতু আমরা সেম ইয়ারে সো আপনি করে না বলটাই বেটার, তুমি করে বললে আশাকরি ফ্রেন্ডশীপটাও হয়ে যাবে!"
.
"অফ কর্স! ওয়াই নট! তোমার ফেসবুক আইডিটা জানতে পারি?"
.
"তুলি রুবাঈয়াত!"
.
"ওকে, মেনি মেনি থ্যাংকস!.....
বাদাম খাবে?"
.
"না অন্যদিন! আজ আমি আসি! বাই!"
.
"বাই....."
.
.
"ওয়াও পলক! ইউ আর ফ্যাবুলাস! নিজে নিজে ভেবে যাচ্ছে সে! নতুন নাম! তাও নকল নাম! আরিয়ান!!!!! স্ট্যাইলিশ!! আজ মেয়েটার নাম্বার নিতেই হবে!"
.
বেশ ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে পার্ক থেকে বের হয়ে গেল পলক! পকেটে হাত ঢুকিয়ে হেলে দুলে বাসার পথে হাটা দিল পলক। বাসার সামনে এসে মোবাইলের দোকানে টাকা লোড দিল। হঠাৎ মনে পরলো রিলেশন মেইন্টেইন করতে হলে নতুন একটা সিম দরকার। সাথে সাথে সিম কিনে নিল! .
রাতে ফেসবুকে লগইন করে তুলিকে রিকুয়েস্ট পাঠালো পলক। সাথে সাথে এক্সসেপ্ট হল অপর প্রান্ত থেকে! তুলি মনে হয় পলকের জন্যেই অপেক্ষা করছিল! এক পর্যায়ে চ্যাটিং শুরু হয় তাদের মাঝে। এরমধ্যে তাজমির কল! কলের মধ্যম সময়ে রিসিভ করলো পলক আর অপর প্রান্তে তুলির জন্য অফলাইন হয়ে গেল!
.
"হ্যালো, তাজমি।"
.
"কি ব্যাপার? সারাদিন একটা কল বা মেসেজও দেও নি? কি হয়েছে?"
.
"সরি জান, ব্যালেন্স ছিল না আর এমবিও শেষ হয়ে গেছে! তাই একদমই কন্ট্যাক্ট করতে পারি নি!"
.
"ও আচ্ছা! বুঝলাম। কি করছো?"
.
"ডিনার করবো। তুমি?"
.
"গান শুনছি।"
.
"তাহলে ডিনারের পর কথা বলি?"
.
"ওকে...."
.
"আচ্ছা বাই!"
.
"এই একটা কথা...!"
.
"বল।"
.
"আই লাভ ইউ......"
.
এই বলে ফোন কেটে দিল তাজমি! পলক সাথে সাথে ফেসবুকে লগইন করলো! একয়েক মিনিটেই তুলির কয়েকটা ম্যাসেজ জমা হয়ে গেল! ম্যাসেজগুলা দেখে পলক সাথে সাথে রিপ্লাই করল কিন্তু ততক্ষণে ট্রেন প্লাটফর্ম ছেড়ে দিয়েছে! অর্থাৎ তুলিও অফলাইন!
.
রাতে ডিনার শেষ করে তাজমিকে কল করে পলক! অপ্রয়োজনীয় সকল রোমান্টিক কথার ঝুড়ি ছেড়ে দেয় তাজমির সাথে! তাজমিও সাড়া দেয় পলকের কথায়! এভাবেই রাতের সময় শেষ হয়ে আসে! শেষ হয়ে আসে ফোনের চার্জ আর ব্যালেন্স! তবুও পলকের আষাঢ়ে গল্প ফুরাতে চায় না!
.
নিশি এখন আগের চেয়ে অনেক শক্ত করে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে! তার আকাশে আগে আবেগের সাদা মেঘ ভেসে বেড়াতো যার প্রতিটি ফোটায় পলকের নাম থাকতো! কিন্তু সেখানে এসব কিছুই নেই! আবেগকে নিজের ধারে কাছে ঘেষতে দেয় না নিশি! আজ এক সপ্তাহ হল পলকের সাথে নিশির কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই। ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথের পার্কে মাঝে মাঝে পলককে দেখতে পায় তাজমির সাথে হাতে হাত রেখে গল্প করছে! আগে কষ্ট হলেও এখন আর কষ্ট হয় না। নিজেকে অনেক গুটিয়ে নিয়েছে সে!
.
তুলি যখনই সময় পায় আরিয়ানের সাথে ফেসবুকে চ্যাটিং করে! যদি আরিয়ান অর্থাৎ পলক অনলাইনে নাও থাকে তবে টেক্সট করে রাখে! এভাবে সপ্তাহ খানেক চলার পর একদিন,
.
"আচ্ছা এভাবে কি চলা যায়?"
.
"কিভাবে?"
.
"এইযে আমরা শুধু ফেসবুকেই ম্যাসেজিং করি কিন্তু একে অপরের সাথে কোথাও মিট করি না!"
.
"তো কোথায় দেখা করা যায়?"
.
"চল সেই পার্কে দেখা করি যেখানে আমাদের মাঝে প্রথম দেখা হয়...."
.
"হুম.... কবে?"
.
"কাল বিকালে চারটায়?"
.
"আচ্ছা, ঠিক আছে!"
.
"আর শোন, আমার যদি তোমার কথা মনে পরে?"
.
"মেসেজ দিবা!"
.
"যদি তুমি না থাকো? আরে আমিও তো মানুষ নাকি? কতক্ষণ ওয়েট করবো তোমার ভয়েস শুনার জন্য?"
.
তুলি মিটিমিটি হেসে পলকে ওর নাম্বার দিয়ে দিল! এখন আর কাউকে সবুজবাতির অপেক্ষায় থাকতে হবে না। একটুপর আননোন নাম্বার থেকে কল আসে তুলির! তুলি ঠিকই বুঝতে পেরেছে এটা আরিয়ানের নাম্বার! রিসিভ করেই কথা বলা শুরু করলো তুলি! টানা ৪৫মিনিট কথা বলার পর উভয়ের ফোন হাফ ছেড়ে বেঁচে যায়!
.

.
তুলি রেডি হচ্ছে আরিয়ানের সাথে দেখা করার জন্য! চুলগুলো সুন্দর বেধে নিল! ঠোটে হালকা লিপস্টিক আর চোখে গাঢ় কাজল, সবমিলিয়ে আজ নিজেকে দারুণ লাগছে তুলির কাছে! আরিয়ানকে কল করার জন্য ফোন হাতে নিতেই তাজমির কল!
.
" তুলি তুই কি ফ্রি?"
.
"না রে দোস্ত! একটু বের হব আম্মুর সাথে!"
.
"ওহ আচ্ছা! আমরা গ্রুপস্টাডি করবো তাই তোকেও কল করলাম। আচ্ছা রাখলাম, বাই!"
.
শেষ পর্যন্ত প্রিয় বান্ধবীকেও মিথ্যা বলতে হল! সবশেষে আয়নার সামনে শেষবারের মত দারিয়ে নিজেকে দেখে নিল তুলি। হুম সবই ঠিকঠাক আছে! তাহলে বের হওয়া যাক। পার্সটা নিয়ে বাসা থেকে বের হল তুলি!
.
.
নির্দিষ্ট সময়ের বিশ মিনিট আগেই পলক পার্কে অবস্থান নিয়েছে! বারবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখছে সাথে সাথে ফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরায় নিজের চেহারা দেখে নিচ্ছে! হঠাৎ ফ্রন্ট ক্যামেরায় নিজের চোখ আটকে গেল! তাৎক্ষণিক পিছনে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে যায় পলক!
"একি! এত তাজমি আর ওর কয়েকটা বান্ধবী!! কিন্তু এখানে কি করছে?"
দ্রুত নিজেকে পার্কের নিকটবর্তী গাছের আড়ালে নিয়ে যায় পলক! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আর দশ মিনিট বাকি তুলির পৌঁছাতে! "না! এখানে আর থাকা যাবে না! আজ এখানে বেশিক্ষণ থাকলেই আগামীকাল খুব তাড়াতাড়ি ব্রেক-আপ হয়ে যাবে!" এই ভেবেই পলক অতি সাবধানতার সাথে পার্ক ত্যাগ করলো!
.
.
"যাবেন?"
.
"কই যাইবেন আপা?"
.
"লেক পার্ক?"
.
"যামু, উঠেন।"
.
"কত?"
.
"চল্লিশ টাকা দিয়েন!"
.
ভাড়া মিটিয়ে উঠে পরলো তুলি! মনের মাঝে কেমন একটা অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে তার!
.
"ব্যাস ব্যাস...... এখানেই থামুন। এই নিন টাকা!"
.
রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে পার্কের ভিতরে ঢুকতেই তাজমিকে দেখতে পেল সে! এতেই তুলির পা আর চললো না! সাথে সাথে হনহন করে পার্কের বাইরে চলে এল!
"তাজমিকে এগুলো জানতে দেয়া যাবে না! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে কেঁটে পরতে হবে! আমিই হয়তো ইতিহাসের প্রথম মেয়ে যে দ্বিতীয়বার দেখা করতে এসে বান্ধবীর ভয়ে প্রথমবারেই পালিয়ে এলাম! ছি! ছি! ছি!!!!" মনে মনে বিরবির করতে করতে কিক্সায় উঠে পরলো!
বাসায় পৌঁছে সাথে সাথে পলককে কল করে তুলি!
"হ্যালো, আরিয়ান!"
.
"হ্যালো তুলি! আমি আ....."
.
সরি, আসলে আমি আম্মুর সাথে শপিংয়ে বের হয়েছি তাই আসতে পারছি না! আ'ম এক্সট্রেমলি সরি!!" (পলককে থামিয়ে দিয়ে বললো)
.
"নো নো, ইটস ওকে, আই আন্ডারস্ট্যান্ড, তুমি যাও, আমি বাসায় চলে যাচ্ছি! আমরা অন্য একদিন দেখা করবো....."
.
"থ্যাংকস..... বাই!"
.
"বাই......"
.
"যাক মামলা আপনিই ঠিক হয়ে গেল! ওয়াট এ্যান এক্টর ইউ আর ম্যান!!!" ভাবতে ভাবতে বিছানায় গা এলিয়ে দিল পলক।
.
রাতে তাজমিকে কল দেয় পলক! হাজার লুতুপুতু আর সস্তা রোমান্টিক কথায় ব্যালেন্স ফুরাতে থাকে পলক! এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে মোবাইলের ব্যাটারির তাপমাত্রা বাড়াতে থাকে ওরা। মোবাইলের কথা শেষ হলেই ফেসবুকে লগইন করে তুলির সাথে চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে পলক! আগে ম্যাসেনজারে চ্যাটিং করতো কিন্তু তাজমির ভয়ে ম্যাসেনজার বন্ধ রেখে অপেরা দিয়ে চ্যাটিং করে!
.
নিশি মোবাইলটা হাতে হাতে নিয়ে পলকের নাম্বার ডায়াল স্ক্রিনে তুলে আবার মুছে দিচ্ছে! খুব ইচ্ছা হচ্ছে পলকের ভয়েস শুনতে কিন্তু অবহেলা আর অপমানের কথা মনে হলে চোখ ভারি হয়ে আসে নিশির! থাক কল দিতে হবে না! মোবাইলের ব্যাটারি, সিম খুলে বিভিন্ন দিকে ছুড়ে ফেলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরে নিশি! কিন্তু তারপরও পলকের চেহারাটা বারবার ভেসে উঠে নিজের সামনে! খুব কষ্টে প্রতিটা রাত কাটায় নিশি! প্রতিদিন একটাই দোয়া করে যে বিধিতা যেন এমন একজনকে পাঠায় যে তার মনের অবস্থা বুঝতে পারবে, তাকে তার মত করে চিনবে!
.
রেস্টুরেন্টে বসে তুলির অপেক্ষায় আছে পলক! কখন আসবে, আসছে না কেন, আসলে কি বলবে ইত্যাদি নানান প্রশ্ন পলকের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে! একটা সময় তুলি এসে পরে! একটা কালো ড্রেসে তুলিকে খুবই সুন্দর দেখাচ্ছে! পলক নজর ফেরাতে পারছে না! আশেপাশের সবাই তুলির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে! তুলি কাছাকাছি আসার সাথে সাথে পলক উঠে দারালো! তুলির বসার জন্য চেয়ার সামনে এগিয়ে দিল।
.
"এমন হা করে তাকিয়ে আছো কেন?"
.
"হু! ও না এমনি! কেমন আছো?"
.
"আছি! দেরি করলাম না তো?"
.
"আরে না! একটু তাড়াতাড়িই এসে পরেছো!" তুলিকে দেখার পর থেকে পলকের মনের মাঝে বৈশাখী ঝড় শুরু হয়েছে! কিছুতেই চোখ সরাতে পারছে না পলক! তাজমির চেয়ে হাজার গুনে সুন্দর লাগছে তুলিকে! পলক সাহস করে তুলির হাতে হাত রেখে বললো,
.
"তুমি বিশ্বাস করবে কিনা আমি জানি না তবে আমি তোমাকে প্রচণ্ড ভালবেসে ফেলেছি তুলি! আই লাভ ইউ!!! আই লাভ ইউ সো মাচ!!!!"
.
পলকের কথায় তুলি হতবাক! তুলি কি জবাব দিবে বুঝে উঠতে পারছে না! অনেকখানি লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখ নিয়ে চুপ করে আছে তুলি!
.
"চুপ করে আছো কেন? কিছু একটা বল প্লিজ!"
.
তুলি তবুও চুপ করে আছে! কিছু সময় পর তুলি পলকের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, "ইয়েস! লাভ ইউ ঠু! লাভ ইউ আরিয়ান!" কথাগুলো বলেই তুলি চোখ নিচে নামিয়ে নিল! পলক যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না!
.
"কি বললে? শুনি নি! প্লিজ আরেকবার বল। সে ইট এগেইন!"
.
"আই লাভ ইউ আরিয়ান!"
.
.
ব্যস!!! শুরু হয়ে গেল প্রেমের আরেকটা পরিচ্ছেদ! এখন পলক তাজমিকে হালকা হালকা এড়িয়ে চলা শুরু করেছে! তাজমি ব্যাপারটা ধীরে ধীরে আন্দাজ করতে পেরেছে! এখন পলকের প্রতিটি নিঃশ্বাসে তুলির নাম! তার আগে তাজমির সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করে সম্পর্কের ইতি টানতে হবে! তাজমি পলককে কল দিয়ে ওকে এড়িয়ে চলার কারণ জানতে চায়! পলক সরাসরি ফিজিক্যাল রিলেশনের কথা বলে! এতে তাজমি চরম ক্ষিপ্ত হয়! এরপর পলক তাজমির এডিট করা ছবি ইনবক্সে পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে! তাজমি নানা ভাবে ক্ষমা চায় কিন্তু পলক ওর স্থানেই স্থির! তাজমি বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে যায়! অবশেষে পলক ওর মিশনের সফলতা দেখতে পায়! সে তাজমিকে কাল বিকালে ক্যাম্পাসে দেখা করতে বলে! পলক পিসি থেকে তাজমির এডিট করা সকল ছবি ফোনে মুভ করে নিল।
.

.
পরেরদিন বিকালে,
তুলি রেডি হয়েছে তার ভালবাসা পরীক্ষা করতে! বিকালে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে বের হয় তুলি! বেশ সেজেছে সে! ক্যাম্পাসের ফিসারিজ ডিপার্টমেন্টের পুকুরের কাছে এসেই তুলির চোখ আটকে যায় পুকুরের শেষের দিকে! কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে মেয়েটাকে! কিছুদূর সামনে আগাতেই দেখে মেয়েটা তাজমি!! কিন্তু ছেলেটা কে? আরেকটু কাছে গিয়ে তাজমিকে ডাকলো তুলি! তাজমি তাকিয়ে দেখে তুলি! দৌড়ে গিয়ে তুলিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় তাজমি! পলক ঘাবড়ে গেল! বুঝতে পারলো তাজমি আর তুলি বেস্ট ফ্রেন্ড!
.
"আরে আরিয়ান! তুমি এখানে?" কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে পলক বললো, "না এমনি আসলাম!!" তাজমি বললো, "তুই ওকে চিনিস?" "হুম, ও আরিয়ান, আমার বয়ফ্রেন্ড!!!" তাজমির মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো! "কি বলছিস এসব? ওর নাম পলক! আমার বয়ফ্রেন্ড! আমি ওকে তোর কথাই বলতাম!" তাজমি পলকের সব প্ল্যান বুঝে ফেলেছে কেন সে ফিজিক্যাল রিলেশন করতে চাচ্ছিল! তাজমি তুলি কে সব খুলে বললো! দুজনের মাঝে পরে পলক বেচারা মাঝে একেবারে কোণঠাসা হয়ে পরে! এমন সময় তুলি ওর পায়ের জুতা খুলে পলকের গালে শশব্দে মেরে দেয়! তাজমি শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে পলকের অন্য গালে থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়! দুর থেকে ফাইনাল ইয়ারের কয়েকটা ছেলে ঘটনা দেখে ঘটনাস্থলে ছুটে যায়!
"কি ব্যাপার তাজমি? ওকে মারছো কেন?" ফাইনাল ইয়ারের একজন বললো। তাজমি বললো, "ভাইয়া আপনারা কি চান আপনার বোনদের সাথে এমন ঘটনা হোক?" অন্যজন বললো, "কি হয়েছে?" তুলি তাদেরকে ঘটনা খুলে বললে সিনিয়ারদের রক্ত মাথায় উঠে গেল! "তবেরে হারামজাদা.......!" এই বলে সিনিয়াররা ফিসারিজ ভবনের পিছনে পলককে নিয়ে বেদম মারধর করা শুরু করলো! তুলি পলকের ফোনটা নিয়ে ছবি খুজতে লাগলো! কিন্তু ফোনে পাসওয়ার্ড দেয়া! তাজমি ফোনটা নিয়ে ওর তিন ইঞ্চি পেন্সিল হিল ডিসপ্লের উপর বসিয়ে দিল! প্রথম ঘায়েই ডিসপ্লের কাঁচ ভেঙে চুরমার হয়ে গেল! তুলি ফোন নিয়ে সজোরে দেয়ালে ছুড়ে মারলো! এতে ফোন আর ব্যাটারি আলাদা হয়ে গেল! তাজমি ফোন নিয়ে পুকুরের পানিতে ফেলে দিল! নিজের মাঝে কেমন একটা শান্তির হাওয়া বয়ে গেল! নিজেকে রক্ষা করতে পেরে তাজমি আজ খুশি! তুলি প্রথমে কাঁদলেও এখন হাসছে! প্রেম তাদের একটা শিক্ষা দিয়ে গেল! ওদিকে তুলি পলকের কাছে গিয়ে বললো, "তোর যদি বিন্দুমাত্র লজ্জা বা শিক্ষা হয়ে থাকে তাহলে আজ থেকে প্রেমের চিন্তা মাথায় আসবে না! সকল মেয়েকেই মায়ের নজরে দেখবি! বাস্টার্ড.....!"
.
নিশির কানে খবর পৌঁছে গেছে! সেও আজ খুশি! বিধাতার উপর যত অভিমান ছিল সব ভুলে গিয়েছে। সে বুঝতে পেরেছে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যেই করে! তার জীবনে দরকার নেই পলকের মত এমন বাজে বন্ধু! তবে এখন তাকদীরের উপর বিশ্বাস হয়েছে তার! সে জেনেছে আল্লাহ ফায়সালা সর্বদাই বান্দার জন্য সুফল বয়ে আনে!
.
.
[কিছু কথা: আরও লিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে দেখে আর লিখলাম না। তবে কষ্ট করে এত বড় প্যাচাল পড়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ! যেসব ছেলেরা এমন প্লেবয় টাইপের তাদের এমন অবস্থা হওয়া দরকার! শেষকথা হল অতি চালাকের গলায় দরি!!! কারও সাথে মিলে গেলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।]
.
.
Dorponer Protibimbo (আয়নার দর্পণ)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×