somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: "আমি এবং আমরা"

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিরে সময় চলে যাচ্ছে আর তোরা কেউ এখনও রেডি হোস নি?

মামা একবাক্য বলে যাচ্ছেন। কিন্তু আমার সেদিকে কর্ণপাত করার সময় নেই। আসলে আমার না আমাদের বলতে হবে। কারণ এরমধ্যে আছি মেধা, নিশি আর আমি। মেধা আর নিশি আমার মামাতো বোন আর আমি তাদের ফুপাতো ভাই। অত্যন্ত দুষ্টু টাইপের আমরা তিনজন। বড় মামা আরেকবার আমাদের শাসিয়ে গেলেন। বললেন, দুই মিনিটের মধ্যে যদি বের না হই তবে আমাদের রেখেই সবাই চলে যাবেন!
মেধার মেকাপ করাই এখনও শেষ হয় নি! নিশিকে দেখছি কখন থেকে চুল আঁচড়ানো নিয়ে পরে আছে! মেয়েদের তৈরী হতে সময় লাগে জানতাম কিন্তু এত সময় লাগে জানতাম না। যাক অবশেষে তারা দুইজন বের হয়েছে। হাটতে হাটতে একে অপরকে বলছে দেখতো চুলগুলো ভালভাবে আছে কিনা/এটা ঠিক আছে কিনা/ওটা কেমন আছে আরও কতকথা! বড় মামা তো রেগে আগুন হয়ে আছেন! এক ধমকের সুরে বললেন, অনেক দুরের রাস্তা কথাটা মাথায় আছে?
আমি ঠোট চেপে হাসতে হাসতে গাড়িতে উঠলাম। আমরা যাচ্ছি নাটোর। বড় মামার ছেলে আরিফ, আরিফ ভাইয়ের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে যাচ্ছি। আমরা তিনজন আরেকটা গাড়িতে উঠেছি। আমি সামনে আর মেধা নিশি পিছনে বসেছে। গাড়ি চলা শুরুই করে নি পিছনে তাকিয়ে দেখি সেলফি নেয়া শুরু হয়ে গেছে। আমি নাটোরের ভাষায় বললাম, "তাড়াতাড়ি সেল্ফি লিয়ে নে, না হলে মেকাপ লষ্ট হয়ে যাবি নি!" "চুপ কর, ফাজিল কুনহানকার!" নিশির জবাব। আমাদের গাড়িতে পাত্রীকে উপহার হিসেবে দেয়ার জন্য শাড়ি এবং আরও কিছু জিনিসপত্র রাখা আছে। ড্রাইভিং সিটে বসে আছে কমল ভাই। উনি আমার ছোট খালামনির বড় ছেলে। পিছনের দুইজন মানে মেধা আর নিশি কোন উপলক্ষে যাচ্ছে সেটা আমার জানা নেই আর আমি অনেক বড় আশা নিয়ে যাচ্ছি সেটা জানি। ভাবতে লাগলাম ভাবী দেখতে যাচ্ছি না যাচ্ছি ভাবীর বোনগুলাকে দেখতে! আমার জানা নেই ভাবীর কোনো বোন আছে কিনা বা থাকলেও রমণী সিঙ্গেল আছে কিনা! আল্লাহ ভরসা, ফিআমানিল্লাহ বলে যাত্রা শুরু করলাম। গান বাজনা, হৈ হুল্লোর করতে করতে যাচ্ছে। মধ্যপথে এসে সিট চেঞ্জ করলাম। কমল ভাইয়ের বদলে আমি ড্রাইভিং শুরু করলাম। গ্লাস নামিয়ে ডান হাতটা ঠেকিয়ে বাম হাত দিয়ে আরামে স্টিয়ারিং ধরে গাড়ি চালাচ্ছি। গতি একশোর কাছাকাছি রেখে চালাচ্ছি। মেধা আর নিশি ফেসবুকিং এ ব্যস্ত। কমল ভাই কানে ইয়ারফোন গুঁজে চোখ বন্ধ করে গান শুনছে। ইতিমধ্যে বাকি গাড়িগুলো অনেক পিছনে পরে গেছে। ছোট মামা কমল ভাইয়ের কাছে কল দিয়ে গাড়ি থামাতে বললো। আমি কারণ জানতে চাইলে বললেন, "বাকি রাস্তা একসাথে যাবো। বড় মামার প্লাস্টিক(টয়োটা এক্স করোল্লা কার) আগে থাকবে!"

-আমাদের গাড়িও তো প্লাস্টিক! মেধা বললো।

আরে হুন্ডাই এইচ ওয়ান প্লাস্টিক না, বুঝতে হবে পাগলি, কমল ভাই বললো।

নিশি বললো, "কোথায় আছে বাকিরা?" কমল ভাই বললো তারা এখনও হাটিকুমরুলে আছে। আমি গাড়ি রাস্তা থেকে নিরাপদ দুরত্বে সাইড করে রাখলাম।

-এই গাধা, বসে না থেকে চল আমরা কয়েকটা ছবি উঠি। রাস্তার দুইপাশে সুন্দর নদীও দেখা যাচ্ছে!
মেধাকে থামিয়ে দিয়ে কমল ভাই বললো, "আরে এটা নদী না, চলনবিল!"
তারপর আমরা আমাদের ফটোশ্যুট চালিয়ে যেতে লাগলাম। মনে মনে ভাবছি তারা কত গতিতে ড্রাইভিং করছে যে আমাদের কাছাকাছি আসতে পারে নি। পরবর্তীতে জানতে পারি মামা খালারা সবাই যাত্রাবিরতি নিয়েছিল!
ছবিতোলা শেষ, আবারও যাত্রা শুরু করলাম। এবার সবার পিছনে আমরা। ড্রাইভ করতে বিরক্ত লাগছে। কারণ খুব ধীরে যাচ্ছেন তারা। এমন যাত্রা আমার সহ্য হচ্ছে না। এতক্ষণ আমাদের জন্য দেরি হচ্ছিল আর এখন তাদের জন্য হচ্ছে। এটা চিরন্তন সত্য কথা যে মামা খালাদের জন্য দেরি হলে সমস্যা নেই এবং তারা কখনও স্বীকার করবে না যে তাদের জন্যেই দেরি হয়েছে। আমি দ্রুত চালিয়ে তাদের সামনে চলে গেলাম। ইহা দেখিয়া সেজ খালু তৎক্ষণাৎ কমল ভাইয়ের মোবাইল বাজিয়ে দিল। কমল ভাই সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন আমরা আর দাড়াচ্ছি না।


পাত্রীর বাড়ির সামনে আসতেই পাত্রীর বাবা বড় মামার সাথে কোলাকুলি করলেন যার ফলে কনফার্ম হলাম উনিই পাত্রীর অর্থাৎ হবু ভাবীর বাবা এবং ভাইয়ের শ্বশুরমশাই। ভাবীকে দেখলাম, খুব পছন্দ হল। ভাবীর নাম রিমি। আল্লাহর রহমতে কোনো কিছুর কমতি নেই ভাবীর মাঝে। রুপে গুণে কোন অংশে কম না। আম্মু-আব্বু, মামা-মামী, খালা-খালু সবারই পছন্দ হয়েছে। তারা এমন ভাব করছে যেন পারলে এখনই তুলে নিয়ে যাবে! আর আরিফ ভাইয়ের কথা কি আর বলবো, উনি আর মাথা তুলেন নি ভাবীকে প্রথম দেখার পর! এরপর পাত্রপাত্রীকে কিছুক্ষণ মতবিনিময় করার স্বাধীনতা দিলেন দুই পক্ষের মুরব্বিগণ। বলতে গেলে ভাবীর পরিবারকে আমার খুবই ভাল লেগেছে। সবার সাথে সবার মিল রয়েছে। যৌথ পরিবারে থাকেন তারা। বাড়িটাও বিশাল আর রাজকীয় ধরনের। আমি মেধা আর নিশি ছাদে দারিয়ে গল্প করছি এমন সময় দুইটা মেয়ে আসলো। আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভাবছি নেমে গেল ভাল হবে নাকি থাকবো। ওদিকেও হয়তো তাই ভাবা হচ্ছে। পরে চিন্তা করলাম পরিচিত হয়ে যাই। মেধা সম্মতি জানালো। মেয়ে দুটোর সাথে আমরা পরিচয় পর্ব সেরে নিলাম। জানতে পারলাম ওরা দুইজন ভাবীর খালাতো বোন। বড়টা ছোট খালার আর ছোটটা ভাবীর বড় খালার মেয়ে। ছোট মেয়েটাকে দেখে মনে হল হয়তো আমার সমবয়সীই হবে। একথা সেকথায় তাদের দুইজনের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। তারাও জানলো আমাদের সম্পর্কে। ছোট মেয়েটির নাম হল তাবাসসুম আর বড় মেয়েটির নাম প্রীতি। প্রীতিকে আপু বলে ডাকা আরম্ভ করলাম কারণ তিনি আমার বড়! এরপর আরও কিছুক্ষণ আমরা আড্ডা দিলাম।
বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মুরব্বিগণ। সবার মতামত অনুযায়ী (আমাদের তিনজন ব্যতীত) বিয়ের দিন তারিখ পাকা করা হল। সামনের মাসের ১৩ তারিখ অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখ।
বড় মামা এবং অন্যান্য সবাই সবার কাছ থেকে বিদায় আদায় নেয়ায় ব্যস্ত আর আমি তাবাসসুমকে খুঁজায় ব্যস্ত। একে একে সবাই গাড়িতে উঠল। আমি মেধা আর নিশিকে বাইরে দাড়াতে বলে গাড়ি নিয়ে আসতে গেলাম। একটু পর দেখি তাবাসসুম আর প্রীতি আপু আসছে। প্রীতি আপু বললেন, এত তাড়াতাড়ি যাচ্ছো তোমরা?

আমি বললাম, নাহ! যেতে তো হবেই, আর তাবাসসুম যদি থাকতে বলে তাহলে একটু ভাবতাম।

আমার কথায় তাবাসসুম শুধু "নেক্সট টাইম" বললো। আর কিছু তার মুখ দিয়ে বের হল না! প্রীতি আপুকে বিদায় দিয়ে আমি আবার হাটা শুরু করলাম। দুই পা আগাতেই আবার পিছনে তাকালাম। কিছুক্ষণ পর তাবাসসুমও তাকালো সাথে একটা মুচকি হাসি! আহা কি চমৎকার হাসি আর চাহনি! আমি তার হাসিতে মাথা চুলকাতে থাকলাম আর এক দাঁত কেলিয়ে এক বিজয়ের হাসি দিলাম!
গাড়ি নিয়ে আসলাম। কমল ভাইকে ড্রাইভ করতে বললাম। কারণ আমি এখন কল্পনার জগতে আছি। কোথায় কখন ছোট মামার প্রিয় হুন্ডাই এইচ ওয়ান গাড়িটাকে বাধিয়ে দিই তার ঠিক নাই। আর আমি বাধিয়ে দিলে মামা নিশ্চিত তার লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়ে আমাকেই গুম করে দেবেন।


ভাবীর বাড়িতে খাওয়ার সময় কেন যেন বারবার চোখটা তাবাসসুমের দিকেই যাচ্ছিল। যদিও তার নামটা তখনও অজানা ছিল। আহা সে কি অনুভূতি। আমি তো যেন প্রেম সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। হঠাতেই ফিক করে হেসে দিলাম! মেধা জিজ্ঞেস করলো, কিরে হাবিব, তাবাসসুমকে কেমন লাগলো তোর? পছন্দ হয়েছে?

আমি মেধার কথা শুনে হকচকিয়ে গেলাম! তোতলাতে তোতলাতে বললাম, তু তু তু ই কি ব ব ব লিস এসব? তা তা তাবাসসুম টা কে শু শু শুনি?

নিশি বললো, ও আচ্ছা খাওয়ার সময় যার দিকে তাকাচ্ছিলি তার নাম মনে নাই? আর...

নিশিকে থামিয়ে দিয়ে মেধা আবার বললো, আরে যাকে দেখে মাথা চুলকানো শুরু করলি তার নাম মনে নাই!!!!!

কমল ভাই বললো, "কিরে হাবিব? হাবিবির নাম এখন মনে নাই?"

কমল ভাই শুধু বাকি ছিল। সেও বললো শেষ পর্যন্ত! কিন্তু মাথায় ঢুকছে না ফাজিল দুইটা কেমনে জানলো!

- ও না মানে আমি তো এমনিই দে দ দ দেখছিলাম আর কি কি কিছু না। আমি বললাম। মেধা বললো, তোকে আবার আসার দাওয়াত দেয় নি? কমল ভাই বললেন, এই জন্যেই তুই আমাকে ড্রাইভ করতে বললি?

ব্যস, আমি ধরা খেয়ে গেলাম! তাদের কথা শুনে আমি হাসা শুরু করলাম। একটুপর সবাই একসাথে হাসলাম। কমল ভাই আবারও বললেন, তোরা থাম, এত হাসলে আমি ড্রাইভিংয়ে কনসান্ট্রেট করতে পারবো না।

নিশি বলল, "কমল ভাইয়া গাড়ি সাইডে রাখো। আগে একটু মন খুলে হেসে নিই!"

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। কমল ভাই গাড়ি সাইডে রেখে মেধা আর নিশির সাথে তাল মিলিয়ে হাসছে! এমন হাসি যে স্টেয়ারিং ধরতেই পারছে না! আমি শুধু তাদের তামাশা দেখে যাচ্ছি। এক পর্যায়ে কাধে কাধ মিলিয়ে আমিও হাসা শুরু করলাম! এবার আমি ড্রাইভিং এ বসলাম। যখনই মেধা আর নিশি হাসে তখনই আমি ব্রেকে পা দিই। এতে তাদের মন খারাপ হয়ে গেল! কিছুক্ষণ চলার পর আমিও আবার হাসা শুরু করলাম। মেধা আর নিশিও হাসতে থাকলো। তবে যাই হোক দিনটা খুব আনন্দের সাথে কেটেছে! আত্মীয়-স্বজন আর মেধা, নিশি এবং কমল ভাইয়ের মত কাজিন না থাকলে আজকের দিনটা এমনভাবে কাটতো না।


ভাবী ফেসবুকে সেদিনের ছবি আপলোড দিয়েছে। আমি ছবি না দেখে কে কে লাইক কমেন্ট আর কে কি রিয়েক্ট দিয়েছে সেটা দেখায় ব্যস্ত! খুঁজতে খুঁজতে তাবাসসুমের আইডি পেয়ে গেলাম! রিকুয়েস্টও পাঠিয়ে দিলাম। দুইদিন পর তাবাসসুম একসেপ্ট করলো। সাথে সাথে মেসেজ দিলাম, এতো তাড়াতাড়ি একসেপ্ট করলেন?

কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই আসলো, "আপনার ধৈর্য্য পরীক্ষা করলাম।"

আমিও সাথে সাথে রিপ্লাই করলাম, তা আমি কি ধৈর্য্যে পাশ করেছি নাকি ফেল?

অপর প্রান্ত থেকে রিপ্লাই আসলো, কান ঘেঁষে পাস করেছেন। ;)

এভাবে চ্যাটিং চলতে লাগলো। মেধা আর নিশিও এখন ভালভাবে জানে তাবাসসুমের সম্পর্কে। চ্যাটিং চলতে থাকে আমাদের। একে অপরের সম্পর্কে আরও জানতে শুরু করলাম। তাবাসসুম অনার্স ১ম বর্ষে আর্মি ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজিতে লেখাপড়া করছে। আমিও আমার সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু বললাম। কনভারসেশনও বাড়তে থাকলো। তবে ওর সাথে ফোনে কথা বলা হচ্ছে না। ভাবীর সাথে মাঝে মাঝে কথা হয় কিন্তু তাবাসসুমের কথা জিজ্ঞেস করতে ভয় লাগে! বিয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে! মোটামুটি সবাই ব্যস্ত বিয়ে নিয়ে! আর আমার ডিউটি পরেছে আরিফ ভাইয়ের। আমি আরিফ ভাইয়ের ডিউটি কমল ভাইকে দিয়ে দিয়েছি কারণ তারা সিনিয়র মানুষ এবং আন্ডারস্ট্যান্ডিংটাও ভাল তাদের মাঝে। কমল ভাই আরিফ ভাইকে নিয়ে চলে গেলেন জেন্টস পার্লারে। এদিকে সকাল থেকে বড় মামা চেঁচামেচি করে যাচ্ছেন। কিন্তু মামা বোধহয় ভুলে গেছেন যে তার সুপুত্র এখনও পার্লার থেকেই আসেন নি! আর মামা চিল্লাচ্ছেন এমনভাবে যেন মনে হচ্ছে বিয়েটা আরিফ ভাই করছে না, মামা নিজেই করছে!

- চিল্লাপাল্লা তো এমন করতেছিস যেন বিয়াটা তোর ছাওয়াল করতেছে না, তুই করতেছিস!

বড় খালা তো মুখের উপর আমার মনের কথা বড় মামাকে বলে দিলেন! এই নিয়েই মামা খালার মধ্যে লেগে গেল!! কে কাকে থামাবে! তবে তাদের এমন কথা কাটাকাটি নতুন কিছু না। দুইজনেই জানে যে কথাটা ঠাট্টার ছলে বলা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর আবার দুইজনের মধ্যে মিল হয়ে গেল। মেধা আর নিশিকে বলেছিলাম গাড়িতে ফুলের ডিজাইন সিলেক্ট করার জন্য। কিন্তু এখনও কোন ছবি দিল না আমাকে! ছোট খালু বারবার বলছে গাড়ি সাজিয়ে আনার জন্য কিন্তু আমি বুঝাতে পারছি না যে আমার হাতে এখনও ডিজাইন দেয় নি। ক্ষাণিকপর নিশি এসে একটা ছবি দেখালো, ভালই লাগলো দেখতে। আমিও বেড়িয়ে পরলাম গাড়ি নিয়ে। সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে নিলাম গাড়িটা। ক্যামেরাম্যান সাথেই ছিল। ঝটপট কয়েকটা ছবি আর ভিডিও করে নিল সে। কার নিয়ে আবার বাড়িতে গেলাম। গোসল করে রেডি হয়ে গেলাম। এখন যেটা ঝামেলা করছে সেটা হল ক্যামেরাম্যান! উনি সম্পূর্ণ ডিরেক্টরের ভূমিকায় আছেন। পারফেক্ট কোনো ছবি বা ভিডিও না হলে কাট ইট বলে আবার সবাইকে প্রথম থেকে পজিশন নিয়ে আসতে বলেন! ঘন্টার কাছাকাছি সময় ব্যয় হল শুধু এই ক্যামেরাম্যানের পারফেক্ট শটের জন্য! যাক তারপর গ্রুপ গ্রুপ করে সবাইকে পাঠিয়ে দিলাম। আরিফ ভাইয়ের সাথে তার দুই বন্ধু আর কমল ভাই আছেন। আমি ছোট মামার জানপ্রাণ হুন্ডাই এইচ ওয়ান নিলাম সাথে ছোট খালুর পরিবার এবং মেধা আর নিশি। ছোট মামা বারবার বলছেন যদি তার জানের কোনো ক্ষতি হয় তাহলে আমার জানের ক্ষতি সে নগদে করে দেবেন! অতঃপর বরযাত্রীর গাড়িবহর নিয়ে আমরা সবাই ঢাকঢোল পিটিয়ে রওনা হলাম। ছোট খালু বরাবরের মত এবারও আমার ড্রাইভিং এর প্রশংসা করলেন! কেউ কারও প্রশংসা করলে কার না ভাল লাগে! আমারও তেমন লাগছে!। নিধি আপু বললেন, ওই এত তারিফ শুনে আবার গাড়ি বিলে ফেলে দিস না।
আমি ভিতরের রিয়ার গ্লাসে তাকিয়ে দেখি নিশি আর মেধা বরাবরের মতই সেল্ফি আর ফেসবুকিং নিয়েই ব্যস্ত!


গাড়ি রেখে ভাবীর বাড়ির গেটে এসে দেখি তাবাসসুম, প্রীতি আপু এক ডজন পোলাপান নিয়ে গেটে দারিয়ে আছে! তাবাসসুম আমাকে দেখে এক মুচকি হাসি দিল যা আমার বুকে বুলেটের বেগে ধাই ধাই করে বিঁধল! আমিও হাতের ঈশারা দিয়ে তাকে বুঝিয়ে দিলাম আজ তাকে খুব ভাল লাগছে। এমন সময় মেধা খোঁচা দিয়ে বললো, সময় এখনও যায় নি রে পাগলা, এখনই এই অবস্থা হলে পাবনায় একটা বেড বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। আমিও বললাম, জেলাস?

- ধুর, এমনি কত ছেলের লাইন লেগে আছে, জেলাস তো তুই হচ্ছিস!

-ডিস্টার্ব করিস না এখন, অফ যা। মেধাকে চুপ করিয়ে দিলাম। গেটে অনেকক্ষণ এন্ট্রি ফির জন্য দর কষাকষি করার পর মোটা অংকের টাকা দেয়া লাগলো আরিফ ভাইয়ের! আশেপাশের সবাই ছবি তুলছে বা খাবার দাবার নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু আমি একখানে রেলিং ঘেঁষে স্থির হয়ে দারিয়ে আছি। এমন সময় প্রীতি আপু এসে পাশে দাড়ালেন। আমি বললাম, খুব দারুণ ভাবে সাজিয়েছেন বাড়িটা! লাইটিংটা দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে। আশাকরি সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানেই থাকবো।

প্রীতি আপু বললো সবকিছুই তাবাসসুম ডিজাইন করেছে। কোন কালারের লাইট হলে সুন্দর দেখাবে, স্টেজ সাজানো সবই ওর আইডিয়া!

বাহ বাহ! তাবাসসুম এত ক্রিয়েটিভ জানতাম না তো। মনে মনেই বলতে থাকি। এরমধ্যে দুই চারবার তাবাসসুমের সাথে চোখাচোখি হয়েছে! বুঝতে পারছি না কে কাকে দেখে লুকাচ্ছে! এরমধ্যে কমল ভাই কল করে আসতে বললেন। নিচে নামছি এমন সময় তাবাসসুমের সাথে একটা ধাক্কা লাগতে লাগতে লাগলো না! হার্ড ব্রেক করে দুইজনই মুখোমুখি দারিয়ে গেলাম! তাবাসসুম এদিক ওদিক তাকিয়ে ফড়িং এর মত ধরফর করে অন্যদিকে চলে গেল! কি হল এটা বুঝলাম না! তারপর কমল ভাইয়ের কাছে গেলাম, আরিফ ভাই বললো খাওয়া দাওয়া সেরে নিতে। ভাই ব্রাদার খাওয়া দাওয়া করলাম একসাথে। মোটামুটি বিকাল এখন। পূর্ব আকাশের এক প্রান্ত থেকে ঘনকাল মেঘ জমা হওয়া শুরু করেছে। আমি, নিশি, মেধা আর প্রীতি আপু ছাদে দাড়িয়ে গল্প করছি। প্রীতি আপু বললো, চল সবাই ছবি উঠি! আর পাশে তাবাসসুম! একবার আমি ওর দিকে তাকাই আবার তাবাসসুম আমার দিকে তাকায়! তবে লজ্জায় আমরা কেউ একসাথে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি না!

- আপু আমি গেলাম!

তাবাসসুম লজ্জায় আর থাকতে পারছে না। প্রীতি আপু ওর কাছে গিয়ে বললো, আমি আছি তারপরও তুই চলে যাবি?
আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে মজা দেখছি। তবে আমার উপস্থিতি তাবাসসুমকে ঘাবড়ে দিচ্ছে তাই আমিই নেমে গেলাম ছাদ থেকে!
এবার শুরু হল শেষ পর্ব, অর্থাৎ কবুল এর পর্ব। হুজুরসহ কনে পক্ষের কাছে গেলাম কবুল শুনতে। হুজুর বারবার পড়েই যাচ্ছেন কিন্তু হবু ভাবীর মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না! অনেকক্ষণপর কবুল বললেন ভাবী। ভাবীর তিনবার কবুল বলার পর সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলেন! এদিক দিয়ে পাত্রই ভাল, কোনো ঝুট ঝামেলা নেই, হুজুরের কথাও শেষ ছেলের কবুলও বলা শেষ! আরিফ ভাইকে দেখলাম যত তাড়াতাড়ি কবুল বলতে পারবে ততই ভাল! উভয় পক্ষের কবুল শোনার পর আমি তাবাসসুমকে খুঁজতে শুরু করলাম। তাকে পেয়ে গেলাম বাইরের লেবু গাছের পাশেই। ছোট ছেলেমেয়েরা তাবাসসুমকে ঘিরে বসে আছে। তাবাসসুম আমাকে দেখেছে আমি জানি। আমি ধিরে ধিরে যেতে লাগলাম আর তাকে দেখলাম অল্প অল্প করে মাথা উচু করছে আবার নামাচ্ছে! একসময় উঠে যেতে চাইলো কিন্তু আমিই সাহস করে ডাক দিলাম, তাবাসসুম আমরা আসলে কে কাকে দেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছি বলতে পারবে?

তাবাসসুম কোনো কথার উত্তর দিল না! আমি আবারও বললাম, তোমাকে কেউ কবুল বলতে বলছে নাকি যে কিছু বলছো না!

তাবাসসুম বললো, আমি জানি না, আর আপনি এভাবে হুট করে সামনে আসলে আমি এমনিই ঘাবড়ে যাই!

আহা! তাবাসসুমের কথায় আমার মন এদিক সেদিক ডানা ঝাপটে উড়া শুরু করেছে! আমি বললাম, তুমি যদি এভাবে তাকাও তবে যেকোনো একদিন আমিই শহীদ হয়ে যাব। আর তুমি এমনিই আমাকে শান্তি মত থাকতে দিচ্ছ না। এমন হলে নিশ্চিত একদিন আমাকে পাবনায় ভর্তি হতে হবে!

তাবাসসুম হাসতে হাসতে "পাগল কোথাকার" বলেই চলে গেল!

আমি তো এখন হাওয়ায় ভাসছি! মনে হচ্ছে চারদিকেই বসন্ত চলছে! এতটুকু নিশ্চিত যে তাবাসসুম আমাকে একটু হলেও ভালবাসতে শুরু করেছে! এই একমাসে আমি নিজেই কেমন যেন মেয়েটার উপর দূর্বল হয়ে পরেছি! হাসি ঠাট্টায় মেয়েটা আমার অনেকটা স্থান দখল করে নিয়েছে! কবে যে বলতে পারবো মনের কথা কে জানে!

বিদায় মুহূর্তে চারপাশে যখন কান্নার রোল পরে গেছে তখন তাবাসসুমকে দেখলাম চুপচাপ ভাবীর পিছন পিছন আগাচ্ছে! মনটা বড়ই খারাপ হয়ে গেছে ওর। শুনছিলাম ভাবী ছিল ওর সবচেয়ে কাছের আর আপন এবং সম্পূর্ণ বন্ধুর মত। অতঃপর ভাইয়া আর ভাবী গাড়িতে উঠলেন। আমি আজকের দিনে শেষ বারের মত তাবাসসুমকে দেখলাম। কিছুটা অশ্রুসিক্ত ছিল সে। আমি আঙুল দিয়ে ঈশারায় স্মাইল প্লিজ দেখিয়ে দিলাম। বিনিময়ে সে অশ্রুস্নাত চোখ নিয়ে সেই মুচকি হাসি উপহার দিল!


পরেরদিন, কমিউনিটি সেন্টারে অধীর আগ্রহে বসে আছি তাবাসসুমের জন্য। ভাবীর অনেক আত্মীয়স্বজন আসছে যাচ্ছে কিন্তু তাবাসসুমকে এখনও দেখতে পায় নি! এসেছে কিনা সেটাও জানি না। প্রীতি আপুকেও দেখা যাচ্ছে না! নিশি এসে বারবার জিজ্ঞেস করছে কি করছি এখানে। যদিও নিশি জানে কেন আমি বাইরে দারিয়ে আছি তারপরও বারবার জিজ্ঞেস করে বিরক্ত করছে। আমি নিশিকে বললাম, তুই জানিস কেন আমি এখানে দারিয়ে আছি তারপরও কেন ডিস্টার্ব করতেছিস?

-আচ্ছা ঠিক আছে, তুই খোজ আমি গেলাম।

এই বলে নিশি চলে গেল। ভাবীর যাওয়ার সময় হয়ে এল প্রায় কিন্তু তাবাসসুমকে দেখছি না। হঠাৎ প্রীতি আপুকে দেখলাম কমল ভাইয়ের সাথে কথা বলতে কিন্তু আমি সামনে এগোনোর সাহস পেলাম না। আর প্রীতি আপুকে তাবাসসুমের কথা বলা যাবে না। ভালবাসা আর সিক্রেট কথা সবার সাথে শেয়ার করতে নেই। আরিফ ভাই আর ভাবী গাড়ির দিকে যাচ্ছেন। আমিও যাচ্ছি এগিয়ে দিতে। এতক্ষণে আমি তাবাসসুমকে দেখতে পেলাম! তবে রাগে মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে। দশ মিনিট আগে আসলে কি হতো? আমি আর তাকাচ্ছি না তাবাসসুমের দিকে কিছুক্ষণের জন্য তাবাসসুমের কাছে অপরিচিত আমি। দেখি মেয়েটা নিজ থেকে কিছু বলে কিনা!
আরিফ ভাই আর ভাবীকে গাড়িতে তুলে দিলাম। তারা রওনা হলেন। তাবাসসুমের সাথে শুধু চোখাচোখি হল কিন্তু কোনো কথা হল না! যাওয়ার আগ দিয়ে গাড়ি থেকে একটা ছোট্ট কাগজ আমার দিকে ছুড়ে মারা হল! আমি সিওর এটা তাবাসসুমের কাজ। কাগজটা তুলে দেখলাম সেখানে লেখা ছিল,

"ফটোশ্যুটে না গেলেই পারতেন, তবে পাঞ্জাবীটায় আপনাকে ভাল মানিয়েছে।
নাম লিখলাম না, কারণ জানেন এটা কে লিখেছে..."

তাহলে বুঝলাম সব দোষ এই ফটোশ্যুটের! আরিফ ভাই বলে একটা ছোট চিৎকার করে উঠলাম। আরিফ ভাই না ডাকলে আজ তাবাসসুমের সাথে দেখা করতে পারতাম!



এরমধ্যে অনেকগুলো সময় কেটে গেল। তাবাসসুমের সাথে প্রতিদিন কথা হয়, ফোনে না, মেসেজ। এখনও ফোন নাম্বার চাইনি ওর কাছে। তবে ওর সাথে মেসেজিং আগের বেশি হয়। সবই আগের মত আছে কিন্তু তাবাসসুমের মুখে আজও তুমি শব্দটা শুনতে পারলাম না! অনেকবার বলেছি তুমি বা তুই করে বলতে কিন্তু সে বলেনি। কারণ জানতে চাইলেও বলে না! ভাবীর সাথে এরপর মাত্র দুইবার কথা হয়েছে। আরিফ ভাই বললো, তোর ভাবীকে বাপেরবাড়ি রেখে আয়। অনেকদিন হল বলছে কিন্তু আমি সময় পাচ্ছি না। তুই, কমল আর মেধা যা। নিশির পরীক্ষা চলছে না হলে নিশিও যাইতো।
আমি রাজি হলাম। ছোট মামার সেই জানের জান হুন্ডাই এইচ ওয়ান নিয়ে রওনা হলাম। ভাবী হঠাৎ বললেন, হাবিব তুই কি কোনো হাবিবির দেখা পেয়েছিস?

ভাবীর একথা শোনার পর মেধা কাশি দিয়ে উঠল! আমি বললাম, পাইছি মনে হয় কিন্তু কনফার্ম না!

কমল ভাই দেখি হাত ঠোটের সামনে রেখে চাপা হাসি দিচ্ছে! ভাবী বললেন, আজকে তাবাসসুম আসছে, আমি যাচ্ছি তো...

এবার আমি কেশে উঠলাম।

-তাবাসসুম তো মাঝে মাঝে হাবিব নামের একটা ছেলের কথা বলে, ভাবী বললেন!

মেধার দিকে তাকিয়ে আছি, দেখছি কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ঠোট চেপে হাসছে! আমার তাকানো মেধা লক্ষ করেছে! তখনই বললো, কিরে তুই আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?

আমি কোনো কথা বললাম না। চুপচাপ ড্রাইভিং করছি। সারা রাস্তা ভাবী, কমল ভাই আর মেধা মিলে খুব পঁচাইছে। ভাবীর বাড়ি পৌঁছে আমি আর কমল ভাই চুপচাপ রুমে শুয়ে আছি। তাবাসসুমের সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু কিছু বলি নি। কিছুক্ষণ পর মেসেজ এল, দেখলাম তাবাসসুম দিয়েছে। আমাকে ছাদে যেতে বললো। একটু ভেবে উঠে বসলাম তখনই কমল ভাই বললো, "গুড লাক হাবিব.."
সবাই মজা নিচ্ছে! আমিও ধন্যবাদ জানিয়ে ছাদে চলে গেলাম।

তাবাসসুম আছে দেখছি। আরও অনেকজন আছে তবে সবাইকে চিনি না। হয়তো ভাড়াটে হবে। তাবাসসুমের মুখ থেকে কথা বের হল, রাগ করে আছেন নাকি রাগ করার চেষ্টা করছেন?

ওর কথাটা শুনেই হেসে দিলাম! কেমনে বুঝে এসব তাবাসসুম! আবারও বললো, সেদিন ফটোশ্যুটে পরে গেলেও পারতেন!

তারপর শুরু করলাম কথাবার্তা। অনেক মাসের জমানো কথার ঝুড়ি। বুঝি না প্রতিদিন ফেসবুকে এত চ্যাটিং হতো তারপরও কথা শেষ হত না কেন!! ওর মুখ থেকে বারবার আপনি ডাকটা ভাল লাগছে না। জোর করেই জানতে চাইলাম কেন সে আমাকে আপনি করে ডাকে! তাবাসসুম বললো, আপনি বলে ডাকলে আলাদা একটা সম্মান কাজ করে মনের ভিতরে। প্রেম ভালবাসা হচ্ছে শ্রদ্ধা, ভক্তি আর সম্মানের জিনিস। যেটাকে অসম্মান করা ঠিক না। আপনাকে আপনি বলি শুধু সম্মানের জন্য। আর আমি বিশ্বাস করি বিশ্বাসকে। যে যেমন তার জন্য আল্লাহ তেমনটাই রেখেছেন।

আমি কানে সত্যি কি তাবাসসুমের কথা শুনছি নাকি অন্য কেউ বলছে নাকি এটা আমার কল্পনা! যাকে আমি ভালবাসি, প্রচণ্ড ভালবাসি কিন্তু কখনও মুখে বলি নি সে আমাকে সম্মান বলে আর আমি কিভাবে তাকে সঙ্গায়িত করবো বুঝতে পারছি না! তাবাসসুমের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা সেই বোধটুকু দিয়েছে যা হয়তো অন্য কাউকে দেয়নি। তাবাসসুম নিজেও কখনও আমাকে বলে নি সে আমাকে ভালবাসে। তবে আমরা দুইজন জানি আমরা একে অপরকে ভালবাসি। আমার চোখ লাল হয়ে আছে। কান্না আসছে খুব কিন্তু সামলে নেয়ার কঠোর চেষ্টায় আছি। সন্ধ্যা হয়েছে বলে কেউ বুঝতে পারছে না। আমি আর কিছু বললাম না।
পরেরদিন, সকালের নাস্তা করে বের হওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছি। কমল ভাইয়ের অফিস আছে। উনি নাটোর থেকে রওনা দিবেন। আমাদের আগেই বের হবেন। মেধা আমার রুমে এসেছে গোছগাছে সাহায্য করতে। এমন সময় তাবাসসুমও এল। মেধা আমি আর তাবাসসুম সোফায় বসে আছি। আমাদের কিছু ছবি ছিল ওর কাছে, সেগুলা আমাকে আর মেধাকে দেখালো। সেই কাল মেঘের ঘনঘটার আকাশে তোলা ছবিটা আমাকে দিল আর বললো যত্ন করে রাখার জন্য। যাওয়ার আগ দিয়ে তাবাসসুমের নাম্বারটা চাইলাম এবং সে দিল। যাওয়ার সময় দেখলাম তাবাসসুম আমার দিকে অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে ছিল। আমিই আর তাকালাম না সেদিকে! বের হলাম ব্যাগ নিয়ে। মেধা বললো, কি হয়েছে তোর?

আমি বললাম, দিন গুনছি আর দোয়া করি যেন পাশের সিটটায় সারাজীবনের জন্য যেন তাবাসসুমকে পাই। তাবাসসুম ছাড়া অন্য কেউ কে চাই না। কেমন যেন হচ্ছে রে মেধা। এমন কখনও কারও সাথে হয়েছে বলে মনে হয় না। বিনা ভালবাসি বলেও ভালবেসে ফেলেছি। তাবাসসুমও একই। সেও কখনও বলে নি আমাকে ভালবাসার কথা। তবুও জানি সে আমাকে ভালবাসে। প্রীতি আপু বলেছিল আমাকে সকালে কিন্তু তাবাসসুম বললো না!

-তুইও তো তাই করলি! আমাকে, নিশিকে, কমল ভাইকে বললি কিন্তু তাবাসসুমকে বললি না তো, মেধা বললো।

মেধা আবারও বললো, তবে সমস্যা নেই, আমিও আগেই তাবাসসুমকে বলেছি যে তুই ওকে ভালবাসিস!

কথাটা শুনেই হার্ড ব্রেক করে গাড়িটা রাস্তা পাশে রাখলাম! ভাগ্য ভাল আর কোন যানবাহন ছিল না রাস্তায়! একটু পর নেমে আমি হাসতে শুরু করলাম। মেধাও হাসা শুরু করল! এর আগে কেন হেসেছিলাম সেটার কারণ অজানা ছিল কিন্তু এবার আমি জানি কেন আমি হাসছি। মেধা, নিশি, কমল ভাই এদের মত কাজিন না থাকলে বুঝতেই পারতাম না জীবন এত সুন্দর হয়। আমাদের মাঝে বয়সের তারতম্য আছে কিন্তু দায়িত্ব, ভালবাসা, বন্ধনের কোনো ঘাটতি নেই। শুধু দোয়া করি যখন থুরথুরে বুড়া হব তখনও যেন এখনকার মত বন্ধন বজায় থাকে। এখনের মত করে তখনও যেন বাঁচতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×