বেড়াতে যাবার নাম শুনেই বাচ্চারা লাফানো শুরু করে দিল । তাও আবার বিদেশে । ওদের নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল । সারাদিন এর ওর কাছে গল্প করে বেড়াচ্ছে । কি কি মজা করবে সেটার প্লান করছে । শুধু বেড়ানো হলে অন্য কথা আসলে মালয়েশিয়া যাবার পোগ্রামটা হচ্ছিল একটা প্রতিযোগিতার জন্য । এলোহা বাংলাদেশ এর স্টুডেন্টদের ওর্য়াল্ড কমপিটিশন । বাংলাদেশ থেকে বাছাইকৃত ও অন্যান্য দেশের বাচ্চাদের অংক প্রতিযোগিতা ।
যথাসময়ে সব ভিসা টিকিট অন্যান্য সব সম্পন্ন হয়ে গেল । বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ও অভিভাবক মিলে প্রায় ৫০/৫৫ জনের মতো বিশাল বাহিনী । ট্রাভেল এজেন্সি সব ব্যাবস্থা করে দিয়েছে বলে আমাদের অতটা ঝামেলা পোহাতে হয়নি । রাত ১১ টায় এয়ারপোর্টে পৌছে দেখি আমাদের গ্রুপের মোটামুটি সবাই চলে এসেছে ।
রাত ২ টায় ফ্লাইট । পিচ্চিগুলা সব একসাথে দৌডাদৌড়ি শুরু করে দিল কখন প্লেনে উঠবে । প্লেন কিভাবে আকাশে উড়বে । এগুলা নিয়ে ওরা নিজেরা নিজেরা আলোচনা করছে । অনেকক্ষন অপেক্ষার পর প্লেনে যাবার ডাক পড়ল । চোখে ঘুম চলে আসছে বাচ্চা গুলোর । একটা মিনি বাসে করে আমাদের প্লেনের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল । আমার ছোট টা বাসে উঠেই চিৎকার শুরু করে দিল ।
- আমি প্লেন দিয়া মালয়েশিয়া যাবো । বাসে করে যাবো না ................।
- বাস দিয়া যাবো না .......।
বাস শুদ্ধ সবাই হাসছে । কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছেনা তাকে যে আমরা প্লেনে করেই মালয়েশিয়া যাবো । অবশেষে প্লেন দেখার পর সে শান্ত হলো । ভিতরে ঢুকে তো মহা খুশি । খুশির চোটে পাচ মিনিট পরেই ঘুমিয়ে গেল ।
রাতের বেলা প্লেন ঢাকার কোন কোনা দিয়া যে গেল কিছুই দেখা গেল না । আমরাও মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম । কতক্ষন পর ঘুম ভাংল জানি না তবে জানালা দিয়ে নিচের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে । লম্বা একটা নদী , ছোট ছোট আলোকিত শহর , আবার ঘন সবুজ গাছপালা , মনে হয় ঔ গুলা জংগল । সবে মাএ ভোর হচ্ছে । দেখতে দেখতে এয়ারপোর্টে পৌছে গেলাম । ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছে । মনটাই খারাপ হয়ে গেল । এলাম কিনা বৃষ্টির দিনে !!
যখন জানলাম এখানে প্রতিদিনই বৃষ্টি হয় কিন্তু বেশিক্ষন থাকে না । একটু পরে ই আবার ঝলমল করে রোদ উঠে । যাক বাবা বাচলাম ।
ঝকঝকে এয়ারপোর্টের সব আনুষ্ঠিকতা শেষ করে যার যার লাগেজ নিয়ে বের হলাম । আমাদের হোটেলে নিয়ে যাবার জন্য বাস ও গাইড সামনেই পাওয়া গেল । সবাই খুব ফুরফুরে মেজাজে গল্প করতে করতে বাসে চড়ে হোটেল এর উদ্দেশে রওয়ানা হলো ।
মসৃন রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে যখন চারপাশের সাজানো গাছপালা অবাক হয়ে দেখছি আর নিজেদের দেশের কথা ভাবছি । কি ভাবলাম থাক সেটা আর নাই বা বললাম ।
বাস চলছে ......। গাইড মালয়েশিয়া সম্পর্কে বেসিক কিছু ধারনা - ওদের রাষ্ট্র , প্রদেশ , পর্যটন , দেশের মানুষ কি রকম এগুলো বলে যাচ্ছে । শুনতে শুনতে পুএজায়া এসে বাস থামলো ।
লেকের ওপাড়ে মসজিদ
প্রাইম মিনিষ্টারের কার্যালয়
দর্শণীয় স্থাপনা , মনোমুগ্ধকর লেক , সূদুরে মসজিদ দেখার জন্য সময় দিল দশ মিনিট । দেখার চাইতে তখন পেটের মধ্যে তেলাপোকার দৌড়ানি বেশি করে লাগছিল । সবাই দেখি বাসে উঠে পড়ল তাড়াতাড়ি মানে সবার একই অবস্থা ।
বেলা দশটার দিকে হোটেলে পৌছলাম । হোটেল রেডিয়াস ইন্টারন্যাশনাল । হোটেলের বিশাল লবিতে কেউ দাড়িয়ে কেউ বসে যার যার রুমের চাবির জন্য অপেক্ষা করছি ।
কয়েকজন বিদেশি পর্যটক ও এলো হয়তো রুম বুকিং দিতে । ওদের সাথে দুজন তরুনী । কাউন্টারের সামনে দাড়িয়েই একটা কি করলো---- গায়ের ঢোলা গেন্জীটা খুলে ফেললো ! !তারপর লম্বা স্কার্ট - ঐ টাও খুললো ।
ছোট একটা টপ আর হট প্যান্ট পড়ে দিব্যি হাত নাড়িয়ে চুল ঠিকঠাক করছে ।
আমাদের গ্রুপের সব ছেলে গুলার চোখ ঐ দিকে । আমরা যারা মেয়ে ছিলাম সবাই অগ্নি দৃষ্টিতে যার যার ঘরের লোকের চোখ ফলো করছি ।
আমাদের সাথে থাকা একটু বড় ক্লাসের বাচচা গুলো মিচকি মিচকি হাসি দিচ্ছে ।
মনে মনে দোয়া করছি -' আল্লাহ তুমি ঐ শয়তানী টারে তাড়াতাড়ি হোটেল থেকে বিদেয় কর '।
চলবে -
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৪১