এ প্রজন্ম জানে না মধ্য ফেব্রুয়ারীর ইতিহাস।১৯৮৩ সালের ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারী কি ঘটেছিল? ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি না এলে সামরিকতন্ত্র ও স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে উঠতো না। আজ সেই রক্তঝরা দিন।
১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিলো স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্রদের প্রতিরোধ আন্দোলন ও মজিদ খানের কুখ্যাত শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, বন্দী মুক্তি ও জনগণের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে জমায়েত ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে। সেটাই পরিণত হয়েছিল বুট ও বুলেটের দমনে পিষ্ট ছাত্র জনতার প্রথম বিরাট প্রতিরোধে। কে জানত বসন্তের আগুনরাঙা রঙের সঙ্গে মিশে যাবে ছাত্রদের রক্ত !স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্রদের প্রতিরোধ আন্দোলনে প্রথম শহীদের নাম জয়নাল,দিপালী সাহা ,কাঞ্চন । সেদিন স্বৈরাচারের দোসর পুলিশ জয়নালকে গুলিবিদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাঁর শরীর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। বেয়নেট ফলা আর জয়নালের শরীর থেকে চুইয়েপড়া রক্ত বাংলার পথ-প্রান্তর ভাসিয়ে দেয়। শুধু জয়নাল নয়, ছাত্রদের ওপর পুলিশি তাণ্ডবের সময় শিশু একাডেমীতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা দিপালী সাহা নামের এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। তবে দিপালীর লাশ পুলিশ গুম করে ফেলে।পুলিশ সেদিন শুধু হত্যা করেই স্থির থাকেনি, বিকেলে ক্যাম্পাসে একটি যুদ্ধ-পরিস্থিতি তৈরি করে সেনাবাহিনী। তার সঙ্গে যোগ দেয় বিডিআর-পুলিশ। শাহবাগ, টিএসসি চত্বর, কলাভবনের সামনে, নীলক্ষেত, কাঁটাবনের রাস্তা ধরে পুরো অঞ্চল ঘেরাও করে ফেলে তারা। অপরাজেয় বাংলার সমাবেশে পুলিশ অতর্কিত লাঠিচার্জ শুরু করে এবং বহু ছাত্রনেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।ভিসি কার্যালয়ে ঢুকে পুলিশ ছাত্রছাত্রীদের মেরে হাত-পা ভেঙে ট্রাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে তৎকালীন ভিসি পদত্যাগ করেন। গ্রেপ্তার করে দুই হাজার ছাত্র-জনতাকে। গ্রেপ্তার করে নেয়া হয় শাহবাগের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে। পরে তাঁদের তুলে দেওয়া হয় আর্মির হাতে। বন্দি ছাত্র-জনতার ওপর চলে প্রথমে পুলিশ ও পরে আর্মির নিষ্ঠুর নির্যাতন।১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী কাঞ্চন চট্টগ্রাম শহরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি শহীদ হন রাউফুন বসুনিয়া। এরপর থেকেই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।পশ্চিম থেকে আগত ভ্যালেন্টাইনের জোয়ারে ভেসে গেছে রক্তের অক্ষরে লেখা শহীদদের নাম।
এ প্রজন্ম ভুলে যাচ্ছে সেই সব শহীদের কথা। কি দূর্ভাগ্য অামাদের!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৪১