অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর তিন বছর হলো।আজো তার খুনীদের গ্রেফতার করা যায়নি। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী বইমেলা থেকে ফেরার পথে সস্ত্রীক আক্রান্ত হন এবং ঘটনাস্থলে রক্তক্ষরনে তিনি মৃত্যুবরন করেন।
মুক্তমনা, যুক্তিবাদী এই লেখকের মৃত্যু বাংলাদেশের বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে এক অপূরণীয় ক্ষতি। ক্ষণজন্মা এই লেখক এবং বিজ্ঞানীর জীবন স্বল্পায়ু হলেও ছিলো বর্ণাঢ্য।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংবেদনশীল বিষয়ে অকপটে যুক্তিনির্ভর লেখালেখিতে অভিজিৎ রায় ছিলেন অগ্রগণ্য। তার লেখার ভিত্তি ছিল বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ জ্ঞান, পর্যবেক্ষণ ও তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ। যাবতীয় কুসংস্কার, সামাজিক নিপীড়ন ও অনাচারের নির্মোহ বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। ব্যক্তি জীবনে মানবতাবাদী অভিজিৎ সোচ্চার হয়েছেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনায়, যেখানে মানবতা বিপন্ন হয়েছে। তিনি বিজ্ঞানমনস্ক মুক্তচিন্তার জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। তার লেখা বইগুলোর প্রতিটিতেই যুক্তি, কার্যকারণ এবং পর্যবেক্ষণের বৈজ্ঞানিক প্রয়োগের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়।
পেশায় প্রকৌশলী হবার পাশাপাশি অভিজিৎ ছিলেন বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখির জগতে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে তার লেখা “আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী” বইটি ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়। এর দু’বছর পর ২০০৭ সালে “মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে” বইতে তিনি ও তার সহলেখক পৃথিবীতে প্রাণের উৎস কীভাবে হলো এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিয়ে লিখেছেন। আমাদের এই পৃথিবীর বাইরেও অন্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা, কিংবা এর সম্ভাবনা কতটুকু তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন এই বইতে। আধুনিক জীববিজ্ঞান ও বিবর্তন নিয়ে প্রবল আগ্রহ ছিল তার।
২০১০ সালে “সমকামিতা” বইয়ে সমকামিতার জীববৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
২০১১ সালে তিনি যৌথভাবে লিখেছেন ” অবিশ্বাসের দর্শন”। স্রষ্টাবিশ্বাসী থেকে শুরু করে সংশয়বাদী, অজ্ঞেয়বাদী, নিরীশ্বরবাদী, বা মানবতাবাদী, সর্বোপরি বিজ্ঞানমনস্ক প্রতিটি পাঠকের জন্য এই বইটি একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজনা। তার “ভালোবাসা কারে কয়” বইয়ে তিনি বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের ভিত্তিতে প্রেম, ভালোবাসা, যৌনতা ইত্যাদি মানবীয় অনুভূতির ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
ধর্মীয় মৌলবাদ, গোড়ামীর বিরুদ্ধে ছিল তার অবস্থান। এ কারনে তিনি উগ্র মৌলবাদী শক্তির চক্ষুশুলে পরিনত হয়ে চাপাতির নীচে প্রান দেন।
তার মৃত্যুর ৩ বছর হলো। দু:খজনক হলেও সত্য আজো খুনীরা গ্রেফতার হয়নি।