চলচ্চিত্র নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন, আমাদের কাছের খোকন ভাই না ফেরার দেশে চলে গেছেন আজ দুইবছর হলো।
মনে পড়ে খোকন ভাইয়ের সাথে অনেক স্মৃতি, অনেক কথা।কিন্তু সব ছাপিয়ে
বারবার খোকনভাইয়ের প্রানবন্ত উপস্থিতি, আড্ডায় হাসিমুখটি মনে পড়ছে। খোকনভাইয়ের সাথে পরিচয় আজ থেকে ১৮/২০ বছর আগে। পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেশন অফ ফিল্ম সোসাইটিজের ততকালীন সাধারন সম্পাদক, চলচ্চিত্র নির্মাতা গোলাম রাব্বানী বিপ্লব ভাই। ২০০৩ সালে যখন প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উতসব নিয়ে ব্যস্ত তখন প্রায় দিনই খোকনভাই আসতেন আমাদের অস্থায়ী অফিস আর্শীবাদ চলচ্চিত্রে। বিপ্লবভাইয়ের রুমে লম্বা আড্ডা জমতো। মাঝে মাঝে আমি, শোভন ও মাসুদ সেই আড্ডার একজন হয়ে যেতাম। জীবনবোধ নিয়ে ছিল তার গভীর পর্যবেক্ষন। মুক্তিযুদ্ধ ছিল তার বিশ্বাস ও চেতনায়। হতাশার কথাও বলতেন চলচ্চিত্রের নোংরামি নিয়ে।
খোকনভাইয়ের সাথে সর্বশেষ দেখা আমেরিকায়। তিনি তখন গুরুতর অসুস্থ। নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন খুব আশা নিয়ে । উন্নত চিকিতসায় যদি ভালো হয়ে উঠেন!
২০১৪ সালের ঈদুল আজহার রাতে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে দাওয়াতে গিয়েছিলাম রোকন ভাইয়ের বাসায়। সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক শাহীন কবির ভাই। আমাদের সাথে ছিলেন ডা. মশিউর, মোশারফ ভাই। ঈদের রাতে সেখানে খোকনভাইকে দেখতে এসেছিলেন অভিনয় শিল্পী শাবানা ম্যাডাম, ওয়াহিদ সাদিক। ঈদ করতে এ বাসায় এসেছিলেন অভিনেত্রী শাহনুর। চিকিতসার জন্য খোকনভাই উঠেছিলেন রোকন ভাইয়ের বাসায়। আমরা ড্রইংরুমে বসেছিলাম। কিন্তু ঈদেরদিনেও বাসার সবার মন খারাপ এবং ভেতরের রুম থেকে মাঝে মাঝে কান্নার শব্দ আসছিলো। বসে থাকতে তাই খুব অস্বস্তি লাগছিল। কিছুক্ষন পর শাবানা আপা চলে যেতেই শাহনুর জানায়, ডাক্তাররা খোকনভাইয়ের ভাল হবার সম্ভাবনা নেই আজ জানিয়ে দিয়েছেন। সেই থেকে এ বাসার সবার মন খারাপ।
খুব মন খারাপ নিয়ে খোকনভাইয়ের সাথে কথা হয়। পাশেই খোকনভাইর স্ত্রী, আমাদের ভাবী ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিলেন। শাহীনভাই ও অন্যরা সাহস দেন। সব ঠিক হয়ে যাবে।
না, দেশে ফিরে ট্রিটমেন্ট চললেও খোকনভাই আর সুস্থ হয়ে কাজে ফিরতে পারেননি। নিউইয়র্কে দেখা খোকনভাইয়ের করুন চোখ দুটো আমাকে আজো তাড়া করে ফেরে। বেঁচে থাকার কি করুন আর্তি ছিল সেই দুটো চোখে, যা আমি কখনো ভুলতে পারব না।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:০০