কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম যাবার সময় আমার ঝোলায় ছিল কথাশিল্পী মাহবুব রেজার দুইটি বই।অনেকদিন আগেই বই দুটো সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু নানান কারন ও সময়াভাবে পড়া হয়ে উঠেনি। ট্রেনের লম্বা জার্নিতে এক নি:শ্বাসে বই দুটো পড়া হলে ভাললাগা - মন্দলাগা নিয়ে কিছু লিখব লিখব করেও লেখা হয়ে উঠেনি। রাতে বাসায় ফিরে খেলা দেখবো না বলেই একটু সময় মিলে যাওয়ায় নিজের অনুভুতিটুকু লিখলাম।
প্রথমে বলি " যখন আমি বড় হয়ে উঠছি" উপন্যাসটি নিয়ে। পুরানো ঢাকার বসুবাজার লেনের এক হিন্দু পরিবারের দেশভাগের পর বাস্তুভিটা ছেড়ে যাবার হদয়বিদারক কাহিনী নিয়ে উপন্যাসের শুরু।ঢাকা জজকোর্টের মুহুরী ক্ষমাদাস চক্রবর্তীর বহুসাধের, স্বপ্নের বাড়ি ছেড়ে যাবার রক্তক্ষরণ, পড়শী আজিজ সাহেবের কাছে সস্তায় নামমাত্রমুল্যে বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত, লেখকের বয়ানে বসুবাজার লেনে বেড়ে উঠা জীবন ও পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে মধ্যবিত্তের গল্পই এ উপন্যাসের উপজীব্য। মেদহীন ঝরঝরে গদ্য , সাবলীল বর্ননায় এককথায় চমৎকার একটি উপন্যাস পড়লাম।
" যখন আমি বড় হয়ে উঠছি" পড়তে পড়তে হারিয়েছি ষাট, সত্তুর দশকের পুরান ঢাকার আবহে, তখনকার জীবনাচরনের কাছে।ভাল লাগার মতনই একটি উপন্যাস।
বইটি প্রকাশ করেছে সিঁড়ি প্রকাশন।
দ্বিতীয় বইটি " সব গল্পই পুরান ঢাকার"। ১০ টি চমৎকার গল্পের সংকলন এটি। ' রঞ্জুদেরবাড়ি , বেহালা, আমি তোমার বন্ধু হতে চাই, আমাদের বাবা মা, ২৪ বসুবাজার লেন , একজন খুব একাকী ' গল্পগুলো মনের গভীরে আচড় কাটেনি শুধু বারবার নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত করেছে । আহা আমাদের হারিয়ে যাওয়া কৈশোর কি দুর্দান্তই না ছিল ! টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে যাওয়া মধ্যবিত্তের জীবনের খন্ড খন্ড চিত্রগুলো লেখক পরম মমতায় চিত্রিত করেছেন। এই বইটির ' ২৪ বসুবাজার লেন , বাবার কিছু চিঠি'' পড়তে পড়তে মাঝেমাঝে চোখ ঝাপসা হয়ে উঠেছে । বই পড়া শেষে দীর্ঘসময় ভেবেছি, নির্বিকার দৃষ্ঠিতে জীবনকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখার চোখ ক'জনের আছে? লেখকের এ দৃষ্ঠি পাঠকের হ্রদয়কেও ভীষন রেখাপাত করে,খানিক সময় ভাবায় । রেখাপাত ফেলার এই শক্তিটুকু সব কলমের মধ্যে নেই , লেখনীতে নেই, যা মাহবুবের আছে।
বইটি প্রকাশ করেছে অনিন্দ্য প্রকাশ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:১৫