somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরানো বই নতুন করে পড়াঃ কত অজানারে

২৫ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ক’দিন আগে চট্রগ্রাম হতে ঢাকায় ফেরার পথে নিমাই ভট্টাচার্যের ‘মেমসাহেব’ এবং শংকরের ‘কত অজানারে’ কিনেছিলাম । ট্রেনে পড়ে শেষ করি মেমসাহেব।বাসায় ফিরে নানান কাজের ফাকে ফাকে প্রায় তিনযুগ পর আবারো পরলাম ‘কত অজানারে’।
বাংগালী বইপড়ুয়াদের কাছে তিনি শংকর নামে সমাধিক পরিচিত। কিন্তু তার একটি পোষাকী নাম আছে যা অনেক পাঠকই জানেন না। হারিয়ে যাওয়া সেই নামটি হচ্ছে মণিশংকর মুখোপাধ্যায়।খুব ছোটবেলায় তার লেখার সাথে পরিচয় ঘটে এবং কালক্রমে তিনি আমার প্রিয় লেখকদের একজন হয়ে উঠেন। স্পস্ট মনে পড়ে তার ‘ কত অজানারে’ বইটি দিয়ে আমার শংকরভুবনে যাত্রা শুরু হয়েছিল। কোট-কাচারী, উকিল-মুহুরী, বাদী-বিবাদী ও বিচারকদের কাহিনী নিয়ে উপন্যাসটি রচিত হয়েছিল ।অসাধারন সেই কাহিনী। এ উপন্যাসটি আজো আমার প্রিয় উপন্যাসের তালিকায় সগৌরবে বিশেষস্থান দখল করে আছে।
লেখক জীবনের শুরুতে কখনো ফেরিওয়ালা, টাইপরাইটার ক্লিনার, কখনো প্রাইভেট টিউশনি, কখনো শিক্ষকতা অথবা জুট ব্রোকারের কনিষ্ঠ কেরানিগিরি করেছেন।জীবনকে দেখেছেন বহুমাত্রিক এংগেল থেকে। সেই প্রতিফলন দেখি তার প্রতিটি লেখার ছত্রেছত্রে। তাঁর প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল চৌরঙ্গী, সীমাবদ্ধ এবং জন অরণ্য। এই তিনটি বই নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। তিনি ১৯৩৩ সালের ৭ ডিসেম্বর যশোরের বনগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । আইনজীবী বাবা হরিপদ মুখোপাধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগেই চলে যান কলকাতার ওপারে হাওড়ায়। সেখানেই শংকরের বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা ও সাহিত্য সাধনার শুরু। এক ইংরেজের অনুপ্রেরণায় শুরু করেন লেখালেখি।
‘কত অজানারে’ উপন্যাসে কোলকাতা কোট প্রাংগনের নানান কাহিনী তুলে এনেছেন লেখক। ইংরেজ বারওয়েল সায়েব ,যিনি কলকাতা হাইকোর্টের শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টার ছিলেন । তার সততা, বিচারিক দক্ষতা, ন্যায় বিচার প্রদান সেই সময় লোকের মুখে মুখে ছিল। এ উপন্যাসের বিরাট অংশ জুড়েই আছে সেই বর্ননা ।বারওয়েল সাহেবের শুরুটা হয়েছিল অষ্টাদশ শতাব্দীতে , বিংশ শতাব্দীর মধ্যাহ্নে যার অবসান ঘটে।
অনেকে ভাবেন আদালতপাড়ায় আইনের নামে যত রাজ্যের বে-আইনী কাজ হয়। উকিলেরা মিথ্যা কথা বলে, এটর্নিরা সুযোগ পেলেই মক্কেলকে শুষে নেয় অর্থকড়ি। ভাইয়ে ভাইয়ে মামলা মোকাদ্দমায় জড়িয়ে দুইজনেই শেষ পর্যন্ত পথে বসে, মাঝখান দিয়ে এটর্নিরা কলকাতায় বাড়ি তোলে। কথাগুলো যে সবসময় মিথ্যা তা নয়, কিন্তু সবাই এখানে কিছু চোর ডাকাত নয়। এখানে অনেক মানুষ আছেন যারা জীবনে কখনো মিথ্যার আশ্রয় নেননি। সততাই তাদের জীবনের একমাত্র মূলধন। উড্রফ, স্যার গ্রিফিথ ইভান্স, উইলিয়াম জ্যাকসনের মত আইনিবিদরা যে কীর্তি রেখে গেছেন, আমাদের বারওয়েল সাহেব ছিলেন তার শেষ বর্তিকাবাহী।
লেখক শংকর ছিলেন প্রথম জীবনে বারওয়েল সাহেবের সহকারী। আইনজীবি হিসেবে নয়, বরং চেম্বার ক্লার্ক হিসেবে। ওল্ড পোস্ট অফিস রোডের পুরনো সেই টেম্পল চেম্বারের কক্ষে বসে বারওয়েল সাহেব কখনো খুলে বসতেন তার বিশাল অভিজ্ঞতার ঝুলি, কখনো বা মক্কেলের নিজের মুখেই শংকর শুনে নিতেন মানবজীবনের জটিলতম সমস্যার সব দুঃখগাথা। এর কিছু অংশ নিয়েই অমর এই সৃষ্টি, কত অজানারে ! প্রতিটি আইনের ছাত্র কিংবা বিবেকবান মানুষের জন্য এইটি একটি অবশ্যপাঠ্য বই।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:১৭
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×