আজকাল দ্বৈতস্বত্বার মানুষ মনে হয় নিজেকে,মনের মাঝে দুইরকম অনুভুতি হয়,বুঝতেছিনা আমার এই চিকন শরীরে স্তুলো কথা গুলো বলা ঠিক হবে কিনা? কখনও মনে হয় যা দেখছি সপ্নে দেখছি, আবার কখনও মনে হয় এটাই ঘটার কথা ছিল হয়তো আমি এটাতেই অভ্যস্থ ভীষণ বাস্তববাদী মানুষ।বরঞ্চ না ঘটলে সেটাই অস্বাভাবিক ব্যাপার হতো।আগের মতো এখন আর ছোট ছোট ঘটনা নিয়ে বড় বড় কৌতূহল হয়না মনের মাঝে।হঠাৎ করে টাইমলাইনে যখন কোনও অনলাইন পোর্টালের লিঙ্ক দেখি যার শিরোনাম হচ্ছে বাবা কর্তৃক সৎ মেয়েকে ৮ বছর যাবত ধর্ষণ, তখন উপরের অনুভূতিগুলো হয় আমার।কিছুক্ষন ঝিম মেরে থাকার পর যখন সম্বিৎ ফিরে পাই আর ঘটনার সত্যতার প্রমান মেলে, ততক্ষনে দমবন্ধ স্থির শরীর ঘাম ছেড়ে দিয়ে ঘেমে নেয়ে আবার শীতল হয়ে যায়,তখন নিজের অজান্তেই নিজেকে প্রশ্ন করি, কেন বাবা? কেন?এরপর যখন নিজেকে সামলে বাস্তবতায় ফিরি তখন ভাবি,একজন পশুর শরীরে মানুসের চেহারাটা প্যারাসাইট হয়ে চেপে বসে আছে আরমান নামে এ আর এমন কি?আরমান দের মাঝে পশুস্বত্বার বাস করাটা নতুন কিছু নয়, কিংবা অস্বাভাবিকও কিছু নয়, তাই নির্দ্বিধায় এরা এই অপকর্মগুলো করে যেতে পারে, এবং তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে সমাজের কাছে যৌন নির্যাতন রোধে লম্বা ফিরিস্তিও দিতে পারে অনবরত।কষ্ট হয় তাদের কথা ভেবে যারা এ দেশেরই মানুষ এবং তারাও সৎ বাবা কিংবা সৎ মেয়ে।আরমানদের মতো কিছু নরকের মার্জার এইসব সৎ বাবা ও সৎ মেয়েদের হীনমন্যতার তলানিতে ঠেলে দেয় প্রতিনিয়ত।এরাও ভাবতে শুরু করে সবাই বোধ হয় এখনি এদের দিকে আঙ্গুল তাক করে বলবে, এই বাবাও হয়তো তার মেয়েকে নিয়ম করে সকাল বিকাল ধর্ষণ করে চলেছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর।এতো গেলো হাজারো সৎ বাবা আর মেয়ের সময়াতংক, এবার আসি ঐ দুর্ধর্ষ সাহসী ছোট্ট মেয়েটার কথায়, যে কিনা ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থা থেকে টানা আট বছর ২৯,০২৮ ফুট উচ্চতার যন্ত্রণার মাউনট এভারেস্ট বহন করেছে শরীরে ও ফুলস্টপ এর মতো ছোট মন টাতে, যা কখনও দৃশ্যমান কখনওবা অদৃশ্য দূর আকাশের কোনও নক্ষত্রের মতো।কখনও সে ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে, কখনও গোঙানির শব্দ শোনা যায় ,কখনও পাথরের মতো শক্ত,নির্বাক ও শীতল।আরমানের মতো জানোয়ার গুলো ধর্ষণ করতে শিখেছে,ভয় দেখাতে শিখেছে, ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করতে শিখেছে শিখেছে সত্যি, কিন্তু এই যুগের বাচ্চাগুলোর সাহসের ধার অনুমান করতে শিখেনি।তাইতো কন্যার বন্ধুর কাছে ছবি পাঠিয়ে সেই ভুলের মাশুল গুনতে শুরু করেছে।সে কল্পনাও করতে পারেনি এখনকার বন্ধুরা তার বন্ধুর দুঃসময়ে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকেনা কিংবা ইনবক্সে আসা বন্ধুর আপত্তিকর ছবি নিয়ে অনলাইনে ভাইরাল করে সেলিব্রেটি হওয়ার চিন্তা করেনা, তারা বন্ধুর জন্য কাটিং প্লাস কেনে চারপাশের কাঁটাতারের বেড়া কেটে তাকে উদ্ধার করার জন্য।ভাবতে অবাক লাগে একজন বাবা (জানোয়ার)কতটা ভিতু হলে তার ছোট্ট মেয়ে টাকে অনবরত ব্ল্যাকমেইল করে ধর্ষণ করার জন্য।আর অন্য পাশে একজন মা, যে কিনা নিজের জঠরে ধারন করেছে এই ওয়ান্ডার বেবি টাকে সে আট বছরে একবারও প্রতিবাদ করার সাহস দেখায়নি!কি হারাবার ভয়ে?কাকে হারাবার ভয়ে?কিংবা কোন সম্ভোগের নেশায়?বুঝলাম ধর্ষকের তো মুখ আর মলদ্বার বাদ দিলে বাকি সব খোল।কিন্তু আপনি তো একজন মা?নাকি মা সত্ত্বাকে দিনভর ক্যারাপেসের কোটরে আটকে রেখে রাতের বেলায় উন্মুক্ত করেন একজন অপ্রত্যাশিত জানোয়ারের কাছে।আপনাকে বলছি, আজ যদি আপনি আপনার অস্তিত্বকে সগর্বে জানান দেন যে আপনি আছেন, সারা পৃথিবীর মানুষ সেটাকে অস্বীকার করবে একচ্ছত্রে।কারন ঠিক সেদিনই আপনার মৃত্যু হয়েছে যেদিন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক কিশোরী চিৎকার করে আকাশ বিদীর্ণ করে চারদেয়াল একাকার করেছে অথচ একজন মায়ের কান পর্যন্ত পৌছায়নি।
সেদিন আমার এক বন্ধু ধর্ষণের কারন নিয়ে আমার সাথে তর্ক করছিলো, না ঠিক তর্ক নয় আলোচনা বলা চলে।সে ধর্ষণের বিভিন্ন কারন তুলে ধরছিল আমার সামনে। আমি শুধু মৃদুস্বরে আচম্বিত হেসেছিলাম তার কথা শুনে, প্রতিউত্তরে শুধু বলেছিলাম, ধর্ষণের একটাই কারন তা হল ধর্ষণকারী ঠাণ্ডা মাথায়, সজ্ঞানে, এবং নিখুঁত পরিকল্পনায় মানসিক বিকারগ্রস্থ ও সেক্স ফ্রিক হয়ে ধর্ষণ করে এর পিছনে তার বুনো সুখ ও পশুত্ব স্বত্বা কাজ করে আর কিছুনা।আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি ধর্ষণের কারন অনুসন্ধান করার মতো গর্হিত অপরাধ না করাটাই শ্রেয়।
অনেকেই আজকাল প্রশ্ন করে ধর্ষণের এই বিকৃত ও দুর্ধর্ষ রথ আর কত নতুন রুপে আমাদেরকে কাঁদাবে?প্রতিউত্তরে খুব সন্তর্পণে, সাবধানে, ও নিরাপদে প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি,আমি এই জন্য এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি কারন এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই,কিংবা থাকলেও উত্তর দিতে আমি লজ্জা বোধ করি, আমার মন সংকুচিত হয়, আমি সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে অন্তর্মুখী যাত্রা শুরু করি।ফেসবুকে কিছু লিখার অর্থ হচ্ছে আমি আমার জীবন ধারা, মূল্যবোধ,প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা,সামনের পৃথিবীর সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনা, আর সর্বোপরি আমার প্রিয় বাংলাদেশের রঙ্গমঞ্চের ইতিবৃত্ত আমার দৃষ্টিকোণ থেকে সবার সামনে তুলে ধরা।আর এই ইতিবৃত্ত ঘাঁটতে গেলে সবার আগেই চোখের সামনে ভাসে ক্লাস সেভেনে পড়া কিশোরীর আর্তনাদ, রেইন ট্রি হোটেলের চার দেয়ালের হাহাকার,ধর্ষণের বিচার না পেয়ে বাবা মেয়ের ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা (এই বাবাও কিন্তু সৎ বাবা ছিল),দিনাজপুরে ৪ বছরের শিশুর বিবর্ণ মুখখানা।এই ঘটনাগুলো লিখতে গিয়ে আমার হাত কাঁপে, বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হয় আমার বিবেক যা আমার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডকে ভীষণভাবে প্রভাবিত ও বাধাগ্রস্থ করে।তারপরও ভয় হয় একজন মানুষও যদি আমার লেখা পড়ে আমাকে প্রশ্ন করে তুমিও তো একজন পুরুষ?ধর্ষকদের জাত ভাই।ভাবতে ঘৃণা হয় মানব সভ্যতার তলানীতে থাকা কিছু অপ্রয়োজনীয় কিট পতঙ্গ আমাদের অশুভ সড়কে পদচারণ করে সবসময়, এরা কখনই রাত,সকাল,দুপুর ও সন্ধ্যার সৌন্দর্য দেখে নাই,বুঝেও নাই,শুনেও নাই, এরা সবগুলো মায় খেদানো, বাপে তাড়ানো জাহান্নামের মার্জার,এদের কাছে জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগের দূরত্বটা স্রেফ বিকলাঙ্গ মানসিকতা চরিতার্থ করার একটা রাজপথ মাত্র।মাংসপিণ্ডের উপস্থিতিতে এদের চোখ চক চক করে,কামাতুর, লোভী তির্যক দৃষ্টি বাধাগ্রস্থ হয়না কোনোরকম পোশাকআশাক কিংবা পর্দায়,শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে এরা কোনও না কোনও মেয়ে সন্তানের জনক, কারও ভাই কিংবা কোনও নারীর সন্তান।তাই এরা দেখতে আপাতদৃষ্টিতে হুবহু মানুষের মতো।কিশোরীর গোঙানির শব্দ, কিংবা ছোট্ট শিশুর কষ্টের তীব্রতার প্রতিধ্বনি এদের সম্বিৎ উজ্জীবিত করেনা, এরা আরও বেশী হিংস্র ও কামার্ত হয় এসব শুনলে।চারিপাশে যখন ঘ্রিনা,অবজ্ঞা ও অভিযোগের তর্জনী অনুভব করি, তখন মনে হয় একটি বৃত্তের মাঝে বসবাস আমার,ধীরে ধীরে বৃত্তসীমা জমাটবদ্ধ বরফ হয়ে আমার দিকে ছুটে আসছে, একসময় আমার দেহের তাপমাত্রাও হীমাঙ্কের নিচে নেমে যাবে,একসময় আমার শিরা উপশিরার প্রবাহও থেমে যাবে।মরে গিয়ে বেঁচে গেলাম ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে কেউ কেউ।কিন্তু কেউ বুঝলনা আমার এই মৃত্যুযাত্রা বেঁচে যাওয়া নয়,এটা হল অভিশাপ,অবহেলা,ঘ্রীনা, ও অনুশোচনার বোঝা মাথায় নিয়ে অনতকালের যাত্রা। এ যাত্রার শেষ নেই, শেষ হবার নয়।
এখন শুধু অপেক্ষা করি সেদিনের, যেদিন শুনবো, ভীষণ কামোদ্দীপক এক ধর্ষক, কামোদ্দিপনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে বাংলা সিনেমার জনৈক নায়িকার অসহনশীল ছবি দেখে নিজের কাম বাসনা সংবরন করতে না পেরে, চোখ মুখ বন্ধ করে ৩৩০০০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক খুঁটির পোস্টারে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজের জৈবিক চাহিদা পুরনে সক্ষম হয়েছেন,এখন তার মহান আত্মা ডাস্টবিনের চিপায় কোরাস গায় আর হাড্ডি মাংশ পুড়ে অঙ্গার।যা দিয়ে এখন বন্য শেয়াল কুকুরে সকাল রাত্রি দু বেলা নিয়মিত দাতও পরিষ্কার করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:১০