somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"রোজা" যেভাবে ক্রিয়া না হয়ে বিশেষ্য

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি গফুর সাহেবের বাসায় লেখক ক্যামারা নিয়ে অদৃশ্যরকম আছি। তিনি আসরের নামাজে দাঁড়িয়েছেন। মেজবানি গোশত ,হালিমের ঘ্রাণে বাতাসে উৎসবের মেজাজ। পাশের ঘরে তার মায়ের মিহি সুরের তিলাওয়াত ! তার মুখের রেখা দেখে ধারণা করা যাচ্ছে এ তার চিরচেনা নস্টালজিক আবহ যা তিনি তাড়িয়ে উপভোগ করেন । নামাজ শেষ করতে করতেই স্ত্রী শাহানার কর্কশ স্বর,
-“জিলাপি নেই ঘরে আর শসা”।
“-আগে তো বললে না? এলিবেন্থ আওয়ারে এসে মামার বাড়ির গপ্প !”
-“আগে কিভাবে বলব? অফিস থেকে এলেইতো এখন। আমাকে পেয়েছ কি ?না বললে বলবে বলিনি কেন আর বললে বলবে আর এক কথা ।”
-“ধুর!”
গফুর সাহেবের খুশিটা বুঝি মিইয়ে গেল। রোজা রেখে এখন নিশ্চয়ই তাকে মোড় পর্যন্ত হেঁটে যেতে হবে! এসময় রিকশা পাওয়ারও তো কথা না। কিন্তু আড়াই প্যাঁচ দেয়া জিলাপির রসালো স্বাদের কথা মনে হতেই কি তিনি পাঞ্জাবিটা গায়ে গলিয়ে ছুটলেন? সেটা কোন কথা না কথা হচ্ছে জিলাপি কেনা। এখন বাজার থেকে কিছু কেনা মানে বিয়ের পাত্র পাত্রী ঠিক করার মত। জাত মিললে সামর্থ্যে কুলাবে না আর সাধ্যের মধ্যে হলে বেজাত নিয়েই বাড়ি ফিরতে হবে। তবে মুরুব্বিদের মুখে আমরা সবাই শুনে এসেছি রমজানে খাবারের হিসেব করতে নেই । তাই বোধ করি তিনি ভিড়ের মধ্যে শরীর গলিয়ে আধ কেজি রেশমি জিলাপির জন্যে খণ্ডযুদ্ধে নেমে গেলেন। ছাদ থেকে জুম আউট করে এক্সট্রিম ওয়াইড শটে দেখলে মনে হবে গফুর সাহেব একদল সম্মোহিত অপ্রকৃতস্থ মানুষের সাথে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিংবা এ হয়তো কোন আকাল -দুর্ভিক্ষের দেশ। সকল ইন্দ্রিয়েরইতো যেহেতু ভোগ আছে। এমন ভরপুর সুঘ্রাণের নদী সাঁতরে গফুর সাহেবের রোজা কতটা টিকে আছে আমি জানি না তা ধর্ম বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন ।

আর শাহানা? ছুটলাম রান্না ঘরে। সে এখনো রান্না শেষ করতে পারেনি। এই ফাঁকেই টুপ করে আসর আদায় করে নিতে হচ্ছে তাকে। নামাজে বসলেই সংসারী মহিলাদের মস্তিষ্কের চিন্তার গতি দ্বিগুণ হয়। মিড শটে এ দেখা যাচ্ছে তিনি ঘন ঘন চোখ বুজছেন আর খুলছেন। তার চোখের মনি অনবরত নড়ছে। হয়তো তিনি ভাবছেন ইফতারের আগে আগে সব সারতে পারবেন তো? হয়তো ঈদের কেনাকাটা নিয়ে কিছু বাড়তি দুশ্চিন্তা, কিংবা খুব ছোট খাট জিনিস যেমন ফ্রিজে বরফ রাখা হয়েছে কিনা কিংবা ডিম আলুর চপ করবেন না শুধু আলুর ।

আম্মা আম্মা করে বিকট স্বরে চিৎকার করে উঠল মেয়ে ঝুনু। নামাজের মধ্যেই সালাম ফিরিয়ে শাহানা ছুটে যান । মনে হচ্ছে এ রোজকার বিচার। ঝুনু দেখবে ঈদ কেনাকাটা নিয়ে অনুষ্ঠান বা লাইফ স্টাইল আর বাবু দেখবে গত রাতের খেলার ফ্ল্যাশ ব্যাক। রিমোটকন্ট্রোল কেড়ে নিয়ে দুজনের গালে দুটো চড় দিয়ে ফের এসে বসেন নামাজে। এর মধ্যে উনার শাশুড়ি ডাক ছাড়ল।
“-শাহানা চুলায় কি যেন লেগে গেল ।”
এমন ধুপধাপ নামাজের তাজিম ,খুশু ও খুজু কিছুই রক্ষা হয় না সে বোঝে নিশ্চয়ই। কিন্তু ইফতার আপ্যায়নে ভুলচুক হলেতো তা এই বেচারি মেয়েছেলের ঘাড়েই পড়বে। যতটা জানি রোজা রেখে চেঁচামেচি করলে রোজা মাকরুহ হয়ে যায় কিন্তু শাহানা কাজের মেয়ের সাথেও মুহুর্মুহু: চিৎকার করে উঠছেন। দেখতে পাচ্ছি তার শশুরপক্ষের রোজদার বেরোজদার দুই ধরণের মেহমান এসেছে। পাঁচবেলা রান্নায় দায়িত্বে থাকতে থাকতে অভুক্ত শরীরে মেজাজ তেতে উঠা স্বাভাবিক বৈকি। আহারের গলাও তো শুকিয়ে আসার কথা। একা মনে বকতে থাকা প্রলাপ শুনে মনে হচ্ছে গফুর সাহেবের খাবার নিয়ে খুঁতখুঁতানি তো আছেই রোজা এলে তা আরো বেড়ে যায়। তার উপর ছেলে মেয়ের খাবারের বেলায় বাড়তি মর্ডানিজম, সেফ স্টাইল পদ চাই , আর শাশুড়ি আম্মার এসব পেটে সয় না। তার জন্য ভাত-তরকারি করতে হয়। সারাক্ষণ এসব ভেবে অস্থির হয়ে থাকেন বলে তার নাকি মনে হচ্ছে এবার কুরআন খতমটাও দেয়া হবে না। কলিংবেলের শব্দে আমি দৌড়ে যাই দরজায়। গফুর সাহেবের মুখে যুদ্ধ জয়ের হাসি।
“ -আজ রেশমি জিলাপি এনেছি ।”
আধ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ জয় করলেন শাহানাও। আজান পর্যন্ত চলেছে তার দৌড়ঝাঁপ । মেহমানসহ পুরো পরিবারের লং শটে সবার আকাঙ্ক্ষিত ক্ষণের জন্য অপেক্ষা। সাথে সাথেই ঘন ঘন বেজে উঠল কলিং বেল।
-শালারা এখন নিচ থেকে কলিং বেল দিয়ে ভিক্ষা চায় । ইফতার করার ও জো নেই।
“-কিছু দিয়ে আপদ বিদেয় করি নয়তো বাজাতেই থাকবে। ” শাহানা বলল।
“-বহতো বৌমা। ইফতার শেষ অইলে এত্তা কিছু থাকে। হেইগুলা দিয়ে দিও ।” শাশুড়ির কথায় উঠি উঠি করেও বসে পরে শাহানা।

আম্মা কয়টা ভিক্ষা দেন” লাইনটি এ দেয়াল ও দেয়ালে বাধা পেয়ে জনশূন্য রাস্তাটায় গমগমে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। আমি বারান্দা থেকে নিচে তাদের দিকে লং শট নিলাম। ভিক্ষাও যেন একটা ফুর্তি। পলিথিন করে বিভিন্ন বাড়ির উপর থেকে ইফতার ফেলা হচ্ছে আর ছেলে বুড়ো ভিখিরিরা ক্যাচ ক্যাচ খেলছে। ক্যাচ না করতে পারা প্যাকেটগুলো ছিঁড়ে ছড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। তা কুড়িয়ে নিচ্ছে শিশুগুলো। মনে হচ্ছে ক্ষুধা এখানে বিষয় না মজাটা দখলে। কারো হারে হয়তো কিছুই নেই কারো হাতে দু তিনটা । শূন্য হাতের ভিখিরিগুলো জয়ীদের গালাগাল করছে। জয়ীদের হাসিমুখের টাইট ক্লোজ আপ শটে অনেকেরই দাঁত দেখা যাচ্ছে।

এবার গফুর সাহেবের শোবার রুম। খাওয়া দাওয়া আর মাগরেব নামাজের পর তিনি বিছানায় লম্বা হয়ে গেছেন, ভুঁড়ি ভোজ ও তাৎক্ষণিক উৎপন্ন বায়ুতে তার পেট এখন তিনগুণ। তাকে শুয়ে থাকতে দেখে শাহানা মুখ বাঁকা করেন।“ -অসময়ে শুলে যে;একটু পরইতো তরাবি”।
“-আজ শরীরটা ভারি লাগছে ভাবছি তরাবিটা বাড়িতেই পড়ে নেই আজ ।”
“ -এ... আর নতুন কি ।” স্বামীর আলসেমিতে মনে হচ্ছে শাহানার ধাত আছে। তাই সে আর কথা বাড়ায় না। কখনো ফ্রিজ খুলে কখনো মিরশেলফ খুলে হয়তো খাবারের হিসেব কষতে থাকেন। গফুর সাহেবের লম্ববান শরীরকে আবার একটা একটা ফুল শট দিয়ে আমি বাড়িটা থেকে বেড়িয়ে আসি। কি কি হাইলাইট কি করা যায়, ক্যাপশান কি হতে পারে ভাবতে গিয়ে আফসোস লাগল। আসলে এর জন্য এতদূর গফুর সাহেবের বাড়িতে অদৃশ্যরকম থাকার প্রয়োজন ছিল না। দু বেলা না খেয়ে ভোর রাত পর্যন্ত তার উসুল উঠানো, শুধু ভোগের ব্যস্ততা, এ দৃশ্য আমার আমাদের বেশিরভাগ ঘরেই পাওয়া যাবে। সংযম ,সহমর্মীতার আগে একটা অ উপসর্গ যোগ করে দিলেই পাওয়া যাবে যার উপযুক্ত ক্যাপশন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৮:১৯
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×