somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই রিভুঃ 'কেটজালকোয়াটল ও সৃষ্টিবিনাশ রহস্য' এবং 'দিন শেষে'

২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নামে রিভিউ হইলেও - এইটা আসলে কুমিরের রচনা। পইড়া যা মনে হইছে - লেইখা ফেলছি। ভুল না সঠিক ভাইবা লেখি নাই।

১। কেটজালকোয়াটল ও সৃষ্টিবিনাশ রহস্য
লেখকঃ তানজীম রহমান
পৃষ্ঠাঃ ৮০

-----------------------------------------



নামে ভিমড়ি খাওয়ার দশা রীতিমত। উচ্চারণ এত কঠিন কেন? আমার তো বইয়ের শুরুর দিকে কেটজালকোয়াটল ছাড়া অন্যান্য সব নামেই প্যাঁচ লাগছে। সবই 'ট' দিয়ে শুরু। সবই বিশাল লম্বা।

যেহেতু নোভেলা - তাই কাহিনীর গভীরতা খুব বেশি না। সমান গতিতে চলে গেছে। এই কারণে পড়াটা বেশ উপভোগ্য লেগেছে আমার কাছে।

তানজীম রহমানের লেখনী সম্মোহন জাগানোর মত। পাতায় আটকিয়ে রাখার মত। আর, উনার কোন লেখা পড়লে কয়েকদিন অন্যান্য কিছু পড়া থেকে বিরতি নিতে হয়। কারণ, এরপর সবই খুব সাধারণ মনে হয়। এতটা গ্রাস করার মত লেখনী আসলেই খুব বিরল।

মিথোলজিক্যাল রহস্য। নামেই বুঝা যায় - রহস্যটা কী। বইয়ের কাহিনী সংক্ষেপেও বলা আছে, ' শুধু একটা খুন নয় - ধ্বংস হয়ে গেছে পুরো একটা বিশ্ব। সাধারণ কোন গোয়েন্দা নয়, তদন্তে নেমেছে স্বয়ং সে বিশ্বের স্রষ্টা, দেবতা কেটজালকোয়াটল। ' এরপর তো আর স্পয়েল করার মত কিছু নাইও।

কিন্তু না - শেষের দিকটা আসলেই ভাল লাগার মত। পড়তে গিয়ে মনে হবে - এটা আর এমন কী! খুবই সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু বইয়ের মাঝের পাতাগুলোর ফাঁকে ফাঁকে নিরীহ গোছের কয়েকটি বাক্য পড়ার সময় মনে হয় না কেউ ভাববে যে এগুলোই কাহিনীর হাড়গোড়।

শেষে গিয়ে ঐ ছোট বাক্যগুলোর বড় রূপে ফিরে আসাটা বেশ চমকেরও বলা যায়।

স্পয়লার দেওয়ার মত কিছু না থাকলেও - আসল কী কারণ তা তো আর বইয়ের মলাটের সংক্ষেপে বলা নেই। তা তো বলা বইয়ের ভিতরে।

তারপরও স্পয়লার দেই। কেটজালকোয়াটল তার সৃষ্টি করা বিশ্বকে বিনাশকারী দুর্বৃত্তকে ধরার জন্য বের হয়। যেহেতু - গল্পের নায়ক সে। স্বাভাবিক ভাবেই অনেক বাঁধা বিপত্তি পেরুতে হয়েছে তাকে। আর - সবসময়ের মত গল্পের শেষে নায়কেরই জয় হয়েছে।
শেষ কাহিনী। এইটা ইউনিভার্সাল স্পয়লার।

এক অর্থে এই স্পয়লারটা ঠিকও - আরেক অর্থে এই স্পয়লারটা ভুলও। ভুল কারণ, বইটার শেষে আসলে একটা অর্থ ফুটে উঠেছে। এবং এই কাহিনীটা সাজানোও সেই অর্থ ফুঁটিয়ে তোলার উদ্দেশ্যেও।
অন্তত আমার এটাই মনে হয়েছে। অন্যদের কাছে অন্যরকম লাগবে হয়তো।

আর, পুরোটা বইয়ের লেখনী আসলেই প্রশংসার দাবীদার। বিশেষ করে - কেটজালকোয়াটলের সাথে জ্ঞানের পরীক্ষার অংশটা। কাব্যের তালে তালে লড়াই - মাথার লড়াই - বুদ্ধির লড়াই। আমার কাছে এই অংশটাই বেশি ভাল লেগেছে।

সাথে টুকটাক হিউমরগুলোও চমৎকার ছিল। স্বামী দেবতা হোউক আর যাই ই হোউক না কেন, বউয়েরা মায়ের বাড়ি যাওয়া নিয়ে স্বামীর সাথে ঝগড়া করবই। হোউক মিথলজি, পৃথিবী, মর্ত্য বা যে জায়গা ই। হেইডিস আর পার্সিফোনির ঐ জায়গাটায় মজা পাইছি।

আমার কাছে সব মিলিয়ে বইটা বেশ ভাল লেগেছে। মাথায় এখন জাল, কুটলি, পোকা - এই নামগুলোই ঘুরতেছে।

২। দিন শেষে
লেখকঃ রবিন জামান খান
পৃষ্ঠাঃ ৯৪

------------------------



থ্রিলার রাইটাররা সবসময়ই থ্রিলার গল্পগুলোকে গণিতের সমীকরণের সাথে তুলনা করে। গণিতের সমীকরণের মতই ঘটনাগুলোকে সাজিয়ে মিল করে গল্পকে পরিপূর্ণতা দেওয়া হয়। অনেকে বা আবার ডানপক্ষ-বামপক্ষ ধরে - সেটাকে মিলিয়ে পূর্ণতা দেয়।
আর সেটার সুবাদেই পাঠক পায় রোমাঞ্চের ছোঁয়া।

মাঝে মাঝে অংক থাকে অনেকগুলো সমীকরণ, অনেকগুলো অজ্ঞাতরাশি। ঐসব রাশি গুলোর মান আলাদা আলাদা ভাবে সিমপ্লিফাই করে - ঐগুলো সমীকরণে বসিয়ে অনেক কাঁটছাট করে চূড়ান্ত ফলটা বের করতে হয়।

দিন শেষে পড়ে আমার ঠিক ওরকমই লেগেছে। পুরো যেন অংকের সমাধান।

পুরোটা জুড়েই ছিল রোমাঞ্চ ও অ্যাকশনের ছড়াছড়ি। লেখনী এতটাই মুগ্ধকর যে মাথায় আপনামতেই দৃশ্যকল্পের সৃষ্টি হয়ে যায়। পড়তে গিয়ে মনে হল মুভি দেখছি।

বেশির ভাগ গল্পেই দেখা যায় - একটা ঘটনার বর্ণনা একজনকে কেন্দ্র করেই দেওয়া হয়। অন্য পাশ থেকে কী হচ্ছে, বা ঐ একজন ছাড়া অন্যান্যদের মাথায় কী চিন্তা চলছে - সেটা নিয়ে একটা কৌতুহল থেকেই যায়।
এই গল্পে এই কৌতুহলটা পুরোপুরি মিটে গেছে। সকল কিছুর বর্ণনাই দেওয়া - সব সম্ভাব্য দৃষ্টিকোণ থেকে।

গল্পের ফিনিশিংটা?
এইটা বেশ ভালই একটা চমক ছিল। এমনটা যে হবে তা ভাবিনি। যদিও আমি থ্রিলার পড়ার সময় ছোট ছোট জিনিসও বাদ দেই না। কারণ জানি এইগুলোই পড়ে বিশাল টুইস্টের সৃষ্টি করে। এরকম ভাবে কিছুটা ধরেও রেখেছিলাম। কিন্তু পরে আসলেই টুইস্ট খেয়ে গেছি।
গল্পের শেষ করার পর মনে হল - আরে ধুর! কাহিনী তো বইয়ের প্রথম পাতায়ই দেওয়া ছিল। এইটা ধরতে পারলাম না ক্যান।

এত নিরীহ আর স্বাভাবিক একটা ব্যাপারই যে এইটার সমাধাণ হবে ধরতেই পারি নাই।

লেখক সফল পুরোপুরিই। নোভেলার মত ছোট খাট পরিসরে এত জমজমাট রহস্য উপস্থাপন করা খুব একটা সহজ না। রবিন জামান ভাইয়া ঐ কঠিন কাজই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথেই করে ফেলেছেন।

গল্প দুইটা একই বইয়ের।
তাই বই পরিচিতিতে,

মোট পৃষ্ঠাঃ ১৭৬
মূল্যঃ ১৭০ (কভারে লিখা)
প্রকাশনীঃ বাতিঘর
রেটিংঃ দুইটা উপন্যাসিকাই ভাল লেগেছে। আলাদা আলাদা রেটিং-এর ঝামেলায় গেলাম না। তবে - দুটোতেই হালকা পাতলা বানানে ভুল দেখেছি। যদিও আমি নিজেও বানানে প্রচুর ভুল করি। সবমিলিয়ে রেটিং -
৪.৫/৫।

পিডিএফ লিঙ্কঃ বই বেরই হইছে মাত্র দুই দিন আগে। পিডিএফ লিংক না চায়া - বইটা কিনে পড়লেই হয়। দামও খুব বেশি না বইয়ের।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:৪৫
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×