somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ্যা মেমোরাবল রিকসা জার্নি!

৩১ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ সকালে একটা রিকসায় চড়েছিলাম। নিকট স্মরণকালে এমন রিকসায় চড়েছি বলে স্মরণে আসছে না। মেইনরোডে এসে দেখি এলাকার হার্টথ্রবও রিকসার জন্য রাস্তার পাশে অপেক্ষা করছে। তাই একটু দ্রুত পায়েই চললাম। ঠিক যখন হার্টথ্রবের কাছাকাছি এসেছি মাত্র তখনই এক রিকসাচালক আমাকে ডাকল, ভাই, যাইবেন? অন্যসময় রিকসায়ালাদের ডেকে, ম্যানেজ করতেই জান কয়লা হয়ে যায়, বেশিরভাগ সময়ই অফিসটাইমে রিকসাচালকরা আমাকে গোনাতেই ধরে না, নূন্যতম পাত্তাও পাই না! আজ দেখি রিকসাচালকদের বিষফোঁড় উঠেছে। ‘যাহ! আর টাইম পাইলো না’ এমন একটা ভাব নিয়ে অগ্যতা রিকসায় চড়ে বসলাম। হার্টথ্রব ফসকে গেল। যাই হোক, এটা সবে কাহিনীর শুরু। রিকসায় চড়ে বসতেই এলাকার এক ছোটভাই ছুটে এল, বলল, ভাইয়ার কি তাড়া আছে নাকি, দুই মিনিট দাড়ালে এক রিকসাতেই যেতাম, নাকি? পাছে হার্টথ্রবকে রিকসায় ‘লিফট’ দেয়ার নিমন্ত্রণের সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে যায় তাই হরবড় করে বললাম, আরে না! চরম ব্যস্ত! জীবনে এত ব্যস্ততা, এত তাড়া ছিল বলে মনে পড়ে না! আমার তাড়া দেখে ছেলেটা কেটে পড়ল, বলল, আচ্ছা, আমি তাইলে কাজটা সেরে দশ মিনিট পড়েই রওনা দেই, আপনি যান গা। আমি বাঁচলাম যেন তবে গতরাতে স্বপ্নে একজোড়া শালিক দেখে ঘুম ভেঙ্গেছিল বলেই সব ‘ওমলেট’ হয়ে গেল, হার্টথ্রব ইতোমধ্যে অন্য রিকসায় পগার পাড়। মেজাজ খারাপ নিয়েই এক কিলোমিটার রিকসায় করে রওনা হলাম। রিকসা দশ হাত যেয়েই যাত্রাবিরতি দিল, চেইন পড়ে গেছে (মানে রিকসার চেইন)। ওকে ভেরি ফাইন। চেইন তোলা হল। এবার বড়জোর পাঁচহাত দূরত্ব গিয়েই যাত্রাবিরতি। আবার চেইন পড়ে গেছে (মানে রিকসার চেইন)।আবার চেইন তোলা হল। এমন সময় জনৈক পরিচিত রিকসায় করে আমাদের ছাড়িয়ে যেতে যেতে বললেন, আরে তানভীর কী খবর… তিনি চলে গেলেন। প্রায় শ’গজ গিয়েই রিকসা আবারো যাত্রাবিরতি দিল। না, এবার চেইন পড়ে নি, রিকসাচালকের মোবাইলে রিং বাজছে, পার্সোনাল কল। ওকে ভেরি ফাইন। রিকসাচালক যখন কথা বলছে তখন এলাকার এক আপু পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলেন- আরে তানভীর! কী অবস্থা ভাইয়া… তিনি চলে গেলেন। রিকসাচালক মোবাইলে কথা সংক্ষিপ্ত করে মিনিট দুয়েক পড়েই ফিরে এসে রিকসার প্যাডেলে চাপ দিলেন। অবশ্য সুখ কপালে বেশিক্ষণ সইল না। একটু সামনে গিয়েই এক ভ্যানগাড়ির সাথে রিকসাটা নিপুণভাবে লাগিয়ে দিল, চাকায়-চাকায় গিরিঙ্গি লেগে গেছে। কি কপাল! ভ্যানচালক আর রিকসায়ালা একে অন্যের জানের জিগার দোস্ত বলে মনে হল, এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত গালাগালি শুরু হলেও তারা দু’জনে দেখি দাঁত কেলিয়ে হাসছে আর কুশল বিনিময় করছে। আমি তামাশা দেখছি এমন সময় এলাকার এক বড়ভাই রিকসা পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললেন, তা-ন-ভী-র, কই যাও? দেখি না যে ইদানিং…। যাই হোক, ভ্যানচালক আর রিকসাচালকের ভাব বিনিময় পর্বের সমাপ্তি ও চাকায়-চাকায় গিরিঙ্গি খোলার পর, রিকসা এগোতে শুরু করল। আরেকটু সামনে গিয়েই দেখা যাচ্ছে, একটা পিকআপ রাস্তায় এলোমেলোভাবে দাড়িয়ে আছে। রিকসাচালক মিনিটখানেক বেল বাজিয়ে অবশেষে সিদ্ধান্তে উপনিত হল যে, তার রিকসার বেল নষ্ট, এটাতে শব্দ হচ্ছে না। রিকসাচালক তার আসন ছেড়ে নেমে মৌখিকভাবে পিকআপচালকের সাথে রাস্তায় সাইড দেয়ার প্রসংঙ্গে যাবতীয় আলাপ শেষ করে এসে রিকসার বেল ঠিক করতে আরম্ভ করল। এমন সময় এলাকার সেই ছোটভাই (যাকে হেব্বি তাড়া দেখিয়ে দশ মিনিট আগেই রওনা হয়েছিলাম) রিকসা নিয়ে আমার পাশ কাটাতে কাটাতে বলল, আয়হায়! আপনি এখনও এখানে!??? আপনার না তাড়া আছে!??? আমি নির্বিকার হয়ে রিকসাচালকের কারিগরি দক্ষতা দেখছি, সে রিকসার বেল ঠিক করছে। একটুপর রিকসা আবার যাত্রা শুরু করল। এতক্ষণে এক কিমি রাস্তার শতকরা পঞ্চাশভাগ এসেছি। রিকসা অবশেষে নিজ গতিতে চলছে। প্রায় গন্তব্যে পৌছে গেছি এমন সময় ঠাসসসস আর ফুসসসস শব্দে চমকে গেলাম। ঘটনা কী? রিকসার টায়ার ফেটে গেছে। রিকসাচালক তার ড্রাইভিং পজিশন ছেড়ে রিকসার চাকা পর্যবেক্ষণ শেষে জানালেন, আর যাওন যাইব না, টায়ার ফাইটা গেছে। আমার মেজাজ খারাপ থেকে খারাপতর ও গরম থেকে গরমতর হতে হতে এখন বিপরীত দিকে চলতে শুরু করেছে। হোয়াট এ্যা মেমোরাবল রিকসা জার্নি!
বাড়তি ঘটনা: রিকসা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে হাঁটা দেব এমন সময় দেখি সেই-ই হার্টথ্রব ফিরতি রিকসা নিয়ে ছুটছে। সে যে রিকসায় চড়ে যাচ্ছে সেটার গতি কী মসৃণ! আফসোস, সেই রিকসার গতি আমার কাছ থেকে তাকে বিপরীত দিকে নিয়ে যাচ্ছে। হায়!
-- তানভীর আহমেদ

৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×