পটুয়াখালীর দশমিনার আলিপুরে বিধবা কানন বালার ওপর সদ্য (১১ মে, ২০১৭ খৃঃ) ঘটে যাওয়া অত্যাচারের ভিডিও ঢাকায় একটি টিভি দেখিয়েছে। সম্পত্তি দখলের জন্যে কানন বালাকে হাত-পা বেঁধে অত্যাচার করা হয়। কানন বালা বলেছেন, ‘ওগো পাও ধইরা মাফ চাইছি। বাড়িঘর ছাইড়া ভারত চইল্যা যামু কইছি। তাও ওরা আমারে পাড়াইয়া মাটিতে ফালাইয়া রাখে’। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে জন্মই কি কানন বালাদের আজন্ম পাপ? বর্তমান বাংলাদেশে বা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুর জমি দখলের মহোৎসব শুরু সেই ভারত বিভাগের পর থেকেই। আজো তা সমানভাবে চলছে। বলার কেউ নেই। দেখার কেউ নেই। কারণ প্রায় সবাই অল্প-বিস্তর এই সুবিধা ভোগ করছেন। এমনকি রাষ্ট্রযন্ত্র এ সুবিধাভুগী। কেউ যদি ১৯৪৭-এর আগে বা এমনকি ১৯৭২-এর আগে এবং ২০১৭-তে হিন্দু সম্পত্তির পরিমাণ যাচাই করেন, তাহলে অবাক হয়ে যাবেন বৈকি? হিন্দুরা রাজত্ব, রাজকন্যা দুটোই হারাচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র এ যাবৎ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ বিষয়ে সহায়তা করেছে।
১৯৫০ সালে পূর্ব-পাকিস্তানে জমিদারি প্রথা বাতিল হয় (পূর্ববঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০)। পশ্চিম পাকিস্তানে তা হয়নি, কারণ সেখানকার জমিদাররা ছিলেন প্রায় সবাই মুসলমান। পূর্ব পাকিস্তানে হয়েছে, কারণ প্রায় সকল জমিদার ছিলেন হিন্দু। যদিও তখন বলা হয়েছিল, জমিদারদের থেকে জমি নিয়ে গরিবদের দেয়া হবে, বা অনেকে সমাজতান্ত্রিক শ্লোগগানে অভিভূত হয়েছিলেন,
মূলত: সেটি ছিল ‘হিন্দুর থেকে জমি নিয়ে মুসলমানকে দেয়া’।
তারপর এলো ১৯৬৫ সালে ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’।
এই আইন সাধারণ হিন্দুদের সর্বস্বান্ত করে দেয় এবং এটি করে রাষ্ট্রযন্ত্র।
রাজার হস্ত করে সমস্ত হিন্দুদের ধন চুরি’।
এ জ্বালা এখনো শেষ হয়নি। এজন্যে দায়ী এ যাবৎকালের প্রতিটি সরকার।
কারণ পাকিস্তানি এই কালো আইন সবার হাত ঘুরে রয়ে গেছে।
কদিন আগে মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন ২০১৭’-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এর ফলে জনস্বার্থে মন্দির, মসজিদ বা অন্য ধর্মীয় উপাসনালয়, কবর, শ্মশানের জমি বা সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা যাবে।
এরই মধ্যে এই আইনের সফল প্রয়োগ হয়েছে মিরপুরের কাফরুলে।
সেখানে জনস্বার্থে রাস্তা প্রশস্ত করতে সার্বজনীন দুর্গা মন্দির গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ হিন্দুদের আপত্তি শুনেননি, কারণ জনস্বার্থ বলে কথা ?
ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন গুলিস্তানের ‘গোলাপ শাহের মাজার কতটা ট্রাফিক বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে অথবা মিরপুর রোডে সোহবানবাগ মাসজিদ ? কর্তৃপক্ষ কি পারবেন ওগুলো স্থানান্তর করতে ? নাকি বীরত্ব সব হিন্দুদের ওপর ?
রমনা কালীবাড়ির কথা তুললাম না, রাষ্ট্রযন্ত্র এর পুরোটাই গিলে খেয়ে ফেলেছে।
ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠিত ২০ একর জমির ওপর, দখলে আছে মাত্র ৬.১০ একর,
বাকি ১৩.৯০ একর বেদখল, এমন কি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত হিন্দুর জমি মেরে খেয়েছে ?