somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

*কালজয়ী*
গবেষক, পাঠক ও লেখক -- Reader, Thinker And Writer। কালজয়ী- কালের অর্থ নির্দিষ্ট সময় বা Time। কালজয়ী অর্থ কোন নির্দিষ্ট সময়ে মানুষের মেধা, শ্রম, বুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা ও লেখনীর বিজয়। বিজয় হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী চিন্তার বিজয়।

জনগন যেখানে ঘুমন্ত সেখানে সবই সম্ভব

১৫ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে মানুষের গুম-খুন হয়ে যাওয়া। সর্বত্র একই আতংক বিরাজ করছে- এই না জানি কে গুম হয়ে যায়। মানুষের শান্তির ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আগেও গুম-খুন হত। তবে বর্তমানে গুম- খুনের বীভৎসতা অতীতের রেকর্ড ভাঙছে। নারায়ণগঞ্জের প্রেক্ষাপট দিয়ে আমরা তা বুঝতে পারি। তাই মানুষের আতংকের হারও বেশি।
গুম-খুনের নাম উঠলেই যে দিকটি সামনে চলে আসে তা হল সমাজে ঘুণ ধরে গেছে। মানুষ এখন আসলে মানুষ নেই। সে হয়ে পড়েছে স্বার্থপর বস্তুবাদী। মানুষ অন্যের বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়াবে কই সে নিজেই অন্যের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক আস্থা ভালবাসা বিলীন হয়ে গেছে। একটা যুদ্ধ-যন্ত্রের যেমন কোন অনুভব অনুভুতি নেই- অবিরাম ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে থাকে, মানুষও তেমনি হয়ে গেছে। সমাজের কল্যান, মানুষের কল্যান ভাবনা কাজ করছে না। ফলে সমাজ এক অমানবিকতার ষ্টেজ অতিক্রম করছে। যেখানে মানবিকতা মূল্যবোধ মূল্যহীন জড়ে রূপান্তরিত হয়েছে। মানুষের এই সমাজদর্শন যে সমাজের সুষ্ঠ বিকাশের অন্তরায় তা আবারো ফুটে উঠেছে হালজামানার গুম-খুনের মধ্য দিয়ে।

গুম-খুন নিয়ে প্রথমেই মাথায় যা আসে তা হল-প্রথমত আপনি কিভাবে গুমখুনের বিষয় দেখছেন তার উপর নির্ভর করছে আপনি কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। নারায়ণগঞ্জের বিষয়ে দেখলাম র্যারবে রদবদল করে ও কয়েকজনকে চাকরীচ্যুত করে বিষয়টির একটা প্রাথমিক সমাধান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতেই সব হয়ে যায়। আমরা অতীতে দেখেছি গুমখুনের বিষয়গুলোতে সচরাচর মামলার অগ্রগতির বদলে মামলাই গুম হয়ে যায়। আর সেটা সম্পন্ন হয় রাজনৈতিক বিবেচনার কারনে। নুর হোসেনরা এর আগেও খুন খারাপি করেছেন। কিন্তু তারা রাজনৈতিক বিবেচনায় ছাড় পেয়ে গেছেন। আবার যাকে(নজরুল) খুন করা হল সেও নাকি খুনের আসামি। তাহলে খুনের আসামি কি করে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় তা আমরা দেরিতে হলেও বুঝতে/জানতে পারছি। তাই দলীয় বিবেচনার গ্যাঁড়াকলে হারিয়ে যাওয়া মামলাগুলো নিয়ে আমরা উচ্চবাচ্য করতে চাই না। এটাই আমাদের স্বভাব। আমরা মনে করি যখন যা হচ্ছে তা প্রকৃতির নিয়মেই হচ্ছে। এতে মানুষের কি করার আছে। দলীয় বিবেচনার ধারণা যে শুধু আসামির ব্যাপারে তা নয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগেও যে বড় দলীয় প্রভাব রয়েছে তা বোধকরি কারো অজানা নেই। কেননা সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে যাকে র্যায়বের অধিনায়ক বানানো হয়েছে- জানা গেছে সে আওয়ামি লীগের একনিষ্ঠ লোক। তাই তার উপর ভরসা করা যায় বলে মনে করা হয়েছে। এহেন দলীয় বিবেচনার কবল থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই কিনা তা আমরা ভেবে দেখিনি। ফলে এটা আমাদের কাছে বারে বারে নতুন আঙ্গিকে দেখা দেয়। প্রথমেই যে প্রশ্নটা মাথায় আসে যে – দলীয় বিবেচনা আমি কেন করি? এতে খারাপ কি আছে? কিন্তু আপনি কি ভেবে দেখেছেন আপনি যাকে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দিলেন আদৌ সে কি তার যোগ্য? তার আগে কি কোন ব্যক্তি নেই? সে কি তার চেয়ে দক্ষ ও চৌকস নয়? ব্যক্তি যখন শুধুমাত্র দলের ফেবারে নিয়োগ লাভ করে তখন তার মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা ও সর্বেসর্বা ভাবটা চলে আসে। ফলে তার জবাবদিহিতার বিষয় দুর্বল বলব কি একেবারে নাই হয়ে যায়। সে ভেবে নেয় সে যা করবে দল পেছন থেকে তার শেল্টার দিবে। সেটাই আমরা দেখলাম নারায়ণগঞ্জ ইন্সিডেন্টে।

নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় আমরা আরও দেখলাম প্রধান দুই রাজনৈতিক দল পরস্পরকে দুষছে। এটাতে যে কি ফায়দা আসলে তারাই ভাল বলতে পারবেন। কেননা যেখানে আগে প্রকৃত আসামি খুঁজে বের করা দরকার সেটা বাদ দিয়ে তাদের ড্রামা জাতিকে ব্যাপক বিনোদন দিল। জাতিও সেটাই খাইল। যখন সন্ত্রাসী নুর হোসেনদের ধরার জন্য শুরুতে অভিযান দরকার ছিল সেখানে এক সপ্তাহ পর তা করা হল। ফলে তারা পালানোর সুযোগ পেয়ে গেল। এর জন্য কারা দায়ী? নুর হোসেনদের মাদকের ব্যবসার হদিস পাওয়া গেল তাদের পালানোর পর। এখানে আপনি কি বলবেন? আপনি যদি ভোটের প্রয়োজনে সঙ সেজে বসে থাকেন যাতে কেউ আপনার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন না তোলে তাতে কি আপনি দেশদ্রোহী হিসেবে ধরা পরবেন? যাদের বালখিল্যতার কারনে প্রকৃত অপরাধীরা পালিয়ে যাবার সুযোগ পায় তাদের আপনি কিভাবে বিচার করবেন? আপনি কি সত্যিই পারবেন তাদের বিচার করতে। পিলখানায় বিডিয়ার হত্যাকান্ডেও অপরাধীদের রাতের আধারে পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। কই সেই সব অপরাধীদের কি ধরতে পারছেন? না পারেন নাই। তারা সহি সালামতে পালিয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন মামলার আসামিরাও সহি সালামতে পালিয়ে গেছেন। তাই তাদের বিচার হবে না। এই বিচার নিয়ে বেশ কিছুদিন তাল বাহানা চলবে। তারপর আবার কোন নতুন ইস্যু এসে সেটাকে বাসি করে দেবে। শেয়ারবাজার, হল্মার্ক, বিসমিল্লাহ কেলেঙ্কারি, ইলিয়াস আলী গুমের বিষয় গুলো এভাবেই বাসি হয়ে গেছে। এসব বড় বড় মামলা গুলো নিয়ে অতীতে এরকমই মঞ্চায়ন হয়েছে।

প্রশ্ন আস্তে পারে দলীয় বিবেচনার কিভাবে সমাধান করব। কিন্তু দলীয় বিবেচনা মানেই খারাপ নয়। একজন যোগ্য লোককে বিবেচনায় আনা অন্যায় নয়। অযোগ্যকে আনা অন্যায়। কিন্তু আমরা বলতে চাই মূল সমস্যা অন্যখানে। সমাজের এখন সবচেয়ে বেশি যে শূন্যতা অনুভূত হচ্ছে তাহল আদর্শের শূন্যতা। মানুষ আদর্শ শূন্যতায় দিক্বিদিক শূন্য। ফলে তার দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে নানামুখী ক্রাইম। এর কারনে ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে সমাজ ও সভ্যতা। পুঁজিবাদী সমাজে মানুষ যখন অর্থের মোহে ছুটাছুটি করে তখন তার ভিতর বস্তুগত কামনা-বাসনা প্রবল আকারে দেখা দেয়। নিজের আত্মশুদ্ধি সেখানে উল্টানো জগত চেতনার মত মনে হয়। যেখানে মানুষ সমাজের সামগ্রিক স্বার্থে বিলীন হবে- উল্টো নিজের স্বার্থে সমাজকে দুর্যোগে নিপতিত করছে। পুঁজিবাদ এই ধরনের ব্যক্তি বোধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় না। ফলে এই ধরনের সমাজে খুন-গুম-ধর্ষণ স্বাভাবিক ঘটনায় পরিনত হয়। ব্যক্তির ইচ্ছা- আকাঙ্ক্ষার মুল্য দিতে গিয়ে সমাজ জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
আমরা এখন ভাবতে পারি এর উত্তরন কি আদৌ সম্ভব না? অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু একটা দাবি আছে। সেটা হল জনগনের প্রসংগ। আমার জনগন কি সচেতন? আমরা দেখেছি একজন লোক দুর্নীতিগ্রস্থ। আবার সেই লোকই যখন নির্বাচনে দাড়ায়- সেও নির্বাচিত হয়ে যায়। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি জনগনের সচেতনতার দৌড় কতটুকু। ঘুরে-ফিরে খুন-গুমের মত কর্মকান্ড গুলো করেই এই সমস্ত নির্বাচিত দুর্নীতিবাজরা। বিষয়টা এমন নির্বাচনের আগে এরা ব্যাপক টাকা খরচ করে, সন্ত্রাসী পোষে। নির্বাচনে জিতে ঐ টাকা উশুল করে। এখানেও ঐ সমস্ত সন্ত্রাসীদের প্রয়োজন পড়ে। কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়া আগের জামানায় দেখছিলাম। যখন পাকিস্তানি সামরিক শাসন ছিল। ৬৯ এ গনঅভ্যুত্থান হয়েছিল। এমন কি ৯০ এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনও হয়েছিল। কিন্তু এখন কই? কেউ তো এখন নিজের জানমাল নিয়ে আগায়ে আসে না। ফেরি দুর্ঘটনায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে দক্ষিন কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। আমাদের এখানে কোন ব্যর্থতার দায়ভারও কেউ নেন না। এত বড় একটা রানা প্লাজা ধ্বসে গেল, ১১৩৫ মানুষ মরল- তবুও কেউ তার দায়ভার নিয়ে পদত্যাগ করল না। উল্টো শ্রমিকদের কল্যানে উঠানো ১০৫ কোটি টাকা গুম হয়ে গেল। জনগন যেখানে ঘুমন্ত সেখানে সবই সম্ভব।
৩টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×