somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেমোপাখ্যানঃ পিলসুজে বাতি জ্বলে মিটিমিটি

০৫ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দরজাটা ভেজিয়ে সটান শুয়ে ছিলাম। পশ্চিমের জানালাটা অবশ্য খোলা! অনেকদিন পর সামান্য অবকাশ জুটল। নানান কথা ভেবে তাই সময়টাকে কাজে লাগানো! ভাবতে আমার বরাবরই ভাল লাগে। এমনিতে তো চিন্তা-ভাবনার সুযোগ কম। ব্যস্ততা আমায় দেয় না অবসর। কাজে-অকাজে কাটছে প্রহর!

এমন সময় সে আমার ঘরে এল। কোথা থেকে এল? আর কীভাবে এল? সে তো আমার বসতি চেনে না! হাজারো প্রশ্ন উঁকি দিল মনে। কিন্তু কোন প্রশ্ন করা হল না। এসব প্রশ্ন অবান্তর। সে যে এসেছে এটাই বড় কথা! আর সব তুচ্ছ!

অন্ধকারে বাইরে তাকিয়ে আছি। বর্ষণ শুরু হয়েছে পুরোদমে, সাথে দমকা বাতাস। রাস্তাঘাটে পানি জমে গেছে। ছোটখাটো খালের মত! যদিও চোখে দেখা যায় না, অনুমান করছি। এ অঞ্চলটায় সামান্য বর্ষণেই বৃষ্টি জমে যায়। হাঁটু পর্যন্ত কাপড় তুলে পথ চলতে হয়। বড্ড বিচ্ছিরি কান্ড!

সে আমার শিয়রে এসে বসেছে, হাত দিয়েছে কপালে! আলো-আঁধারিতে বুঝলাম তার হাতটা সামান্য কেঁপে ওঠল। ঠোঁট কাঁপছে! কিছু কি বলবে না? এভাবেই বসে থাকবে? অবশ্য এগুলো আমার দেখা কিংবা বোঝার ভুল হতে পারে। ইদানীং চোখে কম দেখছি, অনেক ভুল ভাবছি। যা হওয়ার তা হয় না, যা না হওয়ার তাই হয়ে থাকে। ব্যাপারটা এমন, "অভাগা যদ্যাপি চায় সাগর শুকায়ে যায়।"

সেদিন ক্লাসে গিয়েছি। হঠাৎ এক মেয়ে বলে উঠল, "স্যার, আপনার পুষ্প এসেছে।" কয়েকদিন তাকে দেখছিলাম না। অনেককেই তার কথা জিজ্ঞেস করতাম। ব্যাপারটা বোধহয় মেয়েটার দৃষ্টি এড়ায় নি।
পুষ্প একটু লজ্জায় পড়ে গেল মনে হয়। তার হাসিমাখা মুখটা মুহুর্তেই মেঘলা আকাশের মত কালো বর্ণ ধারণ করল। সে আমাকে বলল, "স্যার, আমাকে নাম ধরে ডাকবেন না। সবাই কী রকম ভাবে!"

অামি অনেকেরই খোঁজ-খবর নেই। কেন উপস্থিতি এত কম, কোন সমস্যা হয়েছে কী না জানতে চাই। এগুলো আমার এখতিয়ারভুক্ত না অবশ্য, নিজের গরজেই করি। ভাল লাগে। আমার খোঁজ কেউ নেয় না এই দুঃখবোধেই করি হয়ত। পুষ্প যেহেতু চাচ্ছে না ক্লাস তার নাম করি, ব্যাপারটা আপাতত ইস্তফা দিলাম।
বুঝতে পারি পুষ্প'র সাথে অনেকেই ঈর্ষা করছে। গন্ডগোল করছে এমন কাউকে যখন শাস্তি দিচ্ছি, কেউ কেউ বলছে, পুষ্পকে তো কিছু বলেন না, শুধু আমাদেরকেই দেখছেন। অথচ আমি সবাইকেই শাস্তি দিয়েছি। নাকি পুষ্প'র প্রতি সহানুভূতি একটু বেশি? সিনথিয়ার প্রতি সহানুভূতিও তো কম না। অথবা লিমা, ইয়াসমিন, কিংবা মানিকের প্রতি? কোথাও কি ভুল হচ্ছে আমার?

ছোটখাটো একটা অভিমানের পালা ঘটে গেল। আমি ওদের ক্লাস করানো বাদ দিয়ে দিলাম, যদিও আমার কষ্ট হচ্ছিল খুব! তবুও ঠাঁট বজায় রাখছিলাম। ওরা হৈচৈ কান্ড বাঁধিয়ে ফেলল। আমি না এলে আর ক্লাসে আসবে না মর্মে হুমকিও দিল। পালা করে অনুরোধ পর্ব তো চললই। আমি সহজে ধরা দিচ্ছিলাম না। ভাবখানা লক্ষ্য করছিলাম। ইতিমধ্যে পুষ্পও একবার অনুরোধ করে গেল। আমি রণে ভঙ্গ দিলাম।
আমি যখন আবার ক্লাসে গেলাম সবার সে কী উল্লাস! আমার চোখে পানি এসে গেল! যদিওবা কেউ কেউ বলেছে এসব লোক দেখানো। কারও প্রতি ওদের দরদ নেই। আজকের যাকে আপন বলছে, কালকেই তাকে ভুলে যায়। সত্যি বলতে কী, আমার আগমনে কেউ এত খুশি হতে পারে আমি ভাবতেই পারি নি। লোক দেখানো হোক আর বাস্তবিকই হোক। নিজেকে তো চিরদিনই মাকাল ফল মনে হয়েছে। যদিও ওরা বিভিন্ন সময়ে আমাকে বিরক্ত করেছে, কষ্ট দিয়েছে- আমি ভুলে গেলাম সব। আর আমি তো ওদের ছাড়া একমুহুর্ত টিকতে পারি না। ওদের সাথে অভিমান করে কেন নিজে নিজেই কষ্ট পাব? যাদের ভালবাসা যায় তাদের সাথে ছোটখাটো মান-অভিমান করা চলে, রাগ করে থাকা যায় না। ওরা দুষ্ট হলেও আমাকে ভালবাসে, আমিও ওদের ভালবাসি; এর বেশি বুঝতে চাই না। যারা আমাকে ওদের সম্পর্কে ভুল বুঝিয়েছে, আমি ধরে নিলাম ঈর্ষাপরায়ণ হয়েই এমনটা করেছে।

তার হাসিটা আমাকে বিমুগ্ধ করেছিল খুব সম্ভব প্রথম থেকেই। আমি অনুমান করতে পারি। সে হাসিটা সারা জাহানকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তার জন্য সহস্র প্রাণ ঝরে যেতে পারে। জড়ানো কথামালা ঠিক কবিতার মত! ইচ্ছে করে দিনরাত শুনি। কিন্তু সে সুযোগ কই? সে-ও আমাকে এড়িয়ে চলল! অবশ্য এড়িয়ে চলাটাই স্বাভাবিক। তার আর আমার মাঝে যে যোজন যোজন ব্যবধান। আমি নির্লজ্জের মত ব্যবধানটা ভাঙতে চেয়েছি। এটা তো অসম্ভব কিছু না! হতে তো পারেই! আমি ভুলে গেলেও সে ঠিকই ব্যবধানটা অনুধাবণ করেছে। তার ফেসবুক আইডি দেয় নি। মোবাইল নাম্বার চাওয়ার সাহসটা হয় নি অবশ্য। দ্বিধা ছিল, যদি না দেয়। মানুষের মন বড় বিচিত্র!
তার ছোটবোন প্রীতি পরীক্ষা দিচ্ছিল। হঠাৎ অফিস থেকে ডাক পড়ল তার। আমার কাছ থেকে অনুমতি করে সে অফিসে গেল, দেখলাম কোণার ঘর থেকে পুষ্পও গেল।
প্রবেশপত্র দেওয়া হয় নি ওদের। "কোন সমস্যা?" প্রীতি বলল, "বাবা অনেক দেনায় পড়ে আছেন। আমাদের ভর্তিও করানো হয় নি।"
"তোমাদের সংসারে কে কে আছে?"
"আমি, আপু, বাবা, কাকা-কাকী, দাদা-দাদী।"
"তোমার মা?"
"সাথে থাকেন না।"
"দেখা হয় না?"
"দুই ভাইকে যখন স্কুলে নিয়ে আসেন, নিয়ে যান তখন দেখা হয়।"
প্রীতির কথাবার্তা বেশ পরিণত মনে হল। সংসারের জটিলতা বুঝে গেছে এতটুকু মেয়েটা। পুষ্প কি ওর মত এতটা পরিণত? তেমনটা মনে হয় নি। নাকি নিজেকে আড়াল করে রাখে?
লক্ষ্য করেছি প্রীতিও ঠিকমত স্কুলে আসে না। দু'বোনই পড়ালেখায় পিছিয়ে। এবার সবকিছু পরিষ্কার হল। আমি কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করলাম। আমার সহমর্মিতা কি ওরা মেনে নেবে? প্রত্যাক্ষানের একটা আশঙ্কা উঁকি দিল মনে। দিন থেমে থাকল না, চলতেই থাকল। আর আমি অনেক কথা ভাবতে থাকলাম। এর মধ্যে পুষ্প'র বান্ধবী মিমকে বললাম পুষ্প সম্পর্কে আরও কিছু জানতে চাই। সে বলল বিস্তারিত জানাবে।
"তোমার নাচটা কিন্তু আমার ভাল লেগেছিল। কী দারুণ নাচ তুমি?" বাইরে তাকিয়েই কথাটা বললাম। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার কথা পাড়লাম, সে উপলক্ষ্যে সে নাচার প্রস্তুতি নিয়েছিল।
"কোন কথা বলছ না যে?" বলে ও যেখানে বসেছিল সেখানে তাকালাম। কোথাও কেউ নেই। পুরো ঘরে সুনসান নীরবতা। পিলসুজে বাতি জ্বলছে মিটিমিটি। আমি এতক্ষণ কার সাথে কথা বললাম তাহলে? সবই কি আমার মনের ভুল? হঠাৎ খেয়াল হল শরীরে ঘাম জমে গেছে। সকালে বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলাম আজ। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছিল। জ্বরের ঘোরে এতক্ষণ অলিক কল্পনা করলাম?

১৯ বৈশাখ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
গাজীপুর।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×