তখন ময়মনসিংহ শহরে থাকি। প্রায় দিনই ত্রিশালে যাতায়াত করতে হয়। ক্যাম্পাসে এসে প্রতিদিন, বিশেষ করে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার এক-দু ঘন্টা আগে যে জায়গাটায় বসি, সেটা একটা দ্বীপের মতো। নির্জন জায়গা। হালকা বাতাস আসে। মাঝেমাঝে পাখিরা কিচিরমিচির ডাকে।
অনেক গাছপালা। সেগুলোর যে কোন একটায় হেলান দিয়ে পড়ালেখা করি। পড়তে ভালো না লাগলে হালকা গানও করা যায়। গান বলতে "সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে", "শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে", "চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে", "যখন এসেছিলে অন্ধকারে চাঁদ উঠে নি সিন্ধুপারে", "তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি"- এসব গান। দুপুরের দিকে এসবই সই। আর মন খারাপ থাকলে "যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে", "হে গোবিন্দ রাখো চরণে", "শূন্য এ বুকে পাখি মোর ফিরে আয়", "খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশুর আনমনে"- জাতীয় গান। এসব গান গাইলে নিজেকে হালকা লাগে। মাঝে মাঝে হতাশা ভর করে অবশ্য।
প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখি। খোলা আকাশ দেখি। মনোমুগ্ধকর জায়গাটা কয়েকদিনের মধ্যেই আমার অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠলো। একদিনের জন্য না গেলে ভালো লাগে না একদম।
একদিন বাস থেকে নেমেই দ্বীপের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। কিন্তু দ্বীপ খুঁজে পেলাম না। গতকালও এলাম অথচ আজ নেই? লাপাত্তা হয়ে গেল নাকি? বিস্মিত হলাম খুব।
কয়েকজনকে জিগ্যেস করে জানতে পারলাম একদিনের মধ্যেই বনটা উজাড় করে ফেলা হয়েছিলো, আর জায়গাটা রাতারাতি এমনভাবে ভরাট করে খেলার মাঠ বানানো হয় যে বুঝার উপায় নেই এখানে একটা দ্বীপের মতো ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৯