somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আট বছর আগের একদিন

০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজীব নূর, টারজান ০০৭ কিংবা বিচার মানি তালগাছ আমার" নামের ব্লগারদের মতো আমার মাথায়ও কনসেপ্ট গিজগিজ করে। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, কিছুই লিখতে পারি না; শুধু দুশ্চিন্তা করতে থাকি। এই যেমন এখন একটা পোস্ট লিখবো অথচ লেখা বেরোচ্ছে না, কোনভাবেই বেরোচ্ছে না। দুদিন ধরে প্রচন্ড মাথাব্যথায় মরার জোগাড় (মলম, ওষুধপাতি কিছুতেই কাজ হচ্ছে না)। অবশ্য মাথাব্যথায় কেউ মরে কী না সেটাও গবেষণার বিষয়। শুধু শুধুই ভোগান্তি।

অনেকদিন ধরেই ভাবছি একটা বিশেষ বিষয়ে লিখবো। এটা একটা ভ্রমণ কাহিনী। শিরোনামও ঠিক করে রেখেছি তিমির হননের কবি জীবনানন্দ দাশ এর একটা বিখ্যাত কবিতার নাম থেকে ধার করে। কবিতাটা হলো "আট বছর আগের একদিন"। ঘটনাটা ২০১০ সালের নভেম্বর এর ২ তারিখের। ২০১০ থেকে ২০১৮- আট বছর। শিরোনামটা মনে হয় যুতসই।

বন্ধু রাতুলকে সাথে নিয়ে রাজশাহী গিয়েছিলাম ভর্তি পরীক্ষা দিতে। পরীক্ষা দিয়ে ময়মনসিংহে ফিরবো অথচ ময়মনসিংহের কোন বাস নেই। সন্ধ্যে নামছিলো তখন। আমরা বিআরটিসির বিশেষ বাসে করে ময়মনসিংহ থেকে রাজশাহী গিয়েছিলাম।
সেদিন কেন জানি বাস ছিল না। ঢাকা যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে ময়মনসিংহে আসতে হবে।

আমি ভাবলাম ট্রেনে গেলে কেমন হয়? রাতুল আমার প্রস্তাবে সায় দিলো। বাসস্টপেজ থেকে রেলস্টেশন কাছেই। হাঁটা দিলাম। পৌঁছুতে পাঁচ মিনিট লাগলো।

রাজশাহী থেকে ময়মনসিংহের সরাসরি ট্রেন নেই। প্রথমে ঢাকায় যেতে হবে। উপায়ান্তর না পেয়ে ট্রেনের টিকিট কাটতে গেলাম।

সিট নেই। স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটতে হবে। তাই কাটলাম। আমাদের ট্রেন আসবে সেই ১১:৪৫ এ। দীর্ঘ অপেক্ষা।

হাঁটাহাঁটি চললো অনেকক্ষণ। অর্থী, সীমা, ইফতি নামের তিনজনের সাথে পরিচয় হলো। তারাও ঢাকার যাত্রী। অর্থী আর সীমার বাড়ি খুলনা। ইফতির বাড়িটা কোথায় ঠিক মনে নেই।

ট্রেনে আমরা একই বগিতে ওঠলাম। সবাই স্ট্যান্ডিং যাত্রী। এতদূর কি আর দাঁড়িয়ে যাওয়া যায়? পত্রিকা কিনে নিলাম বসার জন্য, কিছু শুকনো খাবারও; পথে যদি খিদে পায়।

আমাদের সাথে ত্রিশ-বত্রিশ বছর বয়সী এক মহিলাও ওঠেছেন, সাথে তার আট-দশ বছর বয়সী এক বাচ্চা। উনার বাপের বাড়ি রাজশাহীতেই। স্বামী ব্যস্ত থাকায় বাচ্চাকে নিয়ে একাই ঢাকায় ফিরছিলেন।

ট্রেন ভর্তি মানুষ। দম ফেলার ফুরসত নেই। আমরা যখন বসে আছি, গল্পগুজব করছি এমন সময় মহিলা বললেন, বাথরুমে যাবো। কী একটা অবস্থা! এত মানুষের ভিড় ঠেলে কেমনে সামনে যাই? অবশ্য মহিলা আগেই বলেছিলেন উনি অসুস্থ।

তিন-তিনবার বাথরুমে নিয়ে গেলাম। আমার শরীরের অবস্থা কাহিল হয়ে গেল। লোকজন নানা কথা বলছিলো। অসুস্থ মানুষ নিয়ে কেউ এত ভিড়ের মধ্যে আসে?

হঠাৎ মহিলা হাঁপানি শুরু করলেন, খিঁচুনীও শুরু হলো। দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে। বড়দের পরামর্শে মুখে শক্ত কাগজ গুঁজে দেওয়া হলো, হাত-পা-বুক মালিশ করা হলো।
কোন উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। সারাদিন মনে হয় কিছু খান নি। শুকনো খাবার খাওয়ার সময় উনাকে সাধা হয়েছিলো। নিজে খান নি, ছেলেকে খাইয়েছেন। সারাদিন না খাওয়ায় শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়লো। উনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন।

শেকল টেনে ট্রেন থামানো হলো ডাক্তার-বৈদ্য কিছু পাওয়া যায় কী না এই আশায়। কিছু পাওয়া যায় নি। প্রত্যন্ত এলাকা- এখানে ডাক্তার পাবে কোথায়?

আমরা হতাশ হয়ে বসে রইলাম। মহিলা মরেই গেল? লাশ কোথায় নেবো, বাচ্চাটারই বা কী হবে? লোকজন ভেবেছিলো আমি মনে হয় উনার আত্মীয়। পরে যখন দেখা গেল আমি কেউ না, তখন ওরাও হতাশ হলো।

পরিশিষ্টঃ মহিলা মারা যান নি। বিমানবন্দর এর কাছাকাছি আসতেই উনি জ্ঞান ফিরে পান এবং বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে যান। আমরাও এখানেই নামি। অর্থী, সীমা আর ইফতি নামে কমলাপুর রেলস্টেশনে।

বিঃদ্রঃ এ ভ্রমণ নিয়ে উপন্যাস আকারে লিখেছি, শিরোনাম দিয়েছি "একরাত্রির গল্প"। সময়-সুযোগ পেলে কোন একদিন হয়তো প্রকাশ করবো। এ ভ্রমণ কাহিনী ছিলো আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় কাহিনী।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×