somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফল চাষে পাঁচ বছরে কোটিপতি নাটোরের আতিকুর

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাত্র পাঁচ বছরে ফল চাষে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন নাটোরের কৃষি উদ্যোক্তা যুবক আতিকুর রহমান আতিক। পেয়ারা চাষের মাধ্যমে শুরু হলেও তার খামারে এখন রকমারী আম, কলা, লেবু, ড্রাগনসহ নানা ফল শোভা পাচ্ছে। বাগানের পাশেই গরুর খামার আর শত শত বাহারী কবুতর।
ছয় বিঘার খামারের পরিধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড়শ বিঘায়। সারা বছরে প্রায় ৬০ লাখ টাকার ব্যবসা। সফল কৃষি উদ্যোক্তা আতিক এখন অন্যদের উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করছেন। তিনি তার কাজের স্বীকৃতি পেয়েছেন ২০১৪ সালে দেশের সেরা ফল চাষি হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার মাধ্যমে।
১৬ থেকে ৩০ জুন, ২০১৫ জাতীয় ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষ উপলক্ষে ঢাকার খামার বাড়িতে সম্মিলন ঘটে দেশ সেরা ফলচাষিদের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই আয়োজনে কৃষি সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ নাটোরের আতিকুর রহমান আতিকের হাতে তুলে দেন ক্রেস্ট, সনদপত্র আর প্রাইজমানি। জাতীয় পর্যায়ে ২০১৪ সালে ফলদ বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যায় কৃতিত্বেরস্বীকৃতি স্বরূপ ব্যক্তি পর্যায়ে নাটোরের আতিক দেশ সেরা।
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার সেনভাগ গ্রামের কৃষক আবুল হোসেনের ছেলে আতিকুর রহমান আতিক। উচ্চ মাধ্যমিকের পর ডেন্টাল কোর্স শেষ করে বেকার জীবনে দেখা দেয় হতাশা। এ সময় টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কৃষি বিষয়ক প্রতিবেদন দেখে পরামর্শ নেন কৃষি বিভাগের। বাড়ির সকলের আপত্তি উপেক্ষা করে ছয় বিঘা জমি ইজারা নিয়ে ২০০৯ সালে গড়ে তোলেন পেয়ারা বাগান।
এরপর থেকে এই কৃষি উদ্যোক্তার শুধুই সামনে এগিয়ে চলা। সাফল্যের এই গতি ধারায় আতিক তার ফলের বাগানকে সম্প্রসারিত করেছেন একশ ৫০ বিঘায়। শত শত যুবক ও আগ্রহীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করছেন।
আতিক শুরু করেছিলেন থাই-৩ জাতের পেয়ারা দিয়ে। স্থান ভেদে একর প্রতি এর গড় ফলন প্রায় দুই টন। খরচ বাদে মুনাফা অন্তত ৬০ হাজার টাকা। চারা লাগানোর ১৮ থেকে ২৪ মাস পর থেকে সারা বছর ফলন পাওয়া গেলেও বর্ষা মৌসুমে অধিক ফলন হয়। আতিকের বাগানের পেয়ারা প্রতিদিন ঢাকায় যাচ্ছে। পরিমাণে ২০ থেকে একশ মণ পর্যন্ত।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের কিরন ট্রেডার্স ও রুপসী ভান্ডারের মতো বৃহৎ আড়তদার আতিকের খামারের পেয়ারার নিয়মিত পাইকারী ক্রেতা। কিরন ট্রেডার্সের মালিক কিরন খান বলেন, সুমিষ্ট ও সুস্বাদু হওয়ায় প্রান্তিক ক্রেতা পর্যায়ে এই পেয়ারার চাহিদা ব্যাপক।
আতিক দাবি করেছেন, তার খামারে উৎপাদিত পেয়ারা ও অনান্য ফল কীটনাশক ও সব রকমের রাসায়নিক মুক্ত। তিনি বলেন, গাছের বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য মাটিতে জৈব সার এবং পোকামাকড় দমনে ব্যবহার করি সেক্্র ফেরোমেন হরমোন প্রযুক্তি। ক্ষতিকারক মাছির সংক্রমন থেকে রক্ষা পেতে গাছের পেয়ারাগুলোকে পিপি পলিথিনে মুড়ে দেয়া হয়। সারা দেশে ফলের রাসায়নিক দূষণের আতংক সংবাদে আতিকের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় এবং ক্রেতা পর্যায়ে প্রশান্তির।
নাটোর শহরতলীর দিঘাপতিয়ায় স্থাপিত নতুন খামারে নতুন জাতের টেপ কলমের পেয়ারা লাগিয়েছেন আতিক। মাত্র এক বছরের মাথায় এর ফলন পাওয়া যায়। এই বাগানেই লাগিয়েছেন ২৪০টি ড্রাগন গাছ। আছে স্ট্রবেরী। ১২বিঘার প্লটে খেরসা, আম্রপালী ছাড়াও লাগিয়েছেন নতুন প্রজাতির বারি-৪ জাতের আম গাছ- যার ফলন বর্ষা শেষে। ১০ বিঘার প্লটে আছে কলম্ব, সুগন্ধি ইত্যাদি জাতের লেবুর গাছ। খামার সংরক্ষণে চারিদিক দিয়ে লাগিয়েছেন এলাচি ও কাগজী লেবুর তিন হাজার গাছ।
প্রাণ শক্তিতে ভরপুর আতিক বলেন, ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে আমি খামারে যাই। তত্ত্বাবধান করি খামারে নিয়োজিত ৬৫ জন মানুষের কর্মযজ্ঞ। আতিকের বাগানে ৩৫ নারী শ্রমিকসহ মোট ৬৫ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রত্যেকের মাসিক পারিশ্রমিক পাঁচ হাজার ৫০০টাকা। ফল ওঠার মৌসুমে ব্যস্ত সময়ে আরো যোগ হয় মৌসুমী কর্মজীবী- যাদের বেশির ভাগ স্থানীয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। আতিক আরো বলেন, খামারে আমার কাজে নিয়মিত সহযোগিতা দিয়ে থাকে কৃষিতে অনার্স পড়–য়া ছোট বোন আরিফা।
আতিক শুধু ফল নয়, ফলের চারা তৈরি ও বিপণন করেন। সফল উদ্যোক্তা হয়ে নিজেকে গুটিয়ে না রেখে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে অসংখ্য উদ্যোক্তা তৈরি করে যাচ্ছেন। নাটোর শহরতলীর বড় হরিশপুর এলাকায় মনির হাসান আতিকের কাছ থেকে সাহস ও শক্তি নিয়ে গড়ে তুলেছেন সাড়ে সাত বিঘার পেয়ারা বাগান। সূদুর ঝালকাঠি জেলার নবগ্রামে হানিফ খান আতিকের কাছ থেকে চারা ও পরামর্শ নিয়ে আট বিঘার পেয়ারা বাগান করেছেন তার এলাকায়। এই তালিকায় আরো রয়েছেন, ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক কামাল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি ছারখানায় ১০ বিঘার পেয়ারা বাগান।
বৈচিত্রে অনন্য আতিক বাড়ির পাশে গড়েছেন গরুর খামার। আর দুইশ’ জোড়ার বাহারী সৌখিন কবুতর। আতিকের বাড়িতে রান্না হয় বায়োগ্যাসে। কাঁচামাল গরু আর কবুতর খামারের গোবর আর বিষ্ঠা। এর ব্যবহার জৈব সার হিসেবেও। আতিক বলেন, কবুতর খামারেই আমার বিনিয়োগ ২২ লাখ টাকা। কৃষি খামার থেকে বছরে আতিকের আয় আসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. সাইফুল আলম বলেন, আতিক শুধু নিজেকেই সমৃদ্ধ করেননি, সমৃদ্ধ করেছেন নাটোরকে। সারাদেশের মানুষের জন্য তিনি একটি দৃষ্টান্ত। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. আলহাজ উদ্দিন আহম্মেদ বাসসকে বলেন, আতিকের মতো সমৃদ্ধ কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হলে দেশ এগিয়ে যাবে অনেক দূর।
সূত্র: বাসস
লিংক:

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×