somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগন্তুক

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগন্তুক
রায়ান নূর

ঘরের দরজায় কড়া নড়ছে অবিরত ৷ এ অসময়ে ভরদুপুরে কে এল আবার? সকাল থেকে হাড়ভাঙা খাটুনির পর এতটুকু বিশ্রাম নেই ৷ কে জানে নতুন কোন খদ্দের-টদ্দের হবে ৷ যে দিনকাল পড়েছে তাতে একটু শান্তিতে থাকার জো নেই ৷
‘ আরে ঐ বকুল, দেখতো কে এল আবার এই ভরদুপুরে? ’
দুপুরের কড়া রোদের তাপে বাড়ির ছাউনির টিনগুলো ঝকঝক করছে ৷ দূর থেকে দেখলে ভদ্রলোকের কোন বাড়িই মনে হবে ৷ বাড়ির পাশে একটি পচা নর্দমা,কতদিন হল নানা অরুচিকর আবর্জনায় ভরপুর ৷
তিনটি মাত্র ঘর ৷ পাশের ঘর থেকে গানের গলা শুনা যায় গুনগুন করে ৷
‘ যাই, বুড়ী মাগী, দুপুর বেলায়ও জ্বালিয়ে খাবে দেখছি ’
‘বাবু-টাবু হলে ফেরাবি না,যে দিনকাল পড়েছে ! সতীপনা অনেক হল ৷’
‘ যাই, কী জ্বালাতন ! বাঁচতে দিবেনা দেখছি ৷’

বুড়ী আবার ঝিমিয়ে পড়ল ৷ দরজা খুলতেই টিনের আলোর ঝলকানি পেয়ে বকুল কিছুটা অপ্রকৃতস্থ হয়ে যায় ৷
সেদিনের কথা ৷ বকুলের যৌবন এসেছে পদ্মপাতার একফোঁটা বৃষ্টির মত ৷ হারিয়ে গেছে চৈতন্য ৷ কেবল একটা ভাবনায় মন চড়ই পাখির মত একতলা থেকে লাফিয়ে বহুতলায় উঠে ৷ সে নিজেই জানে না কি ভাবে সে? হাত-পা গুলো সুস্থ্যসবল খরগোশের মত লাফিয়ে বেড়ায় দীঘিতলা থেকে বাঁশঝাড় পর্যন্ত ৷ মনটা ছুটে বেড়ায় রাজকুমারের কোন গোপন অভিসারে এতটুকু আশ্রয়ের আশায় ৷ মন যত কল্পনায় ডানা মেলে বন্দীত্বের বেড়া ততই নিকটে আসে ৷
অরণ্য সেদিন এমন করেই তার কাছে এসেছিল ৷ এতটুকু ভুল হয় নি বকুলের ৷ তারপর কত হাসি,কত কথা ৷ প্রাণটা তখন চড়ুইয়ের গড়া বাসায় প্রবেশ করে নি ৷ সামান্য রঙমিস্ত্রির কারুকাজে যাদু থাকে? অবিশ্বাস্য,হতেই পারে না ৷ কিন্তু তাই হয়েছিল ৷ বকুলের মত মেয়েকে কাছে পাবে তা কোনকালে ভাবতে পারে না অরণ্য ৷
তিনমাস হয়েছে তাদের ঘরসংসার করা ৷ ঈদ উপলক্ষে বকুল নিজ বাড়িতে এল ৷ লুকিয়ে রাখল সইদের কাছে না বলা কথাগুলো ৷

জয়হাটে এই বুড়ী মাগী কেমন? বকুল বুঝতে পারে ৷ তাছাড়া শিপুবাবু কেন এত ছলচাতুরি করে এই বাসায় থাকল কেবল বুড়ীই জানে ৷ কদিন বাদে চলে যাবে আকাশের তারা গোনা শিখিয়ে, আর দোয়াতের কালি ফেলে সাদা কাগজ নষ্ট করবে, অথচ মনমতো কিছুই আঁকবেনা বকুল কখনো কল্পনা করে নি ৷
বকুলের আজও মনে পড়ে সেই রাত্রের কথা ৷ শতচেষ্টায় ভুলতে পারে না ৷
কি ঝড়? গাছের ডালগুলোর এমন শব্দ আর অস্থির নড়াচড়া,শেষপর্যন্ত একতলার টিনের ছাউনির মিনারের উপর আছড়ে পড়তে শুরু করল ৷ বকুল ভয়ে অস্থির ৷ বাতাসের সে কি গর্জন যেন কানে তালা লেগে যাবে ৷ গায়ের চামড়াগুলো মনে হয় ছিড়ে ফেলবে ৷
ঝড় শেষ হয় ৷ রাতে পূর্ণিমার চাঁদ ওঠে ৷ ভ্রমর জেগে উঠে মধুরসে ৷ পাশে পিঁপড়েগুলোর আনাগোনা চলছিল শেষরাতে পর্যন্ত ৷ রাত বিদীর্ণ করে লাল সূর্য ক্রমশ সাদা হয়ে তার রুপালী আলো বকুলের ঘরের জানালায় ফেলল ৷ জানালার রড বেয়ে বেয়ে দুটো শিশিরের দানা নিচে মাটির ঢিবির মাঝে পিঁপড়ের একটি ছোট গর্তে তখনো পড়ছিল ৷

বকুল শহর থেকে বাড়ী ফিরেছিল ৷ তার বৈমাত্রেয় ভাইয়েরা খবর পেয়ে তাড়াতাড়ি ছুটে আসে আপদ দূর করার জন্য ৷ সমাজে এমন কলঙ্ক যেন ছড়িয়ে না যায় ৷ যদিও বোন তবু তাড়া পরিবারশুদ্ধ দরজায় খিল এটে বসে থাকে ৷ কত অনুনয় করল তবু তাদের পাষাণ হৃদয় একটু গললো না ৷ ভাইয়েরা আজ বউদের সাথে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে গলা মিলিয়েছে ৷
শহরে ঝিয়ের কাজ করে বোন এটা কি গৌরবের কথা? একবেলা খাবারও জোটেনা তার বাড়িতে ৷ যেদিন দরজার চৌকাঠ পেরিয়েছে সেদিনই তার মরণ ৷ এখন যে এসেছে তাকে কি কেউ ভালো চোখে দেখবে ৷
ভাইদের কত পায়ে পড়ল মাথা গোঁজার এতটুকু ঠাইয়ের জন্য ৷ কিন্তু কেউ তাকে বিশ্বাস করলো না ৷ প্রতিবেশীরা কানাকানি শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে ৷ পাশের বাড়ির একবুড়ী তো গলা ছেড়ে দিয়ে সব কীর্তন শুরু করেছে ৷
‘ এই মাগীকে বাড়ী তুললে জাতধর্ম সব যাবে ৷ মুসলমান কুলের এত কলঙ্ক,হাদীস-কোরান কি মায়ে শিখায় নি ৷ তবুও শহরে পয়সাওয়ালা বাবুদের উপর নজর পড়েছে ৷ ও কিছুতেই সিঁধে হবে না বলে রাখছি ৷ বয়স আমার কম হলোনা, অনেক দেখেছি ৷’
‘চুপ কর বুড়ী, তোর কাজ কর গিয়ে ৷ পেঁচাল পারার জায়গা পাস না ৷’
ছোটভাই বুড়ীকে থামিয়ে দিল এক গলায় ৷ বুড়ী তবু থামেনা, পাড়াময় কানাকানি শুরু করে দিল―রটালো কত কুৎসা ৷
‘ কি রে,খাওয়া-দাওয়া করেছিস ৷ তুই আয় ভিতরে ৷’
ছোট ভাইয়ের আস্পর্ধা দেখে বউয়েরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল ৷ ছোটভাই যখন নরম হয়েছে তখন বড় ভাই কিছুটা সায় দিল, কড়া কথা কিছু বলল না ৷
‘কাজটা কিন্তু ভালো করলে না ৷ তাড়াতাড়ি বিদায় কর ৷ অশান্তি আর সহ্য হয় না ৷’

বড় ভাইয়ের কথা আর বউদের গলা উপেক্ষা করে ছোট বলল,‘তোমাদের এত আপত্তি কোথায়?’বকুল কি চোর,ডাকাত না জন্তু ৷’
মেজো ততক্ষণে এসেছে ৷ এসেই তো রাগবাগ শুরু ৷ ছোট ঝাঙলার বাঁশ ভেঙে বকুলের দিকে তেড়ে আসল ৷ বড় ভাই আঁটকাতে গিয়ে ফাটা বাঁশের মাথা লেগে হাত কেটে ঝরঝর করে রক্ত বের হতে লাগল ৷
এত সাহস দেখে বড় বউ মেজো বউয়ের চুলের ঝুটি ধরে রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে ততক্ষণে ৷ ছোটবউ বড়ো বউয়ের পক্ষ নিয়েছে ৷ সে কম যায় কিসে?
মেজো ভাই আর স্থির থাকতে পারল না ৷ বাঁশটির এক ঘা বসে দিল ছোট বউয়ের মাথায় ৷ মাথা ফেটে রক্ত বের হতে লাগল ৷ তবু থামল না ৷ ছোট ভাই কোন দিকে সামলাবে ৷ ভাইকে সামলাবে না বউকে ৷
ক্রমেই মারামারি শুরু হয়ে গেল ৷ পাশের বাড়ির তমিজ বুড়া মারামারি থামাতে গিয়ে সেও কিল থাপ্পর খেল কয়েকটা, আর যায় কোথা!
গোটা পাড়া শুরু হয়ে গেল মারামারি ৷ প্রত্যেক বাড়ির কেউ না কেউ মার খেয়েছে একটু-আধটু ৷ তাই সবাই দুইপক্ষ হয়ে গেছে ৷
সন্ধ্যা নেমে আসল ৷ বকুল ভয়ে ঘরে জড়সড় হয়ে বসে আছে ৷
কে যেন এসে বকুলকে দরজা খুলে চড়লাথি মারতে লাগল, বেশি ভিড়ের মধ্যে দেখা গেল না ৷ ভাইয়েরা জানতে পেরে তিনজনে ছুটে আসল ৷
বকুলের জ্ঞান ফিরল অবশেষে ৷ বড় ভাই লুকিয়ে কারও মাধ্যমে বকুলকে ঘর থেকে বের করে গ্রামের বাইরে দিয়ে আসল ৷

রাতদুপুর হয়, ঝগড়া শেষ হয় না ৷ বুড়ীটাও কয়েক ঘা খেয়েছে তাই তার জ্বলন উঠছে ৷ এই বাড়ীর তিনভাই-তিনবউ একপক্ষ আর পাড়ায় দুইপক্ষ এই তিনপক্ষের ত্রিপক্ষীয় মারামারি শেষে এখন ঝগড়া চলছে ৷
সকাল হলে আর এক কারণ নিয়ে আর একদফা হল ৷ এতে গোটাকয়েক হাসপাতালে ভর্তি হল ৷
গাঁয়ে বিচার সালিসে মাতব্বর কাওকে কাওকে দুই এক থাপ্পর দিয়ে কোলাকুলি করে দিল ৷ আর বকলে খানিকটা নিজের খেয়ে পরের মোষ তাড়ার জন্য ৷
এই বিচার একপক্ষ মানলো না ৷ মেরে পার পেয়ে যাবে এতই সস্তা ৷ থানায় মামলা করবে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিল ৷ ওরাও যে মেরেছে সেই কথা আরেক পক্ষ যখন শুনিয়ে দিল তখন সবাই ঠান্ডা হল ৷

বকুলের সেই দিনের স্মৃতি ভুলতে পারে না ৷ শিপুবাবু তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে নর্দমায় ফেলে দিয়েছে বকুল তা বেশ বুঝতে পারে ৷ বুড়ী বড় বড় বাবুদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ইজ্জ্বত নিয়ে এভাবে খেলবে আর সেই টাকায় সেই বস্তির কয়েক লম্পট লোক ভাগ বসাবে এমন কথা ভাবতেই তার অন্তরটা পুড়ে খাক হয়ে যায় ৷
ঝিয়ের কাজ করত বকুল ৷ শিপুবাবু প্রায়ই আসত এই বাড়িতে ৷
নতুন জীবনের স্বপ্নে সে অনেক কিছু হারানোর পরও প্রশান্তি পেত ৷ বিয়ে করবে এমন আশ্বাসও দিয়েছিল ৷ কিন্তু নিয়তি তার সাথে খেলা করল ৷
শিপুবাবু এক কসমেটিক কোম্পানির রিপ্রেসেন্টিভ ছিল ৷ কয়েকমাসের জন্য বদলী হয়ে এসেছিল, একথা বুড়ী জানত ৷ টাকার লোভে বুড়ীর বিবেকবুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে ৷ যে প্রথম তাকে নিজের মেয়ের মত চুলের খোঁপা বেঁধে দিত, রান্না করে খাওয়াতো ৷ সে কিনা নিজের হতবুদ্ধিতে পাড়ায় দুষ্ট লোকের গোলাম ৷

‘ বকুল,কেমন আছ তুমি, ব্যবসা ভালোই চলছে তো ৷ রেট কেমন এখন?’

বকুলের গায়ে মুহূর্তের মধ্যে আগুন জ্বলে ওঠে ৷ চোখ দুটো দিয়ে বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গের মত জ্যোতি বের হয়, তবু তাকে শান্তভাবে বলে ৷
‘ তা তুমি শুনে কী করবে? আমাকে কি পতিতা ভাবো তুমি ৷’
‘ না,না ৷ তা হবে কেন? ঐ বুড়ী কি মিছেমিছি আমার কাছ থেকে টাকা নেবে ৷ তুমিও তো কম যাও না ৷’
‘ তাহলে তুমিও, তোমার ঘরে কি বউ নেই?’
‘ থাকলে কি আসি রসরাজ্যে ৷’
‘ তবে যে বিয়ে করবে বলেছিলে ৷ ’
‘ তোমাকে! হতেই পারে না ৷’

শিপুবাবু হাসতে থাকে আর বকুলের রাগের মাত্রা বাড়তে থাকে ৷ তপ্ত বালুতে ধান পড়লে যেমন খই বের হয় বকুলের অবস্থা তাই হল ৷
‘ লম্পট,বদমাশ,তবে মিছে মিছি ভালোবাসা ৷’
‘হুম ৷ জানো, বস্তির লোকেরা তোমার বাড়িতে ঢোকার সময় যখন আমার সকল টাকা কেড়ে নিয়েছিল তোমার নাম করে ৷ সেদিন ভুলেই এই বাড়িতে পা দিয়েছিলাম ৷ তখন তো জানতাম না এখানে এই কাজ হয় ৷ আর তুমি নিজেই.... ’
‘ কত টাকা নিয়েছিল? হাজার টাকা? কত....’
‘ রাখো ওসব, ঠাণ্ডা জল দাও ৷ এ লাইনে যখন লোকসান হয়েছে তো লাভের অঙ্কটা কম কিসে? সব শিখে ফেলেছি ?’

বকুলের আর চৈতন্য থাকে না ৷ সে নেশাগ্রস্ত উন্মাদ হয়ে যায় ৷ সবাই লাভ খোঁজে, সে কেন ক্ষতির মুখে পড়বে ?
পাশের বস্তির শুভ্রও আসত মাতাল হয়ে এ বাড়িতে ৷ সে প্রায়ই এখানে থাকত পাশের ঘরে ৷ বকুলকে কিছু বলার সাহস পেত না ৷ তার চোখ দুটো কেমন ক্ষুধাতুরের মতো লাগত ৷ তার চোখের ভাষা বকুল বুঝে উঠতে পারতনা ৷ বকুল কোন রাগারাগি করত না,কারণ তার উপরও বকুলের দূর্বলতা তৈরি হয়ে ছিল ৷ সে মাঝে মাঝে বলত, ‘ বকুল চল, দুজনে কোথাও চলে যাই, আর এখানে ভালো লাগে না ৷ ’

যার আশায় থেকে বকুল মালা গেঁথেছিল সে শিপুবাবু তার এই পথে নামার প্রথম খদ্দের তখন, ভরসা কার উপর ? রাগ হলেও বকুল অনেক কিছু করতে পারে কিন্তু সেই পাশবিক জন্তুতা বকুলের সব সময় জাগে না ৷ জাগলে তার সকল স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে যায় তখন প্রেম-ভালবাসাকে কামনার খোরাক বলতে মুখ তার এতুটুকু আটকে না, যে কাছে আসে তাকে আরো কাছে টানে ৷ কী দূর্বিসহ সে জীবন অভিজ্ঞতা! পশুর মত ছিড়ে খায় একে অপরকে ৷ কিন্তু শুভ্রকে দেখে শান্ত মনে হয় ৷ একটা বিড়াল ইঁদুর দেখলে শিকারের জন্য উন্মত্ত থেকে শান্তভাবে থাকে তার চোখ যেন সে কথাই বলে ৷
শুভ্রকে এতটুকু ভয় হয় না বকুলের, যত ভয় কিরণবাবুর কাছে ৷
হঠাৎ হঠাৎ আসে আর ছিড়ে খায় মাঁকরসার জালে আটকানো মশার মত ৷ এই তো কয়েকদিন আগেই এসেছিল ৷ কী অসহ্য সে রাত, কী পূর্ণ সেই প্রাপ্তি যেন তৃষ্ণার্ত বুকে একফোঁটা মধুর ছিটা ৷ মনে হলে সারা শরীর শিহরে উঠে,কাঁপতে থাকে জলভরা চঞ্চু ৷ ব্যকুল হয়ে উঠে শরীর-মন ৷ ভুলে যায় পৃথিবীর সকল নিয়ম কানুন আর মায়ার বাঁধন ৷ বিশ্বাস তাকে পীড়িত করে না ৷ খোদাকে নির্বিকার আখ্যা দিয়ে পাষাণের প্রত্যেক প্রস্থ গরম পানি দিয়ে ধৌত করে ৷ স্বয়ং দ্রষ্টা স্বেচ্ছায় অন্ধত্ব বরণ করেছে নইলে এই দৃশ্য তার সইবে কেন?

‘ব্রাণ্ডি আছেরে বকুল,গা টা গরম করি ৷’
‘আমরা কি ওসবের ব্যবসা করি, তাই থাকবে?’
‘বুড়ীকে বল দেখি,ওনি তো বস্তি পাহাড়া দেন ৷’

পকেট থেকে টাকা বের করতেই পাঁচশ টাকার কতগুলো নোট বের হয়ে এল ৷ তা থেকে বকুলকে তিনটা নোট দিল ছোট ব্রাণ্ডি নেবার জন্য ৷
বুড়ী বাইরে মতিকে দিয়ে দুনম্বরি একটা ও একটা অরজিনাল ব্রাণ্ডি এনে নিল ৷ যদি বাবু বুঝতে না পারে নকলটা চালাবে তাতে মতি আর বুড়ীর ভাগ ষোলো আনা কিন্তু বকুলের তাতে শূন্য ৷ বকুল এই রাস্তার মানুষগুলির খোরাক তাই বিনিদ্র প্রহরা ৷ মানবদেবতাদের তুষ্ট করে তার ভাগ শূন্য থাকে বরাবরই ৷
কিরণবাবু নিয়মমত ট্যাক্স নেন তিনি যে দারোগা ৷ তাছাড়া ভদ্রবাড়ীর কীর্তি ফাঁস হয়ে গেলে দাম কমে যাবে ৷ রাস্তার ভিখারীও আসন পেতে বসবে ৷ এমন সুন্দরীর মেয়ের অকল্যান কেউ চায় না তাই রাণীর আসনে বসায়ে তারা দরকষাকষি করে ৷

রাত লাগলেই শুভ্র আজ উন্মাদের মত ছুটে এল ৷ তার মুখে যেন সব কথা ফুরিয়ে গেছে ৷
‘কী হয়েছে রে শুভ্র ৷ তুই এত ঘেমে গেছিস ক্যান?’
‘আর বলিস না, নিজ চোখে দেখেছি ৷ কিরণবাবু !’
‘কিরণবাবু ! কী হয়েছে ?’

‘কে এল বকুল?’―পাশের ঘর থেকে শিপুবাবুর গলা শুনা যায় ৷
‘কে বকুল ওঘরে ৷’
‘শিপু, আস্তে কথা বল ৷’
‘তুমি আবার! সে দিন না কসম খেলে ৷’
‘চুপ কর ৷ ’

শুভ্র রাগে গরগর করে ৷ তার শিরাগুলো কাঁপতে থাকে ৷ বকুল ওঘরে যায় ৷ আসল ব্রাণ্ডি খেয়েই সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় যবনিকামোচন করে শিপু ৷ এলায়িতভাবে বকুল শুভ্রর কাছে আসে, মুখে কোন কথা নেই ৷ শুভ্রর দুচোখ জড়িয়ে আসছে ৷
‘ তুমি আবার কসম ভাঙলে ৷’
বকুল কোন কথা বলে না ৷ কেবল ঠায় মাথার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে ৷
‘বকুল কিরণবাবু যে মেয়েটির কথা বলেছিল সেদিন ৷ সে আত্মহত্যা করেছে ৷ ’

বকুল শুভ্রকে হাঁফ গ্লাস ব্রাণ্ডি খাইয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,‘যাবে?’
‘কোথায়,কখন ৷’
‘সকালে,বিয়ে করব ৷’
‘বিশ্বাস হয় না,পতিতার সংসার ! মরণ ’
বকুল কথার ঘা সহ্য করতে না পেরে হাঁফ গ্লাস ব্রাণ্ডি খেল ৷ বুকটা কেমন ক্ষণিকের তরে তেঁতে উঠল ৷
শুভ্রর চোখ মুঁদিয়ে আসলো,তাকাতে পারল না আর ৷ ডাকলো কয়েকবার―কোন সাড়া নেই ৷ বকুল ফিরে গিয়ে ব্রাণ্ডির বোতলটায় দেখে তার মুখে কোন সিল নেই ৷ তৎক্ষণাৎ বকুলের রঙিন জগতটাও কেমন মিলিয়ে গেল আকাশে তারার মত ৷ কেবল ঘোর অন্ধকার, বেচেরাগ!
ছোট অনেক কষ্টে খোঁজ করে এখানে এসে ডাক দিলো যখন পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ চলছিল ৷ বুড়ীকে জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠল,‘ও এক ছোড়ার সাথে পালিয়ে গেছে ৷ ওর নাম নেয়ার চেয়ে মরণ ভালো ৷ ছি,ছি ৷


১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×