somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিম্ভুত চতুষ্টয়ের অদ্ভুতুরের সব কাজ কারবার :|

০৫ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তখন আমরা প্রথম বর্ষে পড়ি, একদিন সন্ধ্যায় আমরা চার জন (আমরা চার জন খুব বন্ধু ছিলাম, এখনও আছি) সমাজ থেকে আমাদের জাহানার ইমাম হলে আসার পথের রাস্তার ধারে একটা আম গাছে উঠেছি, কাঁচা আম পাড়ার জন্য!
একটু একটু অন্ধকার হয়ে এসেছে, দিনের বেলা তো আর গাছে চড়া যায় না, তাই বাধ্য হয়ে সন্ধ্যা!
যাই হোক, মনে সুখে আম পারছি, সেই সময়ে দেখি অনেক গুলো গোলাপ হাতে নিয়ে পাঞ্জাবি পরা এক ভাইয়া সুখি সুখি মুখ করে হেটে যাচ্ছেন সমাজ বিজ্ঞান থেকে প্রীতীলতা হলের দিকে। তার গোবেচোরা প্রেমে গদগদ চেহারাটা দেখেই মনে হলো, একে একটু চমক দিলে কেমন হয় দেখি!

সেই ভাবা সেই কাজ, প্রেমিক সাহেব গাছে নীচে আসতেই ঝোড়ে সোড়ে একটা ডাল ধরে ঝাঁকি, আর তিনি "উরে গেছেরি" টাইপের একটা চিৎকার করে উল্টা দিকে দৌড়।

আতি কষ্টে হাসি চেপে কিছু সময় গাছের উপরে অপেক্ষা করে নিচে নেমে দেখি প্রেমিক প্রবরের প্রেম ভুতের ভয়ে উড়ে গিয়েছে, রেখে গেছে ফুল!


সেগুলো হাতে নিয়ে অনুভব করলাম, মানুষকে ভয় দেখাতে তো খুবই মজা! B-)

সেই সময়ে আমাদের হাতে হাতে এত মোবাইলের চল ছিল না। ভার্সিটির মধ্যে ইন্টার হল কানেকশন ছিল ফোনের, আর ছিল কার্ড ফোনের বুথ। আমাদের হলের ফোন গুলো ছিল সিড়ির পাশে, ফোন আসলে হলের খালারা "২০৮ রেজোয়ানা আফা, আপনের ফুন' বলে বিকট স্বরে ডাকতো নীচ থেকে!

তো সেই ইন্টার হল ফোনে আপা ভাইয়ারা সারাদিন বকরবকর করতো, এক একজন ফোন ধরলে টানা ১ ঘন্টা! আর তাদের প্রেমালাপের সে কি সব টপিকস!
"এই তুমি কি কি দিয়ে ভাত খেয়েছে? আলু ভর্তা? অনেক ঝাল ছিল? ইশ কি ভাবে খেলে, মুখ ঝালা করছে জান্টু?".....এই জাতীয় কথা শুনতেই উঠতে নামতে! X((

এসব আর কাহাতক আর সহ্য করা যায়! /:)

একদিন রাতে ভাবলাম এদের একটু ভড়কে দিলেন কেমন হয়!

তখন আবার আমরা তিন জনে মাত্র থিয়েটারে যাওয়া শুরু করেছি, হোয়াইট মেকাআপ কেম্নে নিতে হয় শিখেছি!
একদিন ঠিক রাত একটায় আমরা চার জন সারা মুখে সাদা রং, ঠোটের চারপাশে লাল আর চোখের নীচে ডার্ক নীল রং মেখে নীচে নামলাম। গিয়ে দেখি এক আপু ফোনের তার টেনে নিয়ে আধা শোয়া হয়ে ফিসফাস করছে।
আমাদের সব চাইতে দুষ্টু বন্ধু নুপুর গিয়ে জানতে চাইলো, "আপু কোন হল থেকে ফোন?"
সে আমাদের দিকে ফিরে না তাকিয়েই বললো "সালাম বরকত!"

কিন্তু আমাদের দিকে ফিরে না তাকালে তো আর কার্য উদ্ধার হয় না, কি করা যায়!

বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে, আবার "আপু আর কত কথা বলবেন, আমাকে একটা কল দেয়া যাবে?"

এইবারে সে চরম বিরক্ত হয়ে তাকালো .............এবং ...............তাকিয়েই থাকলো!

তারপর

ফোনের স্ট্যান্ড, তারট-টার সব ছিড়ে নিয়ে ধপাস.........খানিক খন হইচই...........হল সুপারদের আর বড় আপাদের আগমন........ কি হ্যাপা পোহাতে হয়েছিল, বুঝতেই পারছেন :|



তারপর বেশ কিছু দিন ভালই ছিলাম! :|

ক্রিকেটার সারোয়ার ভাই দিলেন ঝামেলা করে!

আমাদের চার জনের একজন সারোয়ার ভাইয়ের শ্যালিকা। সারোয়ার ভাই কোথায় জেন খেলতে গিয়ে তার আদরের শ্যালিকার জন্য বিকট এক মুখোশ নিয়ে আসলেন, সেটা এমনই বিকট যে শুধু শুধু হাত দিতেও ভয় লাগে! মুখোশ দেখে তো মাথা খারাপ, কিভাবে এর যথাপোযুক্ত ব্যাবহার করা যায়, সেটা ভেবে মাথার চুল প্রায় পেকে যাচ্ছিল!

সেই মাথা বিগড়ানোতে আবার হালে পানি দিল হিন্দী সিরিয়াল 'জেসি জ্যায়সি কই নেহি' আর কাহানি ঘর ঘর কি'!

এই সিরিয়ালের কথা মনে আছে?

দুই এফ ফিল আপুর নেতৃত্বে এই দুই সিরিয়াল হা করে দেখতো সব, রাত নটার পরে টিভি রুম ফাঁকাই পাওয়া যেত না। কোথায় একটু নাচ গান দেখবো, একটু সিনেম দেখবো, তা না সিরিয়াল আর সিরিয়াল!
সেই ২০০২-২০০৩ সালের দিকে তো আর রুমে রুমে এত কম্পিউটারের চল ছিল না, নেট কানেকশন তো প্রায় দূর্লভ বস্তু ছিল, টিভি রুমই ছিল আমাদের বিনোদনের অন্যতম জায়গা!

কিন্তু এদের জ্বালায় অন্যকিছুই দেখার উপায় ছিল না, তাই রাগে দু:খে একদিন আমরা দু'জনে কালো বোরখা আর দু'টো মুখোশ পরলাম, বাকি দুজনও খুব গম্ভীর মুখে মুখোশ ওয়াল ভুত দ্বয়ের পাশে বসে গভীর উৎসাহে জ্যাসি জ্যায়সি কই নেই দেখতে লাগলাম!

সামনের আপুরা তখন চরম ভাবে টেনশিত, জ্যাসির মনে হয় বসের সাথে কিছু একটা হবে, কিছুতেই তারা পিছন ফিরে তাকায় না!
কি করা যায়!
যেভাবেই হোক আমাদের এমন অভূতপূর্ব চেহারা তো তাদেরকে দেখতেই হবে! ;)
সাত পাঁচ ভেবে বিকট স্বরে একটা হাই তুললাম সেই ক্লাইমেক্সের মধ্যে,

এই বার কাজ হলো, বেশ ভাল ভাবেই কাজ হলো!

দলনেতা আপুদ্বয় চেয়ার উল্টে পিছনে পপাত ধরনীতল (চেয়ার গুলো ছিল রডের উপর লাগানো পরপর দুটো প্লাস্টিকের চেয়ার)!


তারপর আরও কিছু হাউ মাউ খাউ চিৎকার........

এরপর

.
.
.
.

এরপর

.
.
.
.


এরপর
.
.
.
.


স্মার্ট হওয়া ভাল, তবে বেশি স্মার্ট হওয়া ভাল না' ......এম.ফিল আপুদ্বয়ের এই অমেঘ বানী শুনে আমরা মানে মানে রুমে চলে আসলাম! ভাগ্যিস প্রোভস্ট কে জানায়নি! /:)















ঝিম ধরা দুপুরে হাতে কোন কাজ না থাকলে শুধু পুরানো কথা মনে পরে, বুড়ো হয়ে যাবার লক্ষন!

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:৩৩
৯২টি মন্তব্য ৯৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×