২০১৪ সালের ঘটনা।
তিন বন্ধু মিলে ট্রেনে করে ঢাকায় যাচ্ছি। পারিপাশ্বিক অবস্থার কারণে মন প্রচন্ড মন খারাপ ছিল তবুও যাচ্ছিলাম জীবনের নিয়মে! ট্রেনের কামরায় সারা রাত হই হুল্লড় করে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে ঢাকায় পৌঁছালাম। আমাদের হই-হুল্লোড় & উৎপাতে অন্য যাত্রীরা শান্তি পায় নি। ভীষন্ন মন & ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিমান বন্দর স্টেশনে নেমে দেখি একটি ছোট মেয়ে কান্না করছে। তার হাত ধরে এক লোক হাটাহাটি করছে। মেয়েটি আমার অপরিচিত হলেও তার হাত ধরা লোকটি আমার একদম অপরিচিত ছিল না। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে তাদের কাছে গেলাম। তাদের সাথে প্রায় ২/৩ মিনিট স্টেশনে হাঁটাহাটি করার পর দেখি মেয়েটির কান্না থেমেছে। কারণ তার হাত ধরা লোকটি ছোট মেয়েটিকে তার মায়ের কোলে তুলে দিলেন। লোকটি আর কেউ নন তিনি আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
কয়েক মিনিট পর যখন বন্ধুদের কাছে এলাম তারা জিজ্ঞেস করে কই গেছিলাম? তাদের আমি কি করে বুঝাই এই কয়েক মিনিট আমি ঐ বাংলাদেশের সাথে ছিলাম যে বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম। যেখানে একজন প্রতিমন্ত্রী রেল স্টেশনে হারিয়ে যাওয়া শিশুকে তার মা-বাবার কাছে পৌঁছে দিলেন।
কয়েকদিন আগে পর্বতারোহী মুসা ইব্রাহিম প্রতিকূল আবহাওয়া কারণে একটি পর্বতে আটকা পড়েন। আসিফ এন্তাজ রবি ভাই এই সংবাদটি ফেসবুকে দিলে তা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ভাইকে জানানো হয় এবং তিনি ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করে মূসা ইব্রাহিমকে উদ্ধার কাজে তৎপর হোন। শুধু মুসা ইব্রাহিমকে উদ্ধার কাজে নয় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এরকম বিভিন্ন কাজে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে জড়িত হয়ে অনেকের উপকার করেন।
সে দিন (২০১৪ তে) আমি বলেছিলাম সঠিক পথেই আছে বাংলাদেশ। এই দেশের তরুণরা পথ হারায় নি। তারা কিছু বিপদগ্রস্ত লোকের জন্য সমাজের আলো সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারছে না। তাদের সামনে বাধা হয়ে আছে ঐ সকল খারাপ/দূর্নীতিবাজ/অসৎ লোক।
এই তরুণরা ১০০+ দেশের সাথেই লড়ায় করে গণিত অলেম্পিয়াড় জিতে, BUET, CUET থেকে রোবট বানিয়ে বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতা করে। মুস্তাফিজ-সাকিব'রা বিশ্ব সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উচূ করে দাঁড়ায়। মাশরাফির মতো ছেলে বলে ৭ বার অপারেশন আমায় ভয় দেখাতে পারবে না!
শুধু এরা নয় আমাদের দেশের ১৩/১৪ বছর বয়সী আলেমরা কোরআন তিলওয়াতে সারা বিশ্বকে হারিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে।
এই তরুণরা যখন দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলে তখন তাদের থামানোর কোন উপায় থাকে না।
এই তরুণরা খুবই ভয়ংকর। জয়ের নেশা তাদের। তবে তার চেয়ে ভয়ংকর হল এই তরুণদের বিপরীত দিকটা! যে দিক আমাদের অন্ধকারে নিমজ্জিত করে! অবাধ তথ্য প্রযুক্তি, পারিবারিক বন্ধনহীনতা, অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন তাদের বড় ভয়ংকর করে তুলে।
সমাজের কোন অসংগতি দেখলে এই তরুণ প্রজন্ম যেমনি তা মোকাবেলা করে তেমনি কিছু স্বার্থন্বেষী মানুষ এই তরুণদের কখনো তলোয়ার হিসেবে আবার কখনো ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এলাকার ভাই কিংবা রাজনৈতিক বড় ভাইদের ছত্রছায়া এরা হয়ে উঠে এক একজন দূধর্ষ ক্যাডার, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী। যে বড় ভাই কিংবা নেতা জন্য তারা এক সময় এদের সরিয়ে দিয়ে হাত পরিষ্কার করে! যদিও ভাইয়ের ভক্ত বা নেতার কর্মী হয়েও তারা তা বুঝে না!
অবাধ তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারও আমাদের অধঃপতনের আরেকটা উল্লেখযোগ্য দিক। আমরা খুব সহজে শ্লো-পয়জনিং এর মতো করে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের কর্মক্ষমতা হ্রাস করছি। নষ্ট করছি আমাদের অমিত সম্ভাবনা কে। প্রযুক্তি আমাদের যেমন দরকার তেমনি এর অপব্যবহার রুখতে না পারলে তরুণ সমাজ দ্রুত অধঃপতনে পতিত হবে! আর তরুণরা পথ হারালেই পথ হারাবে বাংলাদেশ।
তারুণ্যের প্রতিটি পদক্ষপ হোক এ দেশের অগ্রগতির সোপান। অভিনন্দন বাংলাদেশ গনিত অলেম্পিয়াড়কে দেশের জন্য চারটি পদক জয় করার জন্য সেই সাথে ধন্যবাদ তরুণ কোরান হাফেজদেরও যারা এই দেশের হয়ে স্বর্ণ জয় করেছে।