somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হজরত শাহজালাল, রাজা গৌড়-গোবিন্দ, ও ভারতে গোহত্যা নিষেধাজ্ঞার পতিক্রিয়া। এবং তার ঐতিহাসিক শিক্ষা। ...........যাদব সূত্রধর

৩০ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হজরত শাহজালালের মাজারে আজও হিন্দুরা যায়, মোম-আগরবাতি জ্বালায়, প্রসাদ গ্রহন করে। আমি নিজেও গিয়েছি সেখানে। মোমবাতি জ্বালিয়েছি, প্রসাদও গ্রহন করেছি। কিন্তু মূল প্রশ্ন হলো হিন্দুরা কেনো সেখানে যায়? বলছি, তার আগে একটা কথা আমরা জানি, সেটা হলো, "জন্মিলে মরিতে হইবে" এটা যেমন সত্য তেমনই সত্য, অত্যাচারী'র পতন হওয়া। আবার আরেকটা কথা আছে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ সামনে আগানোর চেস্টা করে, এগুলো যুগযুগান্তরে সত্য প্রমানিত হয়ে আসছে। দ্বী-মত করার মতো লোক কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। যাহোক প্রসংগ ছিলো, হিন্দুরা কেনো দরবেশ শাহজালালের মাজারে যায়? চলুন একটু ইতিহাসের দিকে ঘুরে আসি। কারো জানা থাকলে, আমার কোথাও ভুল হলে শোধরে দেবেন।

হজরত শাহ‌জালাল গৌড় আগমনের সময়ে, শ্রীহট্রের গৌড় রাজ্যের প্রতাপশালী রাজা ছিলেন "গৌড়-গোবিন্দ" প্রচণ্ড ধর্মবিদ্বেষ ছিলো তার মধ্যে। আর সে কারণেই পতন ছিলো তার অনিবার্য। আর সেই পতন তুরান্বিত করেছিলেন তিনি নিজের কর্মদোষেই!

রাজা গৌড় গোবিন্দের শাসনামলে এদেশে মোসলমান সংখ্যা ছিলোনা বলেই ধরা যায়। তরফে তখন নুরউদ্দীন নামক এক মোসলমান সপরিবারে বাস করতেন। এই নুরউদ্দিনের পরিবার ব্যতীত বুরহানউদ্দিন নামক জনৈক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি সপরিবারে সিলেটের টুলটিকর নামক স্থানে ছিলেন বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।

উক্ত বুরহানউদ্দিন একদিন নিজ পুত্রের জন্মোপলক্ষে একটি গরু জবাই করেন। কিন্তু বিধি বাম! দুর্ভাগ্যবশত একটি চিল এসে এক টুকরো মাংস নিয়ে এক ব্রাম্মণের বাড়িতে ফেলে দেয়। এই খবর রাজা গৌড় গোবিন্দের কানে পৌঁছালে, রাজা ক্রুদ্ধ হয়ে বুরহানউদ্দিনের হাত কেটে ফেলেন ও সদ্যজাত শিশুটিকে হত্যা করেন। সেই ঘটনায় বুরহানউদ্দিন প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে পড়েন। অন্যদিকে তরফ এ (তরফ গৌড় রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত, মতান্তরে গৌড়ের অঙ্গরাজ্য) প্রায় একই রকম আরেকটি ঘটনা ঘটে, কাজী নুরউদ্দীন নামক মুসলমান ভদ্রলোক নিজ পুত্রের বিয়ে উপলক্ষে একটি গরু জবাই করায় তরফের শাসক নুরউদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এই দুই ঘটনার পর নুরউদ্দিনের ভাই ও বুরহানউদ্দিন দিল্লী'র তোগল বংশীয় সম্রাট আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ্‌ এর স্মরনাপন্ন হয়েছিলেন। সম্রাট আলাউদ্দিন সব শুনে তার ভাগিনা সিকান্দার শাহ্‌ কে গৌড় গোবিন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠান। কিন্তু সিকান্দারের সৈনিকরা রাজা গৌড় গোবিন্দের যাদুর প্রভাব আছে বলে তারা ভীত হয়ে যায়। সকলে হয়ে পরে অসুস্থ! গৌড় গোবিন্দের বিরুদ্ধে আর যুদ্ধ করা সম্ভব হলোনা!

প্রতিশোধ নিতে না পেরে বুরহানউদ্দিন দেশত্যাগ করে মদিনায় চলে যেতে চাইলেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে তখন প্রসিদ্ধ দরবেশ হজরত শাহজালালের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। বুরহানউদ্দিন সমস্ত কিছু তাকে জানালেন। শাহ্‌জালাল তাকে আশ্বস্ত করলেন। বুরহানউদ্দিন শাহজালাল'কে নিয়ে সিলেট অভিমুখে পথ চললেন। তারপর অনেক বাধাবিপত্তি পেরোনোর পর বিনাযুদ্ধে রাজা গৌড় গোবিন্দের পতন ঘটলো। গৌড় গোবিন্দ ভয়ে পালিয়ে গেলেন। অত্যাচারী'র মনের ভেতরে মৃত্যুভয় থাকে, যা বাহীরে দেখা যায় না। আর সেই মৃত্যুভয়ের কারণেই গৌড় গোবিন্দ সিংহাসন ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। শ্রীহট্র মুক্ত হলো একজন অত্যাচারী রাজার করতল থেকে।

নুরউদ্দীন ও বুরহানউদ্দিনের সাথে এরকম নৃশংস ঘটনা না ঘটালে গৌড় গোবিন্দের পতন হওয়ার কোনো কারণ ছিলোনা। অত্যাচারীর পতন হওয়া যে অনিবার্য! সে মিত্যে হয় কী করে? ওরা নিজের ধর্মমতে গরু জবাই করবে না অন্যকিছু করবে এ নিয়ে গৌড় গোবিন্দের হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন ছিলোনা, কিন্তু তিনি তা নৃসিংহ ভাবে করে নিজের পতন ডেকে আনলেন। ঠিক এই কাজটাই এখন ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা করছেন! একজন মুসলমান তার ধর্ম মেনে যদি গরু জবাই করে থাকে তাহলে অন্য ধর্মাবলম্বীর সমস্যা কোথায়? তারা কেনো এটাকে পাপ মনে করবে! পাপই যদি হয়ে থাকে তাহলে যে তা করছে তারই হবে, অন্যদের মাথা মোড়ানোর কী আছে!
এটা কী জাতিবিদ্বেষ হয়ে গেলোনা! গৌড় গোবিন্দ পতন ইতিহাসের যে পুনরাবৃত্তি হবেনা তার গ্যারান্টি কী আছে! ধর্মবিদ্বেষ থেকে যে অসন্তোষের সৃস্টি হয় তা থেকে বেরুনো সত্যিই কঠিন। যদিও সে দেশের লেখক বুদ্ধিজীবী দের কেউ কেউ নিজে গোমাংস ভক্ষণ করে পতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

শ্রীহট্রে গৌড় গোবিন্দের পতনের পর শাহজালাল একনিষ্ঠভাবে ধর্ম প্রচার করতে শুরু করলেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের দলিত ও নিম্নস্তরের মানুষেরা, যারা রাজা গৌড় গোবিন্দ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্রাম্মণদের দ্বারা ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার তারা শাহজালালের আহ্বানে আকৃষ্ট হয়ে ব্যাপকভাবে সারা দেয়। এবং হিন্দু সমাজ তাদেরকে জাতিচ্যুত করলে তারা মুসলমান ধর্ম গ্রহন করে। আর যারা মুসলমান ধর্ম গ্রহন করেনি, তাদেরও অনেকেই শাহজালাল'কে ভালবাসে। আবার শাহজালাল হিন্দু দেবতার উপর অত্যাচার করেননি বলেই হিন্দুগণ তাকে সম্মান করে থাকেন। শাহজালালের দরগা আজও তাই হিন্দু, মুসলিম সকলের নিকটই মান্য। সকলেই দরগায় যায়, মোম-আগরবাতি জ্বালায়, প্রসাদ গ্রহন করে।।

তথ্যাদিঃ শ্রীহট্রের ইতিবৃত্ত।
প্রকাশকালঃ ১৯১০ খৃস্টাব্দ। ব্লগার যাদব সুত্রধর অন্য নিক নিয়া বিভিন্ন ব্লগে লিখেন, তবে সামহোয়্যারইনে সম্ভবত তিনি লিখেন না, ওনার অনুমতিক্রমে ফেজবুক থেকে আমি কপিপেষ্ট করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:১৯
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×