somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক বিকালের গল্প [কিশোরবেলার গল্প]

১০ ই জুলাই, ২০১২ রাত ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সকালে অনিমের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন তার হাতে অফুরন্ত সময়। অনিম এ সময়টার প্রতীক্ষা করছিল সেই পরীক্ষা শুরু হবার দিন থেকে। পরীক্ষা শেষ হলে এটা করবে, সেটা করবে। সারাদিন খেলবে মজার সব কমিক্স পড়বে। যতক্ষণ খুশি টিভি দেখবে ইত্যাদি শত রকম প্ল্যান করেছিল সে তখন। এখন সে তার কাঙ্ক্ষিত সময় পার করছে। অথচ তার ইচ্ছেগুলোর একটাও তার পূরণ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তার মনে হচ্ছে পরীক্ষাই তো ভাল ছিল। সারাক্ষণ কাজের মধ্যে থাকা যেত। আর এখন কোন পড়া নেই। খেলা-ই বা আর কতক্ষণ ভাল লাগে। বেলা চারটা বাজতেই আছরের আযান হয়ে গেল। শীতের দিনে বিকালটা খুব দ্রুত আসে, দ্রুত ফুরিয়ে যায়। তাই অনিম বিনা আনন্দলাভে বিকালটা চলে যেতে দিতে চাইল না। কিন্তু কিভাবে আনন্দ পাওয়া যায়? আজ তার খেলতে ইচ্ছে করছে না, টিভিও দেখতে মন চাইছে না। আচ্ছা এ শহরটা ঘুরে দেখলে কেমন হয়? খুব একটা খারাপ হয় না। যদিও এ শহরের অধিকাংশ স্থানই তার দেখা। তবুও সে দেখা ছিল আলতো করে দেখা। আজ সুন্দর মন নিয়ে ভাল করে একে দেখতে হবে।
রাস্তায় বের হতেই অনিমের সাথে দেখা হলো তার বন্ধু মুনের সাথে। মুনের বাবা লেখালেখি করেন। বাবার গুণের কিছুটা মুনও পেয়েছে। সে ছড়া লেখে।
ছাত্র হিসাবেও সে বেশ ভাল।
মুন, চল আজকে আমরা একটা অন্যরকম বিকাল কাটিয়ে দিই।
কি রকম?
আজ পায়ে হেঁটে আমরা আমাদের শহর বরিশাল দেখব। এক সময় নদীর পাড়ে চলে যাব। প্রকৃতির স্নিগ্ধতা দেখব। তারপর বাসায় ফিরব। মুনের জায়গায় অন্য কেউ হলে অনিমের কথা শুনে নির্ঘাৎ বলে বসত, বেটা আতেল। খেয়েদেয়ে কাজ নেই শহর দেখবে। তাও যদি এটা বরিশাল না হয়ে প্যারিস হতো তাহলে এ বিষয়ে ভাব যেত!’ কিন্তু যারা লেখালেখি করেন, তারা যে একটু অন্য মেজাজের হন-এটা সবার জানা। মুনও এর উল্টোরূপ নয়। সে খুশি হয়ে বলল, দারুণ আইডিয়া চল।
ওরা রাস্তার পাশ ধরে হাঁটতে লাগল। রিকশা আসছে, যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দু’একটা টেম্পো ছুটে চলছে। এখানে বিকালবেলা রাস্তায় খুব একটা গাড়ি দেখা যায় না। একেবারেই না তা ঠিক নয়। তবে ঢাকার মতো অত বেশি নয়। তাই এ জায়গায় ধুলোবালির পরিমাণ আশঙ্কাজনক নয়।
অনিম দ্যাখ, দ্যাখ। বলল মুন।
অনিম দেখল রাস্তার একপাশে এককোণে একটা মা-কুকুর তার ছোট ছোট কয়েকটা বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে। বাচ্চাগুলো প্রচণ্ড ঠেলাঠেলি করছে। ঠিক যেন এটা এক ধরনের প্রতিযোগিতা। কে কত বেশি মায়ের কাছে ঘেষতে পারে, তার জন্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। অনিম বলল, জানিস, আমি আর আপু যখন ছোট ছিলাম, তখন কে আগে আম্মুর কোলে উঠবে- তা নিয়ে রীতিমতো আপুর সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিতাম।
এক সময় ওরা বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে চলে এলো। ওরা অবাক হয়ে দেখল, কয়েকটা যুবক বয়সী ছেলে জুতো পরে শহীদ মিনারের উপর বসে সিগারেট ফুঁকছে। কী বিশ্রী দৃশ্য। অনিম বলল, দ্যাখ এরা শিক্ষিত হয়েও খালি পায়ে শহীদ মিনারে যে উঠতে হয়- এটা ভুলে গেছে।
ভুল বললি। এরা কখনোই শিক্ষিত হতে পারে না। এরা যদি শিক্ষিতই হতো তাহলে জুতো পরে শহীদ মিনারে উঠে ধূমপান করার মতো ধৃষ্টতা এরা দেখাতে পারত না। চমৎকার মন্তব্য মুনের।
জিলা স্কুলের সামনে এসে ওরা সাংঘাতিক বিপদে পড়ে গেল। ছেড়া কাপড় পরা, উসকোখুসকো চুলঅলা, সারা গায়ে কাদামাখা এক লোক ওদের পিছু নিল। ব্যাপারটা প্রথম খেয়াল করল মুন। সে অনিমকে খোঁচা দিয়ে দেখাল, অনিম! পা-গল।
ওরে বাপরে! তাড়াতাড়ি হাঁট। ওরা যতই হাঁটার গতি বাড়াতে লাগল ঐ লোকটাও ঠিক ততই দ্রুত হাঁটতে লাগল। এক সময় ওরা দৌড় না দিয়ে পারল না। ঐ লোকটাও ছুটতে শুরু করল আর চিৎকার করে বলতে লাগল, এই খোকারা যাসনে। এগিয়ে আয়। তোদের কামড়ে দিই।
বাবা গো! কী ভয়ঙ্কর উদ্দেশ্য। এবার ওরা প্রাণপণ ছুটতে লাগল। এক সময় ওরা ঐ লোকের নাগালের অনেক বাইরে চলে গেল।
অনিম ও মুন এখন কির্তনখোলার তীরে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট্ট, শান্ত এক নদী। ঝিরঝিরে বাতাস বইছে। একটু শীত নদীতে বিকালবেলা খুব বেশি ডিঙি নৌকা চোখে পড়ে না। তবে ট্রলার, কার্গো, তিনতলা লঞ্চ বেশ নজরে পড়ে। যে কয়েকটি ডিঙি নৌকা চোখে পড়ে সেগুলোর বেশিরভাগে লোকজন নৌবিহার করছে। প্রতি বিকালেই এখানে অসংখ্য দর্শনার্থী বেড়াতে আসে। কয়েকটা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে খেলছিল। এক লোক ছোট্ট একটা মেয়ে কোলে নিয়ে এসে অনিমের পাশে দাঁড়াল। মেয়েটার বয়স বড় জোর দেড় কি দুই বছর হবে। অনিম অবাক হয়ে লক্ষ্য করল, ছোট্ট মেয়েটা কী সুন্দর করে অনিমের দিকে চেয়ে হাসছে। অনিমের খুব ইচ্ছে হলো পিচ্চিটাকে কোলে নিতে। হাত বাড়াতেই ছোট্ট মেয়েটা ওর কোলে চলে এলো। সাথের লোকটা বলল, ও আমার মেয়ে। ওর নাম আঁখি। তখনও আঁখি হাসছিল। মুন হঠাৎ বলল, অনিম, দ্যাখ পাখি। অনিম আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল এক ঝাঁক পাখি উড়ে যাচ্ছে। বোধহয় শীতের পাখি। হয়ত ওরা সাইবেরিয়া থেকে এসেছে। ছোট্ট আঁখিও পাখিগুলোকে অবাক চোখে দেখতে লাগল আর বলতে লাগল, পাখ-খি পাখ-খি।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×