somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরীক্ষা নিয়ে একটি নিরীক্ষাধর্মী রম্য

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পড়িতে বসিবো এই কথাটি বলিয়া লাভ নাই বার বার,
একবার বসিলে উঠিয়া যাই শতবার।

এমনিতে অনেক কিছুই পড়ি। বাদামের ঠোঙ্গায় যা লেখা থাকে সেগুলো মনযোগ দিয়ে পড়ি, রাস্তাঘাটের যানবাহনের পেছনে যা লেখা থাকে সেগুলো পড়ি, দেয়ালে চিকামারাগুলো পড়ি, মানুষের চোখের ভাষাও পড়ার চেষ্টা করি, সবচেয়ে বেশী পড়ি ফেসবুকের স্ট্যাটাস। বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি লাইকার । তবে সিলেবাসের চ্যাপ্টারগুলোও যে পড়া লাগে তা মনে পড়ে পরীক্ষা এলে। পরীক্ষা নিজেই একটা বিপদ। তবে বিপদ আসার আগে আসে কিছু আপদ। এই যেমন বাসায় মেহমান আসে,বাসের বাইরে মিস্ত্রিরা হাতুড়ি-ড্রিল মেশিন নিয়ে কনস্ট্রাকশনের কাজে ঝাপিয়ে পড়ে, গলিতে মাইক বাজিয়ে চুলকানির মলম বিক্রি হয়,রাস্তার কুত্তাগুলা অনবরত ঘেউ ঘেউ করতে থাকে এবং সর্বোপরি টিভিতে খুব ভালো ভালো অনুষ্ঠান দেখাতে শুরু করে।পরীক্ষা শেষ,সব ঠান্ডা।

আমার পরীক্ষার রুটিন কীভাবে যেন আমার প্রতিবেশীরাও জেনে যায়। পরীক্ষা এলেই তারা ফুল ভলিউমে গান বাজিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান ডিভোর্স অনুষ্ঠান এসব পালন করতে শুরু করে। এই যেমন কিছুদিন আগে পরীক্ষার আগের দিন প্রতিবেশী মাছ ব্যাবসায়ী সারা এলাকাকে মাছের বাজার বানিয়ে তার ছেলের খতনা অনুষ্ঠান উদযাপন করা শুরু করলো।প্যান্ডেল টাঙ্গানো হয়েছে, ধুমসে খাওয়া-দাওয়া চলছে, চেয়ারে লুঙ্গি পড়িয়ে বসানো হয়েছে সেই বাচ্চাটিতে যার মুসলমানী হয়েছে আর বাজানো হচ্ছে ফুল ভলিউমে "লুঙ্গি ড্যান্স, লুঙ্গি ড্যান্স"। কানে লুঙ্গি গুজে দিয়েও লুঙ্গি ড্যান্সের শব্দ হতে নিস্তার নেই, লুঙ্গির ফাক-ফোকড় দিয়ে গানের আওয়াজ ঢুকে পড়ে।সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলাম, গিয়ে বলবো হয় গান বাজানো বন্ধ করেন নতুবা আমার কান দুইটার খতনা করিয়ে আমাকে বধির বানিয়ে দেন, আর সহ্য করতে পারছি না।ভাগ্য ভালো, তারা নিজে থেকেই গান বন্ধ করে দিলো। সন্ধ্যা থেকে আবার শুরু হলো গান।এবার দেখি আরেক বাড়ির ছাদে গায়ে হলুদের আয়োজন!

এমন না যে আমি নিজেও পরীক্ষা নিয়ে সিরিয়াস কোন ছাত্র। সবকিছু এড়িয়ে টেরিয়ে পড়তে বসতে পারলেও নিজেই নানা ধরণের পরীক্ষাবিমুখ কার্যক্রম শুরু করি। পরীক্ষা এলে আমার চারিত্রিক লক্ষনগুলো নিয়ে ফেসবুকে একবার পোস্ট দিয়েছিলামঃ
পড়তে বসলেই কি পড়ার টেবিল সংলগ্ন জানালার দিকে তাকিয়ে অন্য যেকোন দিনের থেকে বেশী উদাসী হয়ে যাচ্ছেন?পড়ার টেবিল থেকে কিছুক্ষনের জন্য উঠলেই কি আপনি আবিষ্কার করছেন ঘন্টাখানেক টিভিতে কোন বিরক্তিকর মুভি বা পুরাতন ক্রিকেট-ফুটবল ম্যাচ দেখছেন?অল্প সময়ের জন্য কোন কাজে বাইরে গেলেই কি মনে হয় কয়েকদিন ঢাকার বাইরে কোথাও ঘুরে আসলে ভালো হতো?নিজের ফ্ল্যাটে ফেরার পথে সিড়ির গোড়ায় প্রতিবেশী আঙ্কেল-আন্টি-পুচকি-মিচকি যাদের সাথে দেখা হচ্ছে তাদের সাথেই খোশগল্পে মেতে উঠছেন?গভীর রাতে জোর করে পড়তে বসেও কি কবিতা লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে?বিরক্ত হয়ে একটু পড়ে পড়বো ভেবে টেক্সট বুক ছুড়ে ফেলে ফেসবুক খুলে দৈনন্দিন জীবন নিয়ে স্ট্যাটাস দিতে গিয়ে অন্যদের স্ট্যাটাস গুতোচ্ছেন এবং অনলাইনে যাকে পাচ্ছেন তার সাথেই কি চ্যাটে চেচাচ্ছেন? এসব লক্ষন যদি একসাথে আবিষ্কার করেন তাহলে বুঝে নিবেন সামনে আপনার পরীক্ষা।

এতো গেলো পরীক্ষার আগমুহুর্তের ঘটনাবলী। পরীক্ষার হলে বসেও আমার আছে নানা ধরণের অবজারভেশন। পরীক্ষার হল! সে এক ট্রাজেডির নাম। আমার জীবনের সবকিছুতেই ছোটখাটো ট্রাজেডি থাকে বৈকি। যে খাবারটা খেতে অপছন্দ করি দেখা যায় সেটারই পুষ্টিগুন থাকে সবচেয়ে বেশী।টিভি সিরিজের যে পর্বটা মিস করি সেখানেই ঘটে যায় দুনিয়ার হূলস্থূল ঘটনা।যে ম্যাচটি দেখা হয় না, সেখানেই ঘটে যায় সব বিশ্বরেকর্ড।মোবাইলের ইনবক্স ভর্তি মেসেজের ভীড়ে যে মেসেজটি পড়া হয় না সেখানেই থাকে গুরুর্ত্বপূর্ণ কিছু।এবং সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডীঃপরীক্ষার জন্য যে কয়েকটি প্রশ্ন বাদ দেই, সেগুলাই পরীক্ষায় আসে।

পরীক্ষার হলে বসে একবার একটা ছোটখাটো ছড়াও লিখেছিলামঃ
পরীক্ষার বিষয় ছিলো 'ল'
প্রশ্ন পাইয়া হইলাম 'থ'
মনরে বুঝাইলাম,একটু কষ্ট কইরা বেঞ্চে 'ব'
মন কইলো,কি লিখমু আগে সেইডা 'ক'

মাঝে মাঝে গুরত্বপূর্ন ম্যাচ থাকে পরীক্ষার আগের রাতে। রাতের বেলা ম্যাচ দেখে পরদিন সকালে পরীক্ষার হলে গেলে পরীক্ষার হলটিও ম্যাচের ধারাভাষ্যকারের ভাষায় ফুটে ওঠেঃ

পরীক্ষা কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে দর্শক-শ্রোতামন্ডলী। সামনের দিকে দেখতে পাচ্ছি একজনকে। তিনি একের পর এক লুজ নিয়েই যাচ্ছেন।তীব্র লুজ মোশনে তিনি ছটফট করছেন। কিছুক্ষন আগেই লুজ শীটের সেঞ্চুরি সেড়ে ব্যাট তোলার মতো করে খাতা উচিয়ে ধরে তিনি সবার অভিবাদন গ্রহন করেছেন।এখন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন আরেকটি লুজ শীটের পথে। হ্যা, তিনি আরেকবার হাত উঠাতে যাচ্ছেন, হাত উঠালেন, আরেকটা লুউউউজ শীইইইইইইইইইইইট! কিন্তু না! পানি! হলভর্তি সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি পানি চেয়ে বসলেন।

ওদিকে বাম পাশে দেখতে পাচ্ছি আরেকজনকে। শুরুতে ছিলেন উদাসী কিন্তু পরীক্ষার শেষ ঘন্টার পাওয়ার প্লেতে বেশ আগ্রাসী। খাতায় ঝড় তুলে লিখে চলেছেন। ঝড়ো হাওয়ার তোড়ে তার পশ্ন অনেক আগেই উড়ে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে।তাতে তার কোন নজর নেই, তিনি মনের মাধুরী কারিশমা শ্রীদেবী মিশিয়ে লিখেই চলেছেন।সম্ভবত তার পরীক্ষাই সবার আগে শেষ হচ্ছে।তিনি দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন, টেবিল থেকে বের হচ্ছেন, খা তা জ মা দি বেএএএএএএন, কিন্তু না! দৌড়ে তিনি চলে গেলেন বাউন্ডারির বাইরে, সোজা টয়েলেটের ভেতরে।

আরো একজনকে দেখতে পাচ্ছি বাম পাশে।লিখছেন আর ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের খাতা দেখছেন।ওদিকে ফিল্ডিং করতে এগিয়ে আসছেন পরীক্ষার গার্ডে থাকা ম্যাডাম। ম্যাডাম কি তাকে হাতে নাতে ক্যাচ ধরতে পারবেন? ম্যাডাম বেঞ্চের দিয়ে এগিয়ে আসছেন, এ গি য়ে এ লেএএএন! কিন্তু না, ক্যাচ মিস করে ম্যাডাম চলে গেলেন বেঞ্চ এড়িয়ে।

শিক্ষাজীবন প্রায় শেষ হতে চললো। ক্লাসরুমে বসে হয়তো পরীক্ষা আর দেয়া হবে না কিন্তু জীবনের পরীক্ষা কি থেমে থাকবে? স্কুলের পরীক্ষাগুলো দিয়ে যখন এস এস সি দিবো তখন শুনতাম সেটাই নাকি জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এস এস সি শেষ করে শুনেছি “সামনে এইচ এস সি। আরো কঠিন পরীক্ষা। ভালো করে প্রস্তুতি নাও”।এইচ এস সি পাশের পরঃ “ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাইলে এতো রেজাল্ট দিয়ে কোন কাজ নেই। ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নাও”।বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পরঃ “আসল পড়াশোনা শুরু হিলো। প্রেম পিরিতিতে হাবুডুবু খাইয়ো না।সব পরীক্ষা ভালো করে দাও”। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করার পর শূনবো: “চাকুরীর পরীক্ষা শুরু। ভালো চাকুরী পাওয়া চাই”। চাকুরী পাবার পরঃ “বিয়ের কথা চিন্তা করো।সংসারধর্মই হলো জীবনের আসল পরীক্ষা”।বিয়ে করার পরঃ “আসল পরীক্ষা তো মাত্র শুরু হইলো। এই পরীক্ষায় পাশ না করলে বাচ্চা-কাচ্চা আলোর মুখ দেখবে না”।বাচ্চা-কাচ্চা জন্ম দেবার পরঃ “সন্তান বড় করে মানুষ বানানোটাই আসল পরীক্ষা”।সন্তান মানুষ করানোর পরঃ “সন্তান বড় হইলো, রিটায়ারও হলো। শেষ বয়সে স্বাস্থ্য ঠিক রাখাটাই আসল পরীক্ষা”। স্বাস্থ্য ঠিক রেখেও স্বাভাবিক মৃত্যুর পরঃ “দুই দিনের এই দুনিয়া।কি আছে এই দুনিয়ায়? আখিরাতের পরীক্ষাই আসল পরীক্ষা”।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৫২
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×