somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোল্ট্রি শিল্পের বিকল্প হিসাবে ব্যাপক সম্ভাবনাময় তিতির পাখির লালন-পালন। সাঈদ হাসান আকাশ

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একসময় ব্যাপক হারে তিতির পাখি পালন করা হতো পারিবারিক ভাবে। বর্তমানে এই তিতির পাখি বিলুপ্ত প্রায়। আর এই বিলুপ্তির হাত থেকে রৰা করতে বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদ তিতির পাখির লালন-পালন বাড়ানোর লৰ্যে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। পোল্ট্রির মোট ১১টি প্রজাতির মধ্যে একটি হলো তিতির। যার ইংরেজি নাম এঁরহবধ ভড়ষি। এই তিতির পাখি অর্ণামেন্টাল বার্ড হলেও সুস্বাদু মাংস এবং ডিমের জন্য শত শত বৎসর যাবৎ তিতির পাখি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালন করা হয়ে থাকে। আফ্রিকান এই পাখিটি আমাদের দেশের রাজশাহী, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পালন করা হতো। গ্রামীন পরিবেশে হাঁস বা মুরগীর সাথে পালন করা হতো এই তিতির পাখি যার অন্য নাম চীনা মুরগী।
বাহ্যিক বৈচিত্র্যতার ভিত্তিতে তিতির পাখির শ্রেণীবিন্যাসঃ
পালকের রং এর ভিত্তিতে তিতির পাখি তিন ধরণের হয়ে থাকে।
পার্ল ভ্যারাইটি ঃ সাধারণত ধুসর পালকের অধিকারী তিতির পাখিকে পার্ল তিতির বা ধুসর তিতির বলা হয়ে থাকে। এই প্রজাতির তিতিরের পালকে নিয়মিত ভাবে ফোটা ফোটা সাদা দাগ থাকে। দেখতে খুবই আকর্ষনীয় হয়।
লেভেনডার ভ্যারাইটিঃ এই প্রজাতির তিতির পাখির বৈশিষ্ট্য পার্ল বা ধুসর তিতির পাখির সাথে বেশ মিল আছে। পার্থক্য শুধুমাত্র পালকের রং হালকা ধুসর বর্ণের এবং তাতে নিয়মিতভাবে সাদা ফোটা ফোটা দাগ রয়েছে।
হোয়াইট ভ্যারাইটিঃ নাম শুনেই বোঝা যায় যে এই প্রজাতির তিতির পাখির সাদা পালকের হয়। এই প্রজাতি তিতির পাখির পালকে সাদা ফোটা দাগ থাকে না এবং এটির চামড়া পার্ল ভ্যারাইটির তুলনায় হালকা রং এর হয়।
তিতিরের উৎপাদন বৈশিষ্ট্যাবলীঃ
প্রতি বছর ডিম উৎপাদন ডিমের ওজন ডিমের ফার্টিলিটি হ্যাচাবিলিটি ডিমের ওজন দৈহিক ওজনের দৈহিক ওজন প্রাপ্ত বয়স্ক হয় ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার সময় একদিন বয়সের বাচ্চার ওজন
১০০-১২০টি ৩৫-৪০ গ্রাম ৭৫-৮০% ৭৫-৮০% ২.৮% ১.৬-১.৭ কেজি ৬-৭ মাস ২৭-২৮ দিন ২১-২৭ গ্রাম

তিতির পাখির ব্যবস'াপনাঃ
ব্রম্নডিং ঃ মুরগীর বাচ্চার তুলনায় তিতিরের বাচ্চা ঠান্ডায় অধিক সংবেদনশীল। সেজন্য প্রথম সপ্তাহে উচ্চ ব্রম্নডিং তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। প্রথম থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যনৱ ব্রম্নডিং তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রী সে. এবং চতুর্থ থেকে পঞ্চম সপ্তাহ পর্যনৱ ৩৬ ডিগ্রী সে. এ নিয়ন্ত্রন করতে হয়।
বাসস'ানঃ তিতির পাখিকে তিন ভাবে পালন করা সম্ভব। মক্ত অবস'ায়, আধা-মুক্ত অবস'ায় এবং আবদ্ধ অবস'ায়। সেৰেত্রে বয়স ভেদে প্রতিটি তিতির পাখির কতটুকু জায়গা লাগে দর্শক চলুন জেনে নেওয়া যাক।

বয়স ০-৪ সপ্তাহ পর্যনৱ ৫-৮ সপ্তাহ পর্যনৱ ৯-১৩ সপ্তাহ পর্যনৱ পূর্ণ বয়স্ক তিতির এর জন্য
জায়গার পরিমাণ ০.৫ বর্গফুট ০.৭৫ বর্গফুট ১.০ বর্গফুট ২-২.৫ বর্গফুট

খাদ্য ও পানি গ্রহণের হারঃ
একটি তিতির পাখি প্রথম সপ্তাহে খাদ্য খায় মাত্র ৫৫ গ্রাম এবং পানি খায় ৭৫ মি.লি.। দ্বিতীয় সপ্তাহ বয়সী তিতিরের জন্য খাবার লাগে ১৩০ গ্রাম এবং পানি লাগে ১৮০ মি.লি.। তৃতীয় সপ্তাহে খাদ্য খায় ২১০ গ্রাম, পানি ২৯০ মি.লি.। আসেৱ আসেৱ বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতিটি তিতিরের খাদ্য গ্রহণ বাড়তে থাকে তবে তা খুবই কম হারে। পূর্নবয়স্ক একটি তিতির প্রতি সপ্তাহে সব্বোর্চ ৬৪০ গ্রাম খাদ্য খেতে পারে এবং পানি খেতে পারে ৮৫০ মি.লি.।
বাংলাদেশে বিদ্যমান তিতির পাখির সাধারণ বৈশিষ্ট্যঃ
আমাদের দেশে যে তিতির পাখি পাওয়া যায় সেটি পার্ল বা ধুসর বর্ণের। পালকে নিয়মিতভাবে ফোটা ফোটা সাদা দাগ থাকে, ডিমের রং হালকা বাদামি থেকে ঘন বাদামি হতে পারে। ডিমের গায়ে ছোট ছোট দাগ দেখা যায়। ডিম সাধারানত লাটিম বা কনিকেল আকৃতির হয়। ডিমের ওজন হয় ৩৮-৪৪ গ্রাম পর্যনৱ। পুরম্নষ তিতির পাখির মাথায় হেলমেট বা মুকুট একটু বেশি উঁচু হয় স্ত্রী পাখির তুলনায়। পায়ের রং একটু কালচে ধরণের হয়। একটি পূণাঙ্গ স্ত্রী তিতির পাখির ওজন হয় ১,৩০০-১,৫০০গ্রাম এবং পুরম্নষ তিতির ওজন হয় ১,৬০০ গ্রাম থেকে ১,৭০০ গ্রাম পর্যনৱ। এই পাখির ডিম প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় পদ্ধতিতে ফোটানো যায়। ডিম ফুটতে ২৭-২৮ দিন সময় লাগে।
অন্যান্য পোল্ট্রি প্রজাতির তুলনায় তিতির পাখি পালনের সুবিধা সমূহঃ
তিতির পাখির রোগ প্রতিরোধ ৰমতা অন্যান্য পাখির তুলনায় বেশি। রোগবালাই তেমন হয়না বললেও চলে। তাই তিতির পাখি পালনে ঝুকি কম। একটি পূর্ণবয়স্ক তিতির পাখি দৈনিক ১১৮-১২০ গ্রাম খাবার খায়। কচি ঘাস, পোকামাকড়, সবজি এদের প্রিয় খাবার। দেশি মুরগীর মত সাধারণ খাবার খায় বলে আলাদা খাবার খাওয়াতে হয় না। সম্পূরক খাদ্য পরিমাণে কম লাগে। এদের পালন করতে তেমন কোন সরঞ্জাম লাগে না। ডিমের খোসা অনেক শক্ত। মাংসের স্বাদ ও পুষ্টিগুন অনেক বেশি। প্রতিকুল পরিবেশের সাথে এরা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।
তিতির পালন বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ৰেত্র। তিতির পাখির পালন বাড়ানোর লৰ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের মত সবাই যদি সচেতন হয় এবং তিতির পাখি পালনের গুরম্নত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা যায় তাহলে দেশিয় হাঁস-মুরগীর সম্পূরক হিসাবে তিতির পালন করে মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানী করাও সম্ভব হবে, যার ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সংশিস্নষ্টদের ধারণা।
সাঈদ হাসান আকাশ/০১৭১৬৬৭৮৪৪৮
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×