somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ত্রাণ চাই না, চাই পরিত্রাণ!

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতার প্রত্যক্ষ মদদে সরকারী বাহিনী স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় গত ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মাদারগঞ্জ গ্রামের আদিবাসী সাঁওতালদের বাড়িঘর লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, নারী -পুরুষ-শিশু নির্বশেষে শারীরিক আক্রমন করে ৩০ জনের বেশি আদিবাসী সাঁওতালকে আহত-যখম আর গুলি করে ৪ জন আদিবাসী সাঁওতালকে হত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, আদিবাসী সাঁওতালরা যেন তাদের বসত ভিটায় আর কখনো ফিরতে না পারে সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে বসতভিটা উচ্ছেদে বাঁধা দেয়ার অপরাধে একাধিক ফৌজদারী মামলা দায়ের এবং গ্রেফতার করে তাদের এলাকা ছাড়া করার হীন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এমনকি তাদের বাড়ীঘর ট্রাকটর দিয়ে চাষ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়ছে। আর এখন ঘটনা অন্যখাতে প্রভাবিত করার জন্য সরকারী বাহিনী আত্বরক্ষার্থে মাজিষ্ট্রেটের নির্দেশে গুলি করার নাটক সাজিয়ে সবকিছু জায়েজ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

অধিকাংশ আহত আদিবাসী সাঁওতাল গ্রেফতারের ভয়ে প্রকাশ্যে চিকিৎসা নিতে পারছে না। ফলে তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যাচ্ছে। যে ৩ জন আহত আদিবাসী সাঁওতাল সরকারি হাসপাতালে ভর্তি, তাদের গ্রেফতার হয়ে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এমনকি অর্থাভাবে তারা সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছে না । হাইকোর্টের নির্দেশনায় হাতকড়া খুলে দেয়ার আগ পর্যন্ত তাদের হাসপাতাদের বেডের সাথে হাতকড়া দিয়ে বেঁধে রাখা হত। অথচ পালিয়ে যাওয়া তো দুরের থাক, অন্যের সাহায্য ছাড়া একা একা প্রাকৃতিক কর্ম করাও যাদের জন্য দূরহ।

আদিবাসী সাঁওতালদের বসত বাড়ী থেকে উচ্ছদ করায় গত ৬ নভেম্বর থেকে তাড়া খোলা আকাশের নিচে খাবারের অভাবে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনানিপাত করছে। শিশুদের স্কুলের পোষাক, বই-পুস্তক সবকিছু পুড়ে যাওয়ায় তারা স্কুলে যেতে পারছে না। এমনি এলাকায় যেসব আদিবাসী সাঁওতাল অবস্থান করছে, তাদের স্বাধীন মুভমেন্ট-এ বাঁধা দিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। কিছু কিছু সংগঠনের প্রদত্ত কিছু সহযোগিতার ভর করে ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসিরা কোন রকমে দিনানিপাত করছে।

নাগরিক সমাজের তীব্র সমালোচনা আর প্রতিবাদের মুখে ঘটনার ৮ দিন পর গাইবান্ধা উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্থ আদিবাসীদের কিছু উচ্ছিষ্ট ত্রাণ প্রদান করে তাদের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করেছে। একই সাথে ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল ভিজিট এবং ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ আদিবাসীদের সামনে মুলা ঝুলিয়ে দিয়েছে। কারণ এখন পর্যন্ত সরকার বা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয় দৃষ্টিগোচর হয়নি যাতে মনে হয় তারা ক্ষতিগ্রস্থ আদিবাসীদের পূনর্বাসনে আন্তরিক।

এমনকি বসতবাড়ি উচ্ছদে বাঁধা দেয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ আদিবাসীদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহার বা উক্ত মালায় গ্রেফতারকৃত আদিবাসীদের মুক্তি প্রদানের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বরং উক্ত মামলায় যাদের আসামি করা হয়ছে তাদের গ্রেফতারে পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা দৃশ্যমান। তাছাড়া, আদিবাসী সাঁওতালদের বাড়িঘর লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, নারী -পুরুষ-শিশু নির্বশেষে শারীরিক আক্রমন করে ৩০ জনের বেশি আদিবাসী সাঁওতালকে যখম আর গুলি করে ৪ জন আদিবাসী সাঁওতালকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের করেনি, দায়ি ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা তো দুরের থাক।

তার ওপর সরকারের সচিব প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছে যে তারা কোন আদিবাসী উচ্ছেদ করেনি, বরং তারা অবৈধভাবে সরকারি জমি দখলকারীদের কাছ থেকে তাদের জমি উদ্ধার করেছে। হায়রে সরকার, হায়রে প্রশাসন। অন্যদিকে আরেকটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল উক্ত ঘটনা নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। যদিও ঐ রাজনৈতিক দল তাদের ক্ষমতায় থাকাকালীন নৃত্বাত্ত্বিক সংখ্যালঘুরা আরো বেশীমাত্রায় নির্যাতিত, শোষিত হয়েছিল।

সরকার একদিকে গাইবান্ধার ক্ষতিগ্রস্থ আদিবাসীদের পূনর্বাসনের কথা বলছে, আবার একই সাথে তাদের উচ্ছেদকৃত বাস্তু-ভিটা ট্রাকটর দিয়ে চাষ করে নিশ্চিহ্ন করে তাতে কাটা তাঁরের বেড়া দিয়ে তাদের বসত ভিটায় ফিরতে বাঁধা দিচ্ছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্থ আদিবাসীদের একদিকে ত্রাণ প্রদানের কথা বলছে, আবার অন্যদিকে আহত আদিবাসীরা যেন সঠিত চিকিৎসা সেবা না পায় সেজন্য অজ্ঞাতনামা ৩ শতাধিক আদিবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করে তাদের দৌড়ের ওপর রেখেছে।

সরকার একদিকে ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে বলে আদিবাসীদের আশ্বস্ত করছে, আবার অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার না করে, গ্রেফতারকৃত আদিবাসীদের মুক্তি না দিয়ে পালিয়ে থাকা আদিবাসীদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং অপরাধের সাথে যুক্ত প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করে তাদের গ্রেফতার না করে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ শুধু আত্বরক্ষার্থে গুলি করছে বলে সবকিছু জায়েজের চেষ্টা চালাচ্ছে। এমন কি আদিবাসীদের বাড়িঘর লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, নারী -পুরুষ-শিশু নির্বশেষে শারীরিক আক্রমন সহ তাদের বাস্তু ভিটা থেকে উচ্ছেদের কোন ঘটনা ঘটেনি বলেই মিথ্যা প্রপাগণ্ডা চালাচ্ছে। হায়রে প্রহসন!

এদেশের আদিবাসী সম্প্রদায় আর কতদিন নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, শোষিত হবে? কতদিন আর তারা নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে? ভুলে গেলে চলবে না বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনসহ মুক্তি সংগ্রামে তাদের বীরত্রগাথা ভূমিকার কথা। এরকম কিছুদিন পর পর একের পর এক আদিবাসীদের উপর হামলা-মামলা-উচ্ছদের ঘটনা ঘটবে, আর সরকার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কিছু ত্রাণ নিয়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে প্রহসন করবে-আদিবাসী সম্প্রদায় তা আর চায় না। আদিবাসী সম্প্রদায় আর উচ্ছিষ্ট ত্রাণ চায় না, তাঁরা ভিক্ষে চায় না, তারা চায় পরিত্রাণ, তাঁরা চায় অধিকার। সকল বৈষম্য, নির্যাতন, নিষ্পেষণ, শোষণ থেকে তাঁরা চায় মুক্তি। তাঁরা চায় তাদের মৌলিক অধিকার আর মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা। তাঁরা চায় আদিবাসী হিসাবে দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিকের মর্যাদা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×