somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমকামী ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠায় যোগযাকার্টা প্রিন্সিপলস!

১৬ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা সারা বিশ্বে আজ গুরুত্বর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষন, গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ, স্বেচ্ছাচারী আটক, চাকুরী ও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যসহ অন্যান্য মানবাধিকার উপভোগে গুরুত্বর বৈষম্য এখন নৈমত্তিক ব্যপার। এ সকল মানবাধিকার লংঘন, ঘৃনা, বৈষম্য ও বর্জন প্রায়শ জাতি, বয়স, ধর্ম, অক্ষমতা, বা অর্থনৈতিক, সামাজিক বা অন্যান্য অবস্থা অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রথা, আইন ও জুলুমের দ্বারা ব্যক্তির উপর লিঙ্গ ও যৌন প্রবৃত্তি বিষয়ক নিয়ম প্রতিষ্ঠা করে এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয় ও তাদের যৌন প্রবৃত্তি কি হবে তার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণাপত্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক কভিন্যান্টের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে সকল রাষ্ট্রের শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে বৈষম্যের হাত থেকে সকল নাগরিকের সুরক্ষা প্রদানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ব্যবস্থার মাধ্যমে যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে মানবাধিকার লংঘনের প্রতিকার সাধনে অসামঞ্জস্য ও অপর্যাপ্ততা লক্ষ্য করা যায়।

ফলে যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে মানবাধিকার লংঘন প্রতিরোধে প্রচলিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও তার প্রয়োগের ঘাটতি মোকাবেলায় প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সমতা ও বৈষম্যহীনতার ভিত্তিতে সকল ব্যক্তির অধিকার সংরক্ষণে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।

তার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র কর্তৃক সমকামী ব্যক্তির মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২৬ মার্চ ২০০৭ সালে যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয় বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রয়োগ সংক্রান্ত একটি যুগান্তকারী আন্তর্জাতিক আইনী মূলনীতি গৃহীত হয়। ইন্দ্রোনেশিয়ার যোগযাকার্টা শহরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার, জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার চুক্তি সংস্থার তৎকালীন ও সাবেক সদস্যবৃন্দ, বিচারক, শিক্ষক ও মানবাধিকারকর্মীসহ ২৯ জন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞের অংশগ্রহণে কার্যকর আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিতে যোগযাকার্টা প্রিন্সিপলস গৃহীত হয়।

যোগযাকার্টা প্রিন্সিপলস এ যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয় বিষয়ক আন্তর্জতিক মানবাধিকার মানদণ্ড ও তার প্রয়োগের বিষয়গুলো বিষদভাবে স্থান পেয়েছে। সকল মানবশিশু স্বাধীনভাবে সমঅধিকার, সমসুযোগ ও সমমর্যাদা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে; সকল মানবাধিকার সর্বজনীন, পরস্পরের উপর নির্ভরশীল, অবিভাজ্য ও পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত; যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয় প্রত্যেক ব্যক্তির মর্যাদা ও মানবতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে কারো সাথে বৈষম্য ও অপব্যবহার করা যাবে না-এসকল নীতিমালার ভিত্তিতে যোগযাকার্টা প্রিন্সিপলস গৃহীত হয়।

যোগযাকার্টা প্রিন্সিপলস এর ১ থেকে ৩ ধারায় মানবাধিকারের বিশ্বজনীনতা ও কোন প্রকার বৈষম্য ব্যতীত সকল ব্যক্তি আইনের দ্বারা স্বীকৃতি পাবার অধিকারসহ সকল মানবাধিকার উপভোগ করা; ৪ থেকে ১১ ধারা জীবন ধারনের অধিকার, নির্যাতন ও সহিংসতা থেকে মুক্ত থাকার অধিকার, ন্যায় বিচার পাবার অধিকার এবং নিবর্তনমূলক আটক থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকারের বিষয় উল্লেখ করেছে।

যোগযাকার্টা প্রিন্সিপলস এর ১২ থেকে ১৮ ধারা কোন প্রকার বৈষম্য ব্যতীত বাসস্থান,সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ উপভোগ করা এবং ১৯ থেকে ২১ ধারা শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে রাষ্ট্র কর্তৃক কোন প্রকার হস্তক্ষেপ ব্যতীত নিজের পরিচয় ও নিজের যৌনতার বিষয়সহ কারো নিজের সম্পর্কে মতামত প্রকাশ, শান্তিপূর্ন জন সমাবেশ ও অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া এবং অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সংগঠিত হওয়ার অধিকারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে।

যোগযাকার্টা প্রিন্সিপলস এর ২২ ও ২৩ ধারা শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে নিগ্রহের শিকার থেকে রক্ষা পেতে শান্তিপূর্ন আন্দোলন করা ও অন্য দেশে আশ্রয় খোঁজার অধিকার এবং ২৪ থেকে ২৬ ধারা শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে কোন প্রকার বৈষম্য ব্যতীত পারিবারিক জীবন, গণবিষয়াবলি এবং তাদের সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক জীবনে অংশ গ্রহনের অধিকার হাইলাইটেড করেছে।

তাছাড়া, যোগযাকার্টা প্রিন্সিপলস এর ২৭ ধারা শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে কোন প্রকার বৈষম্য ব্যতীত মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করে এবং যেসব মানবাধিকারকর্মী এ বিষয়ে কাজ করে তাদের নিরাপত্তা বিধানে রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা আরোপ করছে। সর্বোপরি, ২৮ ও ২৯ ধারা অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে অন্য কারো দ্বারা সহিংসতার শিকার হয় তবে সহিংসতাকারি ব্যক্তি সকল দায় দায়দায়িত্ব বহন করবে এবং ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির পুনর্বাসন নিশ্চিত করবে।

যোগযাকার্টা প্রিন্সিপলস গৃহীত হওয়ার পর ভিন্ন যৌন প্রবৃত্তি ও লিঙ্গ পরিচয় যুক্ত হওয়া সত্বেও অন্য মানুষের ন্যায় সমমর্যাদা ও সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠায় ন্যূনতম অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়। লিঙ্গ পরিচয়, যৌন প্রবৃত্তি ও যৌনতার ভিত্তিতে পার্থক্য না করে সমঅধিকার ও অ-বৈষম্যের নিশ্চয়তা প্রদান করে বিশ্বের অনেক দেশে ইতোমধ্যে আইন ও সংবিধান প্রণীত হয়েছে।

যোগযাকার্টা প্রিন্সিপলসকে সম্মান দেখিয়ে সমকামিতার অধিকারকে বৈধতা দিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে গত ১৭ জুন ২০১১ ইং তারিখে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে। উক্ত প্রস্তাবে যৌন প্রবৃত্তি বা লিঙ্গ পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে কোন ভেদাভেদ থাকবে না এবং লেসবিয়ান, গে, বাই-সেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডাররা অন্য লিঙ্গের মানুষের মতোই সমঅধিকার ভোগ করবে মর্মে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যদিও আমাদের দেশে প্রচলিত আইন বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় সমকামীতাকে প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গন্য করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে সমকামিদের অধিকার সম্পুর্ণরূপে অস্বীকার করা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:৪৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×