গত (১) ৩১ শে মার্চ ২০১৮ ইং তারিখে জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা পূর্ব-পশ্চিমবিডি তে প্রকাশিত সংবাদ “সিলেটের জকিগঞ্জে ছাত্রকে বলাৎকার করে ভিডিও, বখাটে গ্রেফতার”, (২) ২০ মার্চ ২০১৮ ইং তারিখে বাংলার জমিন পত্রিকায় প্রকাশিত “নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জে মাদ্রাসা ছাত্রকে বলাৎকার”, (৩) ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ইং তারিখে পূর্ব-পশ্চিমবিডিতে প্রকাশিত “মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় ছাত্র বলাৎকার সুপারের অব্যাহতি”, (৪) ১১ জানুয়ারী ২০১৮ ইং তারিখে এনটিভিবিডি তে প্রকাশিত “সাভারে মাদ্রাসাকক্ষে শিশুকে ‘বলাৎকার’, শিক্ষক আটক” , (৫) ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ইং তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত “নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার একটি মাদ্রাসা ও এতিম খানার ৬ ছাত্রকে বলাৎকার, শিক্ষক-সভাপতি গ্রেফতার”, (৬) ২৬ অক্টোবর ২০১৭ ইং তারিখে ডেইলী বাংলাদেশে প্রকাশিত “রাজশাহীর এক হাফেজিয়া মাদ্রাসার বাথরুমে মাদ্রাসা ছাত্রকে বলাৎকার, সুপার গ্রেপ্তার”, (৭) ১৯ শে অক্টোবর ২০১৭ ইং তারিখে বিডিমর্নিং এর অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত “সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে তেল মালিশের নামে মাদ্রাসার চার ছাত্রকে ‘বলাৎকার”, (৮) ৮ অক্টোবর ২০১৭ ইং তারিখে মনিটরবিডি তে প্রকাশিত “চুয়াডাংগায় হাফেজকে বলাৎকার করলেন ছাত্রলীগ নেতা, এলাকায় তোলপাড়”, (৯) ২৪ আগস্ট ২০১৭ ইং তারিখে সুপ্রভাত বাংলাদেশে প্রকাশিত “দীঘিনালায় মাদ্রাসার শিশুশিক্ষার্থীকে বলাৎকারঃ দুই শিক্ষক আটক”, (১০) ১৬ জুন ২০১৭ ইং তারিখে সময়ের কণ্ঠস্বর এ প্রকাশিত “ রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর উপজেলার হাটকানপাড়া এলাকায় এক মাদ্রাসার ছাত্রকে টয়লেটে নিয়ে বলাৎকার, হাতেনাতে শিক্ষক আটক”, (১১) ৩১ আগস্ট ২০১৬ ইং তারিখে দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত “মুন্সিগঞ্জের সিরাজিদিখানে মাদ্রাসার একাধিক ছাত্রকে বলাৎকারঃ অভিযুক্ত প্রিন্সিপালকে ছাড়িয়ে নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান”, (১২) ২১ শে জুলাই ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত দৈনিক শিক্ষা এর অন লাইন ভার্সনে প্রকাশিত “রাজশাহীর ছোট বোন গ্রাম এলাকার এক ছাত্রকে মসজিদে নিয়ে বলাৎকার করতেন হুজুর”, (১৩) ১৬ মার্চ, ২০১৬ ইং তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত “পাবনার ইশ্বরদীতে মাদ্রাসা ছাত্রকে বলাৎকার, হেফাজত ইসলামের সভাপতি গ্রেফতার”, (১৪) ১০ আগস্ট ২০১৫ ইং তারিখে বিডিলাইভ এ প্রকাশিত “রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এক মাদরাসা ছাত্রকে বলাৎকার, মাদরাসা শিক্ষক গ্রেফতার”, (১৫) ১০ নভেম্বর ২০১৪ ইং তারিখে প্রিয়তে প্রকাশিত “মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে স্কুল ছাত্রকে বলাৎকার, মসজিদের ঈমাম গ্রেপ্তার”, (১৬) ২১ শে জুন ২০১৪ ইং তারিখে বিডিনিউজ২৪ এ প্রকাশিত “রাজধানীর মিরপুরে এক মাদ্রাসা শিশু বলাৎকার: মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেপ্তার” এবং (১৭) ১৬ জুন ২০১৪ ইং তারিখে দৈনিক সংগ্রাম প্রত্রিকায় প্রকাশিত “কুমিল্লার তিতাসে শিশু শিক্ষার্থীকে বলাৎকার করে হত্যা”!
উপরোল্লেখিত সংবাদগুলি বিভিন্ন প্রত্রিকায় প্রকাশিত সারাদেশে সংঘঠিত ছেলেশিশু ধর্ষণের সংবাদদের নমুনা মাত্র। যদিও সারাদেশে যতসংখ্যক ছেলেশিশু ধর্ষণের শিকার হয় তার ন্যুনতম সংখ্যাও প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয় না এবং সারাদেশে ছেলেশিশু ধর্ষণের সঠিক কোন পরিসংখ্যান আছে বলে আমার জানা নেই। তারপরও সংবাদগুলো দেশে ছেলে শিশু ধর্ষণের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ করে।
উল্লেখিত সংবাদ শিরোনামগুলোতে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, কতিপয় ব্যতিক্রম সাপেক্ষে অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনা মাদ্রাসা কেন্দ্রিক এবং ধর্ষক মাদ্রাসা শিক্ষক বা মসজিদের ইমাম। আরও একটি লক্ষনীয় বিষয় হল প্রতিটি সংবাদ শিরোনাম বা সংবাদ বর্ণনায় ধর্ষণ টার্মটি উল্লেখ না করে বলাৎকার টার্মটি ব্যবহার করেছে।
তবে কি উপরোল্লেখিত সংবাদের বিষয়বস্তুগুলো ধর্ষণের ঘটনা নয়? বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্য দেখা যাক আমাদের দেশে প্রচলিত দণ্ডবিধি কি বলে?
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত দন্ডবিধি যা ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রনীত তার ৩৭৫ ধারায় নারী ধর্ষনের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। যদিও ১৪ বছরের কম বয়স্কা নারী ধর্ষনের বিষয়টি উক্ত ধারায় উল্লেখিত হয়েছে, কিন্তু নির্দিষ্ট ভাবে শিশু টার্মটি ব্যবহার করা হয়নি। আর যেখানে শিশু টার্মটি নির্দিষ্টভাবে ব্যবহৃত হয় নি, সেখানে ছেলে শিশু ধর্ষণের বিষয়টি যে উপেক্ষিত হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাছাড়া, নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমন এবং দ্রুত ও কার্যকর বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রনীত ও বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচলিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এ শুধুমাত্র নারী ও মেয়ে শিশু ধর্ষণ, ধর্ষণপূর্বক হত্যা ও ধর্ষণের চেষ্টার অপরাধের শাস্তির বিধান করা হয়েছে।
উক্ত আইনের ৯ (১) ধারায় যদিও শিশু ধর্ষণের শাস্তির কথা বলা হয়েছে কিন্ত অতীব দুঃখের বিষয় উক্ত ধারার ব্যাখ্যাতে পুরুষ কর্তৃক শুধুমাত্র কোন নারীর বয়স যদি ১৬ বছরের কম হয় তবে বিবাহ বন্ধন ব্যতীত তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতীত যৌন সঙ্গম করে তবে তা ধর্ষণ বলে গন্য হবে।বলে উল্লেখ রয়েছ।
এখানেও একজন ছেলে শিশুর সাথে একজন পুরুষ বা নারীর তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতীত যৌন সঙ্গমের বিষয়টি ধর্ষণের মত অপরাধ হিসেবে গন্য না করে সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রচলিত দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৯ ধারায় ছেলে শিশু ধর্ষণের বিষয়টি উপেক্ষিত হলেও দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় অস্বাভাবিক অপরাধসমূহ আখ্যা দিয়ে কোন ব্যক্তি যদি সেচ্ছাকৃতভাবে কোন পুরুষ, নারী বা জন্তুর সাথে প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌনসহবাস করে তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গন্য করেছে।
যদিও প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস কি তা উক্ত ধারায় স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি এবং প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস টার্মটির বিষয়ে ব্যপক বিতর্ক থাকায় ধারাটি বিলোপ্তির জোড় দাবী উঠেছে।
দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় সেচ্ছাকৃতভাবে কোন ব্যক্তি কোন পুরুষ বা নারীর সাথে প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌনসহবাস করার বিষয়ে উল্লেখ করলেও একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ছেচ্ছায় যদি একজন ছেলে শিশুর যদি যৌনসহবাস করে তবে তা ধর্ষণ না হয়ে কিভাবে প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌনসহবাসের মত অপরাধ বলে গন্য হয় তা ভাবার বিষয়।
যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ছেলে শিশুর সাথে যৌন সম্পর্কে ধর্ষণ বলে গন্য করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রেখে আইন প্রণয়ন করেছে, সেখানে বাংলাদেশ আজও তা প্রকৃতির বিরুদ্ধে যৌন সহবাস মর্মে অপরাধ হিসাবে গন্য করে ব্রিটিশ আমলে প্রনীত আইন কার্যকর রেখে প্রাপ্ত বয়স্ক সমকামীদের (লেসবিয়ান, গে, বাই সেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার) বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।
ছেলে শিশুর সাথে যৌন সমপর্ক একটি জঘন্য অপরাধ। তাই ছেলে শিশুর সাথে যৌন সম্পর্কের মত অপরাধকে প্রকৃতির বিরুদ্ধে যৌন সহবাস মর্মে অপরাধ হিসাবে না আখ্যায়িত করে অর্থ্যাৎ দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারার অন্ত্ররভূক্ত না রেখে উক্ত ধারা বাতিল করে দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৯ ধারা সংশোধন করে যদি কোন পুরুষ বা নারী কোন ছেলে শিশুর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতীত যৌন সঙ্গম করে তবে তা ধর্ষণ বলে গন্য করে প্রয়োজনীয় শাস্তির ব্যবস্থা করে ছেলেশিশু ধর্ষণ বন্ধ করা এখন সময়ের দাবী।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:৫১