somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে আইনগত সহায়তা।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিংশ শতাব্দীতে কল্যাণ রাষ্ট্রের উত্থানের সাথে সাথে আইনগত সহায়তা প্রদানের ধারনাটিও উত্থাপিত হয়। এই ধারনাটির উৎপত্তি ঘটে মূলতঃ তাদের জন্য যারা মামলা মোকদ্দমা চালিয়ে জাবার খরচ বহনে অসমর্থ । আইনগত সহায়তা বলতে বুঝায় দরিদ্র বিচার প্রার্থীকে আদালতের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় দিকে আরথিক সহযোগিতা করা ।সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার অনুচ্ছেদ৭-এ প্রণীত হয়েছে এর মূলনীতি-“আইনের চোখে সবাই সমান এবং বৈষম্যহিনভাবে আইনের সুরক্ষা পাবার অধিকার ।
সাংবিধানিক অধিকার ঃ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানেরর মুখবন্ধে ন্যায়বিচারে সাম্যনীতি পালনের অঙ্গিকার করা হয়েছে। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৭নং অনুচ্ছেদে এই নীতি সংরক্ষিত আছে । এই নীতির প্রতি আন্তর্জাতিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার কারনেই বাংলাদেশের সংবিধানে এই অঙ্গীকার করা হয়েছে । সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদ এই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে যে, আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী ।

জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ঃ

১৯৯৪ সালে একটি Resolution এর মাধ্যমে সরকার সর্বপ্রথম জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান কমিটি গঠন করে । এই কার্যক্রমই পরবর্তীতে সরকারকে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন,২০০০ এবং আইনগত সহায়তা প্রদান বিধিমালা, ২০০১ প্রনয়ন করে । এই আইনের আওতায় জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা স্থাপন করা হয়।

আইনগত সহায়তা বলতে বোঝায়,২০০০ সালের আইনগত সহায়তা প্রদান আইনের ২(ক) উপ-ধারা অনুযায়ী “ আইনগত সহায়তা” অর্থ আর্থিকভাবে অসচ্ছল , সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারনে প্রার্থিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থীকে---
(ক) কোণ আদালত দায়েরযোগ্য,দায়েরকৃত বা বিচারাধীন মামলায় আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান;
(খ) মামলার প্রাসাঙ্গিক খরচ প্রদানসহ অন্য যে কোণ সহায়তা প্রদান।

আইনগত সহায়তা প্রাপকের যোগ্যতা ঃ

আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা ২০০১ এর ২নং বিধি মোতাবেক নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিগন আইনগত সহায়তা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে, যথা--

(১) কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম , কর্মহীন বা বার্ষিক ৬০০০ টাকার উপর আয় করতে অক্ষম।
(২) বয়স্ক ভাতা পাচ্ছে এমন কেউ ।
(৩) ভি জি ডি কার্ডধারী দুস্থ মাতা।
(৪) পাচারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ নারী-পুরুষ।
(৫) এসিডদগ্ধ নারী বা শিশু ।
(৬) ভুমি বরাদ্দ প্রাপক কোণ ব্যক্তি।
(৭) আয়ে অক্ষম এবং সহায় সম্বলহীন প্রতিবন্ধী ।
(৮) জেল কর্মকর্তাদের সুপারিশ কৃত আর্থিকভাবে যিনি অসহায়। এছাড়াও উক্ত আইনে অসহায় হিসেবে যাদের কথা বলা হয়েছে।

আইনগত সহায়তার জন্য আবেদন ঃ

“আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা ২০০১” আবেদন পত্র তৈরি করার নিয়ম ঃ
(১) এই আইনের অধীনে আইনগত সহায়তার জন্য জন্য সকল আবেদন বোর্ড বা ক্ষেত্রমত জেলা কমিটির নিকট আবেদন পেশ করতে হবে ।
(২) সহায়তা পাবার উদ্দেশে্য কোণ ব্যক্তি তার নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং সহায়তা চাওয়ার উল্লেখ করে একটি সাদা কাগজে আবেদন করবেন।
(৩) যে বিষয়ে আইনি সহায়তা চাওয়া হয়েছে তা সুপ্রিম কোর্টের কোণ বিভাগের বিচারের বিষয় হলে আইনগত সহায়তা সংস্থার চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য আদালতের বিচারের বিষয় হলে তা জেলা কমিটির চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে হবে ।
(৪) কোন আবেদনপত্র দাখিল করা হলে সংস্থা বা ক্ষেত্রমতে জেলা কমিটি তাতে একটা নাম্বার প্রদান করে নির্ধারিত রেজিস্ট্রারে আবেদন পত্রটির উপর সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য সংস্থা বা জেলা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপনের ব্যবস্থা করবে।
(৫) সংস্থা বা জেলা কমিটি আবেদন পত্রটির বিষয় সহায়তা প্রদানের সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা সংস্থা বা জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত আবেদনকারীকে অবহিত করা হবে।

এনজিও বা বেসরকারী প্রতিস্থানের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা ঃ

ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন,যেমন—আইনগত সহায়তা প্রদান সমিতি,সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান,আইন বিদ্যালয়ের সহযোগিতা,আইনজীবী সমিতির প্রভৃতি সংগঠনের ব্যাপক ও গভীর প্রচেষ্টার কারনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইনগত সহায়তার গতি প্রদান করে। বাংলাদেশেরও বেশ কিছু বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এই গতির অগ্রপথিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বাংলাদেশ লিগ্যাল এন্ড সার্ভিসেসে ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিস কেন্দ্র ( আসক ), মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি,নাগরিক অধিকার-বরগুনা,বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম ইত্যাদি । যদিও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সমগ্র দেশব্যাপী কাজ করার আইনগত অবস্থানে রয়েছে,তবুও এই সকল প্রতিষ্ঠান তাদের সহায়তা একটি নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যেই প্রদান করে । আদালতে মামলা পরিচালনা করা ছাড়াও এই সকল প্রতিষ্ঠান দরিদ্র বিচারপ্রার্থীকে তাদের আইনগত সমস্যা সমাধানের জন্য বিশেষে প্রশিক্ষণ,মধ্যস্থতা,আইন বিষয়ে সচেতনতা এবং পরামর্শ প্রদান করে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×