নভেম্বর, ২০১৪ চলছে। একটা মেয়ের গল্প বলি। বেশ কিছুদিন ধরেই এই মেয়েকে দেখে যাচ্ছে ছেলে পক্ষ – বিয়ের সম্বন্ধ চলছে আর কি। যে সমস্ত কথা এই মেয়েকে প্রতিটি দেখাদেখির দিনই শুনতে হচ্ছে তার কয়েকটা নমুনা এইরকম-
১। মেয়েটো সুন্দর কিন্তু কালো।একটু বেশীই কালো?
২। তুমিতো দেখি সুন্দর আছো...প্রেম করনাই বিশ্বাস করবো কি করে?
৩। এই মেয়ে তুমি দাড়াওতো ছেলের পাশে দেখি উচ্চতায় মানায় নাকি?
৪। রান্না সত্যি পারে...বিয়ের পর না পারলে কিন্তু সমস্যা করে দেবো...
খুব ছোট বেলার একটা স্মৃতির কথা বলি। সম্ভবত ক্লাস সিক্সে পড়ি। দুর সম্পর্কের এক মামার সাথে মেয়ে দেখতে গেছি। মামা মেয়ে দেখে আহলাদে ফিসফিস করে বললো “আলহামদু লিল্লাহ...মেয়ে পছন্দ...” তারপর বাসায় এসে দিন দুয়েক দরজা বন্ধ করে রাখলো। দুই দিন পর দরজা খুলে মুখ ভর্তি অসন্তুষ্টি নিয়ে বললো “আমার মেয়ে পছন্দ নয়..এই বিয়ে হবেনা...” সে কতদিন আগের স্মৃতি। আমার এখনো মনে আছে। এখনো জানতে ইচ্ছে যে মেয়েটাকে “না” বলা হয়েছিলো তার পরে কি হয়েছিলো? সমাজ তাকে স্বস্তি দিয়েছিলো???
এরকম ঘটনা কি কম দেখেছি? ছেলে চৌদ্দ গুষ্ঠি নিয়ে মেয়ে দেখতে এসেছে। মেয়ের পরিবার সাধ্যের অতীত সব আয়োজন করে ফেলেছে। মেয়ের পরিবার, প্রতিবেশী , সমাজ সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। মেয়েকে কত অবান্তর প্রশ্ন, কত আহলাদের উত্তর দিতে হচ্ছে। চোখের সামনে রীতিমতো হিউমিলিশন চলছে। একসময় তারা চলে গেলো। দুইদিন পর খবর আসলো “ মেয়ে পছন্দ হয়নি...” চারপাশে ফিসফিস ছুটে গেলো। মেয়েটা অন্ধকারে বসে থাকে। জোড় গলায় বলে “আরে এই ছেলেকে আমিতো বিয়ে করতামনা...”মেয়ের পরিবার বলছে “আরে আমরাই কি পছন্দ করেছি নাকি?...” কিন্তু খুব আড়ালে এরা কেমন একটা পরাজয়ের স্বাদ নিয়ে থাকে হ্রদয়ে...কেমন একটা ব্যর্থটা। এই পরাজিত মনোভাবের, এই ব্যর্থ মানসিকতার কোন যুক্তি আছে??? কোন কারন আছে???
আমাকে এইরকম মেয়ে দেখার মতো বাজে প্রক্রিয়ার মাঝ দিয়ে যেতে হয়নি। আমার মার আমার পছন্দের উপর আস্থা ছিলো। আমার পরিবারের মানুষ শিতুলকে প্রথম দেখেছে বিয়ের আসরেই।কিন্তু আমার বোনের বিয়ের সময় এমন কিছু ব্যাপার আমাকে দেখতে হয়েছে। একজন শিক্ষক তার ভাইকে নিয়ে এসেছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার ভাই। মেয়ে দেখার পরের দিন সেই শিক্ষকের সাথে আমার দেখা হলো পথে । আমি খেয়াল করিনি...তাই সেই প্রথম আমাকে সালাম দিলো। এরপর ঘটক আমার মাকে জানালো “ছেলের ভাই একটূ দুঃখ পাইছে ...তাকেই নাকি আগে সালাম দিতে হয়েছে...” সত্যই আমি খেয়াল করেছিলামনা মানুষটাকে কিন্তু যদি খেয়াল করতাম তাহলেও কি এমন অভিযোগ যৌক্তিক হতো?মেয়ের ভাইকে আগে সালাম দিতে হবে এই নিয়ম কোথা থেকে এসেছে? আমি আমার মাকে শক্ত গলায় বলেছিলাম “এই পরিবারে তোমার মেয়েকে পাঠালে আমি আর এই বাসাতেই আসবোনা...”
আমি খুব শক্ত ছিলাম এই সময় গুলোতে এবং পরম করুনাময় আমার মনের সততা নিশ্চয় মুল্যায়ন করেছিলেন ...আমাদের মতো মানুষদের সাথেই আমাদের আত্বীয়তা হয়েছে।কিন্তু আমার প্রশ্ন মেয়ে,মেয়ের ভাইকে, মেয়ের বাবাকে একটু বেশী নমনীয় কেনো হতে হবে? কোন নিয়মে??
মেয়ের ভাই যখন আবার নিজের জন্য মেয়ে দেখতে যায় তখন কি সে নিজেও মনে মনে এমন সব অযৌক্তিক মানসিকতা নিয়ে উপস্থিত হয়?
এইসবের পরিত্রান কোথায়? আমার বন্ধুর বিয়ের সময় আমি দেখেছি। আমার বন্ধুও আমার মতো বাসায় গিয়ে হৈ হুল্লোড় করে মেয়ে দেখার ঘোর বিরোধী। তার ইচ্ছে ছিলো বাইরে কোন রেষ্টুরেন্টে বা মার্কেটে দেখা যেতে পারে। আমরা অবাক হয়ে দেখলাম অনেক সময় মেয়ে পক্ষের জোড় অনুরোধে বাসায় যেতে হলো। আমরা একটা অদ্ভুত ব্যাপারকে প্রায় নিয়ম বানিয়ে ছেড়েছি। আমাদের মুক্তি কোথায়?
প্রায় সব অবিবাহিত ছেলেদেরকেই আমি অনুরোধ করি অন্তত হিউমিলিউশনের পর্যায়ে যেনো কেউ না যায়। এটা অন্যায় , খুব বিশ্রী ধরনের পাপ। জীবনের শুরুতেই একটা বড় পাপের অংশ হবার কোন মানে নেই।
শুধু খুব তরুনরাই পারে এই বাজে অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার প্রথম পদক্ষেপ নিতে…