আমি তখন ছোট, ক্লাস থ্রিতে পড়ি। সে সময়টাতে আমি গ্রামের বাড়িতে ছিলাম আড়াই বছরের মত। তখন দেখেছি আমার থেকে বয়সে বড় এবং খুব কাছের সম্পর্কের এক চাচার স্কুলে পড়াশোনা হয়না বলে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। কয়দিন পরপর দেখা যেত চাচা বাসায় চলে এসেছেন এবং আর মাদ্রাসায় যেতে চাইতেন না। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে আবার মাদ্রসায় ফেরত পাঠাতে না পারলে শেষপর্যন্ত তাকে মাদ্রাসার বেতের বাড়ির ভয় দেখিয়ে ফেরত পাঠানো হত। এভাবে কিছু দিন চলার পর তার আর স্কুলে তো পড়া হয়নি, এমনকি তিনি মাদ্রাসার পড়াও শেষ করেননি।
মাদ্রাসায় গেলে ছোট ছোট ছেলেরা কেন বারবার বাসায় ফেরত চলে আসে বিষয়টা নিয়ে কে কিভাবে ভাবেন সেটা আমি জানিনা। তবে আমার কাছে শুধু মনে হয় ঐ যে বেতের ভয়, শাস্তির চোখ রাঙ্গানি। সময়ের সাথে সাথে আমি এও দেখেছি যে অবিভাবকেরাও মনে করেন মেরেই শেখাতে হবে। তাই অনেক সময় তারাও মুখ বুঝে মেনে নেন সব। আর এই মেরে শেখাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ছেলেটির মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া হয়ে ওঠেনা। যেমনটি দিনাজপুরের আবু সাইদ নামের ৯ বছরের ছেলেটির বেলা ঘটতে দেখলাম। এমন নির্মম মারের পর আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে ছেলেটি আর মাদ্রাসায় পড়তে যেতে চাইবে। অথবা এমন অত্যাচারের পরেও যদি সে মাদ্রাসার শিক্ষা জীবন শেষ করতে পারে, তখন আর তার মধ্যে নরম মনের ছিটে ফোঁটাটিও থাকবে বলে মনে হয়না। মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে জড়িত সবাইকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, না মেরে আদর দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, আনন্দের সাথে কি ধর্ম শিক্ষা দেওয়া যায়না? মাদ্রাসা শিক্ষা মানেই কেন বেতের বাড়ি। বেতের বাড়ি সহ নানা রকম ভয়ংকর শাস্তি না দিয়ে ভালোবাসা দিলে হয়তো এখনকার থেকে অনেক বেশী ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা হাঁসি মুখ নিয়েই মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হতে যেত।
view this link
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৫ সকাল ১০:৪১