somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেমন আছে হরিজন সম্প্রদায়...! ‍‍‍‍‍ " হামরা কি মানুষ না কুইত্তা জানোয়ার ” -সজিব তৌহিদ

১২ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিজ্ঞানের সাফল্য যখন আকাশচুম্বী গোটা পৃথিবী যখন হাতের মুঠোয়। তবুও এই একবিংশ শতাব্দীতে এস্ওে আমাদের দৃষ্ট্ভিঙ্গি ও মানসিকতা পরিবর্তন হয়নি। যে কারণেই রাধিকার মুখের কথাটি শিরোনাম করতে বাধ্য হয়েছি। তার আগে বলি কে এই রাধিকা? ইংরেজিতে sweeper বাংলায ঝাড়ুদার ,কেউ কেউ আবার তাদের সম্মান দেখিয়ে বলেন হরিজন। সমাজে তারা ম্যাথর বা মেথর হিসেবেই গৃহীত স্বীকৃত নিন্দিত ও ঘৃণিত। তবুওতো অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও বেঁচে থাকতে হয় এই হরিজনদের। সুখ-দু:খ, হাসি-কান্না,প্রেম-বিরহ-বিচ্ছেদ,নিন্দা,হিংসা,ঘেন্না আর নানান অপবাদ নিয়ে চলে তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। সম্প্রতি আমার দুই প্রীতিভাজন বন্ধু চঞ্চল ও উজ্জ্বলকে সঙ্গে নিয়ে রংপুর কারমাইকেল কলেজ গেইটের ঊত্তর পার্শ্বে বসবাসরত হরিজন সম্প্রদায়ের জীবন চিত্র দেখতে গিয়েছিলাম। থাকার ঘরের পাশে ঝিম ধরে বসে আছেন জগেন্দ্র। তার পাশেই স্ত্রী রাধিকা আমাদের দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। দু-সন্তানের জননী রাধিকার বিয়ে হয়েছিল মাত্র সাড়ে নয় বছর বয়সে। পরে জানলাম রাধিকা কারমাইকেল কলেজের মাস্টাররোলের কর্মচারী হিসেবে ঝাড়ুদারের কাজ করেন। আর জগেন্দ্র মেস কিংবা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টয়লেট পরিষ্কারের কাজ করেন। তাদের দু’জনের আয়ে দুই সন্তান লতা (৩) এবং সুমন (৪) কে নিয়ে সংসার মোটামুটি ভালই চলে। আর্থিক সংকট খুব একটা না থাকলেও মানসিক অশান্তি তাদের কুড়ে কুড়ে খায়। সমাজে তারা সম্মান পায় না। সনাতন ধর্মানুযায়ী নিকৃষ্ট জাতি হিসেবে তারা সমাজের মানুষের কাছে পরিচিত। টাকা থাকা সত্ত্বেও তাদের রেস্তোরায় বসে খেতে দেয়া হয় না। এমন অভিযোগের কথা যখন জগেন্দ্র আমাদের জানাচ্ছিলেন, তখন স্ত্রী রাধিকা তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে কাদোঁ কাদোঁ রুঢ় কণ্ঠে জোর গলায় বলে উঠলেন, ”হামরা কি মানুষ না কুইত্তা জানোয়ার। হামার ছরীল (শরীর) কাঁটলে যে অক্ত বাইর হবে, তোমহারা ছরীল কাঁটলে একই অক্ত বাইর হবে। তবে হামরাগুলার সাথে এ্যামন ব্যবহার করা হয় ক্যান?...ক্যান?।”
হায়রে সমাজ! সভ্যতা। এই সভ্য জগতের সভ্য মানুষ আমরা আর কত আধুনিক, বিজ্ঞান মনস্ক যৌক্তিক মানুষ হলে এই হরিজনদের ভালোবাসতে পারব। শ্রদ্ধা করতে পারব। পারব দিতে সমধিকার। এরই মধ্যে আমাদের দেখে এগিয়ে এসেছেন একই গোত্রের পাশের বাড়ির শিলা। স্বামী রণজিত নারকেল গাছ থেকে পড়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন। মন বেশি ভাল নেই শিলার। তবুও অভিযোগ। দুই ছেলে জয় ও অজয়। অজয় কারমাইকেল কলেজের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। অজয় হরিজন পরিবারের সন্তান বলে অনেকেই তার সাথে মিশতে চায় না। এক সাথে বসতে চায় না। শিক্ষকরা তাকে প্রাইভেট পড়ান না। হোম টিউটর পাওয়া যায় না। সে কারণে গত পরীক্ষায় অজয় একটি বিষয়ে ফেল করেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করবে বলে জানিয়েছে। এ নিয়ে শিলার যেন দুিশ্চন্তার অন্ত নেই।
এখানে তিনটি হরিজন পরিবারে ১০-১২ জন সদস্য বসবাস করেন। এরই মধ্যে বিধবা নারী দুলি তিনিও খুলেছেন অভিযোগের বুলি। তারা ভেবেছেন আমরা বুঝি সমস্যা সমাধানকারী।তাই আমাদের ঘিরে ধরে হড়-হড় করে সবাই সমস্যা, সম্ভাবনা,লাঞনা-বঞনা আর বৈষম্যমূলক আচরণের কথা বলে গেলেন। কিন্তু তারা তো জানেন না যে , বিশাল সিন্ধুর মত পৃথিবীতে একবিন্দু সাহায্য করার সামর্থ্য আমাদের নেই। যুগ-যুগ ধরে অনেক পত্রিকায় এই রাধিকাদের নিয়ে অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখা হয়েছে। কিন্তু তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেনি। আমি জানি আমার এ লেখায় কারো তিলার্ধ টনক নড়বে না। রাধিকার আক্ষেপের সুর চুল পরিমাণ হেরফের হবে না। তা সত্ত্বেও রাধিকাদের নিয়ে যে অহেতুক রসিকতা করলাম। কাজের কাজ কিছুই করতে পারলাম না। ক্ষমা কর রাধিকা...! ক্ষমা কর......!



০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×