আজ হৃদয়ের প্রান্তর থেকে অন্তরের কিছু কথা বলব। যদিও প্রান্তিক বেলায় এসে প্রারম্ভিক কথা বলা খুব বেশি নয় যৌক্তিক। পশ্চিমে সূর্যাস্ত যাওয়ার সময় বদোধয় হলে যেমন কর্তার অরণ্যে রোদন ব্যতীত কিছু করবার থাকে না।ঠিক শিক্ষা জীবনের সেই চরম মুহূর্তে এসে পরমকথাগুলো নরমভাবে বলে ফলাফর শূন্য ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না।জীবনের আঁকাবাঁকা গলিতে তো কম হাঁটি নি । হেঁটে হেঁটে হয়রান হয়ে আজ বলতে ইচেছ করছে,‘ আর পারছি না দাদা,ক্ষমা কর ! এবং দোয়াও কর।’ আজ কেবলি মনে হচ্ছে, জীবনে য়া পেয়েছি তার চেয়ে বেশিই হারিয়েছি। হারিয়ে হারিয়ে এখন ইথর নিথর পাথরের মত স্তব্ধ হয়ে গেছি। যে সময়ে যৌবনের উত্তাল তরঙ্গে গা ভাসিয়ে বন্ধু-বান্ধব কিংবা প্রেমিকার সাথে খোঁশ গল্পে ঝড় তোলার কথা। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি কাটিয়েছি জনৈক বন্ধুর ভাষায় ,“নিরব- নিরস অর্থহীন বিতর্ক ও বিতর্ক পরিষদের সঙ্গে।” আর ভেতরে ভেতরে টের পেলাম অনেক পরে যা হারিয়েছি তা অপূরণীয় । লালনের বচনে –‘সময় গেলে সাধন হবে না।’
এখন প্রেমহীন,প্রেমিকাহীন যৌক্তিক ও যান্ত্রিক মানুষ হয়েছি । যেখানে যুক্তির মাপকাঠিতে সবকিছু পরিমাপ করতে গিয়ে প্রেমের রঙ্গে রজ্ঞিত হতে পারি নি । ভালোবাসায় গড়াগড়ি দিয়ে কখনো চাইনিজ হোটেলে বসতে পারি নি । হাতে হাত রেখে নয়নে-নয়ন রেখে কথা বলতে পারি নি। বৃষ্টির জলে চোখের পাতা নাচাতে পারি নি । কপালে টিপ বসিয়ে টুটি ধরে, নাক ছুঁেয় খুনসুটিতে ভাসতে পারি নি । হাসতে হাসতে,গাইতে গাইতে কুটকাট হতে পারি নি । আরো অনেক কিছ’ করতে পারে নি যা লিখতে পারি নি । সমাজের আট-দশটা শিক্ষার্থীর মত স্মৃতির সাগরে ট্রলার,স্টিমার,স্পিডবোর্ড চলনা কিংবা বৈঠা মারার বহু সুযোগ আমি সচেতন, সজ্ঞানে হাত ছাড়া করেছি যুক্তির দায়বদ্ধতায় । বিতর্ক পরিষদের বৃত্তের ভেতরে চিত্তের সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করেছি । বিতর্ক ও বিতার্কিকের সঙ্গে কিছু প্রাসঙ্গিক শব্দের মিল খুঁজে নিম্নের কাঠামো দাঁড় করাবার চেষ্টা করেছি ।
ব্যবস্থাপ(ক)
উপস্থাপ(ক)
সাংবাদি(ক)
সম্পাদ(ক)
বিশ্লেষ(ক)
গবেষ(ক)
লেখ(ক) =বিতার্কিক
চিন্ত(ক)
অনুসন্ধ(ক)
ধার(ক)
সাহিত্যি(ক)
নায়(ক)
গায়(ক)
বাধ(ক)
সাধ(ক)
ব্যতিক্রম হলো: বিতার্কিক = প্রেমিক নয়
অথবা -প্রেমিক =বিতার্কিক নয়
আমার জীবন দর্শন বলে উপরোক্ত সব প্রান্তিক “ক” পেশার মানুষ হতে বিতার্কিক অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখে । বিতর্ক এমন এক চর্চা যে চর্চার মাধ্যমে একজন মানুষ বাস্তব জীবনের যে কোন পরিবেশ-পরিস্থিতি সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করতে পারে । কিন্তু পারে না শুধু একটি কাজ তা হচ্ছে ‘প্রেম’। কারণ বিবেককে ঠাসা দিয়ে আবেগ বিস্তার লাভ করলেই প্রেমের অরুণদয়। প্রেম কখনো যুক্তি মানে না ও বুঝে না । আর বিতর্ক কখনো যুক্তি ছাড়ে না। বিধায় প্রেমাঙ্গনে বিস্তীর্ণ পৃথিবী সংকীর্ণ হয় । মানুষের শুভ্র-সুন্দর মানসিকতা সংকুচিত হয়। পৃথিবী এক কেন্দ্রীক হয়। যা বিতার্কিকের বিতর্ক দশর্নের পুরোপুরি বিপরীত। তাই ‘প্রেম’ ও ‘বিতর্ক ’শব্দ দুটি আমার কাছে বিকর্ষিত, বিতর্কিত এবং বিপরীত শব্দ মনে হয়।
আমার কেন জানি মনে হয়,‘বিতার্কিক কখনো আদর্শ প্রেমিক হতে পারে না । আবার প্রেমিক কখনো আদর্শ বিতার্কিক হতে পারে না । ’
আজ একাডেমেক জীবনের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে দেখি আমি কিছুই হতে পারি নি । না প্রেমিক, না বিতার্কিক । শুধু হারিয়েছি আর দিয়েছি এবং প্রেম শূন্য হয়েছি । বিতর্ক ও বিতর্ক পরিষদের প্রয়োজনে মানুষের দ্বারে-দ্বারে ঘুরে অবহেলা,অপমান , লাঞণাও তো কম জোটেনি কপালে । ‘নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়িয়ে’ এটাই কী প্রাপ্তি ? না’কি অন্য কিছু আছে খুঁজে দেখি নি কখনো-সখনো । মাঝে-মাঝে বাস্তবতার যাতা কলে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে হীনমন্যে বলি ,“বিতর্ক ও বিতর্ক পরিষদ ! তুমি মোরে রিক্ত করেছ,শূন্য করেছ ,পূর্ণ কর নি কখনো ।”
একদিন হয়তো বা শূন্যতা-পূর্ণতার স্পৃহায় আমি অমার জীবনের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবো। সেদিন হয়তো বুক ফাঁটবে না,মুখ ফুটবে না শুধু নিরব মনে অশ্রুসিক্ত সজল চোখে প্রকৃতির দিকে চেয়ে বলে উঠবো, আমি মানুষ হয়েছি। যুক্তির জোয়ারে আমি মুক্ত হয়েছি । ভালোবাসতাম..., এখনো ভালোবাসি...। তাইতো তোমার অত্যাচার নির্যাতনে বার বার ফিরে আসি ...।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩৪