অনেক কষ্টে দু’জন সেচ্ছ্বায় রক্তদাতাকে রাজি করানো হয়েছিল। একজন রক্ত দিয়েছেন । বাকিজন চাকরিজীবী অনেক ব্যস্ত। তাই তিনি শুক্রবার রক্ত দিতে রাজি হলেন। শ্রক্রবার আসলে হঠাৎ সেই ভদ্রলোক জানিয়ে দিলেন রক্ত তিনি দিবেন না। অনেক অনুরোধ, অনয়-বিনয় করে শেষ পযর্ন্ত তাঁকে আর রাজি করানো গেল না।
অগত্যা আবার সেই রক্তের অনুসন্ধান শুরু হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ, সা’দত কলেজ, মাওলানা ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্নস্থানে রক্তের সন্ধান চালানো হলো। কোথাও কোন সন্ধান মেলেনি।
এ দিকে আমার নানির অপারেশনের তিনটি তারিখ পার হয়ে গেছ। তাঁর অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বেঁচে আছেন। আমি শেষ পযর্ন্ত কূল-কিনার না পেয়ে ধর্য্যহারা হয়ে ‘সামহ্যোয়ারইন ব্লগ’ –এ এক ব্যাগ রক্তের আবেদন করে একটি পোস্ট দিই।
আমার মনে হয়ছিল ব্লগে রক্তের আবদেনের পোস্টটিতে কেউ পাত্তা দেবে না। তা ছাড়া ব্লগাররা বেশির ভাগ অভিজাত পরিবারের সন্তান। তাঁরা রক্ত দিতে রাজি হবে তা মনকে বিশ্বাস করাতে পারিনি। তবুও মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য শেষ চেষ্টা হিসেবে ব্লগের আশ্রয় নিয়েছিলাম।
আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে রাত ১২ টার দিকে জানতে পেলাম ‘ভোলা বাবা’ নামের এক তরুণ ব্লগার, যার ডাক নাম সাদি। তিনি রক্ত দিতে রাজি হয়েছেন। তারঁ সঙ্গে মোবাইলে বিস্তর কথা হলো। ব্লগার সাদি জানালেন, যখন রক্ত লাগবে তখনই তিনি রক্ত দিতে রাজি আছেন। সাদি’র এমন কথা শুনে আমার মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেল।
তিন পুরুষ মিলে যে রক্ত খুঁজে পেলাম না। ব্লগে লিখে নিমেষেই রক্তের সন্ধান পেয়ে গেলাম। মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে অন্য একটি নিরব বিষাদ বেদনা আমাকে দুমড়ে-মুচড়ে ধরলো। যে নানির জন্য ব্লগে লিখে রক্তের ব্যবস্থা করলাম। সেই নানি শিক্ষিত নন। অশিক্ষিত মানুষ। সমাজের ৮/১০ টা অশিক্ষিতের মত তিনিও রাতের আঁধারে চাঁদে সাঈদীকে দেখেছেন। সাঈদীর ফাঁসির রায়ের সংবাদ শুনে নিরবে কেঁদেছেন। ব্লগারদের নাস্তিক বলে অভিহিত করেছেন। শাহবাগের আন্দোলনকে ধিক্কার দিয়েছেন। রাজাকারের ফাঁসির দাবিকে নাস্তিকদের দাবি বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সেই নানি কি বুঝতে পাচ্ছেন, তাঁর প্রাণ বাঁচাতে একজন সচেতন টকবগে তরুণ ব্লগার, আন্দোলনকারী, মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রক্ত দেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। আমার নানির মতো এদেশের অসংখ্য মানুষ যারা মনে করেন, ব্লগার মানেই নাস্তিক, নাস্তিক ব্লগারাই শাহবাগের আন্দোলন করেছে, রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাইছে। তারাই তো আবার রানা প্লাজায় ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার কাজে জীবন বাজি রেখেছে। বন্যার্ত, শীতার্থ, সিডর, আইলাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে গেছে। এদেরকেই যদি নাস্তিক বলা হয়। তবে এ রকম নাস্তিক হতে আপত্তি থাকার কথা নয়। এ রকম নাস্তিক আমি বারবার হব, হতে চাই, হতেই হবে।
সজিব তৌহিদ
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:৪৬