ইউরোপিয়ান দেশ ইতালির রোম শহরের মধ্যস্থলে প্রাচীর দিয়ে বেষ্টিত স্বাধীন রাষ্ট্রের নাম ভ্যাটিকান সিটি। ছোট এ দেশটি পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত। এ দেশে কোনো নদ-নদী বা প্রাকৃতিক জলাশয় নেই। দেশটির রাজধানীর নামও ভ্যাটিকান সিটি। দেশটির আয়তন মাত্র ০.৪৪ বর্গকিলোমিটার বা ১১০ একর। এটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র। এখানকার রাষ্ট্রনেতা হলেন পোপ। পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের পর ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ নির্বাচিত ক্যাথলিক গির্জার ২৬৬তম পোপ বা পাদ্রি হলেন ফ্রান্সিস। তিনি হচ্ছেন বর্তমান বিশ্বের ক্যাথলিক পোপ এবং ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁর অধীনেই রাষ্ট্রের নির্বাহী কর্মকাণ্ড, আইন প্রণয়ন ও বিচারব্যবস্থা পরিচালিত হয়। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় এক হাজার। মুদ্রার নাম লিরা। রোমান ক্যাথলিকদের প্রধান গির্জা 'সেন্ট পিটারের ব্যাসিলিকা' দালানটি এখানেই অবস্থিত। আজব ও মজার ব্যাপার হলো এ দেশে কোনো নারী বা স্ত্রী লোক নেই। সাধারণত নারী লোকের প্রবেশ ভ্যাটিকান সিটিতে নিষিদ্ধ। ১০৬০ সালে প্রণীত এক আইনে বলা হয়, 'নো উইমেন অ্যালাউড'। আইনটি চালু হওয়ার পর প্রায় এক হাজার বছর ধরে দেশটিতে কোনো নারী প্রবেশ করতে পারে না। এমনকি সেখানে মাদি কুকুর, বিড়াল, ভেড়া, ছাগল কিংবা গাভি নিয়ে প্রবেশের অনুমতি মেলে না। ভ্যাটিকান সিটির পবিত্রতা রক্ষার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সেখানে বসবাসরত ধর্মযাজকরা বিশ্বাস করেন। ভ্যাটিকানে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁরা প্রত্যেকেই সাধু-সন্ন্যাসী, পাদ্রি কিংবা ধর্মযাজক পুরুষ।
গোটা পৃথিবীতে খ্রিস্টধর্মের শান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়াই তাঁদের কাজ। ইতালি ও ল্যাটিন উভয় ভাষারই এখানে ব্যবহার রয়েছে। ১৯২৯ সালে ভ্যাটিকান স্বাধীনতা লাভ করলেও এখনো জাতিসংঘের সদস্যপদ পায়নি। এখানে যাঁরা বৃদ্ধ হয়ে যান, তাঁদের ইতালিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে সেখানে তরুণ সাধু-সন্ন্যাসীদের নিয়ে আসা হয়।
ভ্যাটিকানে রয়েছে একটি মহাকাশ অবজারভেটরি-লাইব্রেরি ভ্যাটিকানা। 'সুইস গার্ড' নামের ১০০ সদস্যের নিজস্ব সেনাবাহিনীও আছে। আছে একটি সরকারি বেতার স্টেশন, যার মাধ্যমে পোপের কণ্ঠ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত 'বিশ্ব ঐতিহাসিক স্থান' এবং খ্রিস্ট ধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থান হিসেবে এটি বিবেচিত হয়। নারীহীন, নদীহীন দেশটাকে দেখার জন্য অনেক পর্যটক কৌতূহলবশত এ দেশে ভ্রমণ করতে আসেন। পর্যটকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ, বিশ্বব্যাপী রোমান ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুদান, স্ট্যাম্প ও স্মারকসামগ্রী বিক্রির অর্থ, জাদুঘরের প্রবেশ ফি এবং বিভিন্ন পুস্তক বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ভ্যাটিকান সিটির অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি।
-সজিব তৌহিদ
- See more at:
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:০৮